![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
যাকাত চিরন্তন ও মানবিক ধারণা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
প্রথম কথাঃ মানুষ যেদিন সম্পদ ও সুখেভরা বেহেশ্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলো সেদিন মানুষকে শূন্য হাতেই আসতে হয়েছিলো। তারপর এই শস্য-শ্যামল ফসলভরা মাটির ঢালিতে চারদিকে মানুষ আল্লাহরর দেয়া অসংখ্য নেয়ামত পেলো। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ শূন্য হাতে আসে আর শূন্য হাতে যায়। মাঝখানে মানুষ ভালোমন্দ কিছু জিনিস হাসিল করে যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো সম্পদ। মানুষ পৃথিবীতে একা আসে একা যায় অথচ সম্পদের পাহাড়ও বানায় কিন্তু তা বিদায় বেলায় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে না। তাহলে বিধাতা কেন ধন সম্পদ দিয়ে ভরে দিয়েছেন এই দুনিয়া? এ বিষয়ে ভাবলে আমরা অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবো। সম্পদের বিপরীতে আছে আবার অভাব বা দারিদ্রতা।
দারিদ্র বর্তমান বিশ্বের সবচে’ নির্মম একটি শব্দ। এক দিকে গুটিকয়েক লোক পৃথিবীর বেশির ভাগ স¤ক্সদ লুটেপুটে খাচ্ছে, অন্যদিকে বেশির ভাগ মানুষ তাদের ঘামঝরা খাটুনি সত্ত্বেও দারিদ্রের যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে। মানুষের ওপর এর চেয়ে বড়ো যুলুম আর কিছুই নেই। বুভুক্ষ মানুষের হাড্ডিসার দেহগুলো মাড়িয়ে দিয়ে টাকার কুমীরেরা দিনে দিনে আরো টাকার মেশিন স্থাপন করে চলেছে। মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্য থাকা কোনো দোষ নেই; কিন্তুু একই আলো বাতাসে জন্ম নিয়ে কেন কোটী কোটী লোক এই ঝঠর যন্ত্রনা ভোগ করবে। অথচ মহাজ্ঞানী আল্লাহ রাবক্ষুল আলামীণ দরিদ্রদের জন্য ধনীদের স¤ক্সদে যথার্থ ভাগ নির্ধারণ করে দিয়েছেন । কিন্তুু লোভ মোহ আর উচ্চাকাংখার কারণে কিছু লোক আজ তা অস্বীকার করছে, এভাবেই তারা পৃথিবীর বাসিন্দাদের একাংশেকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ধনী এবং দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ ব্যবধান কমানোর জন্য প্রয়োজন যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা।
ধন সম্পদ একান্ত পার্থিব বিষয়। যা দিয়ে মানুষ দুনিয়াতে নানা স্বার্থ হাসিল করে, ইচ্ছা পূরণ করে ও সুখ উপভোগ করতে চায়। দরিদ্র লোকের সম্পদ কম বলে তারা জাগতিক নানা আরাম আয়েশ ভোগ করতে পারে না। যদিও পরকালে আল্লাহরর কাছে পূণ্যবান ব্যক্তিরাই ধনী ব্যক্তির চেয়ে অধিক মর্যাদা পাবে। কথায় বলেÑ ধনীর চেয়ে জ্ঞানী বড় , অসির চেয়ে মাসি বড়। তবুও আল্লাহর রাবক্ষুল আল-আমীন মানুষকে পৃথিবীতে ধনী ও গরিবের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সম্পর্কের কথা বলেছেন। ধনীর সম্পদে গরীবকে অধিকার দিয়েছেন। যাদের অর্থ বিত্তবৈভব আছে তারা যদি তার কিছু অংশ গরীবকে দান করে তাহলে তার ক্ষুধা ও অর্থের কষ্ট দূর হয়ে যায। আল্লাহই বলেছেন ‘ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরীবদের অধিকার’।
আমরা জানি যে একমাত্র ইসলাম হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম জীবনকে যেমনি সুন্দর করে তেমনি সহজও করে দেয়। একজন মোমেন মুসলমান আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রেখে যেমন নামায পড়বে তেমনি যাকাত ও প্রদান করবে। ইসলামের ৫ ভিত্তি কালেমা, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির অন্যতম হলো যাকাত। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ আমাকে বরকতময় করেছেন, যেখানেই আমি থাকিনা কেন এবং যতদিন আমি জীবিত খাববো, ততোদিন নামায পড়া ও যাকাত আদায় করার জন্য আমাকে নির্দেশ করেছেন’ ( সূরা আল মরিয়মঃ ৩১)
পবিত্র কোরআনুল কারীমে অধিকাংশ স্থানে নামাযের সাথে সাথে যাকাতের কথাও এসেছে। একজন নামাযী মুসলমান স্বভাবতই যাকাত দাতাও হবেন। আর যাকাত পাবে গরীব দু:খী মানুষ ফলে তাদের জীবনে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ আসবে এবং দেশ ও সমাজের নানা উপকার সাধিত হবে। ইসলাম মানুষের জীবনের কোনো প্রয়োজনকেই অস্বীকার করে না। মানুষের অর্থনৈতিক জীবন ও ইসলামের নির্দেশনার বাইরে নয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ধনমালের পবিত্রতা বিধানের জন্য যাকাত ফরজ করেছেন।
যাকাত কি ও কেন? ঃসম্পদের আদি উৎসসমূহ যথা চন্দ্র-সূর্য, মাটি, বাতাস, মেঘ-বৃষ্টি প্রভৃতি আল্লাহরর দান। এ সমস্ত ঐশ্বরিক সম্পদের জন্য আল্লাহ অর্থ দাবী করেনা। অথচ আল্লাহর দুনিয়াতে এসবের পরও তার বান্ধাদের কেউ কেউ দুনিয়ার মাপকাঠিতে সম্পদের মালিক হয় আবার কেই অভাবগ্রস্থ হয়। মৌলিক সম্পদ সবার জন্য সমান হওয়া সত্বেও সাময়িক সম্পদে বান্দারা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে এবং কম বেশীর মালিক হয়। বেশীর মালিক কমের মালিককে অল্প কিছু তোহফা দেবে এটাই যাকাত। শ্রমিক মজুরী পাবে, পুঁজি মুনাফা পাাবে, কিন্তু আল্লাহরর সৃষ্ট চন্দ্র সূর্য ও মাটি ইত্যাদির কোনো প্রাপ্তি থাকবে না এ বিষয়টি ঠিক নয়, তাই আল্লাহর নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর ২.৫% হারে যাকাত ধার্য করেছেন। যাকাত সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন: “তাদের অর্থ সম্পদ থেকে যাকাত উসূল করো যা তাদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধ করবে।” (সূরা আতা তাওবা: ১০৩ )
ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত সম্পদ বন্টনে এমন প্রভাব রাখে যাতে সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ধনী গরীবের ব্যবধান নিশ্চিতভাবে কমে যায়। সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েম করাই যাকাতের অন্যতম লক্ষ্য। এটা দারিদ্র বিমোচন ও বেকার সমস্যা সমাধানের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। যাকাতের উপরোক্ত গুণাগুন ইসলামী সোনালী যুগের সময় বাস্ত ব প্রতিফলন ঘটেছিল, যার কারণে তখন যাকাত নেয়ার কোনো লোক পাওয়া যেত না।
ইসলাম মানবজাতির সার্বিক শান্তিু, কল্যাণ ও নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়েছে। সেটা দিয়েছে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই। একমাত্র ইসলামী অর্থনীীতর ন্যায় সংগত বন্টনই সমাজ জীবনে শান্তিু ও সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে। যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যায়ভাবে সম্পদের পাহাড় বানানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে তেমনি সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠির প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের অভাব মোচনের জন্য এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ইসলামী অর্থ নীতিতে এভাবেই দরিদ্র বিমোচন করে ধনী ও গরিবের ব্যবধানকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দিক নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপত্র রয়েছে।
ধনী ও দরিদ্রের অবস্থানঃ দারিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমস্যা মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। এ কারণে দারিদ্রের সংজ্ঞায়ও নানা তারতম্য থাকে। স্থান, কাল ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার কারণেই এর মাঝে এই তারতম্য সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দারিদ্র নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহের মাত্রা এদেশে সম্পূর্ন ভিন্ন। কেননা এদেশে প্রতি বছরই নতুন নতুন লোক দরিদ্রের কাতারে শামিল হচ্ছে।
মূলত সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষই আইন ও ধর্মের দৃষ্টিতে সমান। সমাজে ধনী ও দরিদ্র নামে কোন সম্প্রদায় নেই। যেহেতু পৃথিবীতে ভোগের সব উপায় উপকরণ মানুষকে নিজ যোগ্যতার মাধ্যমে আদায় করে নিতে হয় সেহেতু এসব উপাদানের পরিমানের মালিকানার উপর মানুষের আধিপত্যের কারণে সমাজে আজ ধনী ও দরিদ্রের স্পষ্ট বিভক্তি রয়েছে। ধনী মানেই তো আমরা আপাতদৃষ্টিতে সম্পদশালী লোককেই বোঝায়। বিত্তবান ব্যক্তি এবং দরিদ্র ব্যক্তি সকলেই এ পৃথিবীর বাসিন্দা একই পৃথিবীর আলো বাতাসে লালিত হওয়ার পরও তাদের মাঝে দুুনিয়াবি কারণে যে ব্যবধান রয়েছে তা থেকে কোনো সংকট তৈরী হলে তখন তা হয়ে যায় অভিশাপ।
যাকাতের গুরুত্বঃ আল্লাহর তা’আলা কুরআন মাজীদে নামাযের সাথে সাথে যাকাত আদায়েরও জোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন“তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত আদায কর’। এভাবে যাকাতের বিষয়টি কুরআন মাজীদে অসংখ্য বার বলা হয়েছে। যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির (রোকন) মধ্যে তৃতীয় ভিত্তি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ১. আল্লাহর ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সা. তাঁর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া। ২. নামায কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ পালন করা ৫. রমযানের রোযা রাখা (বুখারী) ইসলামে নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করার কোনোই সুযোগ নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ (রা.) বলেন, নামায ও যাকাত উভয়ই ফরয করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি আল্লাহরর পুরস্কারের আশায় যাকাত দেয়; তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু যে যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার নিকট থেকে শক্তি প্রয়োগ করে যাকাত আদায করতে হবে এবং আল্লাহরর হুকুম অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পত্তিও নিয়ে নেওয়া হবে। (বুখারী, নাসায়ী ও বায়হাকী)
এসব বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, ধন-মালের প্রকৃত মালিক আল্লাহর তাআলা। মানুষ এতে তার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করছে মাত্র। তাই প্রকৃত মালিকের হুকুম তামিল করাই প্রতিনিধির দায়িত্ব। সমাজের গরীব, মিসকীন, অসহায়, অনাথ মানুষের প্রতিপালক যেহেতু তিনি, তাই এসব মালের প্রতি তাদের হক রয়েছে। কাজেই সর্বপ্রকার ধন-মাল এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত এবং সব ধনী ব্যক্তিই যাকাত দিতে বাধ্য। একে অস্বীকার করা মূলত ইসলামকে অস্বীকার করারই শামিল। যাকাত অস্বীকার কারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার নির্দেশ রয়েছে। তাই আল্লাহরর হুকুম পালন করার লক্ষ্যে নামাযের সাথে সাথে সম্পদের যাকাতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন: "বুভুক্ষ মানুষের হাড্ডিসার দেহগুলো মাড়িয়ে দিয়ে টাকার কুমীরেরা দিনে দিনে আরো টাকার মেশিন স্থাপন করে চলেছে। "
-কুমীরদের রোজগারের 'বরাত' কার হাতে/