![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসোলে আমর সম্পর্কে লেখার মতো এখনো তেমন কিছুই তৈরি হই নাই । :)
এই রাজু ক্লাশে যাবি না অনেক দেরি হয়ে গেছে, কথাটা বলে তমাল ক্লাশের দিকে ছুটে গেলো । রাজু আধোঘুমো চোখে দেখলো সোয়া ৯টা বাজে তড়িঘড়ি করে সে ঘুম থেকে উঠলো । রাজু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সিএসই বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র । অভাব অনটনের সংসারে রাজু বড় হয়ে এতদূর এসেছে আজ । ক্লাশে যাওয়ার জন্য রেডি হতে যেয়ে দেখলো পায়ের জুতাটা এক পাশ দিয়ে ছিড়ে গেছে যাইহোক ওই ভাবে রাজু কোনমতে রেডি হয়ে প্রথম ক্লাশ ধরার জন্য সোজা ক্লাশের দিকে ছুটল, রাজুর ক্লাশটা ছিলো সিএসই ভবনের দ্বিতীয় তালায় । ও যখন প্রথম তালার সিঁড়ি পার হচ্ছিলো কিছু না দেখেই ধাক্কা খেলো একটা মেয়ের সাথে মেয়েটার হাতে কিছু বই ছিলো সব পড়ে গেলো, রাজু কি করবে বুঝে না উঠে বই তুলে দিতে গেলো আর তখনই মেয়েটাকে দেখলো কালো রেশমি চুলে ঢাকা মুখটা দেখতে যেনো একবারে অপ্সরীর মতন ।এরপর বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলো । রাজুর বাবা বেঁচে নেই বাড়িতে মা আর এক বোন আছে । অভাবের সংসারে রাজুই বড় ছেলে । তমাল রাজুর খুব কাছের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেই ওদের পরিচয় । রাজু মাঝে মাঝে ধূমপানও করে কিন্তু কখনো কিনে নয় তার বন্ধু তমালের খাওয়া সিগারেটের জলন্ত অর্ধাংশ, বেশ মিল দুজনের । তমাল এখানকার বেশ পরিচিত ও রাজুর জন্য একটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয় । রাজু এইটা ছাড়াও আরো ২টা টিউশনি করে কোনমতে নিজের পড়ার খরচ আর সংসার চালায় । এই ভাবেই রাজুর দিনকাল কাটছিলো । মাসের শুরুতে তমালের দেওয়া নতুন টিউশনেতে রাজু যায় । বেশ ছিমছাম আর বনিয়াদি একটি পরিবার, রাজুর স্টুডেন্ট ক্লাশ নাইনের ছাত্র । প্রথম দিন পড়ানোর সময় কিছুক্ষন পরে রাজুর জন্য একটি মেয়ে নাস্তা নিয়ে আসে আর রাজু তখনি আবিষ্কার করে এই সেই অপ্সরী যাকে সে একতালার সিঁড়িতে ধাক্কা দিয়েছিলো । রাজু ভালো ছাত্র হিসাবে ভার্সিটিতে বেশ জনপ্রিয় সেই হিসাবে মেয়েটিও রাজুকে হালকা পাতলা চিনে । মেয়েটির নাম মিতু সে প্রথম বর্ষের ছাত্রী । প্রথম দিনই মিতু রাজুকে বলল ভাইয়া আপনি রাজু তাইনা ? রাজু উত্তরটা একটু না দেখার ভান করেই দিল হ্যাঁ । ওই দিন বাসায় ফেরার পথে রাজুর মনে নানা জিনিস কাজ করতে লাগলো তার মনের কোন কণে যেন ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করলো কিন্তু রাজু নিজেকে বলল কি ভাবছি আমি ভালো লাগা শুধু বড়লোকদেরই থাকা উচিত, তাই সে এই সব ভাবনা থেকে বাইরে থাকতে চাইলো । এই ভাবে দিনের পর দিন রাজু নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনিও করতে থাকে আর এর মাধ্যমে মিতুর সাথে রাজুর বেশ ভালোই একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে যদিও রাজু কখনোই আগ বাড়িয়ে কথা বলতো না । এই ভাবেই কেটে যায় প্রায় ৫/৬ মাস । রাজুর ভদ্র ব্যবহার, মেধা, বুদ্ধিমত্তা এই সব কিছু দিন দিন মিতুর মনে ক্রমশ স্থান করে নিতে লাগলো । মিতু খুব সোজাসুজি কথা বলার মেয়ে ও যখন বুঝতে পারলো ও রাজুকে ভালোবেসে ফেলেছে ও ঠিক করলো সেই কথা রাজুকে বলবে তাই পরের ভ্যালেন্টাইনে মিতু রাজুকে ডেকে নিয়ে বলল ভাইয়ায়া আপনার সাথে আমর কয়েক মিনিটের জরুরি কথা আছে আপনার সময় হবে ? রাজু বলল বল, মিতু তখন রাজুকে কি বলবে বুঝতে না পেরে সোজাসুজি বলে দেয় ভাইয়া আমি আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না আমি আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি এখন আপনি যা করার করেন । রাজু কথা শুনে হা হয়ে যায় আর উত্তরে বলে তুমি কি বলছ এ হয় নাকি আমি কোন দিক দিয়ে তোমার যোগ্য নই । কিন্তু মিতু কোন কথা শুনে না, তখন রাজু সেইখান থেকে চলে যায় । কয়েক দিন হল রাজু টিউশনিতেও যায় না কিন্তু রাজু যে মিতুকে অনেক ভালোবাসে সেই সিড়িতে ধাক্কা খাওর সময় থেকে শুধু সমাজের উঁচুনিচু ভেদাভেদের কারনে সে তার ভালোবাসা প্রকাশ করে নি । কিন্তু এখন যখন মিতু রাজুকে ভালোবাসে তখন সে আর কোনভাবেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না তাই সে কি ভেবে পরের দিন মিতুর সাথে দেখা করে তাঁকে বলেই দিলো সব সত্যিটা আর তারপরেই দুজন এক সাথে ভবিষ্যতের অপেক্ষায় পাড়ি জমাতে থাকলো । মিতু মেয়েটা একটু বিলাসী , দেখতে দেখতে রাজু তৃতীয় বর্ষে চলে গেলো । মিতুর ভালোলাগা থেকে সৃষ্টি ভালোবাসা দিন দিন কেমন যানি ফিকে হতে লাগলো ওর কাছে কারণ রাজু অন্য সব ছেলেদের মতো না পড়াশুনা করে রোজগার করে নিজের বোন মাকে দেখে প্রেম করার মতো সেইরকম সময় ওর নেই কিন্তু রাজু মিতুকে অনেক বেশি ভালোবাসে তা জানে মিতু । দিন দিন রাজুর দারিদ্রতার কাছে মিতুর ভালোবাসা হেরে যেতে থাকে । ওই বছর মিতুকে একটি ছেলে পক্ষ দেখতে আসে, দেখার পর কি হয় রাজুকে মিতু বলে না । বেশকয়েক দিন পর মিতু রাজুকে বলে দেখো রাজু তোমার ভবিষৎ কি হবে আমি জানি না তবে আমর একটা ভবিষৎ আছে আর তা আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না সেদিন আমাকে একজন দেখতে এসেছিলো সে মিডিয়াতে কাজ করে নিজের বাড়ি গাড়ি আছে আর আমি সেদিন হ্যাঁ বলে দিয়েছি তোমার সাথে আমর থাকা আর সম্ভব নয় আমাকে পারলে ক্ষামা করে দিও এই বলে মিতু চলে যায় আর রাজু কিছু বলে না আকাশের দিকে শুধু এক পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, চোখের জল বেরিয়েছিলো কিনা তা রাজু জানে না । অভাবের দিনে ভালোবাসাটাও চলে যায় । তারপরও রাজু মনকে শক্ত রেখে পড়াশুনা শেষ করে দেশ থেকেই সফটওয়্যার এর উপর মাসর্টাস করে খুব ভালো মেধা থাকার কারনে রাজু অবশেষে ঠাই করে নেয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুর একটি জব । রাজু মাসে এখন অনেক টাকা সেলারি পায় তার নিজের এখন বাড়ি গাড়ি সবই আছে শুধু নেই একজন এইসব কথা লন্ডনের ব্রিসবেন শহরের বহুতল ভবনের একটি দালানের বেল্কোনিতে বসে সম্পূর্ন একটা সিগারেট খেতে খতে ভাবছিলো রাজু আর তখন যেন মনে হচ্ছিলো চোখের কোণে একটু জল জমেছে, ঠিক এমন সময় একটি মেয়ে কণ্ঠ ডাক দিলো রাজুকে “কি হল ভেতরে আসো” ।
মেয়েটি সায়মা, সে অন্য কেউ নয় রাজুর পার্মানেন্ট ভালোবাসার সঙ্গী ।
©somewhere in net ltd.