নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অনির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের খসরা চিত্রনাট্য

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

দেহ





গল্প সংক্ষেপঃ

উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সুন্দরী একটি মেয়ে। মেয়েটি শহরের নামকরা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করে। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি সৃজনশীল, স্বাধীনচেতা এবং জেদী প্রকৃতির। তার কাজে-কর্মে, চিন্তা-ভাবনায়, চলা-ফেরায় কোন ধরনের বাঁধা-প্রতিবন্ধকতা সে মানতে পারেনা। উন্মুক্ত বাতাসের মত বিশাল আকাশে সে উড়ে বেড়াতে চায়।



শহরের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া এবং প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতি অধ্যুষিত একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করার ফলে বেশ কিছু স্বাধীনতা সে পায়। একটা পর্যায়ে এসে সে বুঝতে পারে যেটাকে সে এবং তার চারপাশের মানুষ স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিচ্ছে- এটা আসলে মূলগত অর্থে স্বাধীনতা নয়- শুধুমাত্র শারীরিক নানা ধরনের ভোগের স্বাধীনতা। যেটা আসলে ভোগের স্বাধীনতার খোলসে একধরনের অন্তর্গত বন্দীত্ব। এই বন্দীত্বের ভেতরে বাস করতে করতে একসময় তার মন চরম মাত্রায় ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে উঠে, সে হয়ে যায় পুরোপুরি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। সে এই বন্দীত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তার সমাজের আশেপাশের মানুষ তার এই বিদ্রোহকে মেনে নেয় না। তাকে চতুর্দিক থেকে আরো বেশী করে চেপে ধরে, ঠেলতে ঠেলতে থাকে জীবনের কিনারে নিয়ে এসে ফেলে। তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। তার মনের নানা ধরনের মুক্ত বোধের চিৎকার প্রতিধ্বনি হয়ে তার কানেই ফিরে আসে।



শারিরীক ভোগের এই বন্দীত্বকে সে তার শরীরেরই অভিশাপ মনে করে বসে- শরীরকেই তার কারাগার মনে হতে থাকে এবং তার প্রতি আশে-পাশের ছেলেদের ব্যাবহার দেখে তার মনে হতে থাকে দৈহিক রুপের কারাগারে সে বন্দী হয়ে আছে। একপর্যায়ে এগুলো যখন তার সহ্যের সীমাকে অতিক্রম করে যায় তখন শরীর নামক এই রুপের কারাগার থেকে সে বের হয়ে যেতে চায়। সে আরো মনে করে- শরীর থেকে বের হয়ে গেলেই বুঝি বন্দীত্বের দুঃসহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।



ধীরে ধীরে অনেক হিসাব-নিকাশ করে ঠান্ডা মাথায় শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পুরোটা গল্পজুড়ে আছে এই জেদী, স্বাধীনচেতা ও সৃজনশীল মেয়েটির শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তের প্রস্তুতি- এই প্রস্তুতিকালীন সময়ে তার জীবনের নানা দুঃসহ স্মৃতি, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি নানা বিষয় তার মনের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে। মেয়েটি তার শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পেরেছে কিনা আমরা কেউই তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।



চিত্রনাট্য





ফেড ইনঃ



বাহির। সকাল।

মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির পানি গাছের সবুজ পাতার উপর পড়ে ধুয়ে যাচ্ছে। গাছের গুড়ি বেয়ে বৃষ্টির পনি গড়িয়ে নামছে। মাটির রাস্তা দিয়ে বৃষ্টির পানির অবিরাম প্রবাহ-মাটির উপরের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।



ভেতর। রাত্রি। ওয়াশ রুম।

একটি তরুণীকে ঝর্নার পানিতে গোসল করতে দেখা যায়- পুরো রুমটার মধ্যে ধোঁয়া উঠা অস্পষ্ট ভাব। চতুর্দিকের অস্পষ্টতার মধ্যে শুধুমাত্র তরুণীটির মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যায়- মেয়েটির মুখের ভাবটি এমন যেন তার শরীরের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার শাপমোচন হচ্ছে, তখন তাকে কিছুটা উৎফুল্ল দেখায়, চোখে-মুখে আহ্লাদী ভাব ফুটে উঠে। থুতনিটা একটু উপরের দিকে তুলে ভেজা চুলগুলোর ভেতর দিয়ে মোলায়েম ভাবে আঙ্গুল চালায়। শাওয়ার থেকে পানি পড়ার একটানা শব্দ। শাওয়ারের পানি মেঝে দিয়ে গড়িয়ে গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। পানির গর্তে ঢুকে যাওয়ার শব্দ।



ভেতর। গভীর রাত্রি। শহুরে উচ্চমধ্যবিত্ত একটি মেয়ের শোবার ঘর। বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায়।

শোবার ঘরের ভেতর থেকে ওয়াশ রুমের দরজা দেখা যায়। দরজার ছিটকিনি খোলার শব্দ হয়। দরজা খুলে সদ্য গোসল সারা তরুণীটি ভেজা চুলে নাইটি পরিহিত অবস্থায় বের হয়ে আসে। মৃদুপায়ে হেঁটে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলের উপর আলতো করে বসে, চোখে-মুখে আত্মস্থ ভাব লেগে আছে। হেঁটে আসার শব্দ, টুলে বসার শব্দ।



ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তরুণীটির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়, অস্পষ্ট থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়, উৎফুল্ল ভাবটি এখনও চোখে-মুখে লেগে আছে। টুলটা একটু সামনে টেনে নিয়ে এসে আরাম করে বসে- আশ্বস্ততার ভাব। টুল টানার শব্দ। চুল থেকে চুইয়ে ফোটা ফোটা পানি মঝেতে পড়ে। মেঝেতে পানি পড়ার শব্দ।

পাশ থেকে দেখা যায়-তরুণীটি আলতো হাতে হেয়ার হিটারটি উঠিয়ে নিয়ে চুল শুকাতে শুরু করে। এখন মেয়েটির মুখের ভাবটি এমন যেন কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে খুব একটা তাড়া নেই। চিরুনী দিয়ে ধীরে-সুস্থে চুল আচড়ায়। চুলের ব্যান্ড দিয়ে খুব কষে চুলগুলো বেঁধে নেয়। হিটার দিয়ে চুল শুকানোর, চিরুনী দিয়ে চুল আচড়ানোর, ব্যান্ড দিয়ে চুলবাঁধার শব্দ।



হাতের তালুতে বোতল থেকে লোশন ঢেলে দুই বাহুতে, পায়ে আলতো করে মাখে। খুব যত্ন করে ধীরে ধীরে মুখে ক্রিম মাখে। ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপগ্লস মাখে, পেনসিল দিয়ে চোখে কাজল পড়ে, গালে হালকা পাউডার লাগায়। লোশন, ক্রীম মাখা ও চোখে কাজল লাগানোর শব্দ।

হাতের তালুতে থুতনি রেখে আয়নায় নিজের চেহারার দিকে খুব করুণ একটি ভাব নিয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে মুখজুড়ে হালকা বেদনাময় হাসির রেখা ফুটে উঠে। এ সময় তার মুখমন্ডল জুড়ে হালকা নীল রঙের আভা।



বাহির। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন। সকাল বেলা।

কালো জিন্স ও সাদা সার্ট পরিহিত এবং ক্যাম্বিস কাপড়ের জুতা পড়া মেয়েটি তার ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে। গেঞ্জির উপর বোতাম খোলা সার্ট ও অনেকগুলো পকেটওয়ালা প্যান্ট পরিহিত একটা ছেলে বেশ দ্রুত গতিতে মেয়েটার কাছে হেঁটে চলে আসে। ছেলেটির হেঁটে আসার শব্দ।

ছেলেটি(কিছুটা রাগতস্বরে)

আচ্ছা, তোমার ফোন এত ব্যাস্ত থাকে কেন? কার সাথে কথা বল এত?

