নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চে কে কারা হত্যা করেছে? কিভাবে সি আই এ এই হত্যাকান্ডের দায় থেকে রেহাই পেল

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

মূলঃ জেমস ডি ককক্রফট



রাটনার এবং স্মিথ ঘটনাটা আবারও ঘটিয়ে দিল! চে গুয়েভারা এবং “স্বাধীনতা সুরক্ষা” র নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিত্তনৈমিত্তিক বিচারবহির্ভূত ও অপরাধমূলক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং এটার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিনিয়ত ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, সমন্ধে লেখা তাদের দ্বিতীয় বিধ্বংশী বইটি হচ্ছে চে কে কারা হত্যা করেছে? কিভাবে সি আই এই হত্যাকান্ডের দায় থেকে রেহাই পেল (তাদের প্রথম বিধ্বংশী বইটি ছিল চে গুয়েভারা এবং এফ বি আই)। চে সমন্ধীয় তাদের নতুন বইয়ে জনগনের স্বাধীনতা বিষয়ে সচেতন এই দুইজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ অবাধ তথ্য-প্রবাহ আইনের আওতায় প্রকাশিত হওয়া চুয়াল্লিশটি পূর্বোক্ত গোপন দলিল পেশ করে - পুরোপুরি যথাযথভাবে এবং আড়ম্বরের সাথে, কোন নাটকের আদালত কক্ষ দৃশ্যে যেমন করা হয়- কিভাবে সি আই এ, হোয়াইট হাউজের সাথে যোগসাজশে চে কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে এবং তত-পরবর্তীতে এটাকে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করে।



কিছু পাঠকের কাছে বিষয়টাকে পুরনো কোন গল্পের মত মনে হতে পারে, কারন আজকের যুগে এটার ভন্ডামীপূর্ণ “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” চলাকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিদেশী নেতাদের এবং এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরকেও প্রকাশ্যে হত্যা করার বৈধতা ঘোষণা করে। তাদের আদেশে ঘটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সমন্ধে রাষ্ট্রপতি এবং সি আই এ এর আজকের দম্ভপূর্ণ যুগে – যেমনটি বলা যায় ২০১১ এর শেষের দিকে মার্কিন নাগরিক আনোয়ার আল আওলাকিকে, এবং এর ঠিক দুই সপ্তাহ পরেই তার ষোলবছরের ছেলেকে হত্যার ক্ষেত্রে -আটক অবস্থায় চে কে হত্যা, একটি বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধ, কিছুটা পুরাতন কায়দার মনে হতে পারে। তবে চে যেমন একবার নিজেই বলেছিলেন যা লিবিয়ার খুন হয়ে যাওয়া নেতা মুয়াম্মার গদ্দাফি মেনে চললে ভালো করতেন, “সাম্রাজ্যবাদকে কোনমতেই বিশ্বাস করা যায় না, সামান্য একটুও না, কোন কিছুতেই না”। এবং বাস্তবিকপক্ষে প্রকৃত সমস্যাটা এখানেই।



চে এর হত্যাকান্ডকে ঘিরে কপটতার ধরন এমন চমৎকারভাবে এই বইয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে যে তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে আজকালকার দিনে কিভাবে আমরা প্রতারণার শিকার হচ্ছি- এবং নিজেদের অধিকারকে হারাতে বসেছি, মার্কিন নাগরিক হিসেবে, সামান্য একটু “সন্দেহ” এর উপর ভিত্তি করে যথোচিত প্রক্রিয়া ব্যাতিরেকেই সারাজীবনের জন্য জেলে না যাওয়া অথবা এমনকি- হা- খুন না হওয়ার অধিকার। চে এর হত্যাকান্ড এবং ভিয়েতনামে যুদ্ধকালীন সময়ে “জাতীয় নিরাপত্তা”র অজুহাতে সবসময় সত্যকে ঢেকে রাখার চর্চা প্রকৃতপক্ষে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদীর ভেতরের ক্রিয়া-কান্ডকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে রেখেছে। আওলাকী এবং তার পুত্রের হত্যাকান্ডের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ না করার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একমাত্র অজুহাত ছিল তাদের “জাতীয় নিরাপত্তা”।



