![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
গণমাধ্যমের শব্দ মিতব্যয়িতার নীতি
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ছাপাখানা আবিষ্কার গণমাধ্যমকে সার্বজনীন রুপ দিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম যেমন পত্রিকা, টিভি, রেডিও, অনলাইন ইত্যাদি ক্ষেত্র বিকশিত হওয়ার কারণে গণমাধ্যমের বিস্তৃতি ঘটেছে তৃণমূল পর্যায়ে। এক ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বকে একটি চোখ দিয়ে দেখার সুযো্গ করে দিয়েছে, সেই চোখটির নাম গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় নানা ভাবে লেখা, শব্দ, ছবি ভিডিও ইত্যাদি। এসবের রয়েছে মাপ পরিমাপ। একসময় পত্রিকার পাতার কলেবর আর রেডিও্র টিভির সময়ের সীমাবদ্ধতাই গণমাধ্যমে শব্দ ব্যবহারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে অনলাইন সংবাদপত্রে অফুরন্ত পরিসর থাকা সত্বেও সংবাদের ক্ষেত্রে একই মিতব্যয়িতার নীতি প্রয়োজ্য। কারণ ব্যস্ততম সভ্যতার যুগে এবং শত শত মিডিয়া প্রসারিত এই সময়ে যত গঠনমূলক ও আকারে ছোট সংবাদ প্রকাশিত হবে ততই জনগনের চোখে পড়ার এবং পাঠধন্য হবার সুযোগ বেশী হবে। কারল আজকাল কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্চি যে, আমার লেখা সংবাদটি কতজন পড়ছে বা কতবার পড়া হচ্ছে।
কেন আজকের এই সময়ে এসেও এই কথা প্রযোজ্য যে গণমাধ্যমের সংবাদ নীতিমালায় বস্তুনিষ্ঠতা, বিশ্বাস যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা, যথাসংবাদ, ইত্যাদি বৈশিষ্টের পাশাপাশি আরো একটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা হলো শব্দের ব্যবহারে মিতব্যীয়তা। অথাৎ এখানে বাহুল্য চলবেনা, অপ্রয়োজনীয় শব্দ পরিহার করতে হবে, কোনো অলংকার বা সাহিত্য উপমা গ্রহণযোগ্য নয়, থাকবেনা প্রতিবেদকের নিজস্ব চিন্তার কোন প্রতিফলন। সে কারণগুলো আলোচনা করা যাক।
জাগতিক ব্যস্ততা ও সময়ের সদ্ভ্যবহার
আজকাল মানুষ পেশাগত ও জাগতিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করে থাকে, সকালে চায়ের টেবিলে, দিনে কাজের ফাকে কিংবা বিকেলে আড্ডায় অথবা রাতের বিশ্রামের সময় মানুষ কেবল পত্রিকার পাতায় বা টিভিতে চোখ রাখতে পারে। এই সময় স্বল্পতার কারনে অপ্রয়োজনী কোনো কিছু পড়ার সময় নেই। বাহূল্যযুক্ত খবর পড়ে নস্ট করার মতো সময় মানুষের হাতে নেই। তাই সংবাদকে হতে হবে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যনির্ভর আর এমনটা হওয়ার জন্য শব্দের মিতব্যয়িতা আবশ্যক।
যেমন: ‘‘১১ জনের ফুটবল টিম নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয় তুলে নিল চ্যাম্পিয়ন মোহন বাগান।’’ এটা না লিখে লিখতে হবে ‘‘ মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে’’ কারণ ফুটবল ১১ জন নিয়ে খেলতে হয়, আর জয় সব সময় প্রতিপক্ষের সাথেই হয়, আর না জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়না।
মানুষ তথ্য ও সত্য জানতে চায়:
সংবাদ সাহিত্যকর্ম নয়। পাঠক যখন সংবাদ পড়ে তখন পাঠক সঠিক তথ্যটি কেবল জানতে চায়, সংবাদ সর্ম্পর্কিত কোনো কবিতা আবৃত্তি নয়। তথ্যের বাইরের বকবকানী পাঠককে বিরক্ত করবে এবং সংবাদবিমূখ করবে। পাশাপাশি সংবাদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তখন মনে হবে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এত কথা বাড়ানো হচ্চে।
যেমন: একটি গ্রামে বাজ পড়ে তিনটি গরু মারা গিয়েছে। এখানে সে গ্রামের নামকরনের ইতিহাসের কোনো গুরুত্ব নেই।
স্থান ও সময় স্বল্পতা্:
পত্রিকার পাতায় যেমন রয়েছে স্থানের অভাব, তেমনি টিভি রেডিওতে রয়েছে সময়ের মাপকাঠি। আপনাকে নির্দিষ্ট কলামের মধ্যে সংবাদটি শেষ করতে হবে, আর নির্ষ্ট সময়ের মধ্যেও। তাই যতটা বাহুল্যবার্জিত করা যায় ততই মঙ্গল। আপনি যত কম শব্দ ব্যবহার করে আপনার সংবাদকে সঠিকভোবে তুলে ধরতে পারবেন ততই আপনার মুন্সিয়ানা প্রকাশ পাবে। সঠিকভাবে সঠিক অর্থ দেখে সঠিক শব্দটা কেটে দিতে পারা একজন সম্পাদকের খুব বড়ো একটা যোগ্যতা। তাছা্ড়া অনলাইন সংবাদ পত্রে এই সীমাবদ্ধতা্ একটু কম হলেও তার একটি পরিমাণ রয়েছে।
যেমন: প্রধানমন্ত্রী সেতু উদ্ধোধন করতে গেলেন। এখানে প্রধানমন্ত্রির ঘর থেকে বের হওয়ার বিবরণ জরুরী নয়। ঠিক সেতু উদ্ধোধনের পূর্বমুহুর্তের বর্ণনাই যথেষ্ঠ।
অন্য বিষয়ের জন্য স্থান বা সময় বরাদ্দ থাকা:
একটি পত্রিকা টিভিতে একটি মাত্র নিউজ যায়না। আরো নানা সংবাদ পরিবেশন করা হয়। পাশাপাশি থাকে বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য নানা আয়োজন। সূতরাং এত আয়োজনের ভিড়ে সংবাদটিকে সঠিক ভাবে পরিবেশনের জন্য এর স্থুলতা পরিহার করতে হবে। শব্দ এমনকি বাক্যের ক্ষেত্রেও মিতবয়িতার নীতি একটি সংবাদটি একটি যৌক্তিক আকার দিতে পারে। যথাশব্দের ব্যবহার একজন প্রতেবেদককে এই কাজে সাহায্য করতে পারে।
যেমন: জলবায়ু প্রকল্পের অর্থ আত্বসাৎ, এই সংবাদে প্রতিবেদকের কাছে এত তথ্য আছে যে তা পত্রিকার ২ পাতা খরচ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংবাদের গুরুত্ববুঝে তথ্যগুলোকে স্ক্যানিং করে প্রয়োজনীয় সারবস্তু এবং কিছু নমূনা আকারে পেশ করতে হবে। বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বাহুল্য মানে পন্ডিতি নয়:
প্রকৃত প্রস্তাবে সংবাদের ক্ষেত্রে কোনো কিছু সংযোগ করা কোনো বাহাদুরী নয়। বরঞ্চ বলা হয়ে থাকে যে সম্পাদক যতবেশী বাদ দিতে পারেন বা ছোট করতে পারেন তিনি ততবড় সম্পাদক। তাই সংবাদের ক্ষেত্রে অল্প কথার মধ্য দিয়ে ভাব প্রকাশ করাই সাংবাদিকরে দক্ষতা।
যেমন: ‘‘সকাল দশটায় মন্ত্রী ভাষণ দেয়া শুরু করেন এবং সোয়া এগারটায় তিনি তার ভাষণ শেষ করেন’’ এরকম না লিখে লিখতে হবে। মন্ত্রী সকাল ১০টা থেকে প্রায় ১ ঘন্টা ভাষন দেন।’’
সংবাদ সাহিত্য নয়:
এ কথাটাই একজন প্রতিবেদককে মনে রাখতে হবে। তিনি যত ক্রিয়েটিভ কিংবা সাহিত্যবোদ্ধা হন না কেন সংবাদ লেখার সময় তাকে সংবাদের নিয়মেই লিখতে হবে। সাহিত্যিকে ভাব বচন, আবেগ উপমা কিংবা শব্দচয়ন পরিহার করে সংবাদ লিখতে হবে। পাঠক সংবাদ পাঠ করার সময় সাহিত্যেরে অলংকার পাঠ করতে চাইবেনা।
যেমন: আসামী কাঠ কড়ায় দাড়ানোর মুহুর্তের বর্ননিা দিয়ে তিন বাক্য খরচ করা যাবে না। বরং যদি জরুরী হয় এমন বলা যেতে পারে ‘‘ঘেরুয়া পোষাক পরে আসামী ধীর পায়ে এজলাসে আসেন।’’ তাও সেটা যদি প্রাসিঙ্গক হয়, নচেত নয়।
পাঠকপ্রিয়তা:
সাধারণত দেখা যায় যে লেখা বা পোস্ট যত ছোট তার পাঠক ততবেশী। প্রতিটি পত্রিকা বা সংবাদমাধ্যমে তাদের সংবাদটি বেশী পাঠকের কাছে পৌছে দিতে চান। আর এজন্য তাদের এই নীতিটি মেনে চলা প্রয়োজন। শব্দ ও বাক্যের বাহুল রোধ করে একটি সংবাদকে কাংখিত আকারে পরিবেশন করা যায়।
এক হিসেবে দেখা গেছে এক বিষয়ের দুইটি ভিভিও একটি তিন মিনিট অপরটি ছয় মিনিট, ৬মিনিটের ভিডিওর চেয়ে ৩ মিনিটের ভিঢিওর দর্শক ৪০ শতাংশ বেশী
এভাবে সঠিকভাবে বাক্য গঠন, শব্পেদর সঠিক প্রয়োগ ও অপ্রযোজনীয় শব্দ পরিহার করে একটি সংবাদকে তার আদর্শ কাঠামোতে দাড় করাতে হবে। কম কথা লেখা সহজ হতে পারে। কিন্তু একটি সংবাদকে তার সকল বৈশিষ্ট ঠিক রেখে স্বল্প আয়তনে পেশ করা সহজ কাজ নয়। একাজের জন্য যেমনি অভিজ্ঞতা দরকার দেমনি প্রয়োজন পেশাদার মনোভাব। এজন্য মনে রাখতে হবে তবে যেমন, সংবাদপত্রের ভাষা হবে সহজ, সরল ,স্বচ্ছ যেন পাঠক ও শ্রোতা তা সহজেই বুঝতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে- “সহজ কথা যায় না বলা সহজে।” কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন সাংবাদিকের লেখাতে স্বচ্ছতা ও সরলতা থাকা প্রয়োজন। এবং সংবাদ লিখনিীতে শব্দ মিতব্যয়িতার নীতি পালনে তাকে দক্ষ হতে হবে।
©somewhere in net ltd.