মেয়েটি(ঠান্ডা গলায়)

আমার এক বন্ধুর সাথে।

ছেলেটি(বেশ রাগান্বিত)

নতুন কেউ এসে জুটেছে, বুঝি!

মেয়েটি(বেশ ঠান্ডা গলায়-ছেলেটির দিকে তাকিয়ে)

শোন, তুমি তো জানো তোমাকে আমি ভালোবাসি, তোমার জন্য মারা যেতেও রাজী আছি; তবে, তোমার নিয়ন্ত্রনে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ক্ষমা করো আমায়।

ক্যাম্পাসের কোলাহলের শব্দ।

ছেলেটি কঠোর চোখ-মুখ নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতদুটি ধীরে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠে।

মেয়েটি ঘুরে ছেলেটির কাছ থেকে চলে আসে।



ভেতর। শোবার ঘর। রাত্রি।

মেয়েটিকে হাতের তালুতে মুখ রেখে বসে থাকতে দেখা যায়। মুখের হাসিটি মিলিয়ে গেছে। হঠাৎ কি যেন মনে হতে খানিকটা ব্যাস্ততার ভাব ফুটে উঠে। দ্রুত ঘাড় বেঁকিয়ে পেছনের দেয়ালের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। দেয়াল ঘড়িতে চোখ নেয়ার সময় দেয়ালে ঝুলানো নিঃশব্দ কালো রঙের এল সি ডি টেলিভিশনে চোখ পড়ে। টেলিভিশনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ দেয়াল ঘড়িতে উঠে যায়।

দেয়াল ঘড়িটিতে দেখা যাবে পনে তিনটার কাছাকাছি বাজে। ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার টিক টিক শব্দ।

মুখের মধ্যে এখন একটু আশ্বস্থতার ভাব ফিরে আসে।

এখন থেকে মেয়েটি সব কিছু পূর্বের চেয়ে একটু দ্রুত গতিতে করতে থাকবে।

ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হাত ঘড়িটি ও ব্রেসলেট তুলে নিয়ে দুই হাতের কব্জিতে পড়ে নেয়। ইতিমধ্যে মেয়েটির নাকের ডগায় সামান্য ঘাম জমেছে।

বাহির। গলি রাস্তা। বিকেল বেলা।

গোলাপী রঙের সার্ট ও হালকা নীল রঙের জিন্স পড়া(জিন্স প্যান্টটি ভাঁজ করে হাটুর কাছ পর্যন্ত উঠানো) মেয়েটি একটি সাইকেল চালিয়ে বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে সামনে একটি দেয়াল দেখতে পায়। ব্রেক কষার আগেই দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। দেয়ালের সাথে সাইকেলের ধাক্কা লাগার শব্দ। মেয়েটিকে ও সাইকেলটিকে পাশা-পাশি পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি বয়স্ক লোক এসে তাকে হাত ধরে টেনে তুলে। মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে কাপড়ের ময়লা ঝাড়ে। ময়লা ঝাড়ার শব্দ।

লোকটি(আদুরে গলায়-মেয়েটির হাত ধরে টানতে টানতে)

চলে এসো, তোমার সাইকেল চালানোর দরকার নেই, বড় ধরনের কোন এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে, আর মেয়েদের সাইকেল চালানো ভালো দেখায় না। চলো বাসায় ফিরে যাই। বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে এসো, যেখানে যেতে চাও, ড্রাইভারকে বললেই নামিয়ে দিয়ে যাবে।

মেয়েটি(হাঁপাতে হাঁপাতে-প্রশ্রয় পাওয়া গলায়)

গাড়ির ভেতরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে বাবা। বরঞ্চ সাইকেল চালাতে আমার বেশী ভালো লাগে, মুক্ত বাতাস গায়ে লাগে, এতে আমার খুব ভালো লাগে বাবা। লোকে যা ইচ্ছা বলুক, এক্সিডেন্ট হলে হোক- আমি সাইকেল চালিয়েই যাব।

