![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
বাংলাভাষার জন্ম
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ভাষা বিজ্ঞান এক রহস্য ও সম্ভাবনার বিজ্ঞান। মানুষের মুখের ভাষায় কালক্রমে দ্রুপদী বা শানিত আর সাহিত্যের ভাষায় রুপ নিয়েছে। মানুষ যুগে যুগে নিজেদেও প্রয়োজনে শব্দ তৈরী করে সেই শব্দের মালা গেঁথে তা দিয়ে ভাষার গাঁথুনি নির্মাণ করেছে। সারা পৃথিবীজুড়ে নানা জাতির মানুষের ভাষা রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করলেও তাদের হাসি কান্না অবাক করার অভিব্যক্তি গুলো কিন্তু একই রকম। ভাষা কখন কিভাবে আবিষ্কার হলো বা শুরু হলো তার দিন তারখি দেয়া কঠিন। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন সময়ে মানুষের ভাষা বিকাশের যে ধারা তা ভাষা বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে ভাষার গতি প্রকৃতি প্রকারভেদ পরিবর্তন ও বিকাশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছেন।
মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের যাবতীয় ভাষার উৎপত্তি মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি মূল ভাষা গোষ্টি থেকে। ইন্দো-ইউরোপীয় বা আদি আর্য ভাষাগোষ্টী এদের মধ্যে একটি । আবার এই ভাষা গোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি হয়েছে আনেক গুলো ভাষার। সেভাষাগুলোকেই আমরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করি। প্রচলিত এবং বিলুপ্ত ভাষাগুলোর ধরণ বিচার করে কয়েকটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে। হাজারো বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা বঙ্গীয় অঞ্চলে কোমল চলনসই এক ভাষায় রুপপরিগ্রহ করেছেণ। এই ভাষাকে কখনো বলা হয়েছে প্রাকৃত, কখনো বলা হয়েছে গৌড়িয় ভাষা কখনো বলা হয়েছে, কখনোবা গৌড়িয় প্রাকৃত। কারণ এটা প্রাকৃত জনের ভাষা। এটা সে ভাষাই বাঙ্গালা বা বঙ্গালা বা বাঙালা ভাষা । বাংলা ভাষার জন্ম হয় মাগধি গৌড়িয় অপভ্রংশ থেকে। বাংলাভাষার তিনটি যুগ রয়েছে ।
যথা: ১। প্রাচীন যুগ; ৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাদ্ব থেকে-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্তু
২। মধ্যযুগ: ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে -১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্তু
৩।আধুনিক যুগ: ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে -বর্তমান সময় পর্যন্ত ।
ভাষার ইতিহাস মানব সভ্যতার চেয়েও পুরনো। আনুমানিক ৫০০০হাজার খ্রিস্টপূর্ব মধ্য এশিয়ায় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল । ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাবংশ আবার প্রধানত ৮টি শাখায় বিভক্ত। এরা হল- গ্রিক, ইতালিক, কেলটিক , জার্মানিক,আর্য.(ইন্দোইউরোপয়ি, বালটোস্লাভিকামেসিয়ি এবং আলবানয়ী। এর মধ্যে প্রথম ৪টি পূবাংশের ভাগ (মূলত এশীয় যার নাম ‘সতম । শত বা একশত । জামার্নিক শাখা থেকে ইংরেজি ভাষার জন্ম। ইংরেজী মূলত একটি উপদ্বীপের ভাষা। আর আর্য শাখার দুটি প্রধান ভাগ হলো ফার্সীও ভারতীয় যা থেকে সংস্কৃত ভাষার জন্ম । ইতিহাস থেকে খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার পূবের্ মধ্যে এশিয়ায় একদল লোক বসবাস করত। তারা প্রথমে যে ভাষা ব্যবহার করেছেল তার নাম ইন্দো ইউরোপীয় মূলভাষা। এই ভাষা থেকেই পৃথিবীর বেশীরভাগ ভাষার জন্ম হয়েছে। পরবর্তীতে তারা ইউরোপও মধ্য এশিযার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। একসময় য় ইন্দো-ইউরোপীয ভাষাগোষ্ঠীর এদের একদল পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিম সীমান্তে হে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। তাঁদের ভাষা অর্য ভাষা রূপে পরিচিত ছিল। এই আর্য জাতি ক্রমশ সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ভারতের আদিবসীদেও সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
