নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনার জাগরণ নতুন দিনের বিষ্ফোরণ। আমরা গড়ব নতুন ভূবন, নতুন আশা মনে। এই কথাটির প্রতিধ্বনী বাজুক জনে জনে।

সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।

› বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্দা কি কেন কিভাবে কত রকম?

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৭

পর্দা কি কেন কিভাবে কত রকম?
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

(পর্দার পক্ষে নয়, বিপক্ষেও নয় শুধূ একটি সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ)


পর্দা প্রথার বিকাশে সবচে বেশী ভূমিকা রাখেন মাওলানা কারামাত আলী জৈনপুরী ও জৈনপুরের সিদ্দিকী পরিবার। এদের পারিবারিক খন্দকারী পেশা হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মন্যবাদের মতো ব্যাপক বিস্তৃত ছিলো। কুমিল্লা নোয়াখালী অঞ্চল থেকেই তারা মূলত পর্দার বিকাশ শুরু করেন। এটা ব্রিটিশ ভারতেই হয়েছিলো। নোয়াখালীর দরিদ্র পীড়িত কৃষিজীবি মানুষদের পর্দা করার মতো অবস্থা ছিলনা। প্রথমদিকে সুন্নত রক্ষা করার জন্য জৈনপুরীর মাওলানারা লুঙ্গি উপহার দেয়া শুরু করেন। সেটা সুদূর বার্মা থেকে আনতে হয়েছিলো। কারণ এতদাঞ্চলে তখন মহিলাদের মোটা কাপড়, ধুতি ছাড়া তেমন কোন বস্ত্র বুনন হতো না। দরিদ্র পুরুষগণ শুধু গামছা জাতিয় খাটো কাপড় পরিধান করতেন। সম্ভান্ত মুসলিমেরা পড়তো ধুতি। পাজামা খুব কম সংখ্যক কেবল শিক্ষিত সমভ্রান্ত বংশীয়দের ক্ষেত্রে কদাচিত দেখা যেতো। বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। যদিও এই পরিবর্তনের প্রথম ধাপ সূচিত হয় ভারতের বিখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবং দ্বিতীয় দফা শুরু হয় কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর।

বাঙালীর ধর্মান্তরের ইতিহাস বিভিন্ন ধাপে ধাপে বিকশিত ও ত্বরান্বিত হয়েছে। বারোশ শতাব্দীতে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বাঙলা জয় করলে বাংলা শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবেই মুসলমানদের পদানত হয়। সেসময় থেকে ইসলামের সূচনা হলেও এদেশে মূলত ইসলামে প্রচারে মূল ভূমিকা রাখেন সূফী দরবেশগণ। সুফিইজমে পর্দাকে সেভাবে কখনো মূল ফোকাসে আনা হয়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন মুসলিম রাজবংশের দ্বারা ইসলামের বিকাশ সাধিত হলেও মুসলিম শাসকগণ সব ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন। নীতিগত দিক থেকে যেসব মুসলিম দখলদার শাষক ভারতবর্ষে লুটপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের দ্ধারা তেমন একটা ইসলাম প্রসারিত হয়নি। দেখা গেছে পুরো ভারতবর্ষে কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ইসলাম প্রচার করেনি। এখানে রাজ্য এবং নৃপতিগণ ভিন্ন ভিন্ন ছিলেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজ্যগুলো নদীদ্ধারা বিভক্ত ছিলো ফলে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পীর মাশায়েখগণ ইসলাম প্রচার করেছিলেন। আমাদের পূর্ববাংলায় খুলনা অঞ্চলে খœ জাহান আলী , রাজশাহী এলাকায় শাহ মাখদুম, সিলেটে হযরত শাহ জালাল, চট্টগামে শাহ আমানতসহ বারো আওলিয়া এবং অন্যান্য ফকির দরবেশস, নোয়াখালীতে দেওয়ান আবদুর রশিদ, এবং অন্যান্য পীরগণ ইসলাাম প্রচারে কাজ করেন তাদের সাথে ছিলেন হযরত শাহজালালের সঙ্গী ৬০জন দরবেশ। তখনকার ইসলাম প্রচারে তারা মূলত ঈমান ও কালেমা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেন। এমনকি প্রথমদিকে নামায রোজার ব্যাপারে মুসলমানদের অতোটা দেখা যায়না তারা ইসলাম গ্রহণ করলেও আমল আখলাকের প্রতি সচেতন ছিলেন না। অনেক পরে ব্রিটিশ আমরলে হাজী শরীয়ত উল্যাহ, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, এবং মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরীর প্রচেষ্টায় এদেশের মুসলিম সমাজ ইসলামের নিয়মকানুন ও ইবাদাত বন্ধেগী সম্পর্কে সচেতন হয়। হাজী শরিয়ত উল্যাহর ফরায়েজী আন্দোলন এর ফলে ইসলাম নতুন মাত্রায় বিকশিত হলেও পর্দার কঠোরতা আরোপ হয়নি।

