নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনার জাগরণ নতুন দিনের বিষ্ফোরণ। আমরা গড়ব নতুন ভূবন, নতুন আশা মনে। এই কথাটির প্রতিধ্বনী বাজুক জনে জনে।

সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।

› বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার লোক সাহিত্য জীবনেরই অংশ

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩০

বাংলার লোক সাহিত্য জীবনেরই অংশ
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

কৃষ্টি এবং কালচারের দিক থেকে পুরনো, বনেদী এবং অভিজাত জাতি খুব বেশি নেই পৃথিবীতে। সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত অনেক জাতিরই ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। প্রাচীন রোমান, চৈনিক, সিন্ধু অসিরীয়, মাছুপিছু ইত্যাদি সভ্যতার কথা বাদ দিয়ে আরো কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইতিহাসে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেখা মেলে। এর মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলিয়া, পলেনেশিয়া মেলোনেশিয়া, স্কন্ডেনেভিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু জাতি। মূল ইউরোপীয় ভূখ-ের কথা আলাদা। এসব জাতির ক্ষেত্রে তাদের হাজার বছরের পালিত কৃষ্টি আচারিত অনুষ্ঠান জীবনের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত নয়। সামাজিক সংস্কার, ধর্মীয় বা অদৃশ্য বিশ^াস, ভাগ্যলিপিতে বিশ^াস, নিছক বিনোদন ইত্যাদি পর্ব সম্পৃক্ত আচার-অনুষ্ঠান, প্রার্থনা, পূজা, নাচ-গান, খেলাধুলা ও অন্যান্য সংস্কার প্রায় অধিকাংশ জাতির ক্ষেত্রেই রয়েছে। আবার জীবনের একান্ত কিছু ধাপে অনুসৃত রীতি-নীতির সাথে কিছু সংস্কৃতি চর্চার দেখা মেলে যা যাপিত জীবনের একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠ বাঁধা। সব জাতিতে এ রকম আবশ্যিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি সার্বজনীন উদাহরণ হলো বিবাহ অনুষ্ঠান। দুটি ভিন্ন পরিবারের দুইজন মানুষের মিলনের এই পর্বকে ঘিরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও জাতি আজো নানা রকম আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। একই দেশ ও জাতিকে ভিন্ন ভিন্ন সম্পন্দদায়ে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশ^াসের কারণে সেখানেও বিবাহসহ এ ধরনের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। এ ধরনের কিছু আচারে সংস্কৃতির ছোয়া প্রায় সব জাতিতে থাকলে জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে নানাবিধ রঙ ঢঙে সংস্কৃতির লালন ও সাড়ম্বরে পালন খুব বিরল জাতিতেই মিলবে।
বাঙালি এমন এক জাতি যারা জীবনের প্রতিটি পর্বে নানাবিধ উপাচারে ভরে রেখেছে। এসব পর্বসমূহকে আমরা অত্যন্ত মৌলিকভাবে কয়েক ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. জীবনের পালনীয় অনুসঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আচারিত সংস্কৃতি ।
২. কৃষি, ফসল, জমি, খাদ্য তথা প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্কের বিষয়ে তৃণমূল লোকদের সংস্কৃতি চর্চা।
