নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবিশ্রান্ত

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আাসে কই মুখে

নেজাদ

অন্যরকম

নেজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইঁদুর ও এক দয়ালু ব্যক্তির গল্প

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৬

সে অনেক অনেক আগের কথা। খুলনা শহর থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় ওলিপুর নামে এক গ্রাম ছিল। গ্রামটি ছিল সবুজ গাছ-গাছালিতে পরিবেষ্টিত। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড় এক খাল। যা ছিল গ্রামের মানুষদের উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ঘন গাছপালার ডালে ডালে ছিল বিভিন্ন পাখীর বাসা। সকাল সন্ধ্যা পাখীদের কলরবে মুখরিত থাকত গ্রামটি। আর মাঠগুলো হরেক রকম ফসলেভরপুর থাকত। সারা বিকাল খেলা-ধুলা শেষে সন্ধ্যা বেলা শিশুরা তাদের দাদা-দাদীর কোলে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেত। সবকিছু নিয়ে এখানকার মানুষগুলো সদা আনন্দে জীবন-যাপন করত। গ্রামটির কেন্দ্রে ছিল একটি প্রাইমারী স্কুল। গ্রামের সকল শিশুরা এই স্কুলটিতে আনন্দের সাথে পড়ালেখা করত আর খেলত।

গ্রামের উত্তরে বিশাল মাঠের মাঝখানটিতে একটি উঁচু জায়গা ছিল। সাতটি বটগাছ দ্বারা জায়গাটি এমনভাবে বেষ্টিত ছিল যে দিনের বেলাতেও এখানে সূর্যের আলো ঠিকমত পৌঁছাতো না। এ জন্য দিনের বেলাতেও মানুষ এখানে ভয়ে যেত না। এই জায়গা নিয়ে গ্রামটিতে একটি গল্প প্রচলিত ছিল যে, সাতটি বট গাছের নীচে জ্বিনদের সাতটি স্বর্ণ ভর্তি কলস আছে। প্রতিটি কলসের মুখে এক মুচি লোকের চিবানো পান পাতা রাখা আছে। যে ব্যক্তি উক্ত চিবানো পান খেতে পারবে সে ঐ স্বর্ণভর্তি কলসের মালিক হবে। আর ব্যর্থ হলে সে আর ফিরতে পারবে না। এ কারণে ভয়ে কেউ ওখানে স্বর্ণ পাওয়ার লোভে যেত না।

ঘন গাছ-পালায় বেষ্টিত ঐ জঙ্গলে বাস করত এক সাধক। একটা ছোট ছাপড়া ঘরে ছিল তার বস-বসবাস। একা একা সেই জঙ্গলে সে একমনে ধ্যান করত। সে কখনও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিত না। তার বিশেষ একটা গুন ছিল- সকল প্রাণীর ভাষা সে বুঝতে পারত।

একবার সেই গ্রামটিতে ব্যাপক ফসল উৎপাদন হলো। কিন্ত হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন গ্রামটিতে ইদুরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। লোকজনের বাড়ীতে ঢুকে খাদ্য শস্য সাবাড় করতে লাগল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীরা উপজেলায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এর দ্রুত প্রতিকার দাবী করল।

এর কিছুদিন পর উপজেলার সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে ঘোষণা করা হলো যে, গ্রামের স্কুলে যে সব ছাত্র-ছাত্রীরা ইদুরের লেজ জমা দিতে পারবে তাদেরকে লেজ প্রতি দুই টাকা করে প্রদান করা হবে। এই ঘোষণার পর ছাত্র-ছাত্রীরা লোভে পড়ে ইদুরের লেজ সংগ্রহের অভিযানে নেমে পড়ল। সাথে অভিভাবকবৃন্দও যোগ দিল এই ইদুর ধরার অভিযানে। অনেকে শহর থেকে ইদুর মারার কল ও ওষুধ কিনে আনলো। যে যেভাবে পারে ইদুর ধরে তার লেজ সংগ্রহের কাজে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল। লেজ কাটার এই অভিযানের ফলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ইদুরের এই উৎপাত অনেকাংশে কমে গেল।

