![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিনি ছিল রবিবার, ২৫ শে র্মাচ, ২০১২ প্রথম পিরিয়ডে Biopharmaceutics ক্লাস শ্ষে হওয়ার পর জানলাম ফখরুল ইসলাম স্যার খানিক বাদে পরর্বতী ক্লাস নিতে আসবনে। এই ফাঁকে ল্যাপটপ অন করে র্সাভে রিপোর্ট-এর কাজ করতে লাগলাম। কিছুহ্মণ পর স্যার আসলেন। এসে প্রথমে বললেন- আজ তোমাদেরকে গতকালের একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলব যেটি আমার জীবনের স্মরণীয় কিছু ভালো কাজের একট। আজ এখানে নিজের ভালো কাজগুলোর কথা প্রকাশ করে সকলের কাছে নিজেকে একজন সমাজ সেবক বলে পরিচয় করানো আমার উদ্দশ্যে নয় , কেবল তোমরা যেন আমার ভাল কাজের গল্প শুনে নিজেরাও অনুপ্রাণতি হতে পার সেটাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।
এরপর তিনি আমাদরেকে একে একে তার জীবনের তিনটি ঘটনা র্বণনা করলেন। গত শনিবার ২৪ শে র্মাচ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেইট হতে দ্রুতি পরিবহনে উঠলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর যখন বাসের কন্ডাকটর ভাড়া কাটা শুরু করল তখন ঘটল এক ঘটনা। সিটে বসা এক ভদ্রলোককে বার বার টাকা চাওয়ার পরও তিনি চোখ খুলছেন না। বেশ কয়েকবার ডাকার পরও যখন তিনি সাড়া দিলেন না তখন অন্য যাত্রীরাও ব্যাপারটি জানার জন্য এগিয়ে আসল। এক র্পযায়ে তাকে আঘাত করার পরও যখন সাড়া দিলেন না তখন কেউ কেউ ধরে নিল তিনি হয়ত নেশাগ্রস্থ আর কেউ ধরে নিল তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন। এমতাবস্থায় স্যার লোকটিকে পরখ করে কিছুটা ধারণা করলেন যে লোকটি সম্ভবত অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছেন। এ সময় লোকটির মোবাইলের ডায়াল নাম্বারগুলোতে কল করা হল কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না। এরপর বাস যখন গাবতলীতে পৌছাল তখন ঢাকার চিরাচরিত নিয়মে সকলেই নেমে গেল কেবল আমাদের স্যার রয়ে গেলেন যেন ঝড়ে পড়ে যাওয়া কোন পাখী তার বাচ্চাটাকে শত বিপদ-আপদ সত্বেও পাহারা দিচ্ছে। এ সময় পাশের কোন একজনের সাহায্যে তিনি লোকটিকে কাছের একটি চায়ের দোকানে বসালেন। অনেক চেষ্টার পরও কিছুতেই ঘুম ভাঙ্গানো গেল না। লোকটির মানিব্যাগে পাওয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড থেকে জানা গেল লোকটির নাম ফারুক হোসেন, দেশের বাড়ী বাগেরহাট কেবল এতোটুকুই। এক্ষেত্রে স্যার যেহেতু লোকটি কোনভাবেই চেনেন না সেহেতু স্যার নিজের কাজইে চলে যাবেন এটাই এখানকার নিয়ম, কিন্তু তিনি যেতে পারলেন না তার মানব হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালবাসার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর লোকটির সামান্য হুশ ফিরল। এসময়ে লোকটি কেবল শ্যামলী শব্দটি বলেই আবার ঘুমিয়ে গেলেন। এ থেকে স্যার বুঝলেন লোকটি হয়ত শ্যামলী যাবেন। এর কিছুক্ষণ পরে আবার লোকটির হুশ ফিরল। এবার লোকটি এম.ডি শব্দটি বলে আবার ঘুমিয়ে গেলেন এবং প্যারালাইসিস রোগীর মত হাত-পা ছেড়ে হেলে পড়লেন। তার কথা মত স্যার মোবাইলের কলার লিস্ট র্সাচ করে এম.ডি সোহেল নামে একটি নাম্বার পেলেন। এখন কল দেওয়ার সময় দেখলেন যে তার মোবাইলে টাকা নেই কেবল লোকটির মোবাইলে এক টাকা কত পয়সা আছ। অগত্যা স্যার সেই নাম্বারে কল দিলেন। এসময় অপর প্রান্ত থেকে একজন লোক কথা বললে স্যার তাকে বললেন, আপনি কি এম.ডি সোহেল? আমার সাথে যিনি আছেন এই নাম্বারটি তার মোবাইলে সেভ করা, সুতরাং আপনি তাকে চিনেন অবশ্য। অনুগ্রহ করে.............তারপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গলে। ভাগ্যক্রমে একটু বাদে লোকটি ফোন করলে স্যার তাকে ঘটনার বিস্তারিত র্বণনা দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমার অফিসের বহুলোক কাজ করে সবাইকে তো চিনি না, একটু অপক্ষো করুন এইচ আর ডিপার্টমেন্ট থেকে জেনে নিই লোকটি এই অফসের কোন র্কমচারী কিনা। কিছুক্ষণ পর জানা গলে যে এই লোকটি শ্যামলীর নিকটর্বতী একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির কমার্শিয়ালি এক্সিকিউটিভ অফিসার। এরপর লোকটির সহকর্মীরা স্যারের অবস্থান জেনে গাড়ী নিয়ে রওনা দিল। এর কিছুক্ষণ পর স্যার দেখলেন এক ব্যক্তি মোবাইল কানে ধরে তাদের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছেন। কাছে আসতেই স্যার লোকটিকে বললেন, একটু আগে কি এই রোগীর বিষয়ে যার সাথে কথা হয়েছে আপনি কি তিনি? তখন লোকটি রেগে গিয়ে বলল, কি যা তা বলছেন, আমি হতে যাব কেন। আপনি কি আমাকে চিনেন না আমি আপনাকে চিনি। তাহলে আমাকে জিঙ্গাসা করছেন কেন, যত সব! এ সব বলে লোকটি চলে গেল। আর অসুস্থ্ লোকটিকে নিয়ে স্যার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপক্ষা করতে লাগলেন। ফোন করার প্রায় আধা ঘন্টা বাদে অনেক খোঁজা-খুঁজির পর তিন লোক গাড়ী নিয়ে আসল। ততক্ষণে বিকাল হয়ে গেছে। এক্ষত্রে স্যার লোকটিকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে চলে যেতেন পারতেন, কিন্তু চিকিৎসা বাণিজ্যের এই শহরে মৃতপ্রায় লোকটির চিকিৎসার সুব্যবস্থা যে কি রকম হতে পারে সেটা তার মত একজন সচেতন নাগরিকের অজানা নয়। এর থেকে বড় কথা হল লোকটির আপনজন বলে এখানে কেউ নেই। অতএব তিনি তাদের সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে আসলেন। এখানে পদে পদে নতুন সব অভিজ্ঞতা এসে ভীড় জমতে লাগল। দালাল চক্রকে ভীড়ে রোগীকে নিয়ে তারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়লেন কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেক কষ্টে স্যার যোগাযোগ করলেন জরুরি বিভাগে। কিন্তু রোগীর অবস্থা যতই জরুরী হোক না কেন তার পুরো বায়োডাটা র্সবপ্রথম সাবমিট করতে হবে, এরপর রোগীর সাথে থাকা ব্যক্তির সর্ম্পক র্বণনা করতে হবে তা রোগীর অবস্থা যতই জরুরী হোক না আর এই প্রিলিমিনারি ভাইভা তে উর্ত্তীণ হতে না পারলে জরুরী বিভাগে তার কোন জরুরী চিকিৎসা দেওয়া হবে না। এমতাবস্থায় স্যার দেখলেন যে, এখানে রোগীর নিজের লোক বলতে কেউ নেই, অতএব অন্যদের ক্ষেত্রে যেমনটা অবহেলা ঘটে লোকটির বেলাতেও তাই ঘটবে। তখন স্যার নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে পরচিয় দিলেন এবং লোকটিকে তার বিশ্বদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিলেন। এরপর রোগীর জন্য কেবিন ঠিক হল। অনেক কষ্টে কেবিন খুঁজে রোগীকে কেবিনে রাখা হল। এরপর সিস্টার এসে বলল রোগীর লুঙ্গি, বিছানা এবং বালিশ কোথায়? তখন স্যার বললেন, ঘটনাটি রাস্তার পথিমধ্যে ঘটে গেছে, এমতাবস্থায় রোগীকে দ্রুত এখানে আনার জন্য ব্যস্ত ছিলাম আর তাছাড়া আমরা এ রকম ঘটনার সাথে পরচিত নয়। কিন্ত সিস্টর বকাবকি করেই যাচ্ছে - আপনাদের কোন কমন সেন্স নেই, এই সকল জিনিস ছাড়া এখানে রোগীকে এনেছেন কেন। তখন স্যার বললেন-দেখুন ছেলেটি যখন রাস্তায় বের হয় তখন সে আমাদেরকে কিছু বলে যায় নি যে পথিমধ্যে সে এরকম রোগী হয়ে যাবে তাহলে আমরা লুঙ্গি, গামছা সবকিছু নিয়ে তার পেছন পেছন আসতাম। যাহোক এরপর স্যার সাথের তিন জনকে প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে পাঠালেন। কিন্তু রোগীর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হসপিটাল থেকে একবারে আনতে বলছে না। একটু পরপর একটা একটা করে আনতে বলা হয়। এদিকে যাকে লুঙ্গি আনতে বলা হল সে আর সহসা ফিরল না। আবার যিনি রোগীর ক্যাথেটার পরাবেন তিনি আবার মহা ব্যস্ত কারণ এ কাজের জন্য সে জন প্রতি ১০০ টাকা করে নেয়, অতএব যত রোগী তত টাকা। অগত্যা উপায় না দেখে স্যার বললনে রোগীর জন্য এখন দ্রুত ইউরিনেশন ঘটানো জরুরী অতএব আপনি ক্যাথেটার পরানোর ব্যবস্থা করুন তাতে রোগীরই মঙ্গল হবে। কিন্তু বিপদ যেন রোগীর পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। লোকটি এ র্পযন্ত যত রোগীর ক্যাথেটার পরিয়েছে কারো ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দেয় নি, কেবল এই রোগীর বেলাতে পরাতে গিয়ে ক্যাথটোর গেল বাঁকা হয়ে। উপরন্তু এই বাঁকা ক্যাথেটার নিয়ে শুরু হল চাপা-চাপি। রোগী যদিও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল তবুও ব্যথাটা এতটাই তীব্র ছিল যে সে প্রচন্ড কষ্টে ঘুমের ঘোরেও হাত-পা ছুড়তে লাগল। এমতাবস্থায় তাকে শান্ত রাখা বশে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। যাহোক,লোকটি স্যারকে ক্যাথেটার পরাতে সাহায্য করতে বলল। কিন্তু সেটা কিভাবে! স্যারের জীবনে তো এই ক্যাথেটার পরানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। যাইহোক, লোকটা এখন ফেইলিওর অতএব ক্যাথেটার পরাতে হলে স্যার ছাড়া বিকল্প নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে স্যার নিজেই অনেক কষ্টে ক্যাথেটারর লাগালেন। ততক্ষণে রাত ৮টা বাজে। স্যারকে আবার ভার্সিটিতে ফিরতে হবে। তখন লোকগুলো বলল, আপনি অনেক কষ্ট করেছেন এখন বাসাতে গিয়ে বিশ্রাম করুন আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না, রোগীর পাশে আমরা র্সাবক্ষণিক আছি।
ফেরার সময় স্যার এই বিভাগেএকটু ঘুরে দেখতে লাগলেন যেখানে ওই লোকটির মত আরও অনেক লোক অচেতন হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এমনি একটা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, চার বন্ধু এক মোবাইল চা বিক্রেতার কাছ থেকে চা খেয়ে তাদের তিনজন অচেতন হয়ে যায়। আর সৌভাগ্যবান চর্তুথ ব্যক্তি চা খেতে একটু দেরি করেছিল বলে সে রক্ষা পেয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যেই তিন ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে।
স্যারের জীবনের এই ঘটনার মৌখকি র্বণনার একমাত্র অভিপ্রায় ছিল আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করা আর আমার উদ্দশ্যে হল তার মৌখিক র্বণনাকে কলমের কালি দিয়ে বাক্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা যা চিরকাল আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
মেহেদী হাছান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
©somewhere in net ltd.