নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার কাছে জীবন মানে হল বেঁচে থাকার এক নিরন্তড় লড়াই । আর বেঁচে থাকার এ লড়ায়ে টিকে থাকতে হলে বেশ কিছু জিনিস খুবই জরুরী । তার মধ্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি জরুরী, তার নাম ভালোবাসা । আর ভালোবাসা মানে হল প্রিয় মানুষের মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা । ভালোবাসাহীন একজন মানুষের জীবন কতটা বিষাদময় হতে পারে, তা সে ব্যতীত আর কেউ বুঝতে পারবে না । ভালোবাসা যে কোন ধরনের হতে পারে । সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা, মা-বাবার ভলোবাসা, ভাই-বোনের ভালোবাসা, পরিবারের ভালোবাসা, আপনজনের ভালোবাসা, প্রতিবেশীর ভালোবাসা । তবে ভালোবাসা থাকতেই হবে । তাই আমি সবসময় অপরকে ভালোবাসা দিতে চেষ্টা করি, যাতে তাদের কাছ থেকেও ভালোবাসা পেতে পারি । আর সকলের কাছ থেকে পাওয়া এ ভালোবাসাকে সাথী করে নিয়েই আমি আমার জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলছি ।
এই প্রথম রমজান মাসে পরিবারের থেকে আলাদা। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারণে এবার আর বাসায় যেতে পারিনি। একটুও ভালো লাগছে না। বাসায় থাকলে এতক্ষনে ক্ষুদা লাগছে ক্ষুদা লাগছে বলতে বলতে আম্মাজানের মেজাজ গরম করে ফেলতাম।
গত রমজানে তিনজন মিলে খেজুরের ব্যাবসা করছিলাম। রোজার প্রথম সপ্তাহ ক্লাস হইছিলো কিন্তু আমি ক্লাস না করেই ঢাকা চলে গেছিলাম।
এলাকার এক বড় ভাই, আমার এক ফ্রেন্ড আর আমি এই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম রমজান মাসে খেজুরের ব্যাবসা করবো। সবাই নতুন। খেজুর কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকা দরে কিনতে পারবো এসব সম্পর্কে এলাকার কয়েকটা দোকানদারের কাছ থেকে জেনে নিলাম।
রমজান মাস শুরু হওয়ার একদিন আগে আমি আর ঐ বড় ভাই গেলাম বাদামতলির খেজুর পট্টিতে (খেজুরের পাইকারি আরত)। বিশাল বড় বড় খেজুরের পাইকারি দোকান। ধারণাও ছিল না এত বড় আরত সম্পর্কে। দুইজনের মাথা ঘুরাইতাছে। কেমনে কি করুম কিছুই বুঝতাছি না।
একটু পরে এক খেজুর ব্যাবসায়ীকে দেখলাম প্রতিটা দোকানে ঘুরে ঘুরে খেজুর দেখতেছে। আমরাও ঐ ব্যাবসায়ীর পিছু পিছু ঘুরতেছি। উদ্দেশ্য, ওনি কীভাবে দাম দর করে এটা দেখা।
প্রায় এক ঘন্টা পর দুইজন একটা দোকানে ঢুকলাম। খেজুর দেখতেছি, দাম জিজ্ঞাসা করতেছি কিন্তু কোনটা নিব বুঝতেছি না। কারণ খেজুর সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণাই নেই।
প্রায় দশটা দোকান ঘুরার পর খেজুর কিনার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিন রকমের খেজুর কিনলাম। যেহেতু নতুন তাই কমই কিনছি। একদিন বিক্রি করে দেখি কেমন চলে।
বড় ভাইয়াটার রুমে খেজুরগুলা রাখলাম। পাল্লা-বাটখারা এগুলা আগের দিন কিনে রাখছি। কাল সাকলেই দোকান দিব। তিনজন তখন এইটা নিয়া সেইরাম Excited ।
দোকান খোলার দায়িত্ব পরলো আমার উপর। ফ্রেন্ডের কলেজ খোলা আর ঐ ভাই আফিসে যাবে এবং দুপুরে বাসায় ফিরবে। সুতরাং আমাকেই দোকান খুলতে হবে।
জীবনেও দোকান খুলিনি। অনেক নার্ভাস। পাল্লা-বাটখারা, খেজুর নিয়ে কোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের সামনেই দোকান নিয়ে বসলাম (আমাদের কোয়ার্টার অফিস এরিয়ার ভিতরেই। সুতরাং এখানে অস্থায়ী অনেক দোকান প্রতিদিনই বসে।)।
বুক ধুক ধুক করতেছে। একটু একটু হাসিও পাচ্ছে। নিজের মধ্যে তখন দোকানদার দোকানদার ভাব কাজ করতেছে। দোকানে দাড়িয়ে আছি। অনেকেই খেজুরের দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যাচ্ছে কিন্তু কিনতেছে না। একটু চিন্তিত। ও আল্লাহ সবাই খালি দাম জিগায় কিন্তু কিনে না কেন?
মনমরা হয়ে দাড়িয়ে আছি। যোহর নামাজের আযান দিছে। তখন এক ক্রেতা এসে খেজুরে দাম জিজ্ঞাস করলো...
