![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
পায়ে হেঁটে ভ্রমণ : প্রথম অংশ
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
সফর শুরু ১২ ফ্রেব্রুয়ারী, শেষ ২৮ মার্চ, ২০১৬। এই লেখায় ফ্রেব্রুয়ারী মাসের অংশটা তুলে ধরা হলো। (দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশে থাকবে মার্চ মাস পর্ব, সফরের আরো ছবি দেখতে গুগলের সাহায্য নিতে পারেন।)
তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ যাওয়ার পথে আপনি যেসব জেলায় পদধুলি দিতে পারেন। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্দা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার। নীলফামারী পড়বে খুব সামান্য আর বান্দরবান আসলে সেভাবে পড়বেনা, মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথে রাস্তার বামে বান্দরবান থাকবে। সবচে বেশী পড়বে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গােইল, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ভূখন্ড।
১২ ফ্রেব্রুয়ারী: ২০১৬
শুক্রবার বেলা ১১:৪৫ মিনিটে সবুজফিতা কেটে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু। দশ বছরের শিশু মিলন ফিতা কেটে দিলো। সাথে ছিলেন ফটোগ্রাফী পার্টনার ছোটন ভাই ও মিডিয়া পার্টনার আশরাফ ভাই। পথচল শুরুর পর এই প্রথম একটু ভয় লাগলো। সামনে হাজার কিলোমিটারের রাস্তা। আর পথচলা মাত্র শুরু। সেদিন বাংলাবান্ধা থেঁকে কেবল তেঁতুলিয়া আসতে পেরেছিলাম।
১৩ ফ্রেব্রুয়ারী:
পরের দিনের গন্তব্য ছিলো তেতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় শহর। সকাল ছটার মধ্যেই শুরু করলাম । পঞ্চগড়ের চা বাগান ভুট্টখেত, আখেভর্তি গরুর গাড়ি এসবের পাশাপাশি পেলাম পোষা ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ, ঘানির পাটাতনে বসে নিজহাতে সরিষা চিবিয়ে তেল বের করার অভিজ্ঞতা। পঞ্চগড় শহরে পৌঁছার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু পারিনি। চারমাইল নামক স্থানে এক বন্ধুর বাড়িতে রাত ৮টা পর্যন্ত এসে ক্ষান্ত দিতে হলো। সেদিন ঘাম দিয়ে জ্বর এসেছিলো। একটু ভয়ও পেয়েছিলাম।
১৪ ফ্রেব্রুয়ারী:
সকালে চারমাইলে প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে পথচলা শুরু। পঞ্চগড় জেলাশহর ও করতোয়া ব্রীজ পেরিয়ে চলে এসেছিলাম বোদা উপজেলায়। পথে পথে মানুষের সাথে নানাভাবে সময় কাটানোতে ছিলোই।
১৫ ফ্রেব্রুয়ারী:
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে সকালে শুরু করে ঠাকুরগাঁ পৌছে গিয়েছিলাম দিনের আলোতেই। রাতে এখানকার পল্লীবিদ্যুৎ রেস্টহাইসে ছিলাম। চলার পথে দুপাশের সমাজের সমারোহ নয়ন জুড়ালো।
১৬ ফ্রেব্রুয়ারী:
ঠাকুরগাঁও থেকে ভোরেই শুরু করতে পেরেছিলাম। যখন দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পৌছি তখনো বিকেল, তাই পীরগুঞ্জে একটু হাঁটাহাটি করে নিতে পেরছিলাম। ততদিনে পায়ে ফোস্কা ফুটে যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু উপায় নেই, ‘‘লক্ষ্য যদি থাকে অটুট দেখা হবে জয়ে’’
১৭ ফ্রেব্রুয়ারী:
সকাল বেলা বের হতে একটু বেলা হয়েগিয়েছিলো। আবার কান্তজিউ মন্দির পার হয়ে দশমাইল গিয়ে আবার ফিরে এসেছিলাম কান্তজিউ মন্দির। ফলে কষ্টটা একটু বেশীই হয়েছিলো।
১৮ ফ্রেব্রুয়ারী:
ছয়দিন একটানা হেঁটে মনে হলো কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেছি। ওদিকে পায়ের ফোস্কার নিচে আবার ফোস্কা ফুটেছে। তাই দিনাজপুরে একদিন থেকেই গেলাম। কিন্তু একেবারে না হাটলেতো আবার পা ফুলে যায়। তাই হেঁটে আসলাম রামসাগর দিঘী থেকে।
১৯ ফ্রেব্রুয়ারী:
দিনাজপুর থেকে কাকডাকা ভোরে বেরহলাম। লক্ষ্য দশমাইল হয়ে সৈয়দপুর। পথ সবমিলিয়ে ৪৪ কিলোমিটার। এটাই একদিনে আমার রেকর্ড হাঁটা। পথে এমন অনেক কিছুই দেখলাম যা আগেরদির রাতের আঁধারে চোখে পড়েনি। এর মধ্যে ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গণকবর।
২০ ফ্রেব্রুয়ারী:
সকাল ৯টা বেজে গেলো পথচলা শুরু করতে। এদিকে গরমটাও বেড়ে গেলো। এদিকটায় রাস্তারপাশে তেমন ছায়াও নেই। সেদিন রংপুর যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও। শহরের ১৫ কিলোমিটার আগে ভিন্নজগতে রাতের বিরতি দিয়ে হাঁটা শেষ করতে হয়েছিলো।
২১ ফ্রেব্রুয়ারী:
ইচ্ছেছিলো কোথাও প্রভাতফেরীতে অংশ নেব। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। ভিন্নজগতের সবকিছু দেখে বের হতে ১১টা। বিকেলে রংপুর গিয়ে আমার বেবী স্ট্রলারের চাকা মেরামত করিয়ে নিলাম। যেটাতে আমার মূল্যবান সামগ্রী ও কাপড় ছোপড় নিয়ে পথ চলছিলাম।
২২ ফ্রেব্রুয়ারী:
রংপুর পর্যটন মোটেল থেকে বের হয়ে মিঠাপুকুর পাড়ি দিলাম বেগম রোকেয়ার বাড়ীর সামনে দিয়ে, পীরগঞ্জ ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ীর গেট মাড়ালাম একইদিনে, সেদিন ছিলাম পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অতিথি হয়ে। কষ্ট কমার জায়গায় বেড়ে যাচ্ছিলো। কারণ ঘামে উরু ভিজে আন্ডারওয়ারের ঘষায় ঘা হয়ে যাচ্ছিলো।
২৩ ফ্রেব্রুয়ারী:
২৩ তারিখ পীরগঞ্জ থেকে গেলাম গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ। স্থানীয় এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আযাদের সৌজন্যে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো। দেখা হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা গেরিালা কমান্ডার সোয়া ছয়ফুট লম্বা শ্যালেন্দু মোহন রায়ের সাথে। তার বাণী ‘‘আমি কাউকে ডরাইনা আর কাউকে ডর দেখাইনা’’
২৪ ফ্রেব্রুয়ারী:
গোবিন্ধগঞ্চ থেকে পলাশবাড়ী হয়ে প্রবেশ করলাম বগুড়ায়। প্রবেশ পথে মহাস্থানগড় দেখে শহরে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। পবেশ করেই বগুদার দই খেতে ভুলিনি। সেদিন জুতা কিনতে হলো কারণ আগের জুতার তলা ছিড়ে দুইভাগ হয়ে গিয়েছিলো।
২৫ ফ্রেব্রুয়ারী
এদিন বগুড়ায় যাত্রাবিরতি করতে হলো। শরীর এতটাই খারাপ লাগলো যে, মনে হয়নি যে পথচলা শুরু করি। তবে যাত্রা বিরতি মানে বসে থাকা নয়। কারণ বসে থাকলে পা ফুলে যাবে। তাই বগুড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুওে বেরিয়েছিলাম।
২৬ ফ্রেব্রুয়ারী:
সকালে বগুড়া থেকে বের হয়ে রাতে চান্দাইকোনা হয়ে প্রবেশ করলাম সিরাগঞ্জে। চান্দাইকোণার মতো এলাকায় আমাকে অবাক করে দিয়ে সংবর্ধনার আয়োজন করলো, স্বাধীনজীবন নামে একটি পরিবেশ বাদী সংগঠন।
২৭ ফ্রেব্রুয়ারী:
চান্দাইকোনায় কয়েকটা প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে বের হতে দুপুর ১২টা বেজে যায়। সেদিন অনেক বেশী কষ্ট হয়েছিলো। সেটা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। এই শহরের স্বপ্নদুয়ার এবং মামুন সালাম ভাই সিরাজগঞ্জ পুরো ভ্রমণটা একেবারে রঙীন করে দিলো।
২৮ ফ্রেব্রুয়ারী :
সিরাজগঞ্জে একধরনের যাত্রাবিরতি দিলাম। কিন্তু সারাদিন প্রচুর হাঁটতে হয়েছে। কারণ জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলাম যমুনাসেতুতে পাঁয়ে হেঁটে পার হওয়ার জন্য অনুমতি নিতে। বিকেলে বানিজ্যমেলায় ছিলাম।
২৯ ফ্রেব্রুয়ারী:
এটা যমুনা পার হওয়ার দিন। তবে যমুনা পার হয়ে যেন পুরো দৃশ্যপট বদলে গেলো। মানুষের জীবন ধারা আচার আচরণ সবই যেন আলাদা। গরম বেড়েছে। বেড়েছে সুর্যের তাপ তাই বেশ বেস পেতে হচ্ছিলো। তবুও টাঙ্গাইল শহরে এসে উঠতে হলো।
তৃতীয় পর্বে সমাপ্য। সফরের ছবি দেখতে ফেসবুকে। জাহাঙ্গীর আলম শোভন এর পেজে দেখতে পারেন।
©somewhere in net ltd.