মহিলাদের পর্দার ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ধারণা ছিলো যে মহিলাদের পর্দা হলো তারা ঘরে থাকবে, সন্তান লালন পালন করবে এর মধ্যেই তারা তাদের পর্দা বজায় রাখবে। কিন্তু এটা মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে একটি সুন্দর মাত্রায় বিদ্যমান থাকলেও উচ্চবিত্ত বা নিন্মবিত্ততে চর্চাটা শুরু হয়নি। তখন গ্রামের কিষাণীকে মাঠে কাজ করতে হতো, গরুর সেবা করতে হতো। অবশ্য চলাফেরার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধটা আরোপিত হয়ে যায়। মহিলারা রাতের বেলায় চলাফেরা করতো। কারণ পর্দার কনসেপ্টটা তখন এভাবেই বিকশিত হয়েছিলো আর ছাতা বোরখা বা তৃতীয় কোনো পোষাক পরার চিন্তাই করা যায়না। পাকিস্থান আমলেই ছাতা এবং বোরখা পরে মহিলাদের চলাফেরা শুরু হয়। তখন দিনের বেলায় রিকসায় চলাচল করার জন্য কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখতো। বনেতি পরিবারের মেয়েরা আরো কয়েকশ বছর আগে থেকেই পালকিতে চলফেরা করতো। নদীভিত্তিক এলকার মহিলাদের ভরসা ছিলো বজরা নৌকা আর গরুর গাড়ীও মহিলাদের পর্দাভিত্তিক চলাচলের সহজ মাধ্যম ছিলো। এগুলো অবশ্য হিন্দু মুসলিম সবার জন্য প্রচলন ছিলো। এর পাশাপাশি মহিলাদের চলাচলের ক্ষেত্রে নানারকম সংস্কার মেনে চলা হতো। কোন মাসে নাইওরি যায়না, কোনচাঁদে মেয়েমানুষ বাপের বাড়ি যেতে পারেনা, কোন বারে স্বামীর বাড়ি থেকে নড়তে পারেনা, কোন তারিখে বেড়ানো নিষেধ ইত্যাদি নানা রকম বিশ্বাস হিন্দু মুসলিম সবার মাঝেই ছিলো। বোধকরি গ্রামগঞ্জে এখনো কিছু কিছু আছে।
দরিদ্র মহিলাদের এক কাপড়েই দিন কাটতো, বেশী হলে দুই কাপড়। পরবর্তীতে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তণ হলে তৃতীয় কাপড় মানে নামাযের একটা কাপড় পরার প্রচলন শুরু হয়। এটাই ছিলো ব্রিটিশ ভারতের পর্দাপ্রথার চিত্র। ব্রিট্রিশযুগে তাবলীগ জামায়াতের প্রচলন শুরু হলে এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে কওমী মাদ্রাসা চালু হলে বোরকাভিত্তিক পর্দা বিকশত হয়।
মনের পর্দা ও দেহের পর্দা
সাধারণত আমরা বলে থাকি যে পর্দা আসলে পর্দা রকম, মনের পর্দা ও দেহের পর্দা। অনেকে মনে করেন। মনের পর্দা থাকলে দেহের পর্দার প্রয়োজন নেই। আবার অনেকের মতে মনের জন্য মনে পর্দা আর দেহের জন্য দেহের পর্দা।
নারী পুরুষের পর্দা
পুরুষ ও মহিলার পর্দার ব্যাপারে বৈষম্যের অভিযোগ করা হয়। যদিও আলেমগণ বলেন ইসলাম নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে পর্দার নির্দেশনা রয়েছে। উভয়কে নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজকের বাংলাদেশে পর্দা করার উদ্দেশ্যের বিশ্লেষনে দেখা যায় পর্দা মূলত ২ রকমের।
১. শরয়ী পর্দায়। ২. সামাজিক পর্দা।
যারা ধর্মের বিধান মনে করে পর্দা করে তাদের পর্দাকে শরয়ী পর্দা বলা হয়। এই শরয়ী পর্দাকে অবশ্য দুইভাগে বিভক্ত করা যায় ক. আরোপিত পর্দা ও স্বরোপিত পর্দা। আরোপিত পর্দা পরিবার থেকে আরোপ করা হয়। পরিবারের মেয়ে মানেই পর্দা করবে তার নিজস্ব পছন্দ অপন্দের কোনো ব্যাপার নেই। সামাজিক পর্দাও দুইভাগে বিভক্ত স্বপ্রনোদিত ও সমাজনির্ধারিত। সামাজিক পেক্ষাপটে সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সমাজে বসবাসরত একজন মুসলিম রমনী তার সুবিধার জন্য মধ্যম প্রকৃতির পর্দা মেনে চলে সেটাই স্বপ্রনোধিত পর্দা আর একজন নারীকে আশপাশের লোকেরা কি ভাববে? অথবা পর্দা করা জন্য উৎসাহ দিচ্ছে সেজন্য যদি কোনো রমনী পর্দা করে সেটা সমাজনির্ধারিত পর্দা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পর্দা পালনের দিক থেকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্দা মূলত ৫ রকম
