![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লীলাবতীর বয়স ১৫। তার একান্ত ইচ্ছা লেখাপড়া করে চাকরি করবে। বাবা নেই সারাটা জীবন সে মায়ের পাশে থাকবে।কিন্তু না সবার সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একদিন তার বিয়ে হয়ে গেল। তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। শ্বশুর বাড়ি গেল সেতো আরও কঠিন। সেখানে উঠতে বসতে বকা ঝকা। তাকে কেও দেখতে পারে না। কারণ ঐ যে মধ্যবিত্ত বাবার বাড়ি থেকে সে কিছু আনতে পারিনি। সেটাই তার সব চেয়ে বড় অপরাধ। এদিকে স্বামীর আয় কম। কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে সংসার চলছিল। একদিন মা আসলে মাকে লীলাবতী কষ্টের কথা বলে অনেক কাঁদল। লীলাবতী তার মাকে বলল তাকে নিয়ে যেতে। তার মা শ্বশুর বাড়ির মানুষদেরকে বললে ওরা অপমান করে লীলাবতীর মাকে। যাওয়ার সময় মা লীলাবতীর মাথায় হাত রেখে বলছিল- “ভাল থাকিস মা। আমরা যে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। আমাদেরকে সব মেনে নিতে হয়।” সকাল হতেই খবর পেল তার মা পৃথিবী থেকে একেবারেই বিদায় নিয়েছে। লীলাবতী ভাবল মনে হয় তার কষ্টের কথা শুনে মা সহ্য করতে পারেনি। এখন আপন বলে কেও নেই।
এভাবে করে কেটে গেল অনেক বছর। লীলাবতীর দুটি সন্তান হল। স্বামীর চাকরিতে বেতন বাড়ল। মনে হল এবার বুঝি সংসারে শান্তি আসবে। দুঃখে যার জীবন গড়া তার আঙ্গিনায় কি আর সুখ আসতে পারে? স্বামী অন্য এক মেয়ের সাথে মেলামেশা করছে। সংসারের দিকে তার কোন নজরই নেই। অফিস করে সারাদিন সেখানে আড্ডা দিয়ে রাত করে ফিরে কারণে অকারণে চিৎকার করে। লীলাবতী বাচ্চা দুটি নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতো। কখনও কোন কথা বলার অধিকার ছিলনা। তার স্বামীর কথা সে তার ইচ্ছা মতো সব করবে। মানতে পারলে থাকবা না মানতে পারলে দরজা খোলা আছে চলে যেতে পারো।
অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়। একদিন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। কিন্তু ছোট মেয়েটি মামনি বলে কেঁদে উঠল। সেদিন আর আত্মহত্যা করা হল না। সারারাত মেয়েকে বুকের মধ্যে রেখে কেঁদেছে আর মনে মনে ভেবেছে না, আর এই কাজ করব না। আমি মরলে ওদেরকে দেখার কেও নেই। নিজের সাথে যুদ্ধ করে ওদেরকে বড় করতে হবে।
অনেক কষ্টে লেখাপড়া শিখিয়ে ছেলে-মেয়েকে বড় করলো।প্রবাসী এক ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিল।দুইদিন পর জামাই মেয়েকে নিয়ে বিদেশে চলে যাবে।লীলাবতীর মেয়ে একটুও যেতে রাজি না। সে তার মা কে ছেড়ে কোথাও যাবে না। লীলাবতীর মেয়ে বলল-‘‘ মাকেআমি সারাজীবন কষ্ট করতে দেখেছি। মা সবার আড়ালে অনেক কেঁদেছে। শুধু আমাদের দুই ভাইবোনের জন্য বাবার কত না অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। আমার মা কষ্ট পেয়েছে বলেই তার প্রতিজ্ঞা ছিল আমাকে লেখা-পড়া শিখিয়ে তারপর বিয়ে দিবে। প্রয়োজন পরলে যেন চাকরি করে নিজের পায়ে দাড়াতে পারি। মায়ের মনে পড়াশুনা করার যত ইচ্ছা ছিল সব আমাকে দিয়ে পূরণ করেছে। মা সব সময় বলত যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। মেয়ে বলে কোন কিছু তে পিছিয়ে থাকতে নেই। সব সময় সবাইকে ভালবাসতে আর উচ্চ আশা করতে নিশেদ করেছে। দেখবে আল্লাহ সব সময় তোমার ইচ্ছা পূরণ করবেন। মাকে ছেড়ে যেতে আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল। মা, মাগো আমাকে নিয়ে তোমার সময় কাটত। এখন তোমার সময় কিভাবে কাটবে?” বলে মায়ের কপালে চুমু খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল।
লীলাবতী ওখান থেকে আর বাড়িতে ফিরল না। পরের দিন ছেলে শাওন বাড়িতে আসলো মাকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু বাবার কাছে শুনল মা এয়ারপোর্ট থেকে আর বাড়িতে আসে নি। আত্মীয়- স্বজনদের বাড়ি খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোথাও নেই। সব শুনে শাওন চিৎকার করে বলল- “ আজ তোমার জন্য আমাদের পরিবারের এই অবস্থা। সারাজীবন মায়ের কষ্ট তুমি বুঝনি। তুমি শুধু কষ্টই দিতে পারো। ভালবাসতে পারো না।”
এই বলে শাওন বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সারারাত ঘুমাতে পারিনি শাওন। একাই বলতে লাগলো- “মা তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে । আমি তো তোমার ছেলে। একবার আমাকেও জানাও নি। আমিতো ছোট থেকে তোমার কষ্ট দেখেছি। তোমায় আমি আর কষ্ট পেতে দিবনা। তোমাকে আমি আমার কাছে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তুমি চলে গেলে।কোথায় গেলে তোমাকে পাব!”
অনেক রাতে একটা কল আসলো। ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ বলল-“ আপনি কি শাওন ? লীলাবতী আপনার কি হয়?”শাওন বলল- ‘‘ হ্যাঁ। তিনি আমার মা হন। কোথায় আছে মা? কেমন আছে? আপনি কে বলছেন?” সেই পুরুষ কণ্ঠ এবার বলল- “ আমি আশ্রম থেকে বলছি।আমাদের এখানে লীলাবতী নামের একজন আছেন। তিনি একটু আগে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যান। বাড়ির লোকের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি আপনার নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেন তার কিছু হলে আপনাকে জানাতে। রাত ২ টার দিকে তিনিমারা গেছেন। কালকে সকালে জানাজা হবে। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন। তিনি বলেছেন তার লাশ যেন এখানে দাফন করা হয়।”শাওন চিৎকার করে মা ডাক দিয়ে বলল- “ মা এই দুনিয়া তে আমার যে আর কেও রইল না। তুমি কেন আমাকে সাথে নিয়ে গেলে না।”
পূর্বে প্রকাশিত এখানে www.insiderbd.com
২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০০
কুষ্টিয়ারশুভ বলেছেন: লেখার শুরুতেই লীলাবতীর বয়স ১৫ না লিখে ১৮+ লিখলে আরো বেশি পাঠক পড়তো।
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন (সহমত)
৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৫
স্বপনবাজ বলেছেন: চমৎকার
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫১
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন