নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবিশ্রান্ত

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আাসে কই মুখে

নেজাদ

অন্যরকম

নেজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঁধনের সাথে এক দিন

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:০৭



রাজনীতি এবং পুঁজিবাদের মানবতাবিরোধী কার্যকলাপে সমাজ যখন বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, ক্ষত-বিক্ষত, অবক্ষয়ে জরাজীর্ণ তখন এই সমাজেরই স্বেচ্ছাসেবীদের মানবতাবোধ সত্যিই কিছুটা হলেও আশান্বিত করে তোলে হতাশাগ্রস্থ, ক্লান্ত সামাজিক জীবকে।

পুঁজিবাদের আগ্রাসী থাবায় কারখানা নামক জেলখানায় দাস প্রথার আদলে শ্রমীকদের অধিকারে র্নিলজ্জ উদাসীনতা আর মানুষ নামক রোবটের চূড়ান্ত কর্মসীমার উপর নগ্ন হামলা তারই বহিঃপ্রকাশ ।আজ তাজরীন ফ্যাশান এর শ্রমিকেরা আগুনের উপকরণ হয়ে প্রমাণ দিল এই আগুনের মাঝেই তাদের বসবাস, আর রানা প্লাজার শ্রমিকেরা প্রমাণ দিল ”ঝাকি তত্ত্বের” উপর ভিত্তি করে নড়বড়ে পিলারের উপর গড়ে ওঠা ভবনগুলো তাদের না ফেরার দেশে যাওয়া কতটা নিশ্চিত করে দেয়।সাভার ট্রাজেডির দিনে শোকাহত মানুষের মধ্যে যারা রক্ত দানে উদগ্রীব ছিল আমিও তাদের একজন। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনাই অর্থোপেডিক হওয়ায় অনেকের মত আমারও নবীন রক্ত দাতা হিসেবে আত্নপ্রকাশ আপাতত স্থগিত রাখল ‘বাঁধন’(ক্যাম্পাস ভিত্তিক রক্ত দানের সংগঠন)।

গত ৭ই মে বাঁধনের সহায়তায় সি.আর.পি তে রক্ত দানের সুযোগ পেলাম সেই সাভার ট্রাজেডির শিকার শ্রমিকদের অপারেশনে ।সকাল ১০টার দিকে প্রবেশ করলাম সি.আর.পি তে।প্রবেশেই চোখে পড়ল সেই সাধারণ এক আবেদন “সন্ধান চাই, জীবিত অথবা মৃত”;কিন্তু আমার কাছে সেটি যেন মনে হল খানিকটা আশা-নিরাশার মাঝামাঝি এক নিবেদন যেখানে জীবনের সবকিছু এমনকি পৃথিবীর বিনিময়ে নিরন্তর মিছামিছি খুঁজে-ফেরা এই মৃত্যুকূপে আপনজনের অস্তিত্ত্ব।

প্যাথলজি বিভাগের কাছে গিয়ে দেখি কয়েকজন রক্ত প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যথারীতি আমিও পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা দিলাম এবং ফলাফলের অপেক্ষা করতে লাগলাম ।এর মধ্যে হাফিজ নামে এক জুনিয়র রক্ত দিয়ে বের হয়ে এসে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী দেখতে গেল। এর কিছু্ক্ষণ পর দেখি হাফিজকে ধরাধরি করে ওয়েটিং রুমে আনা হল।সে খুব অসুস্থ বোধ করছিল, তাই তাকে শুইয়ে দেয়া হল।

আমার রক্ত পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর রক্ত দিতে চলে গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখি ফার্মেসী এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দুই জুনিয়র রক্ত দিয়ে বের হয়ে আসছে যাদের একজন ছিল মেয়ে। যথারীতি আমিও রক্ত দিতে বেডে গেলাম।প্রায় দশ মিনিট যাবৎ রক্ত প্রদান শেষে বেডে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। খানিক পরে দেখি মেয়েটিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে এনে একটি বেডে শুইয়ে দেয়া হল ।আর কেউকেউ বাতাস ও বরফ দিতে লাগল।বাইরে এসে জানতে পারলাম, সে কিছুদিন আগে এ্যানিমিয়ায় ভুগছিল । কিন্তু অসুস্থতার পরও তার রক্ত দান প্রসঙ্গে জানলাম যে, সাভার ট্রাজেডির প্রথম দিনে সেও রক্ত দানে উদগ্রীব ছিল, কিন্তু বাঁধন তার রক্ত না নেওয়াতে সে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে।

অবশ্য এমনটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল। প্রতিনিয়ত ভাবতাম আমি যেন কি একটা করতে পারিনি, কি যেন একটা অসম্পূর্ণতা আমাকে তাড়া করে চলছে ক্ষণে ক্ষণে।তাছাড়া ধ্বংস্তুপ হতে বের হওয়ার তাদের তীব্র আকুতি আমার মনুষ্যত্বকে দংশন করছিল অবিরত, কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অভাব আমাকে বিরত রাখে উদ্ধার অভিযানে অংশ গ্রহণ থেকে।

এরপর হাফিজের খোঁজ নিয়ে জানলাম এখন সে মোটামুটি ভাল বোধ করছে।তার বিষয়ে যেটা জানা গেল , সকালে হল থেকে সি.আর.পি এসে রক্ত দিয়ে ফিরে এসে আবার ক্লাস করবে।কিন্তু পূর্বে রক্ত প্র্রদান করার পর পরবর্তী রক্ত দানের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগেই এখানে সে রক্ত দিতে এসেছে যার কারণে তার এই অবস্থা।

আপাত দৃষ্টিতে এই দু’জনের রক্ত দানে অংশগ্রহণ অনেকটা বোকামি বলে মনে হতে পারে।তবে কেউ যদি কারও কাছে ঋণী থাকে সে ক্ষেত্রে সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, “রক্ত বিক্রি করে হলেও তোর ঋণ শোধ করব”।

এখানে আমার যেটা মনে হয়েছে তা হল –স্বাধীনতার পর দেশের শক্তিশালী অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য, আর এর মূল চালিকাশক্তি হল অসহায়, উপেক্ষিত শ্রমিকরাই যারা প্রতিনিয়ত মৃত্যুকূপে অক্লান্ত পরিশ্রমে শরীরের রক্ত পানি করে গতিশীল রাখছে দেশের অর্থনীতি।যার ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারী- বেসরকারী উন্নয়ন প্রকল্পে যথাযথ বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা দিন দিন উন্নতির পথে ধাবিত হচ্ছে।কিন্তু এত কিছুর পরও “ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে” ।

আর তাই যেন আজ আমরা সবাই যার যার অবস্থান হতে সচেষ্ট হচ্ছি তাদের কাছে রয়ে যাওয়া আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে আংশিক মুক্তি লাভের ব্যর্থ প্রয়াসে। তাই বাঁধনের সাথে একদিনে মনে হল আজ এখানে রক্ত দান করতে আসিনি; এসেছি রক্তের বদলে রক্ত দিতে।

মেহেদী হাছান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ফার্মেসী বিভাগ



[email protected]



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.