লোকটি আরো জোরে মেয়েটির হাত চেপে ধরে সামনের দিকে টানতে থাকে।

লোকটি(কিছুটা রাগত স্বরে)

না, মা- তুমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছো। আগের মত এখন আর যা খুশি করতে পারো না। সাইকেল চড়ে ঘোরাঘুরি করার কোন দরকার নেই। চলে আসো আমার সাথে লক্ষ্মী মেয়ের মত।



মেয়েটির কন্ঠ(নিঃসঙ্গতার সুর)

ভি ও(V O)

উপরের পাখি অনেক উঁচুতে।(আকাশে একটি পাখিকে উড়তে দেখা যায়)

নিচের মাছ অনেক গভীরে।(পুকুরের স্বচ্ছ পানি দেখা যায়)

মাঝের মানুষেরাও বহুদূরে...(একটি মেয়েকে সবুজ প্রান্তরে একা একা হাঁটতে দেখা যায়।)



ভেতর। শোবার ঘর। রাত্রি।

হাতে রাখা বডি স্প্রে টির মুখ নিজের বুকের দিকে ধরে বোতামে জোরে জোরে চাপ দেয় মেয়েটি, স্প্রে ছড়িয়ে এসে মেয়েটির শরীরে লাগে। বোতল থেকে তীব্রবেগে শুধু স্প্রে হওয়া দেখা যায়। স্প্রে এর বোতল ধরা হাতটি মেয়েটির ঘাড়ের খুব কাছে চলে আসে। বোতামে আবার চাপ- স্প্রে ঘাড়ে লেগে প্রক্ষিপ্ত হয়। স্প্রে বের হওয়ার শব্দ-কখনো হালকা, কখনো বেশী।



মেয়েটি টুলে বসে থাকা অবস্থায় ড্রেসিং টেবিলের আয়না থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সামনের জানালার পর্দার দিকে তাকায়। সামনের দিকে মুখ করা অবস্থায় হাতড়ে হাতড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার তুলে আনে। হাতড়ানোর শব্দ।

মেয়েটির ঠোঁটে সিগারেট ধরা, লাইটারে এক চাপে সিগারেটটি ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে সামনের দিকে মুখভর্তি ধোঁয়া ছাড়ে। সিগারেট ধরানোর ও ধোঁয়া ছাড়ার শব্দ।

ভেতর। মেয়েটির শোবার ঘর। দিনের বেলা।

মেয়টি ও একটি ছেলে খাটের উপর পাশা-পাশি বসে আছে। ছেলেটি দু-হাত দিয়ে টেনে মেয়েটিকে তার কাছে আনার চেষ্টা করে।

ছেলেটি(কামনা ভরা কন্ঠে)

কাছে আসো সোনা, কতদিন তোমাকে কাছে পাই না। আসো আমার বুকে আসো।

মেয়েটি(প্রত্যাখ্যান ও তাচ্ছিল্যের সুরে)

না, আজকে না। আজকে আমার মনটা ভালো নেই। আরেকদিন হবে ওসব।

ছেলেটি(আরেকটু আগ্রাসী)

কাছে এসে দেখো কিভাবে তোমার মন ভালো হয়ে যায়। একটু কাছে আসো। এরপর তোমার সব কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনবো।

মেয়েটি(আবেগভরে)

তুমি তো জানো, এসব ব্যাপারে আমি পুরোপুরি ফ্রী। তারপরেও সবসময় কেন এমন কর বলতো। তোমাকে তো বলেছি, আজকে আমার মনটা ভালো নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তোমার সাথে শেয়ার করতেই বাসায় ডেকেছি তোমাকে। আর এসব করলে সবসময় মন ভালো হয়ে যায় না। অনেকবার তুমি এসব হয়ে যাওয়ার পর কোন জরুরী কাজের ছুতা দিয়ে চলে গেছ। আমার কথা শোনার দিকে কোন দিনই তোমার মন ছিল না। তোমার নজর সবসময় শুধু অন্যদিকে। তুমি চলে যাও, তোমাকে আমার কোন দরকার নেই।