- কিরে ভাতিজা, বড়ুই খেজুর (খেজুরের নাম) কয় টাকা কেজি?
: কাকা আপনের লাইগা মাত্র ১৮০ টাকা কেজি। কয় কেজি দিমু?
- ধূর! এই খেজুর এত টাকা না। কম রাখ। ১৫০ টাকা করে রাখ।
: কাকা পারুম না। কিনা আছে ১৪৫ টাকা কেজি। যান ১৭০ টাকা দিয়েন। কয় কেজি দিমু?
- আরে বেটা ১৫০ টাকাই রাখ। প্রথম বিক্রিটা আমার কাছে কর দেখবি ভালো বিক্রি হবে। এক কেজি দে।
: কাকা লস হয়ে যায় তো।
এই বলেই পাল্লায় খেজুর উঠাইতেছি। নার্ভাস এত বেশি ছিলাম যে আমার হাত কাপতেছিল। আর বুকের ধুক ধুকানি তো আছেই।
খেজুর বিক্রি করলাম। ঐ ভাইয়া আসলো। একটু পর ফ্রেন্ডটাও আসলো। ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি শুনে দুইজনেই অবাক। কারণ ঐ খেজুর অন্য জায়গায় ১৮০ টাকার নিচে বিক্রিই করে না।
সকালে একটা টেবিল নিয়া বসছিলাম। একটু পর একটা ভ্যানে খেজুরগুলা উঠাইয়া দোকান নিয়া সামনে গেলাম। ভ্যানে করেই খেজুর বিক্রি করতেছি।
আফিস ছুটি। দোকানে প্রচন্ড ভির। অনেক কাস্টমার। এক ঝাটকায় প্রায় দুই হাজার টাকার মত খেজুর বিক্রি করলাম। দিন শেষে ৪১০০ টাকা বিক্রি করছিলাম। প্রথম দিন হিসেবে ভালোই বিক্রি করছি। তারপর আস্তে আস্তে ছয় প্রকার খেজুর আনলাম।
প্রতিদিনই আমি দোকান খুলি। এখন আর নার্ভাস লাগে না। অনেক আনন্দ নিয়ে দোকানে বসি, দোকান নিয়ে বসাটা অনেক উপভোগ করি। রোজা থেকে রোদের মধ্যে দোকান নিয়ে দাড়িয়ে থাকা সত্যিই খুব কষ্টের।
আমি খেজুর বিক্রি করি আর বাকি দুইজন বাদামতলি থেকে খেজুর কিনে নিয়ে আসে। এলাকার পরিচিত সবাই আমাদের দোকান থেকে খেজুর নিত। আংকেলরা এসে উৎসাহ দিত। দারুণ একটা ভালো কাজ করছো। রোজার মাস আজাইরা না ঘুরে একটা কামের কাম করছো ভাতিজা।
বিশ রমজান পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করছিলাম। অনেক ভালো ছিল খেজুরের দোকান নিয়ে বসা দিনগুলা। আব্বুও অনেক খুশি হইছিলো।
খেজুর বিক্রি করে সবার পকেটেই মোটামুটি কিছু টাকা আসছিলো। নতুন বিধায় আমরা বেশি লাভ করতে পারিনি।
এবারের রমজানে আমি কুমিল্লায় আর বাকি দুজন ঢাকায়। পরীক্ষা না থাকলে এবারও তিনজন মিলে ব্যাবসা করতাম। কিন্তু এবার আর করা হলো না। আমাকে তেইশ রমজান পর্যন্ত কুমিল্লা থাকতে হবে।
নিজে কিছু করতে পারার মধ্যে সত্যি-ই অনেক আনন্দ আছে। মা-বাবাও অনেক খুশি হয় সন্তানের এসব কাজে। আব্বু এক টাকাও আমার কাছ থেকে নেয়নি উল্টো চালানের টাকা পুরোটাই আমাকে দিছিলো।
সত্যি বলতে মা-বাবা বকা দেয় যাতে তাদের সন্তান কিছু একটা করুক, ভবিষ্যতে বেকার না থাকুক। এতে তাঁদের অনেক গর্ব হয় নিজের সন্তানকে নিয়ে। কোন মা-বাবাই চায় না তার সন্তান অকর্মা থাকুক।
০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১২
ছন্নছাড়া এক্সপ্রেস ঢাকা বলেছেন:
২| ৩০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
হাসিব০৭ বলেছেন: আসলেই নিজে কিছু করতে পারলে নিজেকে খুব গর্বীত মনে হয়
০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১২
ছন্নছাড়া এক্সপ্রেস ঢাকা বলেছেন:
৩| ৩০ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
আজমান আন্দালিব বলেছেন: প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
৪| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১৩
ছন্নছাড়া এক্সপ্রেস ঢাকা বলেছেন: দোআ করবেন
৫| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩৮
শ্রাবণধারা বলেছেন: চমৎকার একটা কাজ করছেন। শুভকামনা...........।
৬| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭
ছন্নছাড়া এক্সপ্রেস ঢাকা বলেছেন:
৭| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯
মেকগাইভার বলেছেন: এই রমজানে ফরমালিনের ব্যাবসায় নেমে যান। দেখবেন লাভ কাকে বলে।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪
রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: মাশাআল্লাহ