![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
শিক্ষা, চাকরী বিদেশগমন সব জায়গায় নিজের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করতে হয়? এটা কেন? আমরা কি মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবনা? ধর্ম দিয়ে বিবেচনা করবো? তাছাড়া স্কুল লাইফ থেকে একটা শিশুকে বলে দেয়া হয় তুমি হিন্দু কিংবা তুমি মুসলিম. তাহলে ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তাহলে আমরা কেন এমনটা করবো? এটা কি সাম্প্রদায়িকতা চর্চা নয়?
আমরা প্রথমে জেনে নিই সম্প্রদায় কি? আমরা অনেকে মনে করে ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে সমাজে যে শ্রেনীভেদ এটার নাম সাম্প্রদায়িকতা। আসলে তা নয় আপনি মানুষকে যেভাবে বিভক্তি করবেন সেটাই সাম্প্রদায়িকতা। যেমন আপনি অঞ্ছলভিত্তিক ভাগ করলেন, পেশা ভিত্তিক বিভক্তি করলেন, এশিয়ান ইউরোপিয়ান আলদা করলেন, সাদাকালো ভিন্ন চোখে দেখলেন। ধনীগরীব আলাদা বিবেচনা করলেন, রাজনৈতিক দলভিত্তিক ভিন্ন আঙ্গিকে বিচার করলেন এগুলো সবই সাম্প্রদায়িকতা বা বর্ণবাদ। এখন তাহলে সাম্প্রদায়িকতা ও বর্নবাদ কি ভালো এ ধরনের বিভক্তিতো সমাজে বিদ্যমান?
এই প্রশ্নের উত্তরও আপনি সমাজ থেকেই পেতে পারেন। যেমন আপনার জেলার এক ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানে আপনার ছেলেকে চাকরী দিলো। আপনি নিশ্চই বলবেন না। লোকটা বর্নবাদী আচরণ করেছে। আপনি বলবেন তিনি এলাকার মানুষের প্রতি অনুরাগী। তেমনি অন্য আরেকজন লোক একটি ছেলে কোনো একটি জেলার বলে তাকে চাকরীতে নেয়নি আপনি নিশ্চই বলবেন? এটা বর্নবাদী আচরণ। তাহলে কথা হচ্ছে যে ধরনের পক্ষপাত অন্যকে ঠকায় বা কাউকে অন্যায় সুবিধা দেয় সেটাই সাম্প্রদায়িকতা বা বর্ণবাদ।
এবার আসি ধর্মীয় পরিচয় দরকার আছে কি নেই, সেই প্রশ্নে? এখন আমি যদি বলি আপনার পেশাগত পরিচয় দরকার আছে কি নেই? আপনি কি বলবেন? সহজ কথা হলো যদি প্রয়োজন হয়। ধর্মীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে তা অবশ্যই দিতে হবে। যেমন আপনি ওয়াশরুমে গেলে কিংবা শপিং সেন্টারে গেলে নিশ্চই আপনার ধর্মীয় পরিচয় কেউ জানতে চায়না। কারণ সেটা সেখানে জরুরী নয়। বিদ্যালয়ে যেহেতু ধর্মীয় বই বা প্রশ্ন তৈরী করতে হয়। শিক্ষার্থীর বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। তাদের কাছে অবশ্যই পরিসংখ্যান থাকা দরকার যে কোন ধর্মের কতজন শিক্ষার্থী তাদের স্কুলে রয়েছে। কেউ যদি মনে করে এটা সাম্প্রদায়িকতা তাহলে ফার্মে উৎপাদিত সেইসব বুদ্ধিজীবিরা সমাজের মানুষের সাথে উঠাবসা করেনা তাদের সমাজ সেইসব অসাম্প্রদায়িক অপসাম্প্রদায়িকদের সাথে। তবে হ্যাঁ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ যদি ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে সুযোগ সুবিধা কম দেয় বা বেশী দিয়ে অন্যদের ঠকায় তবে সেটা অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতা বা বর্নবাদের দোষে দুষ্ট হবে।
তাহলে শুধু সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে যদি বৈষম্য করে তাহলে সেটা সাম্প্রদায়িকতা হবে ভালো কথা। * আর যদি একটি ছেলে গরীব বলে তারপ্রতি অবহেলা করা হয়?
• একজন ছাত্রী মেয়ে বলে তার লেখাপড়ার দেখভাল ছেলেদের সমান না করা হয়?
