![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চলমান জীবন
জীবনটা আমাদের নিতান্তই
একটা চলমান ছাঁয়া।
সেই যখন থকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি
ঠিক তখন থেকেই একপা দু’পা করে
এখন আমরা অফিস আদালত করছি
একটি মুহূর্ত থেমে নেই জীবনে শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও।
এইত, চলমান বছরের শুরু থেকে যখন
সারা দেশ ব্যাপী আতঙ্কের ঘন ঘটা
এমনকি দিনে রাত্রে সমানে পেট্রোল বোমার রমরমা অবস্থা
তখন ভাবলাম
হয়ত এ যাত্রায় হরতাল-অবরোধে মাসিক কন্ফারেন্স
মাফ করা হবে আপাতত।
কিন্তু কই, ঠিক তো মাসের শুরুতে অফিসের সবাই
যার যার জীবনকে নিয়ে
নিজ দায়িত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
ছুটে গেল ট্রেনে লঞ্চে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
জীবনের শুরুতে যখন একটু আধটু হাটতে পারতাম,
তখন তো উসাইন বোল্ট-এর মত হাটতে গিয়ে
প্রায়ই ধপাস ধপাস করে পড়তাম!
মা ধরতে গেলে খানা খন্দ উচু-নিচু সব সমান ভেবে
মায়ের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম।
ভাবতাম, মায়ের ছত্রছায়ায় যতটা পারি
দৌড়ে জীবনের অনেকটা পথ এগিয়ে নিই।
যাতে করে একটা সময় পৃথিবীর
ব্যস্তময় জীবনে অবসার নিতে পারি।
কিন্তু, যা ভেবে বসেছিলাম
সবকিছু তো দেখি এখন উল্টা!
জীবনে থেমে থেমে থাকা যায় না, যাচ্ছেও না।
সে দিন বাসা থেকে বেরিয়ে একটা
রিক্সার উদ্দেশ্যে মোড়ে যেতেই দেখি
চার-পাঁচজন যুবক চালকের সাথে
জীর্ণশীর্ণ বয়স্ক এক রিক্সাচালক যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত!
ভাবলাম, আমরা তো এ ধরনের বয়স্ক চাচা শ্রেণীর
রিক্সাচালকের বেলায় আগ্রহ দেখাই না তত একটা!
আচ্ছা, চাচার রিক্সাতেই উঠি।
যদিও চালানোর গতি কিছুটা মন্থর হবে!
মানুষ নাকি যুবক সময়ে টাকা রোজগার করে আর
সন্তান জন্ম দেয় শেষ বয়সে বসে বসে আরামে কাটাবে বলে!
আমার জীবনে আমিও আশাবাদী,
কয়েক বছর পর টাকা জমিয়ে আরাম আয়েশে
স্টাইল দিয়ে চলব আর বুড়ো বয়সে একে বারে
হাতপা ছড়িয়ে খবর দেখব আর
দেশের রাজনৈতিক অবস্থা দেখে হাহুতাশ করতে থাকব।
কিন্তু আমার ডিপার্টমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার অব সেলস তো
যৌবন কালের পুরাটা তার চাকরীর পেছনে অবলীলায় ব্যয় করেছেন;
তারপরও তার এই ৬৯ বছরেও চাকরী থেকে তো দেখছি
অবসর নিতে পারছেন না।
তাছাড়া সেদিনের ঐ রিক্সা চাচা রাস্তা পারাপার
হওয়ার সময় একটু ভুলের কারণে এক ট্রাকের
হেলপার তো তাকে বলেই বসল, শালা বুড়ো কোথাকার!
ঠিকমত চালাতে পারোস না তো রিক্সা চালাইতাস ক্যান?
তারপরও তিনি কিন্তু রিক্সা ছাড়তে পারছেন না,
কারণ সন্তানেরা তো একেকটা উসাইন বোল্টের মত
ছুটে চলেছে ভবিষ্যতের সেই তথাকথিত
আরাম আয়েশ নিশ্চিত করনের জন্য।
আসলে যতই আমি আশাবাদী হই না কেন
বাস্তবে দেখছি জীবন একটা চলমান ছাঁয়া;
ব্রেকহীন এক ট্রেন, একেবারে সময়মতো থামবে।
হাঁটতে শিখে প্রথম দিকে জীবনের
ওয়ার্ম আপ শুরু হয়েছিল স্থানীয় এক স্কুলে
তারপর কলেজ, তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর
বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি অফিসে।
তাহলে কি হবে?
এই কঠিন থেকে কঠিনতর জীবন যুদ্ধে
নিজের জীবনকে নিজ দায়িত্বে
এ রিক্সা চাচা কিংবা জি.এম স্যারকে টপকে
কাঁথা মুড়ি দিয়ে শীতে অথবা বৃষ্টির দিনগুলোতে
নিজের মত করে উপভোগ করতে পারব তো?
নাকি, চলমান ছায়ার ন্যায় জীবনকে একটা বড় বোঝা করে
অবশেষে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাব?
©somewhere in net ltd.