এ অঞ্চলে আর্যদের আগমেন ভাষা ধর্ম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তণ সাধিত হয়। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দ থেকেই আর্যরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বলে বিভক্ত হয়ে ভারতবর্ষে আসতে শুরু করে । সঙ্গে ছিল বৈদিক ভাষা ও দেবগীতিমূলক সাহিত্য। আর্যদের আরেকটি দল যারা মধ্য এশিয়ায় বসতি স্থাপন করে । ইরানিয়রা ও ভারতীয় আর্যরাএকত্রে ইন্দো-ইরানীয় ভাষা নামে পরিচিত। ইন্দো ইরানিয় দের ভাষা প্রচীন নিদর্শন পাওয়া যায় ১২০০-১১০০ খিস্টপূবের্ রচিত ঋক বেদে। খ্রিস্টর্পুব ১৫০০-১০০০ বেদ যে ভাষায় লেখা হযেছিল তার নাম কিন্তু বৈদক ভাষা । কেউ কেউ আর্যভাষাও বলেন । গবেষণা থেকে জানা যায় মোটা মুটি ৮০০ খ্রিস্টব্দ পুর্বে থেকে শুরু হল ভাষাভিত্তিক আধিপত্য। পরে ভাষায় শৃংখলা আনয়নের কাজ শুরু হয়। সংস্কৃত ভাষাও এ ভাষার একটা পরিবর্তিত রুপ। ৪০০খ্রিস্টব্দপূর্ব অব্দে পানিনি নামক একজন ব্যাকরণবিদ অষ্টাধ্যায়ী নামক বিখ্যাত গ্রন্থে এলোমোলো ভাষাগুচ্ছকে সংস্কারকার করে সর্বভারতীয়দের জন্য সুস্থির রপূ দান করেন এথেকেই শুর হল সস্কৃত বাংলা ভাষা।
সংস্কৃত ভাষা বর্তমানে মৌখিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত না থাকলেও হিন্দু ধর্মের মন্ত্র, যজ্ঞ ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় এর ব্যবহার রয়েছে। সংস্কৃত কথাটার মানে হল সংস্কার করা হয়েছে বা শুদ্ধ করা হয়েছে । ভাষা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রূপে অগ্রসর হতে থাকে এসক ভাষাকে বলা হয় আদিম প্রাকৃত ভাষা। এই প্রকৃত বা প্রাকৃত ভাষা কথাটির তাৎপর্য হল প্রকৃতির অর্থাৎ জনগণের কথ্য ও বধ্য ভাষা অথবা প্রান্তিক জনগনের ভাষা। এই প্রকৃত ভাষাই আঞ্চলিক ভিন্নতা নিয়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত হল। যেমন:মাগধি পাকৃত, মাহারাষ্টী প্রাকৃত শৌরসেনি প্রাকৃত , পেশাচি প্রাকৃত ইত্যাদি। মাগধী প্রাকৃতের অপভ্রংম থেকে কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে উৎপত্তি লাভ করে আজকের বাংলাভাষা হয়েছে। সেদিক থেকে বাংলা অনেক পুরনো ও বনেদি ভাষা।
ভাষার এইসব জ্ঞানগর্ভ তথ্য গত কয়েক শতকে জানতে পেরেছেন ভাষাবিদ পন্ডিতগণ। ১৯শতকের শেষের দিকে জর্জ গ্রিয়ার্সন তাঁর একটি প্রবন্ধে পথমে বলেন, মাগধী প্রকৃতভাষা নামক একটি ভারতীয় উপভাষার পূর্বাঞ্চলীয় বিশেষ এক রূপথেকে বাংলাভাষার জন্ম হয়েছে । শতকের প্রথম দশকে বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে কাঠামো বিষযক বিতর্ক বাংলাভাষার উদ্ভব বিষয়ক ধারণার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। সংস্কৃত বিশ্বাসিরা বিশ্বাস করতেন যে সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলাভাষার বিকাশ হয়েছে। কিন্তু গবেষনা থেকে দেখা গেল বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাভাষার জন্ম। এটা আজ প্রতিষ্ঠিত ধারণা। ১৯০৭খ্রিষ্টব্দে হরপ্রসাদশাস্ত্রী নেপালে রাজ গ্রন্থগারে পান তিনটি পুথিঁ আর ১৯০৯ খ্রিস্টব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লব বাঁকুড়া বিঞ্চুপুরের এক গোয়ালঘরে সন্ধান পান একটি পুঁথি । হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিস্কার একত্রে প্রকাশিত হয় হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা নামে এর একটি নাম চর্য্যাশ্চর্য যার মূল নাম ছিল চর্যাগীতিকোষ পরবতীতে এটাই চর্যাপদ নামে পরিচিতি পায়। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন মাগধি অপভ্রমংশ থেকে বাংলাভাষার জন্ম। ড.মোহাম্মদ শহিদল্লাহ মনে করেন গৌড়য় প্রকৃত থেকে জন্ম নেয় আধুনিক বাংলা ভাষা। এখানে সামান্য বিতর্ক থাকলেও। বাংলা ভাষার জন্ম সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে হয়নি এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলা যায়।
এভাবে দেশ বদলে যায়, মানচিত্র বদলে যায়, বদলে যায় ভাষাও। বাংলা ভাষার জন্মকথা সম্পর্কে জানতে মোটামোটি এই বিষয়গুলো আমলে নিলে সঙক্ষিপ্ত ধারণা হয়ে যাবে। যদিও এর মধ্যে আরো অনেক ব্যাপার রয়েছে। বেশী বেশী জানার জন্য সেগুলোর দরকার হতে পারে।
সূূত্র: বিভিন্ন ব্যাকরণ বই ও হুমায়ন আজাদের ‘‘কতো নদী সরোবর’’
©somewhere in net ltd.