লেজ কাটার এই অভিযানের মধ্যে এক ইদুর দম্পতি তাদের চারটি বাচ্চা সহ কিছু খাবার নিয়ে গৃহস্থের গোয়াল ঘরে এক গর্তে অবস্থান নিল। সংরক্ষিত খাবারে তাদের কয়েক দিন বেশ ভালো চলল। ক্রমে তাদের খাদ্য ফুরাতে লাগল আর চিন্তা বাড়তে লাগল। গ্রামে যেভাবে ইদুরের লেজ কাটার উৎসব চলতে লাগল তাতে করে পালিয়ে থাকা অবশিষ্ট ইদুরগুলো বাইরে বের হওয়ার সাহস করল না। কিন্তু খাবার যখন একেবারেই শেষ হয়ে এলো তখন বাচ্চাগুলো খাবারের জন্য কান্না-কাটি শুরু করে দিল। তখন অগত্যা বাচ্চাগুলোর পিতা খাদ্যের সন্ধানে চুপিচুপি বাইওর বের হলো।
এ দিকে ইদুর ধরার জন্য মানুষেরা নানা রকম সুস্বাদু খাবার দিয়ে রান্নাঘর, শোবার ঘর, ভাগাড় সহ বিভিন্ন স্থানে ফাঁদ পেতে রেখেছে। পুরুষ ইদুরটি রান্নাঘরে গিয়ে দেখল যে, একটি খাঁচায় কিছু শুটকি মাছ আর বিস্কুট রাখা আছে। এ সব দেখে ইদুরটি আর লোভ সামলাতে পারল না। যেমনি সে খাঁচায় প্রবেশ করে খাবারে কামড় দিল অমনি খাঁচার দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ফলে সে আার খাঁচা থেকে বের হতে পারল না। এ দিকে ইদুরের বউ আর বাচ্চারা অধীর আগ্রহে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। যখন একটা দিন †কটে গেল তখন তারা বুঝে নিল যে সে ধরা পড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মা ইদুরটি সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা আর এখানে থাকবে না। বিলের মধ্যে কোন এক মাছের ঘেরের উঁচু পাড়ে বাসা বেঁধে খাকবে এই লোকালয় ছেড়ে।

পরদিন রাতে তারা বিলের অভিমুখে রওনা দিল। বেশ কিছুদুর হাঁটার পর তারা একটি মাছের ঘের পেল যেখানে উঁচু পাড়ে বিভিন্ন রকমের সবজির বাগান আছে। ফলে তাদের খাদ্যের চিন্তা আপাতত দূর হলো। তবে হঠাৎ খাদ্য খাওয়া শুরু করলে এই মালিকও যে তাদের এখান থেকে তাড়ানোর অভিযান শুরু করবে না, তার নিশ্চয়তা কি! তারপরও তারা বুকে নতুন আশা নিয়ে বাসা বানানোর জন্য গর্ত খুড়তে লাগল।

কিছুদিন পর হঠাৎ মালিক এলো ঘের দেখতে। এসে দেখল যে, সবজি বাগানে কিছু সবজি আধা খাওয়া, কিছু সবজি বোঁটা থেকে উধাও হয়ে গেছে! এ দিকে ইদুর গুলো ভয়ে তো একেবারে জড়োসড়ো হয়ে গেল। না জানি ঘের মালিক তাদের উৎখাত করতে উঠে পড়ে লাগে কি-না! কিন্তু ঘের মালিকটি ছিল অতিশয় ধার্মিক ও দয়ালু। সে তার কর্মচারীকে ডেকে বলল- দেখ, আমি বুঝতে পেরেছি যে, এখানে ইদুর এসেছে। যার কারণে সবজি বাগানে সবজি কমে গেছে। নিশ্চয় তাদের রিজিক আমার এই বাগানে লেখা আছে। ধনীর সম্পদে গরীবের এমনকি জীব-জন্তুরও হক রয়েছে। তাছাড়া এ বছর মাছ বিক্রি করে অনেক লাভ করেছি আমি। সুতরাং, এরা আর কত সম্পদই বা খাবে। আমি চাই এরা যত পারে আমার সবজি খেতে থাকুক। এদেরকে তাড়ানোর দরকার নাই। একথা শুনে ইদুরগুলো আনন্দে নাচতে ও গাইতে লাগলো- আহা কি আনন্দ এই সবজি বাগানে! আর আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে লাগলো।