ছেলেটির কিছুটা ভয় পাওয়া মুখ দেখা যায়।

ভেতর। শোবার ঘর। রাত্রি।

মেয়েটির মুখ উপরের দিকে তোলা। দুই আঙ্গুলের চিপায় ধরা সিগারেটটি মেয়েটির ঠোঁটে চলে আসে ধীরে। আবার একটি লম্বা টান। উপরের দিকে পুঞ্জ পুঞ্জ ধোঁয়া উঠে ছড়িয়ে যায়। মুখ থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার শব্দ শোনা যায়। ধোঁয়াগুলোকে আকাশের সাদা হালকা মেঘের মত এদিক-সেদিক উড়তে দেখা যায়। আকাশে হালকা পেজো তুলার মত মেঘের উড়া-উড়ি।

মেয়েটির কন্ঠ(আবেগ আক্রান্ত)

ভয়েস ওভার(V O)

১।

তিনটি বলয়ে একলা আমার বন্দীত্ব।

চারটি শিকলে বাঁধা আষ্টেপৃষ্ঠে।

একটি অন্ধকার ভেতরে হয়ে আছে বিদ্ধ।

দুইটি গলুই এসে বিঁধেছে বুকে ও পিঠে।

(মেয়েটির চোখ দেখা যায়।)



মেয়েটির মুখ ড্রেসিং টেবিলের দিকে ঘুরে যায়। অর্ধেক শেষ হওয়া সিগারেটটি এস্ট্রেতে গুজে দেয়।

আয়নায় মেয়েটির ভ্রু কুঞ্চিত উৎসুক মুখ দেখা যায়।



অফ স্ক্রীন(O S)





অদূরে একটি কুকুরের একটানা একঘেয়ে করুন চিৎকার ভেসে আসে।



মেয়েটি উঠে দাঁড়ায়, মুখে একটু বেদনার আভাস। ড্রেসিং টেবিলের পাশেই খাটের সম্মুখ ভাগের জানালার কাছে হালকা নীল রঙের পর্দার দিকে তাকায়।

খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা নিচের দিকে টেনে ধরে। সামান্য একটু সরায়, আবার কি মনে করে ছেড়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে তখন মুখটা সামান্য একটু কঠোর দেখায়।

এরপর চোখে-মুখে জয়ের অনুভূতি ফুটে উঠে। মুখে লাল আলোর আভা ছড়ানো।

একটু হেঁটে এসে বিছানার কিনারে গিয়ে বসে। খাটের পাশে নগ্ন পা ঝুলিয়ে রেখেই বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয় ও ছাড়ে। বুকের উঠা-নামা লক্ষ্য করা যায়। গাঢ় শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।

শুয়ে থাকা মেয়েটির চোখ দেখা যায়। মেয়েটির পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে শোবার ঘরের ছাদ দেখা যায়।



বাহির। বিশাল শুন্য প্রান্তর। দুপুর বেলা।

একটি বিশাল শূন্যতা দেখা যায়। ফ্রক পড়া ছোট একটি ছোট মেয়ে সেই শুন্যতার দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

