![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
”সেই বক্তাই বুদ্ধিমান যিনি জানেন কখন তাকে থামতে হবে।”
স্বাধীনতার ৪২ বছরে শাহবাগে তরুণদের অন্দোলন যে বার্তা দিচ্ছে সেটা হল-
দেশের উন্নয়নে এখন কেবল মেধার যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সামনে এগুতে হবে। কারণ, স্বাধীনতার ৪২ বছরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আর পিছিয়ে নেই।
আমার জানা মতে, এক মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে দুইজনই সরকারী চাকুরিজীবী যাদের একজন BCS ক্যাডার আর তৃতীয় ব্যক্তি ৩৪ তম BCS -এ টিকেছেন। গত বার হত, কিন্তু দুই ভাই একসাথে উত্তীর্ণ হওয়ায় একজনকে নিয়েছিল। অতএব, এবার আর মিস নেই!
কি সৌভাগ্যবান এরা! কত সুখী এরা! তাই না? এ দেশের সরকার এক শ্রেণী সম্নানী ব্যক্তিদেরকে সম্নানিত করতে গিয়ে তাদের পরিবারের পুরো দায়িত্বই কাঁধে নিয়েছেন আর সাধারণ পরিবারের সন্তানদের জন্য একটি করে খামার বাড়ী তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। অতএব, মুক্তিযুদ্ধের সন্তানরা সরকারের খাস বান্দা হয়ে তাদের বাপেদের মত আজীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে আর সাধারণ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে খামার বাড়ীতে গিয়ে তাদের অর্জিত জ্ঞানের আলোকে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে এইসব সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা আর কতদিন ’সাধারণ’ হয়ে থাকবে তা বলা মুশকিল।কারণ, ইতোমধ্যোই অসাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অসাধারণ রহস্য নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করছে না, পারলে অসাধারণের পেছনের কারণ যতদুর সম্ভব অপ্রকাশিত রাখার চেষ্টা করছে। কেননা, পরিচিত বন্ধুদের ৭০-৭৮ এও কাজ হয় নি আর সেখানে তাদের অসাধারণ রহস্য বলে ৫০ ই যথেষ্ট। ফলে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষের বীজ প্রোথিত হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
আমার মনে হয়, বিষয়টি বিতর্কিত হওয়ার আগেই কিছু করা দরকার, তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বর্তমান হতাশাগ্রস্ত এই তরুণ প্রজন্ম অনেক দূরে সরে যাবে, কারণ "নিজে বাঁচলেই তো চাচার জীবন বাঁচাবে !" আর চেতনা যদি জোর করে ঘোকানোর চেষ্টা করা হয় তবে তা বেশী দিন টিকবে না, কারণ চেতনা আসে পরিবেশ থেকে, আর সেই পরিবেশে যদি হতাশা, বিদ্বেষ থাকে তাহলে তার ফল শুভ হবে না। কেননা, বনের এক জায়গায় বাঘ আর হরিণ থাকতে পারে না।
এই সমাজে যতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকুক না কেন তা যদি একবার বিতর্কিত হয়ে যায় তবে তা পূর্বের অবস্থায় আনতে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হবে। কারণ, কিছু লোক এই সময়টির জন্য আজও অধীর আগ্রহে বসে আছে।
তরুণ সমাজ সবে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনার মহান দায়িত্ব পূরাতনদের কাছ থেকে নিতে চলেছে, আর ঠিক এই মুহূর্তে কোটা নিয়ে এই বিস্তর বিতর্ক কোটাহীন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করছে, ফলশ্রূতিতে যারা কিছু দিন আগেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এই ’শাহবাগ’ মোড়ে একত্রিত হয়েছিল আজ তারাই কিনা এই চেতনার বিপরীতে অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এখান থেকে অনেক কিছুই বোঝার আছে।
প্রথমত যারা পলিটিক্স করে তারা কেবল ক্ষমতা বোঝে কিন্তু এর উৎস বোঝে না, আর তাই, এই ক্ষমতা লাভের জন্য তারা সবকিছুই করতে পারে। এই যেমন তরুণ সমাজকে তারা দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলছে সুকৌশলে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দেশের জনগনের বেশীর ভাগ সমর্থন লাগে না, কেবল লাগে অনুগত আমলা শ্রেণীর নির্লজ্জ সমর্থন।
প্রায়ই একটি কথা শুনে থাকবেন- ”যুদ্ধ এখনও শেষ হয় নি”। আসলেই যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি এই বাঙ্গালীর আর শেষও হবে না কোন দিন যদি ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিজনেস বন্ধ না হয়।
হিটলার বলেছিলেন- "যুদ্ধই জীবন যুদ্ধই সর্বজনীন"। আর এই বিষয়টি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সর্বত্রই দৃশ্যমান। এই যুদ্ধ বুঝতে আপনাকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না, একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই বুঝবেন। আজ নৈশ্য প্রহরী থেকে শুরু করে সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে অসাধারণ কোটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে জাতীয় দৈনিকে দেখলাম রেলওয়েতে কিছু নৈশ্য প্রহরী নিয়োগ দেওেয়া হবে যার কয়েক লাইন পরেই নির্দিষ্ট করে লেখা আছে শুধু মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরাই আবেদন করবে।অর্থাৎ আবেদনের যোগ্যতা হল মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট! বর্তমানে যেটা জোরে শোরে বলা হচ্ছে সেটা হল- আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমাদের বাপেরা যুদ্ধ করে কি ভুল করেছে? অপরদিকে সাধারণ ছাত্রগণ বলছে- আমরা মুক্তি যুদ্ধের সন্তান নই কিন্তু মনে প্রাণে এ দেশের স্বধীনতা কমনা করেছে, তাহলে আমাদের বাপেদের অন্যায়টা কিসের? আর এই স্পর্শকাতর বিষয়টির কোন সমাধান না দিয়ে সরকার একতরফাভাবে কেবল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে পুনর্বাসন করে চলেছে সেই স্বাধীনতার পর থেকে আজও।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলে সর্বজনীন যুদ্ধ বুঝতে অনেকটা সহজ হবে, আর তা হল এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্যও কোটার ব্যবস্থা করেছেন। এখানে যেটি লক্ষ্যণীয় সেটা হল- মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লিমিটেড, ফলে কোন এক সময় সেটা ফুরিয়ে যাবে আর মানুষের যুদ্ধও তখন শেষ হবে আর তা হলে পলিটিশিয়ানদের ব্যবসাও শেষ হয়ে যাবে! আবার এই সব কোটাধারীরাও একসময় চাকরী থেকে অবসর নেবে আর তখন সর্বজনীন যুদ্ধও চিরকালের মত সমাপ্ত হবে! আর এতকিছু মাথায় রেখেই আবর নতুন করে চালু করেছে ‘নাতি- নাতনী কোটা’। আর এ থেকেই শুরু হল এক শাশ্বত যুদ্ধ যার কেবল শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই! আর এ কারণেই বুঝি সরকার জন সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোন র্কাযকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কারণ পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে আমরা দেখেছি পদ্মার জেলে সম্প্রদায়ে নতুন সন্তানগুলো কখনও পরিবারের জন্য আনন্দ বয়ে আনে নি, তারা ছিল তাদের বাপ-মায়ের ক্ষণস্থায়ী আনন্দের ফসল আর শোষক শ্রেণীদের আনন্দের খোরাক।
জা.বি
সাভার, ঢাকা
©somewhere in net ltd.