০১. ফরজ পর্দা: কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক সতর ঢেকে যতটুকু পর্দা জারি করা হয়েছে। বা যতটুকু পর্দার বিষয়ে আলেমদের ঐকমত্য রয়েছে। এ পর্দার বিধান মহিলাদের জন্য শরীর ঢাকা থাকবে মুখ ও হাত পা দেখা যাবে। এক্ষেত্রে চুল দেখা যাবেনা কারণ চুল সতরের অংশ। পুরুষদের জন্য মাথা খোলা থাকবে, মাথায় টুপি থাকলেও সেটা মূলত ফরজ নয়। হাতের কনুই থেকে খোলা পায়ের গোডালী থেকে খোলা থাকবে। এটা নারী পুরুষের আবিশ্যিক পর্দা এবং ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা।
০২. সুন্নতি পর্দা: রাসুল (স) এর জীবনের শেষ দিকে এবং তার বিবি ও কন্যাগন যতটকু পর্দা করেছেন। ধরে নেয়া হয় ততটুকু পর্দা করা রাসুল (স) এর নির্দেশনা। এই পর্দাকে আমরা সুন্নতি পর্দা বলি। সতর ঢাকা পোষাকের সাথে ঢিলেঢালা পোষাক যাতে শরীরের অবয়ব বোঝা না যায়, মাথা ও চুল ডাকা, নিনন্ম স্বরে হাসা, ও নিন্মস্বরে কথাবলা, একা একা ধূরে কোথাও না যাওয়া, বাইরের পুরুষ মানুষের সাথে একা দেখা না করা ইত্যাদি সুন্নতি পর্দার আওতাভুক্ত। এটাই সুন্নতি পর্দা পুরুষদের জন্যও ঢিলেঢালা লম্বা জোব্বার কথা বলা হয়েছে। এবং পরনারীদের সাথে কথবলা ও লেনদেন কারো বাসায় গমন এসব ব্যাপারে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দেয়া হয়েছে।
০৩. ফতোয়ায়ী পর্দা: পরবর্তীতে আলেমগণ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করেন যে যেহেতু মানুষের আকর্ষনের মূল কেন্দ্র মানুষের চেহারা। সেজন্য চেহারা ঢাকা পর্দার পচলন শুরু হয়। বেশীরভাগ আলেম এবিষয়ে একমত হতে পেরেছেন বলে এই পর্দা গত একশত বছরে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। অবশ্য আধনিকযুগে ড. জাকির নায়েকসহ অগ্রগামী ইসলামী গবেষকগণ এ বিষয়ে একমত নন। তারা কোরআন নির্দেশিত পর্দাকেই ইসলামের মূলপর্দাপ্রথা হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। পীর মাশায়েখরা এ ধরনের পর্দার বিকাশে গত শতকে সবচে বেশী প্রচারণা চালিয়েছেন। সাথে যুক্ত হয়েছে মোল্লাশ্যেনীর লোকেরা। সনদপ্রাপ্ত আলেমগণ পর্দার ব্যাপারে সচেতন হলে কঠোর পর্দার ব্যাপারে অতটা কট্টর নন।
০৪. রক্ষণশীল পর্দা: ইসলামের নির্দেশনা, আলেমদের মতামত ও সামাজিক অবস্থার সাথে নিজেদের রক্ষণশীল দৃস্টিভঙ্গি মিলিয়ে নিজেরা পারিবারিকভাবে পর্দা মানেন এই পর্দাই রক্ষণশীল পর্দা। এই পর্দায় চেহারাতো ঢাকা থাকেই এমনকি হাত পায়ে মোজা পরা থাকে। চেহারা ঢাকার জন্য এই শ্রেণীর পর্দাকারীরা দুই ধরনের কাজ করেন ক. পাতলা কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে রাখেন, খ. চেহারা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে চোখের জায়গায় জাল দিয়ে রাখেন। কওমী মাদ্রাসার বিকাশ ও তাবলীগ জামায়াতের সদস্যবৃদ্ধির ফলে এ ধরনের পর্দা বিকশিত হচ্ছে।
০৫. কট্টরপর্দা: রক্ষণশীল পর্দার সাথে আরো একধাপ এগিয়ে এই শ্রেণীর লোকেরা পর্দা করে থাকেন। চোখবাদে সব কিছু ঢেকে রাখার পাশাপাশি এ শ্রেণীর লোকেরা মহিলাদের পোষাক ও কণ্ঠকে সতর বা গোপনীয় বলে মনে করেন। এদের স্ত্রীগণ জোরে কথা বলতে পারেন না। তাদেরকে এমনভাবে কথা বলতে হয় যেন পরপুরুষরা না শোনে এবং তাদের ব্যবহার্য কাপড় এমন স্থানে শুকাতে দেয়া হয় যাতে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৃষ্টিতে না পড়ে। বর্তমান সময়ে এ ধরনের ধারণা একদিকে বিকশিত হচ্ছে অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষিতদের কারণে এ ধরনের আচরণ হাসির খোরাক যোগাচ্ছে।

