নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনার জাগরণ নতুন দিনের বিষ্ফোরণ। আমরা গড়ব নতুন ভূবন, নতুন আশা মনে। এই কথাটির প্রতিধ্বনী বাজুক জনে জনে।

সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।

› বিস্তারিত পোস্টঃ

`` শুভ সংবাদ'' জাহাঙ্গীর আলম শোভন

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০৩

বাংলা! সাহিত্য! রম্য! গল্প! ছোটগল্প
শুভ সংবাদ
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

এবার ভালো একজন ক্ষমতায় এসেছেন। সবাই তাই বলাবলি করছিলো। বলাবলি হচ্ছে রাজভবনে, রাজ কার্যালয়ে, সম্ভাব্য বংশীয় লোকদের বৈঠকখানায়। চায়ের কাপে ঝড় তুলেও রাজার গুনগান হচ্ছে। কাঁচাঘরের সেলুন দোকান, অভিজাতপাড়ার পানশালায় সর্বত্র রাজার সুখ্যাতি চর্চা।
রাজার নাম যশ করছিলো সৈয়দ, চৌধুরী, খানরা, বিদেশী বেনিয়া, দেশী দালাল, কেউ বাদ নাই। এমনকি ছিছকে চোর আর মদ্যপ অলসরা আজকাল মহারাজের সুনাম নিয়ে মেতে থাকে। ঝগড়াটে নারী, গৃহভৃত্য, ধর্মপতি এবং প্রাক্তন রাজ কর্মচারীরা পর্যন্ত বাদ রইল না। সেনা দলের কথা তো বলাই বাহুল্য।
সব প্রশংসা ছাপিয়ে একটা প্রশংসা বড় হয়ে উঠেছে সর্বত্র। বুদ্ধিজীবীরা বড়ো বড়ো কলাম লিখছে খবরের কাগজে। সুশীল সমাজের লোকেরা দূর দর্শনের পর্দায় কথা অনুষ্ঠানে তারই প্রশংসা করছে বার বার। দরবার হলে মসজিশ বসলেই এ বিষয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি পড়ে। বিদেশ মন্ত্রী এই বার্তা নিয়ে ছুটে যায় খ্যাত-অখ্যাত দেশে। দেশমন্ত্রী এই কথা প্রচারের জন্য গলির মোড়ে মুদি দোকান উদ্ভোধন করতে যায়।
সে বহুল প্রশংসিত বিষয়টি হচ্ছে মহারাজ, রাজ্য সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা শুনতে চান না। তিনি শুনতে চান শুভ সংবাদ। তার কথা একটাই রাজ্য সম্পর্কে খারাপ খবর তিনি শুনতে চাননা, ভালো খবরই তার কাম্য। প্রতিদিন তাকে ভালো খবর শুনাতে হবে।
ভালো খবর যে শুনতে চায় সে তো ভালো রাজা না হয়ে যায় না। এখন আর শুভ সংবাদের অভাব নেই। রাজ্যের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব প্রান্ত থেকেই শুভ সংবাদ আসে। রাজার আত্মীয়রা শুভ সংবাদ দেয়, আমরা আপনার নাম যথ রক্ষায় বদ্ধপরিকর। রাজ কর্মচারীরা শুভ সংবাদ দেয়, ন্যায়নীতির জন্য আমরা আপনার সাথে সব সময় আছি। রাজার অনুসারীরা বলছে, সমস্ত দুসংবাদের কবর দিয়ে আমরা শুভ সংবাদ আপনার জন্য আনবোই। লোক-লস্কররা বলছে- রাজন, আপনার ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য সকল ত্যাগই আমাদের কাছে মামুলি। কোতোয়ালরা বলছে সকল দুস্কৃতি দুর্বিনীতি নাশিব আমরা। মন্ত্রী মশাইরা রাজার শুভাদিশুভ সভা-সমিতিতে প্রচার করে চলেছে।
অতএব শুভ সংবাদ আসে অমাত্যবর্গ থেকে- সবকিছু ঠিকমতো চলছে। আমলারা বলেন- উন্নয়নে সফলতা। শাস্ত্রীরা বলে- জয় হে মহারাজ। খাদ্যমন্ত্রী বলেন- খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন- অর্থের গতিপ্রবাহ ভালো। ব্যবসায় মন্ত্রী বলেন- ব্যবসা-বাণিজ্য ঊর্Ÿমুখী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন- শিক্ষার মান ইতিহাসের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। শিল্পমন্ত্রী বলেন- শিল্প সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ। কুষিমন্ত্রী বলেন- কৃষিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। কোতায়াল মন্ত্রী বলেন- কোতোয়াল একশতে একশ।
চারদিকে শুধু শুভ সংবাদ। শুভ সংবাদ দিয়ে মহারাজ সকালের নাস্তা করেন, শুভ সংবাদ দিয়ে তিনি গোসল করেন, শুভ সংবাদ দিয়ে জানালার পর্দা লাগান, শুভ সংবাদ দিয়ে চশমার কাঁচ মোছেন, শুভসংবাদ দিয়ে তিনি জামাকাপড় কাচেন, শুভসংবাদ দিয়ে তিনি সারিন্দা বাজান, শুভ সংবাদ সাথে কওে তিনি বিকালে সূর্যাস্ত দেখেন, শুভ সংবাদ দিয়ে তিনি আকাশের তারা গোনেন। মোটকথা শুভ সংবাদই তার নিত্যসঙ্গী।
কিন্তু সমস্যা হলো যখন বিদ্যুতের জন্য লোকেরা বিদ্যুৎ কুঠিরে হামলা চালায়, গ্যাসের জন্য রাস্তা অবরোধ কওে, পানির জন্য ঝাড়ু মিছিল করে, খবরি কাগজের পাতায় খুনোখুনির কথা লেখে, বিদেশের থেকে কাজের লোকেরা ফিরে আসে, নিত্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যায় বলে জনতা হাপিত্যেস করে, রাজার প্রিয়ভাজন লোকেরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়। তখনো সু-সংবাদ বয়ে আসে যে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। গ্যাস সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এক পায়ে খাড়া, পানি পরিস্থিতি বদলাবে শীঘ্রই, খুনোখুনি আসলে তেমন নাই, যা হচ্চে তা মামুলি। বিদেশে লোক পাঠাতে বিদেশ ভ্রমণ বাড়ানো হয়েছে। পণ্যমূল্য হ্রাসের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। সকল অপরাধেরই সাজা হবে। দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। আইন বিচার শাসন সুষ্ঠভাবে পরিচালনা হবে। বাহ বাহ শুভ সংবাদই বটে। দেশ জুড়ে শুভ সংবাদের বন্যা চয়ে চললো।
উঠোনের পাড়ে পেয়ারা তলায় শুভ সংবাদ, রাজকীয় ভোজসভায় শুভ সংবাদ, ফুলের বাগানে শুভ সংবাদ, রাজ সভার শুরুতে শুভ সংবাদ, এমনকি লোকেরা স্বপ্নেও শুভ সংবাদ দেখে। এই শুভ সংবাদ ঘোষণা যন্ত্রের পর্দাও হরদম বাজানো হয়। তারহীন কলের গানেও শুভ সংবাদ।
হঠাৎ একদিন নিয়মের বেড়াজালে কিনা কে না জানে, কারো প্ররোচণায় কিনা কে জানে, কারো ষড়যন্ত্রের কারণে কি না তাও কে জানে, প্রসাদ রাজনীতির কারণে কি না কে জানে হঠাৎ চারদিকে বিচ্ছিন্নতা শুরু হলো। তবুও সুসংবাদ এলো সব ঠিক হয়ে যাবে, ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সবাই সতর্ক আছে, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু না ঘটনা একটা ঘটলো। রাজা সিংহাসনচ্যুত হলেন, মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে গেলো, অনুসারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। নতুন রাজা ক্ষমতা নিলো সর্বত্র তার প্রভুত্ব কায়েম হলো।
বিগত রাজা একেবারে জীর্ণশীর্ণ বিধস্ত হলেন। তিনি অস্থির হলেন। তিনি ক্ষুব্দ ও মনোক্ষুণœ হলেন, তিনি চিন্তিত ও ব্যথিত হলেন, তিনি বিষন্ন ও খুদিত হলেন। কিন্তু তার শুভসংবাদ আসা থেমে নেই এবং তিনি এখনই কেবল সবচে বড়ো সুসংবাদটি শুনলেন যে নতুন রাজাও একই ভুলগুলো করছেন এবং জনগণ ধৈর্যহারা হয়ে পাঁচ বছর পর ওই রাজাকে নামিয়ে আবার তাকে বসাতে পারেন। এই শুভ সংবাদ পেয়ে সাবেক রাজন আরাম করে খেলেন। গান শুনলেন আর গান শুনতে শুনতে শুয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখলেন স্বপ্নে অনেক শুভ সংবাদ পেলেন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, খুন-খারাবি হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো আসলে তার জন্য শুভ সংবাদ বটে।
তিনি রাতভর স¦প্ন দেখেন। আর দিনভর শুভ সংবাদ শুনেন।
নতুন রাজা যিনি তিনি শুভ সংবাদ শুনেন সবকিছু ভালোভাবে চলছে, কোথাও কোন সমস্যা নেই। চলছে ব্যসবার চাকা, চলছে গাড়ির এঞ্জিন, চলছে বৈদেশিক আলাপ, চলছে কৃষকের সেবা, চলছে শ্রমিকের কল্যাণ, হচ্ছে জনতার মঙ্গল। আর আমত্যরা তো বলেই চলেছেন আগের রাজার অপকর্মের কারণে জনগন আপনাকে এত ভালোবেসেছে, এত ভালোবেসেছে, এত ভালোবেসেছে যে আপনিই সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবেন।
আর প্রাক্তন রাজাও প্রতিদিন শুভসংবাদ পেয়ে চলেছেন। আলুবাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে রাজার নামে শ্লোগান দিয়েছে আলপট্টির প্রজারা। নাপিতপাড়ায় খুনের অভিযোগে রাজার পদত্যাগ চেয়েছে নিখিল বিশ্ব নাপিত সমিতি। অন্যায়ভাবে বুড়োপন্ডিতকে ধরে নেয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করেছে পাঠশালার বালকেরা। চাষীবউকে ধর্ষনের প্রতিবাদে উতপ্ত কৃষকসমাজ। ব্যবসায়ী নেতাকে গুম করার কারণে ব্যবসায়ীরা নালিশ দিয়েছে বিদেশী রাজার কাছে। আরো কত শুভ সংবাদ। এসব সংবাদ শুনে আরামে বালিশ কোলো বিশ্রাম করেন সাবেক রাজা, প্রমোদভ্রমনে নদীবিহারে যান বসন্তনিশীথে, বিকেলে গা এলিয়ে বসে দাত খোচান নির্ভাবনায়। সকালে কান খোচান খোসগল্প করতে করতে। এভাবে দিন যায় তার।
একদিন সত্যি সত্যি শুভ সংবাদ এলো। তার ডাক পড়েছে। ক্ষমতাসীন রাজা ব্যর্থ হয়েছেন। জনগন এখন সাবেক রাজাকে চায়।
কি আর করা জনতার দাবির মুখে তিনি ক্ষমতা নিলেন। তিনিতো আর ক্ষমতা লোভী নন। তিনিতো বাকী জীবন অবসরে কাটাতে চেয়েছেন। তিনিতো জনতার কল্যানের কথা ভেবে ভেবে রাতদিন পার করে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু জনগনকে তাকে চায়, দেশের ডাকে, দেশের মানুষের হাঁকে তিনি ছুটে এসে ক্ষমতার মসনদ নিলেন। আবার শুরু হলো তার আসল শুভসংবাদের বন্যা।
পতিত রাজা সাময়িক চিন্তিত হলেন। কিন্তু চিন্তার রেশ কাটতে না কাটতে তিনিও শুভ সংবাদ শুনতে শুরু করলেন। তিনি যেসব ভুল করেছেন। সেগুলো সদ্য মসনদে আসীন রাজাও অবলীলায় করে চলেছেন। এগুলো তার শুভ সংবাদ। সামনে তার শুভদিন আসছে। সেই শুভ দিনের স্বপ্নে বিভোর নবপতিত রাজা। তার আনন্দ আর ধরে না। স্তুতিবাদীদেও নিয়ে তিনি খোশগল্পে মেতে থাকেন। নতুনরাজাও আনন্দ সংবাদে বিভোর থাকেন।
শুভ সংবাদ আসেনা কেবল দরিদ্র জনগনের। আপদ গেলে বিপদ আসে আবার বিপদ গেলে ্আপদ আসে। বাজাওে কোন সুসংবাদ কিনতেও পাওয়া যায়না। সেগুলো সম্ভ্রান্ত উচ্চ পদীয় লোকেরা নিয়ে ফেলে রাজার পায়ে। প্রজারা প্রতিদিন কস্টমাখা মুুকে, কান্নামাখা বুকে, হতাশাশাখা চোখে দিন শুরু করে। তাদেরযে শুভ সংবাদ আনার কেউ অবশিষ্ট নেই। যারা শুভ সংবাদের, কিংবা ঠিকাদার তারা বিক্রি হয়ে গেছে বিদেশী প্রভুদের কাছে। যারা শুভ সংবাদের দোকান দিয়েছেন তারা শুধু তা রাজদরবারের লোকদের কাছেই বিক্রি করে থাকেন। যারা শুভ সংবাদ ফেরী করে তারা শুধু বড়ো বড়ো আমাত্য আর এলিটদেও বাড়ীতেই দরশন দেয়।
এমনকি খবরের কাগজের জনতার জন্য কোনো শুভ সংবাদ ছাপা হয়না। সেগুলো নাকি সব আগেই কিনে নিয়েছে সওদাগর আর বনিকরা। তারা অন্যকারো জন্য শুভ সংবাদ দেবেনা। দিলে মাইনে বন্ধ হবে, লেঠেল দিয়ে মারানো হবে, এমনকি কাগজও ছাপা বন্ধ হতে পারে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যেতে হবে কাগজের সম্পাদককে।
কার এতো ঠেকা যে নিজের খেয়ে বনে বাঘ তাড়ানো?

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.