৩. ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ^াস হতে উৎসারিত যে কোনো অনুষ্ঠানিকতা ও রীতি-নীতি।
৪. একান্ত আনন্দ ও বিনোদনের জন্য আয়োজিত বিনোদন অনুষ্ঠান ও নিছক আনন্দ লাভের জন্য অনুষ্ঠান।
৫. রাজন্যবর্গ, জমিদার, মহাজনের ঋণের টাকা বা ভূপতি কতৃক আরোপিত কোনো বিশেষ পবৃ যা যুগের সাথে মেশানো যাবে না।
এর মধ্যে বাঙালির জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্য কর্ম আমাদের একজন সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে পরিচিত হতে সাহায্য করেছে। বাঙালি সন্তানের গর্ভকাল থেকে শুরু করে নানাবিধ উপাচার। গর্ভকালীন এসব লোকাচার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে। এরপর বিয়ের কথা তো বলাই বাহুল্য। অঞ্চলভেদে ভেদে এসব তারতম্য যাই থাকুন বিয়ে মানে নানাবিধ আনন্দ উপাখ্যান, শত আচার-অনুষ্ঠান আর হরেক রকম রীতি-নীতি পালনের মহড়া। বাঙালি বিয়ের এসব আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয় বিয়ের বেশ কিছু দিন আগে থেকে এবং শেষ হয় বিয়ের অনেক পরে গিয়ে। বিয়েতে প্রতি পর্বে থাকে নানা শ্রুতিমধুর গান। আমরা ছোট বেলায়ও এসব দেখেছি। যদিও খুব দ্রুত এসব বদলে যাচ্ছে। তার জায়গায় স্থান দখল করছে শহরে, আধুনিক, পরদেশী আর কিছু অপসংস্কৃতি ।
প্রকৃতির সাথেও এ দেশের মানুষের হাজার বছরের মিতালী। অমাবশ্যা-পূর্ণিমার দিন কষে জমি চাষে চাষী, জালা বোনো, রোয়া লাগায়, ধান-পাট কাটে ইত্যাদি। বস্তুত কৃষর সাথে মেঘ-বৃষ্টি রোদের সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাঙালির জীবনে এই কৃষিকে কেন্দ্র করে আচারিত অনুষ্ঠানমালা বাংলা সংস্কৃতির সমৃদ্ধ এক অংশ। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে কৃষকের কণ্ঠে কণ্ঠে গানের সূর আর দক্ষিণা বাতাসের দোলা বাঙালির চিরন্তন অবহকে রাঙিয়ে তোলে আনন্দের ঢেউয়ে। ফসলের মাঠে পাকা পাকা সোনালী ধানে নিয়ে আসে কৃষাণ-কৃষাণির যুগের বারতা। নবান্নের নতুন ভাতে আবারো কৃষক কূল গানে গানে উৎসব করে জানিয়ে দেয় আনন্দের ঐক্যতান। জীবন ও জীবিকার একনিষ্ঠ কৃষির সাথে সাহিত্য ও সংস্কৃতি র এমন বন্ধন আর কোথায় পাবে?
প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে প্রাচীন মানুষদের যে দলভিত্তিক নৃত্য বা উৎসবের কথা পাই। সেটা একটা বিশ^াস, প্রার্থনা, জাদুটোনাজনিত। কিন্তু বাঙালির সবুজ ক্ষেতে গানের সূর কিংবা নৌকার মাঝির সেই আবেগভরা টান। গাড়িয়ালের মনের গভীর থেকে আসা গীতি একদিকে যেমন স্বত:স্ফূর্ততার প্রকাশ অন্যদিকে তা কোনো বাধ্য-বাধকতা থেকে নয় বরং জীবনের গভীর থেকে আসা এক অমোঘ টান এবং নির্মোহ জীবনের এক চিরন্তর প্রশান্তির প্রকাশ। আর এসব গানের ভাব ও ভাষা তা এ দেশের মানুষের জীবনের নিগুঢ় বাস্তবতার অংশ বৈ আর কিছুই নয়। সেখানে নর-নারীর মিলনবিরহ, প্রকৃতির মুগ্ধতা, বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রার্থনা এসবই দোলায়িত হয়েছে এক পরম্পরা সুরের হৃদয়ছেড়া টানে।
এ জন্যই বাংলার লোকজ সংস্কৃতি একদিকে হাজার বছরের পুরনো। সেই চর্যাপদের কথাই আমরা যদি ধরি, আজ থেকে এক হাজার বছর আগে কাহৃপা, গুন্ডুরী পা, সুতুপাদের লেখা কাব্য জীবন সেও কোনো রাজকীয় সাহিত্য ছিলো না। ছিলো না রাজ দরবারের আজ্ঞাবহ কোনো স্তুতিবাক্য বরং প্রাজ্ঞজনের ভাষায় তাদেরই সমাজ সংস্কার উঠে এসেছে সেইসব লোক কবিদের কথায়।
