![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট বেলায় গ্রামগুলোতে টিয়া পাখি আর ঘুঘু পাখির ঝাঁক দেখতাম। আর শালিক পাখি সে তো খুব সাধারণ পাখি বলে ভাবতাম। আমার নানার বাড়ি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে। মেহেরপুর ছিল ঐ ইউনিয়নের একটা ঘন গাছগাছালিতে বেষ্টিত গ্রাম যেখানে আমার মেঝো খালার বাড়ি। গ্রামটি ছিল বিভিন্ন পাখপাখালিতে ভরপুর। তাছাড়া তাদের বাড়িতে ছিল নানা প্রজাতির কবুতর। ঐ এলাকাতে বেশ টিয়াপাখি পাওয়া যেত। সেই লম্বা লেজ আর ধারালো ঠোঁট ওয়ালা টিয়া! গাঁয়ে হাত দিলে কামড়িয়ে রক্ত বের করে দিত! ছোটবেলায় মায়ের সাথে যখন তাদের বাড়িতে যেতাম তখন প্রতিবার এক জোড়া কবুতরের বাচ্চা নিয়ে আসতাম! একবার দেখি তাদের বাড়িতে খাঁচাবন্দী দুইটা টিয়া পাখি। তখন আমি আবদার করলাম তার থেকে একটা পাখির জন্য বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুষব বলে। তখন তারা একটা গাছের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল যে, ঐ গাছটিতে পাখির বাচ্চা আছে- কিছুদিন পর বাচ্চাগুলো বড় হলে তখন পেড়ে দেবে। কি আর করা, সেবার আর পেলাম না!
কিছুদিন পর আমার জন্য তারা একটা টিয়াপাখি পাঠিয়ে দিলো। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। কি সুন্দর দেখতে সেই পাখিটা! স্কুল থেকে এসে বই-খাতা রেখে আগে পাখির সেবাযত্ন তারপর অন্য কাজ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে আগে পাখির খোঁজ নিতাম তার পর ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসতাম। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি খাঁচায় পাখি নেই! তখন আমার কান্না শুনে আব্বু-আম্মু সহ অন্যরা চলে আসল। আসলেই খাঁচাটি পাখি শূন্য! কিন্তু পাখি তো আর নিজে খাঁচা থেকে বের হতে পারবে না! তাছাড়া সেটি ছিল লোহার খাঁচা। যাহোক আগে পাখির খোঁজ করতে হবে তারপর অন্য ভাবনা। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল পাখিটি প্রতিবেশীর এক গাছের ডালে বসে আছে নিশ্চিন্ত হয়ে! আব্বু চুপিচুপি গাছে উঠে পাখিটির লেজ ধরে ফেললো! আসলে এটি ছিল আমার মায়ের কাজ! খাঁচা বন্দী পাখি তার মোটেও পছন্দ নয়। এভাবে আমার মা তিন বার লুকিয়ে পাখির খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিল। তবে তিন বারের বার তিনি সফল হয়ে ছিলেন। আর পাখিটি আমায় এক বুক বেদনায় ডুবিয়ে দূর অজানায় কোন এক অরণ্যে চলে গেলো!
আমি যখন বুঝতে শিখলাম তখন আমার মা ঐ পাখি ছেড়ে দেয়ার গল্পটি বলেছিলেন। আজ যখন ঐ গ্রামে বেড়াতে যায় তখন সেই গল্পটি খুব মনে পড়ে। আহা! পরিবেশ রক্ষায়, বন্য প্রাণী রক্ষায় আমরা কত কিনা করে যাচ্ছি! আজ সেখানে সেই টিয়াপাখির ঝাঁকের দেখা নাই, দেখা নাই মনমাতানো ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো ঘুঘু পাখির দলগুলোর! আমাদের মত সাধারণ মানুষের সামনে পাখি শিকারি মানুষগুলো ফাঁদ পেতে পাখিগুলো ধরে নিয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করেছে। ধীরে ধীরে তারা বনগুলো পাখি শূন্য করে ফেলেছে। আগে বিভিন্ন পাখির কলকাকুলিতে আমাদের ঘুম ভাঙ্গত, আর এখন ভাঙ্গে কাকের কা-কা শব্দে। ইদানিং খুলনা শহরে পাখি বিক্রেতারা শালিক পাখি নিয়ে ঘুরছে। আমি দেখে বেশ অবাক হলাম। হায়রে টিয়া, ঘুঘু, ময়না...... তোরা আজ কোথায় গেলি! আমাদের কি দুর্দিন যাচ্ছে একটু দেখে যা! শেষমেশ শালিক পাখি নিয়ে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি! এরপর ঘুরবো কাক নিয়ে! এই কাক লাগবে কাক............।
সমাজে এই মায়েদের আজ খুবই দরকার, যারা সন্তানের অন্যায় সখগুলোকে কখন প্রশ্রয় দিবে না। আমরা আমাদের বাচ্চাদের যদি পাখি কিনে না দেই তাহলে এই শিকারিরা পাখি শিকার করে কি করবে বলুন! কিছুদিন আগে আমার গ্রামের বাড়ি পাইকগাছা, খুলনাতে গিয়ে একদল শিশুদেরকে ফাঁদ পেতে পাখি শিকারে বিধা দিয়েছি। পাখি শিকারের পরিবর্তে তাদেরকে ব্যাটবল কিনে দিয়েছি। আরেকদিন দেখি কয়েকটা বাচ্চা মিলে একটা মাছরাঙা পাখি দড়ি দিয়ে বেধে খেলছে। আমি গিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু রাজি হল না। সর্বশেষ তাদেরক ৫০/- টাকা দিয়ে পাখিটাকে নিয়ে নিজ হাতে ছেড়ে দিলাম। আহ, স্বাধীনতা! সত্যিই সে কি স্বাধীনতা। ভেরি সিমপ্লি, আমার খুব ভালো লাগলো। আমার মা যদি সেই সময় আমার অন্যায় শখ মেনে নিতেন তাহলে এখন হয়ত আমি শখের বশে বনের স্বাধীন পাখি খাঁচায় বন্দী করে রাখতাম! এমনকি শিকারির পাখি ধরাকে সাধারণ রুজিরোজগার আর মত সাধারণ কাজ বলে মনে করতাম! আজ এই সমাজে দরকার কিছু সাহসী আর সচেতন মানুষ, যারা পাখি শিকারিদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করবে। আসুন, নিজ নিজ অবস্থান থেকে পাখি শিকার রোধ করি।
২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
পাখী শিকার ও পাখী পালনের বিপক্ষে কি করা যায় ?
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: সারা বাংলাদেশ গাছ দিয়ে ভরে ফেলতে পারবে। তাহলেই পাখিরা আনন্দে থাকতে পারবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪১
জুন বলেছেন:
ঢাকায় আমার বাসার প্রতিদিনের মেহমান এরা নেক্সাস। আরও অনেক অনেক রকম পাখি আসে সারাদিন খেতে আর কিচির মিচির করে ঝগড়া করতে।
মনে হলো অনেক দিন পর আসলেন ব্লগে।