• একজন উত্তরবঙ্গের বলে তাকে পেছনে ঠেলে দেয়া হয়?
• একজন প্রতিবন্ধী বলে তাকে যত্ন নেয়া না হয়?
• একজন বিদেশের সাদা চামড়া বলে তাকে নিয়ে মেতে থাকা হয়?
• একজন নেতার ছেলে বলে তাকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হয়?
• একজন শিক্ষকের ছেলে বলে তাকে নাম্বার বেশী দেয়া হয়?
• একজন আত্মীয় বলে তাকে পরীক্ষার হলে বিশেষ কেয়ার করা হয়?
আপনি নিশ্চয় বলবেন এগুলো সমর্থন যোগ্য নয়। অথবা এগুলোও বৈষম্য বর্নবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। তাহলেকি ছাত্রদের পিতার পেশা, জেলার নাম, আর্থিক অবস্থা এসব ভর্তি ফরম থেকে তুলে দেবেন। আচ্ছা তুলে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে। নাকি মানষিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
আমরা সবাই ধর্মীয় বিভেদকে সাম্প্রদায়িকতা বলি ধর্মীয় পরিচয়কে নয়। এটা আপনাকে বুঝতে হবে। একজন মানুষের পেশাগত পরিচয় সাম্প্রদায়িকতা নয় পেশাগত বিভক্তি এবং বৈষম্য অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতা। তেমনি একজন মানুষের রাজনৈতিক পরিচয় সাম্প্রদায়িকতা নয় বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে চাকরী হওয়া না না হওয়া, জেল ফাঁসি হওয়া না হওয়া ইত্যাদি চরম রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা আমাদের সমাজে কায়েম করা হয়েছে। এবং পেশাগত ও আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতা বেশীরভাগ অনেকের মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয় স্রেফ বিশ্বাসের কারণে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আপনি দেখবেন প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত লোকেরা ধর্মীয় কোনো লোকদের সাথে চলাফেরা মেলামেশা করে না। আমার ধর্মকারী লোকেরাও একই আচরণ করে। আপনি একে কি বলবেন?
আমার মতটা আপনার গ্রহণ করা জরুরী নয়। আপনি নিজেই বিচার করুন। গত কয়েক বছরে দেশে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কয়টা মানুষ খুন হয়েছে আর রাজনৈতিক কারণে কতজন মানুষ খুন হয়েছে। তাহলে কিছু মানুষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতার নাম করে নতুন অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছে। তারা এতটাই কঠোরযে তারা তাদের মতের বাইরে বিয়ে শাদী ব্যবসায় বানিজ্য এমনকি কেনাকাটা পর্যন্ত করেনা। তাহলে এইযে মতাদর্শ ও রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার চার্চা করা হচ্ছে তাও আবার অসাম্প্রদায়িকতার নামে। এর হিংস্র চেহারা আমরা ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছি। এটা এত নোংরা পর্যায়ে চলে গেছে যে, কোনো ব্যতিক্রম থাকলে সেইসব অসাম্প্রদায়িক মিডিয়া এগুলোকে খুব নোংরা ভাবে তুলে ধরে। যেমন বিরোধী দলের কারো সাথে ব্যবসায় করে সরকারী দলীয় নেতা জাত নষ্ট করে ফেলেছেন। অথবা বিরোধী দলের কেউ সরকার দলের কারো সাথে আত্মীয়তা করার কারণে তিনি জীবনপণ শপথ ভঙ্গ করেছেন। এর থেকে অনুমান করা যায়। আমাদের সাম্প্রদায়িকতা কোন পর্যায়ে ঠেকেছে।
স্কুলে বা জাতীয় পরিচয়পত্রে ধর্মীয় পরিচয়ের কলাম থাকে কেন? এজন্য অনেকে ‘‘প্রাগতিক’’ প্রশ্ন তুলেছেন? কই তারাতো প্রশ্ন তোলেনি কেন ভারতীয় ভিসায় আমার দাদা পাকিস্তানী ছিলো কিনা এই প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়।
সূতরাং কোথাও যদি ধর্মীয়, পেশাগত আঞ্চলিক পরিচয়ের প্রয়োজন হয় সেখানে তা নিয়ে প্রশ্নতোলার নাম আঁতলামি নাকি আবলামি আমি জানিনা। তবে যেখানে তা প্রয়োজন নেই সেখানে প্রশ্নতোলাটি সে পরিচয় জানাতে চাওয়াটা ছাগলামি হতে পারে।
এখন রাস্ট্রের কেন প্রয়োজন হয় ধর্মীয় পরিচয়। দেখুন মানুষ সব সময় না হলেও কখনো কখনো ধর্মীয় পোষাক পরে, ধর্মীয় কারণে কয়েকটা খাবার ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে। উৎসবের সময় কোন পন্য কেমন চলবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংখ্যার উপর। এমনকি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের সময়ও বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। এখন আমি কি বিভিন্ন ধর্মের লোকদের স্বাধীনতা দিয়ে ধর্মনিরেপেক্ষ দেশ বানাবো নাকি ধর্ম তুলে দিয়ে ধর্মবিরোধী দেশ বানাবো সেটা নির্ভর করবে আমার এজেন্ডার উপর। তবে ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্ম বিরোধিতা এক জিনিস নয়। আমাদের দেশে কিছু কমুউনিজম খামারে চাষ করা কিছু হাইব্রিড বুদ্ধিজীবি অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মনিরেপেক্ষতার নামে ধর্মের বিরোধীতা করছে। আর মিডিয়া গুলো প্রগতিশীলতার মোড়ক দিয়ে সেটাকে পরিবেশন করছে আর জনগত গণতন্তের নামে সেটা গ্রহণ করছে। ওরা বলছে আমরা অসাম্প্রদায়িক আসলে তারা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার পরিচয়ের বিরোধিতা করছে আর নিজেরা জঘন্য অপসাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিভেদ ও সামাজিক সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ লালন করে আসছে। এবং তারা পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন নাটক এসবের মধ্য দিয়ে তাদের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে। আর এই ফাঁকে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকরা স্রেফ রাজনৈতিক কারণে হত্যা, বঞ্চনা এসব চালিয়ে আসছে। এটা কোনো নির্দিষ্ট সরকারের আমলে নয়। কমবেশী সব সময় চলে আসছে।
তবে এর অর্থ এই নয়যে, দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা নেই। সেটা আছে বলেই কখনো মন্দিরে হামলা হয়, হিন্দুর সম্পত্তি দখল হয়। এই ঘৃণিত আচরণ ও মানসিকতা থেকে পুরো জাতিকে বাচানোর জন্য মানবতার জয়গান গাইতে হবে। সেটা যার যার আঞ্চলিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক পরিচয় আমি জানবো। তার সংস্কৃতি তার বিশ্বাস তার মতকে শ্রদ্ধা করবো নিজের মতে অবিচল থাকবো। অন্যের উপর জোর ছাপাবোনা। সাধারণ নাগরিক অধিকার থেকে কাউকে কোনো সাম্প্রদায়িক কারণে বঞ্চিত করবোনা এই শিক্ষা ও চর্চা রাখতে হবে। এটা সব তথ্য গোপন করে নয় বরং সবাই তার নিজের বিশ্বাস ও পছন্দ অনুযায়ী সামাজিক ও রাস্ট্রীয় বিধানের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করার মধ্য দিয়েই সেটা করা সম্ভব।
আমিতো মনে করি যারা শুধু আস্তিক কোনো ধর্ম মানে না, এবং যারা ধর্মনিরপেক্ষ এবং যারা ধর্মহীন সবাই যেন ধর্ম কলামে নিজের বিশ্বাসটা লিখতে পারে সেই সুযোগ থাকা উচিত। একজন নাস্তিকও যেন লিখতে পারে তার ধর্ম: ‘‘নাস্তিক্য’’। একজন বাউল যেন লিখতে পারে ‘‘বাউল’’ । কেন আমি একজন ধর্মহীনকে জোর করে হিন্দু বা মুসলিম লেখাবে। যার যার অবস্থান লিখতে শুরু করলে তো রাস্ট্র অন্তত জানতে পারবে দেশে কতজন ধর্মহীন বা নাস্তিক বা সংশয়বাদী রয়েছে। যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে দোটানার মধ্যে আছে তাদেরকে সংশয়বাদী বলা হয়।
এটা আমার মতামত। কারো একমত হওয়া জরুরী নয়। যার যেই মতই হোক। আপনাদের সুচিন্তিত নিজস্ব মতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা সেটা যদি আমার সাথে নাও মিলে। আর যদি ধার করা চিন্তা হয়। আপনার কোনো বিপ্লবী কিংবা জিহাদী বাবা বা নেতা নেত্রী থেকে ধারকরা চিন্তা হয়। তাহলে আপনার জন্য আমার এই লেখা নয়।
©somewhere in net ltd.