আবার বাঙালি সংস্কৃতি জীবনের ঘনিষ্ঠ বাস্তবতাকে ভর করে প্রসারিত হয়েছে। জীবনের অত্যাবশ্যক বিষয়সমূহের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বাঙালির লোকজ গান, লোকজ খেলাধুলাও। এসব খেলাধুলাও বাঙালির জীবন, পেশা ও ঋতুর সাথে সম্পৃক্ত। নৌকা বাইচ, বলিখেলা, ষাড়ের লড়াইসহ এমনকি বাঙলার কিশোর-কিশোরীদের সেসব দারিয়াবান্দা, হোমগুটি, কানামাছি, গোল্লাছুট এসব খেলার মাঝে ও জীবনের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
বর্ষায় এ অঞ্চলের মানুষের অবসর থাকে। সে অবসরটাকেও তারা কাজ আর বিনোদন দিয়ে বাঙময় করে রেখেছে। গ্রামের রমণীরা বর্ষার অবসরে নকশী কাঁথা বুনে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আর গুনগুনিয়ে গায় ভালোলাগা আর ভালোবাসার গান। প্রিয়জনের জন্যে যতœ করে তুলে রাখে ফুলতোলা রুমাল ‘‘‘ভুল না আমায়’’।
জীবনের এমন বিকাশে কৃষ্টির এমন প্রকাশ আমাদের মনকে গর্বের স্মৃতিতে ভরে দেয়। পৃথিবীর প্রায় সব জনপদেই ধর্ম মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে শত বছরের পরিক্রমায়। এই বাংলায় তার ইতিহাস আরো পুরাতন, সমৃদ্ধ ও গভীর সেই প্রাচীন আর্য, সনাতন আর বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস থেকে শুরু করে আজকের মুসলমান সমাজ সর্বত্রই ধর্মের সাথে বাঙালি নিজেদের সংস্কৃতি র এক সুষম মেলবন্ধন ঘটিয়ে নিয়েছে। আর্য ও হিন্দু ধর্মের নানা পর্ব পার্বনে নাচ-গান, আনন্দ-উৎসব-পটকাবাজি, রং ছিটানো হাজার বছরের সংস্কৃতি। কিন্তু ইসলামী ধর্মবিশ^াসে এ ব্যাপারগুলো সেভাবে না আসলেও মুসলমানগণ ঈদ উৎসবের সাথে ঈদমেলাকে সাড়ম্বরে পালন করে আসছে সেই আবহমানকাল থেকেই আনন্দ-বিনোদন অনুসঙ্গসমূহ নিজেদের মতো করে উদযাপন করে আসছে কালে কালে এখানেও বাঙালি ধর্মবিশ^াসে জীবন আশ^াসে সংস্কৃতির প্রশ^াসে একাকার। আজ ধর্ম, রাজনীতি, জীবন-জীবকা, সংস্কার, ইতিহাস সবমিলিয়ে জাতীয় উৎসব আয়োজনের ক্ষণগুলো এ দেশের মানুষ রঙ্গীন করে নিয়েছে আপন আপন রঙে। কয়েকটি উৎসবে জাতীয়তার এবং সার্বজনীনতার একটা রুপ লাভ করেছে যেমন দুটি ঈদ উচ্ঞসব আমাদের এটি জাতীয় দিবস, স্বাধীনতা বিজয় ও ভাষা দিবস দুর্গাপূজা এবং সর্বেসার্বজনীন বাংলা নববর্ষ উদযাপন। মাঘী পূর্ণিমা, বড়দিনের আঁচটা হয়তো রাস্তায় বের হলে সেক্ষেত্রে গায়ে লাগে না কিন্তু অন্য দিনগুলো সময়ের বেহায় নেই বদলে দেয়। এর বাইরের অন্য উপলক্ষ্যগুলোও বাঙালি নিজের মতো করে পার করে সেটা রবিউল আউয়াল, শবে বরাত, রমযান, জন্মষ্টামী ইত্যাদি।
আজ নাগরিক সভ্যতা ও প্রাযুক্তিক বিনোদনের যুগেও বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি গুলোর রং একটুও কমেনি বরং বেড়েছে। টেলিভিশন নামক যন্ত্রের পর্দায় ঈদ অনুষ্ঠানের সমারোহ দেখলেই আমরা তা আঁচ করতে পারি। স্মৃতিসৌধের বেদীতে হাজারো মানুষের ঢল শহীদ মিনারে ফুলের মিছিল, রমনার বটমূলে লাল-সাদায় সমারোহ সব তো জীবনের কথাই বলে

তথ্যসূত্র: রাখালী, লোকসাহিত্য পত্রিকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.