![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
যাকাত ও দারিদ্র বিমোচন:
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
কুরআনে এসেছে, “আর তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও, যেসব নেক কাজ তোমরা নিজেদের কল্যাণার্থে এখানে (দুনিয়ার জিন্দেগীতে) করবে তার সবটুকু প্রতিফলই আল্লাহর কাছে পাবে।” (সূরা বাকারা : ১১০)
দারিদ্রের কষাঘাত ও মুক্তি পাওয়ার জন্য যাকাত যে কতটা বাস্তবমুখী ও কার্যকর পক্রিয়া তা কেবল যাকাত ব্যবস্থার সঠিক প্রতিফলনের মাধ্যমে অনুধাবন ও প্রমাণ করা সম্ভব। আমাদের দেশের বর্তমান প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার কারণে যাকাতের অর্থ থেকে অমারা সুফল ভোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজকে কিছু দিতেহলে নিচের পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে।
১। যাকাত দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। দাতাকে যেমন সওয়াবের নিয়ত ছাড়াও সমাজের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। কিভাবে যাকাতরে অর্থ প্রদান করলে সে অর্থ দ্বারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপকার হবে সেভাবে প্রদান করতে হবে। আবার গ্রহীতাকেও যাকাত থেকে পাওয়া অর্থ দ্বারা নিজের অবস্থা পরিবর্তন করার মানসিকতা রাখতে হবে।
২। সমাজে যাকাত ধারণার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সমাজের মানুষকে যাকাত প্রদানের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। যাকাত শুধু ইবাদাত নয়। এটা দরিদ্র বিমোচনের হাতিয়ার এই মেসেজ সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
৩। দেশে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান পদ্ধতি যথাযথ হতে হবে। যাতে করে আয় ব্যয় ও গচ্ছিত সম্পদের দাম সম্পর্কে মানুষের পরিষ্কার ধারণা থাকে। এ ধারণা থাকলে যাকাত দেয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়া যায় এবং জটিলতা দুর হয়।
৪। সমাজে প্রকৃত যাকাত দাতার সংখ্যা ও যাকাতের পরিমান নির্ণয় করতে হবে। পাশাপাশি যাকাত পাপ্য লোকের সংখ্যাও তাদের চাহিদাও জানা থাকতে হবে। তাহলে কেবল যাকাত ভিত্তিক দারিদ্র বিমোচন পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ হবে।
৫। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সরকারী অথবা বেসরকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাবতীয় জরিপ ও যাকাত কেন্দ্রীক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৬। সরকারী উদ্যোগে বিশ্বে ধনী দেশসমূহ হতে যাকাতরে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য আলাদা কমিটি বা লোকবল প্রয়োজন হবে। তারা যোগাযোগের ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সে মোতাবেক কাজ করবে।
৭। আমাদের দেশে মানুষ কেন গরীব হয় তাদের মৌলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। দরিদ্র হওয়ার পথগুলো বন্ধ করতে হবে।
৮। একইসাথে দরিদ্র মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে এবং দরিদ্র মানুষের হার কমাতে হবে।
৯। শাড়ী লুঙ্গীর পরিবর্তে যাকাতের অর্থকে এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে গরীব মানুষ তার সমস্যা সমাধান করতে হবে।
১০। যাকাতলব্ধ অর্থ দ্বারা সার্বজনীনভাবে শিক্ষা, চিকিৎসা, দরিদ্র মেয়ের বিবাহ, বিপদে আপদে সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১। কর্তৃপক্ষ যাকাত লব্ধ অর্থ জমা করে তা সময়মতো প্রাপকের হাতে তুলে দেবে।
১২। যাকাতের অর্থ প্রদান পরবর্তী তদারকী ব্যবস্থা থাকতে পারে। যাকাত গ্রহীতা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যাকাতের অর্থ লাগাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা হবে।
১৩। সর্বোপরি যাকাত ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই মহান এবং ব্যাপকভিত্তিক কাজের আঞ্জাম দেয়া হবে সর্বোত্তম পন্থা।
১৪। আমাদের দেশের অনেকগুলো সমস্যার মাঝে অন্যতম হচ্ছে অদক্ষ জনশক্তি। অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের কথা ভাবা যেতে পারে।
১৫। খোলাফায়ে রাশেদীন ও আরব দেশগুলোতে যে প্রক্রিয়ায় দরিদ্র বিমোচন সম্ভব হয়েছে তা পর্যালোচনা ও গবেষণা করা একান্ত জরুরী।
১৬। যাকাত দাতাদেরকে সমাজে বিশেষ মর্যাদাবান ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করলে যাকাত দানের প্রবণতার হারও বৃদ্ধি পাবে।
১৭। যাকাত লব্ধ অর্থ শরিয়া মোতাবেক ব্যবহার করার জন্য ইসলামী অর্থনীতিবিদদের প্যানেল গঠন করতে হবে।
১৮। ইসলামী অর্থনীতির উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ডিপ্লোমা কোর্স আয়োজন করা।
১৯। যাকাতের অর্থ সঠিক ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
২০। কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে যাকাত ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন ঘটিয়ে অতপর বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করা উত্তম হবে।
২১। রাষ্ট্র যদি কাজটি করে সকলের সহযোগিতা করা উচিত অথবা আলেম সমাজও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।
২২। সর্বোত প্রচার প্রচারণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যাকাত মনষ্ক জাতি গঠনের প্রতি নজর দিতে হবে।
২৩। সর্বপ্রথমে গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে অতপর পরিকল্পনা স্থির করতে হবে।
আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে শুধু খাবার, অথবা লুঙ্গি কিংবা শুধু ক্ষুদ্র কর্মসংস্থান হয়ে গেলেই একটি পরিবার গ্রাম বা সমাজ থেকে দারিদ্র দূরিভূত হয়ে যায়না। কারণ আমাদের দেশে দুর্যোগ, দূর্ঘটনায় মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়। সন্তানের বিয়ে, লেখাপড়া, চিকিৎসা কিংবা মামলার কারণেও মানুষকে নিঃস্ব হতে দেখা গেছে। সমাজের এইসব ছিদ্র ও সাথে সাথে বন্ধ করতে হবে। শরীয়তের বিধান অনুসারে যাকাত ভোগকারী তার মৌলিক চাহিদা যেহেতু যাকাতের টাকায় মেটাতে পারবে। সুতরাং যাকাত পরিচালনাকারী কর্তপক্ষই যদি যাকাত লব্ধ অর্থকে সুষম ও বাস্বতসম্মতভাবে পরিকল্পনা করে জনগোষ্টির লোকদের জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করে এবং যেসব কারণে মানুষ দরিদ্র হয় সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে রহিত করতে ভূমিকা রাখে তাহলে সে সমাজে যাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদের বদলে দারিদ্র নামের ব্যাধি বিধায় নিতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ ।
©somewhere in net ltd.