একটি মানব দেয়াল বিশাল শুন্যতাটির পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে। গোলাপী রঙের একটি টপ ও নীল রঙের জিন্স এবং ক্যাম্বিস কাপড়ের জুতা পড়া তরুণীটি এমনভাবে সেদিকে হেঁটে যাচ্ছে- যেন মনে হচ্ছে সে মানব দেয়ালটি দেখেনি। মানব দেয়ালের সাথে মেয়েটির আচমকা ধাক্কা লাগে। মেয়েটি মানব দেয়ালের মানুষগুলোকে সরিয়ে দিয়ে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। পারেনা, বার বার ব্যার্থ হয়। কিছুটা উদ্ভ্রান্তের মত পাশ ফিরে তাকায়। পাশে আরেকটি মানব দেয়াল দেখা যায়। এই মানব দেয়ালের মানুষগুলোকেও সরিয়ে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পারেনা, বার বার ব্যার্থ হয়। আরেকটি খোলা দিকে পাশ ফিরে তাকায়। সেখানেও আরেকটি নতুন মানব দেয়াল দেখা যায়। এই মানব দেয়ালের মানুষগুলোকেও সরিয়ে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পারেনা, বার বার ব্যার্থ হয়। এখন মেয়েটির তিনদিকে মানব দেয়াল দিয়ে ঘেরা। একটি মাত্র খোলা জায়গা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। সেদিকেও আরেকটি মানব দেয়াল তৈরী হয়ে গেছে।এই মানব দেয়ালের মানুষগুলোকেও সরিয়ে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পারেনা, বার বার ব্যার্থ হয়। মেয়েটি তাকিয়ে দেখে তার চারপাশেই মানব দেয়াল তৈরী হয়ে গেছে এবং এর মধ্যে মেয়েটি সারাজীবনের জন্য আটকা পড়ে গেছে। মেয়েটি প্রচন্ড অস্থিরতায় মানব ব্যুহের ভেতরে ঘুরে বেড়ায়। উপর থেকে মানব ব্যুহ ও তার ভেতরের মেয়েটিকে দেখা যায়।

মেয়েটি(চিৎকার করে)

আমাকে তোমরা এভাবে আটকে ফেলেছো কেন? আমাকে এখান থেকে বের হতে দাও। আমাকে যেতে দাও তোমরা, ঐ বিশাল প্রান্তরে আমি ঘুরে বেড়াব, এখানে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। আমাকে যেতে দাও, আমি বাঁচতে চাই।



দেয়াল করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর রাগী রাগী মুখ দেখা যায়।

মানব দেয়াল(সমস্বরে-কিছুটা রাগত কন্ঠে)

তুমি আমাদের আদেশ অমান্য করে অনেক দূর চলে এসেছে। তুমি এখন আমাদের জালে আটকা পড়েছো, এখান থেকে তোমার বের হওয়ার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তোমাকে এখানে সারাজীবন আটকা পড়ে থাকতে হবে।

মেয়েটি পাগলের মত চতুর্দিকের মানব দেয়ালে ধাক্কাতে শুরু করে। চুল আলুথালু হয়ে গেছে, ঠোট দুটি কিছুটা ঝুলে পড়েছে, চোখ দুটি প্রচন্ড লাল।

মেয়েটি (কান্না ভেজা ভেঙ্গে পড়া গলায়)

ঐ বিশাল শূন্যতা আমাকে ডাকছে, আমাকে যেতে দাও, আমাকে যেতে দাও, আমি যাব, নইলে আমি বাঁচবো না।

মেয়েটি তার দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে। মেয়েটির মুখমন্ডল প্রচন্ড হতাশাগ্রস্ত দেখা যায়।

মেয়েটির কন্ঠ(বেদনা ভরা)

ভি ও(V O)

২।

তোমাদের আকাশ পৌঁছায় কতদূর? (আকাশ দেখা যায়)

মাঝখানে একটি সূর্যের স্থির দাঁড়িয়ে থাকা শুধু,(জ্বলন্ত সূর্য দেখা যায়)

আর কোন নক্ষত্রের ঝিলিমিলি নেই!