আধনিককালে বিশ্বব্যাপী পর্দার কনসেপ্ট দেশ জাতি অনুসারে ভিন্নতা দেখা যায়। কোনো কোনো সমাজে মনে করা হয়। পর্দা বৃদ্ধ বয়সের জন্য জরুরী জোয়ান বয়সে তেমনটা নয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধারণাটা সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ যৌবনেই পর্দা জরুরী বৃদ্ধ বয়সে অতটা নয়। কেউ বলেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক রমনীর জন্য সর্বদা পর্দা পালনীয় বিধান। এটা বোঝার জন্য পর্দার উদ্দেশ্য ও পটভূমিতে ফিরে যেতে হবে। যেহেতু ইসলাম অবাধ যৌনাচারকে চরমভাবে পাপ বলে চিহ্নিত করেছে। এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষের মেলামেশায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সেজন্য সে নিষোধাজ্ঞা পালনের সুবিধার্থে পর্দার বিধান আরোপ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পর্দা আবার ভিন্ন দৃষ্টিতে আলোচনাযোগ্য
বিশ্ব যারা বেশী পর্দা মেনে চলেন তাদের পর্দা মূলত তিনরকম
০১. স্থানীয়ভাবে সমন্বিত পর্দা, ০২. নিজস্ব গোষ্ঠিগত পর্দা, ০৩. আগুনিক ফ্যাশনেবল পর্দা।
স্থানীয়ভাবে সমন্বিত পর্দা হচ্ছে ইসলামী বিধানের সাথে মিলিয়ে নিজের দেশ ও সমাজের সাথে সমন্বয় করে এক ধরনের পর্দা করা হয়। এটা সমাজ ও ধর্মের চাহিদার আলোকে আপনাথেকেই সম্বনয় সাধন হয়ে থাকে। যেমন পাঞ্জাবের একজন সাধারণ মহিলা ঘোমটা দিয়ে বা ওড়নাপরা একজন নারী। অথবা আরবের একজন মুখঢাকা নারী, অথবা ইরানের মুখখোলা বোরকাপরা এজকন মহিলা। তারা ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থার একটা সমন্বয় করে নিয়েছেন।

নিজস্ব গোষ্ঠিগত পর্দার প্রচলন অনেক দেশ ও সমাজে দেখতে পাওয়া যায়, যেমন আফগানিস্তানে এই পর্দার সাথে রয়েছে আরো নানা বিধিনিষেধ, রাজস্থানের একজন রমনীর পর্দা সেখানকার পোষাক আশাক এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
আধুনিক ফ্যাশনেবল পর্দা আসলে কোনো পর্দা নয়। পর্দার সংজ্ঞা হিসেবে যদি আমরা ইসলামে নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো একটাকেও গন্য করি তাহলে এটা আসলে পর্দার অর্ন্তভুক্ত নয়। এ ধরনের পর্দার একটা ট্রেন্ড সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে চালু হয়েছে। এটা আসলে পর্দার নাম করে পর্দাকে ফাঁকি দেয়ার একটা কৌশলমাত্র। এধরনের পর্দায় আটোসাটো পোশাক পরে শরীরের আকষণীয় অঙ্গগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। সাধারণত হিজাব, টি শার্ট, শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরে এ ধরনের পর্দা অনুসারীরা। কখনো বোরখা পরেও এ ধরনের পর্দা করতে দেখা যায়।

নানা পোষাকে পর্দা :
১. শাড়িতে পর্দা: একসময় আমাদের দেশের মহিলারা শাড়ি পরে থাকতেন। মোটা সুতার শাড়ি দিয়ে যথাসম্ভব শরীর ঢেকে রাখতেন। হিন্দু মুসলিম সবার একই ধরনের পর্দা ছিলো। আর ঘোমটা পরা ছিলো সময় অভ্যাস শ্রেণী ও বয়সের সাথে সম্পর্কিত এবং আপেক্ষিক। পরে ব্রিটিশ মহিলাদের কাছ তেকে লেডিগেঞ্জি এবং ব্লাউজ পরার অভ্যাস আয়ত্ব করে। প্রথমদিকে ফুলহাতা গলাঢাকা ব্লাউজ চালু হলেও। গত শতাব্দীর শেষদিকে বাঙালী সমাজে পার্টি কালচার চালু হলে। হাতাছাড়া ব্লাউজ, পিঠখোলা, হ্রস্বহাতা এবং হাফ সাইজের ব্লাউজের প্রচলন শুরু হয়। এসময় মহিলাদের বক্ষবন্ধনী পরার রেওয়াজটা সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। সূতি কাপড় দিনে দিনে পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে পেটিকোট বা চায়া পরার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
২. সালোয়ার কামিজে পর্দা: সালোয়ার কামিজ বাঙালীর পোষাক নয়। ভারতের কিছু অংশ এবং পাকিস্তানে এর প্রচলণ রয়েছে। মূলত পাকিস্তান আমলে বাঙালী মেয়েরা সালোয়ার কামিজ ও ফ্রক পরতে শুরু করে। বিষয়টা নুতুন বিধায় ধরে নেয়া হলো যে এটা অল্পবয়সী রমনীদের পোষাক। দেশস্বাধীন হওয়ার পরও এমনকি এখনো চল্লিষোর্ধ রমনীরা শাড়ীই পরেন বেশীর ভাগ। এদের মধ্যে সালোয়ার কমিজ পরা কমই দেখা যায়। অল্পবয়সী রমনীরা আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শাড়ি পরলেও সালেয়ার কামিজটাই বেশী পরেন। তবে এই দুই ক্ষেত্রেই অনেকে দেহঢাকা এবং আটশাট পোষাক পরিহার করে ওড়না বা চাাদর ব্যবহার করে পর্দা করে থাকেন। অনেকে আবার প্রচলিত পোষাকের উপর বোরখা ছাপিয়ে পর্দা নিশ্চিত করেন যার যার মতো করে। এক্ষেত্রে তিন জেনারেশনে তিরকম পোষাক হয়ে গেছে। বর্তমানে বেঁচে থাকা প্রথম জেনারেশন শাড়ি- ব্লাউজ- পেটিকোট, দ্বিতীয় জেনারেশন -সালোয়ার- কামিজ- ফ্রক- থ্রিপিচ, তৃতীয় জেনারেশন জিন্সপ্যান্ট, শর্টস, স্কাটস, শার্ট, টি শার্ট। এভাবে বদলে গেছে। চতুর্থ জেনারেশনের পর্দা ও পোষাক দুটোই বৈচিত্রপূর্ণ হবে বলে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

৩. স্থানীয় পোষাকে পর্দা: বিশ্বজুড়ে মুসলিম রমনীরা স্থানীয় পোষাকে পর্দা করে থাকেন। যেমস থাইল্যান্ডের মুসলিম, আফ্রিকান মুসলিম চীণা মুসলিম এরা স্কার্ট ও স্কার্ট জাতীয় পোষাকে ঢিলেঢালা ভাব রেখে পর্দা করে আসছেন সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পর্দায় বোরখা ও হিজাব যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও তাই। এতদিন মহিলাদের একটাই পোষাক থাকলেও এখন পোষাকে বৈচিত্র আসার কারণে এখানে শ্রেণীভিত্তিক পোষাক ও পর্দার প্রচলন দেখা যায়। যেমন উচ্চবিত্ত শ্রেণীতে আধুনিক পোষাক সাথে আধুনিক পর্দা কখনোবা সাধারণ পর্দা, মধ্যবিত্ত শ্রেনীতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ পোষাক ও সাধারণ পর্দা দেখা যায় কখেনো কঠোর পর্দার দেখাও মেলে। আর বিভিণœ সামাজিক অনুষ্ঠানে বাঙালীয়ানা ঝাঁকভমকপূর্ণ পোষাক পরাই বর্তসান মধ্যবিত্তদের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এখানে মূল পর্দা কারীদের আলাদা করা যায়। এখানে আসাদের মধ্যে যারা অন্যসময় পর্দা করে কিন্তু অনুষ্ঠানে করেনা তারা আসলে সামাজিক পর্দা করে শরয়ী পর্দা নয়। এরা মূলত বাইরে পর্দা করে বের হয় চলাফেরার স্বাচ্ছন্দের জন্য। আর যারা এখানে এসেও পর্দা করে এরাই মূলত শরয়ী পর্দা মনে চলে।

৪. আধুনিক পোষাকে পর্দা: আধুনিক পোষাক পরিহিত রমনীদের মধ্যে পর্দাপথা বিকাশ লাভ করলে এধরনের পর্দা প্রচলন হয়। এতে উপরে রোরকা পরা থাকে সাথে হিজাব তার নিচে যার যার পছন্দ অনুযায়ী আধুনিক কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতীয় বা পশ্চিমা পোষাক মুসলিম ধর্মনেতাদের মতে বিধর্মী অনৈসলামী পোষাক পরে থাকেন। আবার অনেকের পর্দা পারিবারিক ঐতিহ্য কিন্তু এখন নিজেরা আধুনিক হয়ে গেছেন বলে আধনিকতার সাথে পর্দার একটা মিশ্রন করে থাকেন। এ ধরনের পর্দার মধ্যেই তথাকথিত আপত্তিকর পর্দা দেখা যায়।

পর্দার উপকরণ: পর্দা করার জন্য মুসলিমরা দুই ধরনের উপাদান ব্যবহার করেন। স্থানীয় ও সাধারণ। কিছু কিছু উপাদান স্থানীয় বা ঐতিহ্যগত আর কিছু উপাদান সারা বিশ্বময় বহাল রয়েছে। এটা মূলত ইসলামী কনসেপ্ট থেকে আসা। মূল দুটো উপাদানই পর্দাকে নির্দেশ করে, বোরখা ও হিজাব।

বোরখা বলতে সাধারণত রঙীণ নয় এমন আলখাল্লা জাতীয় পোষাককে বোঝানো হয়। বোরকা হবে ঢিলেঢালা ও সতর ঢাকা। যদিও বর্তমানে বোরকার মুল ধারণা খুব কম ক্ষেত্রেই রক্ষিত হচ্ছে। নানারকম রংবেরং ও নকশার ডিজাইন পাওয়া যায়। পাশাপাশি আটোশাটো পোষাকে আধুনিক বোরকা ওবারকার মূল কনসেপ্ট তেকে বহুদূরে সরে গেছে।
হিজাব বলতে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মুখ ঢাকা ও মূখ খোলাই মূলত ধারা এর বাইরে এর প্রকারভেদ হাজার রকমের আছে।
আর সাধারণ পর্দা বলতে ঘোমটা ও শরীর ঢাকা শহ শাড়ি পরা আর ঘোমটা দিয়ে মাথা ও শরীর ঢাকাসহ সালোয়ার কামিজ পরে যে পর্দা মানা হয়। সেটাই বোঝানো হয়। আমাদের দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এ ধরনের পোষাক পরে থাকেন।
এর বাইরে আরো ৩ রকমের পর্দা ইদানিং দেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেগুলো হলো বিপদাপিত পর্দা: হিন্দু মেয়েরা ঊতক্তকারীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে পর্দা করে। মজলিশী পর্দা: একজন মহিলা আদতে পর্দা করেন না। পর্দা বলতে ইসলাম নির্দেশিত পর্দা। কিন্তু একটা জায়গায় এসে পরিবেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য যে পর্দা করেন। যেমন হলিউডের এক অভিনেত্রী দুবাইয়ের এক মসজিদ পরিদর্শনের জন্য যে পর্দা করেছেনে। বা একজন আধনিক মহিলা একটা ধর্মীয় মজলিসে বসে যে পর্দা করেছেন।
প্রতারণা পর্দা: অনেক অপকর্ম করার জন্য নারী অপরাধীরা বোরকাকে বেছে নেয়। এর মধ্যে স্মাগলিং ছোটোখাটে চুরি, দেহব্যবসা আরো নানারকম অপরাধ করার জন্য এমনটা করা হয়। কারণ বোরকা পরা একজন রমনীকে এখনো সমাজে ভালোচোখে দেখা হয়।

সূত্র:
এধরনের কোনো লেখা ইতোপূর্বে আমার চোখে পড়েনি। এটা আমার নিজস্ব অনুধাপন থেকে লেখা।
প্রিয় পাঠক, এটা কোন ধর্মীয় বিশ্লেষন ধর্মী লেখা নয়। এটা কোন আধুনিক মতবাদের বিশ্লেষণ নয়। এটা পর্দাপ্রথার একটা স্বরুপ ব্যাখ্যা করা মাত্র। আজকের জন্য এটা কেবল বিশ্লেষণধর্মী রচন্ াকিন্তু একশ বছর পরের কোনো সময়ের জন্য এটা ইতিহাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.