এমনিভাবে কয়েক সপ্তাহ তাদের খুব আনন্দে কাটল। কিন্তু হঠাৎ এক জ্যোৎস্না রাতে তাদের বাসার পাশ দিয়ে এক বিষধর সাপ দম্পতি যাচ্ছে আর বলছে- গ্রামে মানুষদের ইদুরের লেজ কাটার অভিযানে এখন ইদুরের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে আমাদের এই সুস্বাদু খাবার এর সংখ্যা কমে গেছে। এই ঘেরে বেশ কিছু গর্ত দেখছি ! মনে হয় কিছু ইদুর এখানে চলে এসেছে। পুরুষ সর্পটি বলল- আমরা কাল থেকে এখানে আসব আর ইদুর ধরে মজা করে খাব। আহা, কত দিন ইদুর খাওয়া হয়নি! হো.....হো......হো.......তখন স্ত্রী সর্পটি বলল- কিন্তু ঘের মালিক যদি আমাদের উপস্থিতি টের পায়, তাহলে তো সে আমাদেরকে মেরে ফেলবে! একথা শুনে পুরুষ সর্পটি বলল-ঠিক বলেছো, তাহলে আগে ঘের মালিককে মেরে ফেলা যাক, তাহলে আমরা এখানে নির্ভয়ে ইদুরের একটা বাসায় অবস্থান করে প্রতিদিন ইদুরের রোস্ট খাবো হো.....হো......হো.......!

একথা শুনে ইদুরগুলো খুব ভয় পেল। বাচ্চাগুলো বলল- মা, এই হিংসুটে বিষধর সাপ যদি এখানে আসে তাহলে তারা তো আমাদেরকে খেয়ে ফেলবে। তাছাড়া আমাদের ঐ অকৃত্রিম বন্ধুকেও তারা মেরে ফেলবে! মা, তুমি কিছু একটা কর। তখন স্ত্রী ইদুরটি বলল- তোদের বাবা একবার আমায় বলেছিল যে, বিলের মাঝে ঐ ঘন জঙ্গলে নাকি এক সাধক ধ্যান করে। তার বিশেষ একটা গুণ হলো-তিনি সকল প্রাণীর ভাষা বুঝতে পারেন। চল, আমরা তার কাছে গিয়ে সাহায্য চাই, হয়ত তিনি আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন। সেই রাতে তারা সাধক লোকটির কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলল। সাধক লোকটি সমস্ত কথা শুনে তাদেরকে অভয় দিল এবং ঘের মালিকের প্রশংসা করল। তিনি ইদুরগুলোকে গাছের ছোট ছোট চারটি টুকরা দিল আর বলল- এই টুকরাগুলো ঐ ঘেরের চার কোনায় পুতে রাখবে। তাহলে কোন ক্ষতিকর প্রাণী ঐ ঘেরে আর প্রবেশ করতে পারবে না। তারপরও আসার চেষ্টা করলে তারা আগুনে পুড়ে ছারক্ষার হয়ে যাবে। আর উক্ত ব্যক্তির আয়ে আরও উন্নতি হবে।
ইদুরগুলো সেখান থেকে ফিরে এসে সাধক লোকটির কথা মত চার কোনায় টুকরাগুলো পুঁতে দিল। ফলে ঐ সাপগুলো এবং অন্য ক্ষতিকর প্রাণী ঘেরের কাছে আসতে পারল না। এভাবে ইদুরগুলো নির্ভয়ে বসবাস করতে লাগলো এবং দয়ালু লোকটিকে সাপ এর ছোবল থেকে রক্ষা করল।

মেহেদী হাছান
প্রিন্সিপাল অফিসার
সোনালী ব্যাংক লি.

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

চমৎকার শিক্ষামূলক গল্প!
রিজিকের মালিক আল্লাহ এই
সত্যকথাটি আমরা মাঝে মাঝে
বিস্মৃত হই। আমরা যেন কোন
অবস্থাতেই আল্লাহকে ভুলে না যাই।
আমিন

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুপাঠ্য, সুশোভন লেখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.