সূর্যের ভারী রোদে উবে যাচ্ছে ভেতরটা-



আমি তারাভরা আকাশে আগাছা ছাওয়া পথ ধরে(তারা ভরা আকাশ দেখা যায়) মেঘের ছায়া মুড়ি দিয়ে একা একা হেঁটে যেতে চাই।





ভেতর। শোবার ঘর। রাত্রি।

ঝট করে উঠে বসে। উঠে বসার শব্দ। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট- ভেতরে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধে পুরোপুরি বিধ্বস্ত।

পাশ থেকে দেখা যাবে -মেঝের দিকে ঝুকে পড়ে হাঁপাতে থাকে। হাঁপানোর শব্দ।

মেয়েটি আস্তে আস্তে মুখ তুলে সামনের দিকে তাকায়। মুখে গাঢ় লালের আভা ছড়ানো, চোখে মুখে প্রচন্ড কঠোরতা।

ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা ওয়ারড্রবের উপরের ড্রয়ারটি বেশ শক্তি খাঁটিয়ে খুলে ফেলে। ড্রয়ার খোলার শব্দ। বেশ দ্রুততার সাথে ড্রয়ারের ভেতরে রাখা মেয়েটির নানা ধরনের কাপড়-চোপড় টেনে বের করে মেঝেতে ফেলতে থাকে। কাপড় বের করার ও মেঝেতে ফেলার শব্দ।

ড্রয়ার খোলা রেখেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা টুলের উপর বসে। টুলে বসার শব্দ। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সবগুলো সিগারেট বের করে ফেলে।

প্রত্যেকটা সিগারেটের উপরের কাগজ ছিড়ে ফেলে ড্রেসিং টেবিলের উপর সমস্ত তামাক স্তুপীকৃত করে। কাগজ ছেড়ার শব্দ। সিগারেটের ফিল্টার গুলো ঠিক অপর পাশে স্তুপীকৃত থাকতে দেখা যায়।

হাতের ঘড়ি, ব্রেসলেট খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে। টেবিলে রাখার শব্দ।

দুইহাত মাথার পিছন দিকে নিয়ে এক ঝটকা টানে চুলে বাঁধা ব্যান্ডটি খুলে ফেলে। ব্যান্ড খোলার শব্দ। মাথাটা এপাশ-ওপাশ করে বেশ জোড়ে ঝাকুনি দিলে চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে।

মেয়েটি বেশ আবেদনময় ভঙ্গীতে টুল থেকে উঠে দাঁড়ায়। টুলের দিক করে ঘুরে দাঁড়ায়। মেয়েটিকে টুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

মেয়েটির কন্ঠ(বেদনা ভরা)

ভি ও(V O)



মৃত্যু যদি পারে মুছে দিতে বিষন্ন স্মৃতির সকল চিহ্ন!

গহীনে ডুবে যাওয়ার বদলে তবে কেন দুঃস্বপ্নে সাতার কাটা?



আবার যদি জন্ম নেই বিদেহী হয়ে,

থাকবো লুকিয়ে ঘাষ-পাতার অন্তরালে।(সবুজ ঘাষে ভরা প্রান্তর দেখা যায়।)

আত্মার সকল পোশাক ছুড়ে ফেলে এসো-

আমি-তুমি একসাথ ডানা মেলে (স্বচ্ছ নীলাকাশ পাখিদের উড়ে যেতে দেখা যায়।)

যাব উড়ে নীলিম শূন্যতা নিরাকারে মেখে।



খুব শান্তভাবে টুলের উপর উঠে দাঁড়ায়। সমস্ত রুম ও মেয়েটির মুখমন্ডলে হালকা লাল আলোর আভা ছড়ানো।

টুলের উপর দাঁড়ানো মেয়েটির নগ্ন পা দেখা যায়। মেয়েটির পরিহিত নাইটি আস্তে করে নগ্ন পায়ের কাছে পড়ে যায়। রুমটি পুরো নিস্তব্দ হয়ে যায়। রুমের পুরো শূন্য অংশটি দেখা যায়। বিশাল ধূসর প্রান্তরের ছবি ভেসে উঠে।





ফেড আউটঃ

























মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৪

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :) :)

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৫৩

মেহেদী হাসান মঞ্জুর বলেছেন: ধন্যবাদ- ইরফান আহমের বর্ষণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.