নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হীরকরাজ

হীরকরাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাতে কী !!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৮

চটাস! চটাস! দু বার। মহাজ্ঞানী হাফিয মনোয়ারের বেতের বারি। বাপরে! তবুও গিট্টুর ভাগ্য ভালই বলতে হবে; মাত্র দুটো গিলতে হয়েছে। বাকিদের তো অবস্থা ট্যান্ডিসটার!



প্রতিদিন সেঞ্চুরি করার পণ করে ক্লাসে আসেন মহাজ্ঞানী হাফিয মনোয়ার। হাফিয মনোয়ার হলেন অঙ্কের শিক্ষক। শুধু অঙ্কের শিক্ষক বললে ভারি ছোট করে দেখা হবে তাকে। তিনি একাধারে নানা গুনের অবিচ্ছেদ্দ আধার। শাসানি, কষানি, গালি-গুঁতা আর উপমা প্রয়গের যদি কম্পিটিশন করা যেত তাহলে নির্ঘাত ১ম স্থান পেতেন। তবে সবচেয়ে বড় আর ইম্পরট্যান্ট বিষয়টি হল তার বেতের বারি। তিনি যে অলিম্পিকে নির্ঘাত গোল্ড মেডেল পাবেন তাতে কারো মনে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। না না অঙ্কে নয় পিটুনির দিক থেকে। শচীন টেন্ডুলকার এত বছর খেলেও যেখানে মাত্র ৪৩ টা সেঞ্চুরি, সেখানে হাফিয মাস্টের নিয়মিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য ছাত্ররা তার নাম দিয়ছে সেঞ্চুরি হাফিয।







লাল্টুর ভাগ্যটা আজ বড্ড মার খেয়ে গেছে। গতকালের চাইতে আজ ছ’টা বেশি পড়েছে। গত বুধবার থেকে তার লাক একদমই ফেবার করছে না। একেতো লাক ফেভার করছেই না তার উপর আবার মারের চোটে বোধয় আজ ফিভার’ই এসে যাবে। চোখে আজ সে সর্ষে ফুল দেখছে। এত সরশেফুল সে জীবনে জমিতেও দেখেনি। ২৬টা!



পুচ্ছদেশে হাত বোলাতে বোলাতে সে হিসেব কষতে থাকে ঠিক কবে থেকে তার এমন মন্দ ভাগ্য শুরু হল। কেবল তাই নয় গত এক তারিখ থেকে ঠিক কটা হল আজকেরটা সহ হিসাব কষতে থাকে সে।



ক্লাসে ০১ তারিখে সেঞ্চুরি হাফিয ১০০ টা চকলেট উপহার দেন তাকে যে এ মাসে সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে। পর পর গত তিনবার লাল্টু যথা যোগ্য যোগ্যতাবলে পুরস্কারটি ধরে রেখেছে। গতবার তো একটু হলেই হ্যাট্রিকটা মিসই হয়ে যাচ্ছিলো। তবে মাসের শেষ দিনে তিনটা বারি বেশি পড়ার বদৌলতে ষে সেন্টুকে হারিয়ে দিতে সমর্থ হয়। সেদিনের পিটুনির কেমন যেন একটা চকলেট চকলেট ফ্লেবার ছিল। পরদিন চকলেট এর প্যাকেট হাতে নেবার পর লাল্টুর সে কী খুশি! টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুদের সে বলেছিল, “ আমার জীবনের সাথে গায়িকা ব্রিটনী স্পিয়ার্স এর কত মিল দেখেছিস? সেও আমার মত মার খেত আর মাস শেষে চকলেট পেত।” বন্ধুরা শুনে বলে, “ ধুর ব্যাটা, কি বলিস এসব?” “আরে এ জন্যই তো সে গান গেয়েছে ‘ হিট মি বেবি অয়ান মোর টাইম’।”



কিন্তু আজ লাল্টুর হিসেব কিছুতেই মিলছে না।



রাতে লাল্টুর জ্বর এসে গেল। জ্বরের ঘোরে সে কেবল হিসাব কষতে থাকে। ঘোরের ভিতরই সে হাসে। বিজয়ের হাসি। এবার সে নিশ্চিত, সে’ই চকলেট পাবে। কেউ তাকে হারাতে পারবে না।



চার রাত তিন দিন পর লাল্টু মারা যায়।



দৈনিক প্রথম প্রভাত- এ তার ছবি ছাপা হয়। তাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি আর প্রতিবাদ সভা করা হয়। স্মরণ সভা থেকে শুরু করে গণ আন্দোলন ও চলে কিছুদিন। ‘পাষণ্ড হাফিজ মাস্টারের বিচার চাই’ সহ সব ধরনের কাহিনিই দেখল গোটা দেশ।স্বল্পখ্যাত চকলেট লাল্টু আজ বিখ্যাত; আলোচনার টেবিল এর আলোচ্য বিষয়।



সেই সেঞ্চুরিয়ান হাফিজ মাস্টার? তার আবার কী হবে? সে দিন কতক আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে জল খাবার খেয়ে বেড়াল, ক’দিন নিজ বাড়িতেই সময় সেবন করলো আর মাস কয়েক পর আবার- ‘যেমন ছিলে’।



লাল্টু? মরে গিয়ে সে ভালই করেছে। তার বিখ্যাত হবার সাধ তো মিটেছে! ব্রিটনি স্পিয়ার্স এর মত “hit me baby one more time” গেয়ে যে মৃত্যু- তাই বা কম কিসে?



লাল্টুর স্থান দখল করেছে এখন সেন্টু। সেই প্রতিবার চ্যাম্পিয়ন হয় আর চকলেট পায়।



কথায় আছে, “survival for the fitest” লাল্টু পারে নি তাতে কী, সেন্টুরা তো আছে। সেন্টুর স্বপ্ন- বিশ্ব রেকর্ড সে একদিন করবেই।



জনম দুঃখী আমাদের দেশের অবস্থাও লাল্টু আর সেন্টুর মত। বিদেশি বড় বড় আর ক্ষমতাশালী দেশগুলো আমাদের মত ক্ষমতাহীন আর নির্বাক দেশকে শোষণ করে শুষে নেয় সবকিছু আর বছর শেষে দেয় লোক দেখানো যৎসামান্য অনুদান। আর আমরা, সব ভুলে গিয়ে সেটাকেই সকল প্রাপ্তি বলে ভাবতে অভ্যস্ত হতে শিখি। আমরাও ঘটনার শুরুতে কর্মসূচী আর আলোচনা সভা করে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যেমনটা করেছি ‘নাইকো’ কিংবা এমন হাজারো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। তারা আবার তাদের শোষণ আর নির্যাতন চালিয়ে যায় নিশ্চিন্তে, রুটিন মাফিক, আর আমাদের হাতে তুলে দেয়া যৎসামান্য উপঢৌকন পেয়ে আমরা গেয়ে যাই, “hit me baby one more time”, আগের যন্ত্রণা ভুলে যাই নিমিষে।



মার খেয়েই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, আর ভাবছি, মারখেয়েছি, তাতে কী?

লিখেছেন .....shahriar shaikat

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.