একারনেই এখানে পরিবেশিত রাটনার এবং স্মিথ কৃত গবেষণা কর্মটি এত গুরুত্বপূর্ন এবং ভয়াবহ। ওয়াশিংটন থেকে প্রবাহিত নিত্য-নৈমিত্তিক ভন্ডামীর স্বরূপ উন্মোচন করতে লেখকদ্বয় এখানে সি আই এ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারে নানাবিধ দলিল উপস্থাপন করেছেন। তারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেঃ

# ফিদেল এবং চে এর মাঝে সম্পর্কের টানা-পোড়নের যে অভিযোগ উঠানো হয়েছিল তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

# সি আই এ সেই ১৯৫৪ সাল থেকেই চে এর উপর নজরদারি রাখার চেষ্টা করে আসছিল, এবং ১৯৬২ সালে শিকাগোর গুন্ডা জনি রসেল্লির সাহায্যে কিউবাতে চে কে বিষ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে(ঐ বছরগুলোতে এবং তারপর থেকে ৬০০ এর অধিকবার সি আই এ জঘন্যভাবে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেছে)।

# ১৯৬৬-৬৭ সালে সি আই এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে চে কে খুঁজে বের করতে এবং বলিভিয়াতে চে এর নেতৃত্বাধীন “গেরিলা বাহিনীকে উচ্ছেদ করে ফেলতে” ষোলটি গ্রীন বেরেটস(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী) এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সেকেন্ড রেঞ্জার ব্যাটালিয়ন-বলিভিয়ান আর্মি পরিচালিত একটি অপারেশনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করে, এই বাহিনীটিই চে কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

# বলিভিয়াকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে বলিভিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ২৩জন সেনা অফিসারের মধ্য থেকে ২০ জন সেনা অফিসার ঐ সময়গুলোতে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের সেনা স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হয়, ঠিক তেমনি ভাবে প্রশিক্ষন নেয় বলিভিয়ার সামরিক বাহিনীর ১২০০জন অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তা ও সাধারন সৈন্য এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনেকজন সামরিক একনায়কেরা।

# বলিভিয়াতে সি আই এ এর কান্ট্রি চিফ এর নিজের স্বীকারোক্তি মতে, বলভিয়ার প্রেসিডেন্টে জেনারেল রেনে বারিয়েন্টস এর সাথে তার এমন একটি বোঝাপড়া ছিল যে, ধরা পড়লে চে কে অবশ্যই তাকে খুন করে ফেলা হবে, এবং বারিয়েন্টস কথা দেয় যে চে কে অবশ্যই আইনবলে হত্যা করা হবে।

# বলিভিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রধান ব্যাক্তি ছিল সি আই এ এর ভেতনভূক, এবং লা পাজের মার্কিন “সামরিক আতাশে” ছিল একজন সি আই এ এর এজেন্ট।

# বলিভিয়ার সৈনিকের ছদ্মবেশধারী দুইজন সি আই এ কর্মী, উভয়েই অতি-ডান কিউবান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, তাদের মধ্যে একজন ফেলিক্স রড্রিগেজ, পরবর্তীকালীন সময়ে চে কে হত্যাকান্ড দৃশ্যের উচ্চ পর্যায়ের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলে নিজেকে দাবী করে।

# চে এর কেটে ফেলা হাত থেকে নেয়া আঙ্গুলছাপ ওয়াশিংটনে নিয়ে এসে চে এর সংরক্ষিত পূর্বেকার আঙ্গুলছাপের সাথে তৎক্ষণাৎ মেলানো হয়।



সংক্ষেপে বলা যায়, সি আই এ চে এর এই হত্যাকান্ডকে অনুমোদন দিয়েছিল এবং সাহায্য করেছিল এটাকে সংগঠিত করতে। উপরন্তু, রাটনার এবং স্মিথ দেখায় যে, “তার মৃত্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল, এটা নিশ্চিত করার জন্য যে কিউবান বিপ্লবের উদাহরন অন্য কোন বিপ্লবী আন্দোলনকে উৎসাহিত করবে না”।



তখনকার সময়ে, চে এর হত্যাকান্ডকে তত্ত্বাবধান করার দায়কে “আপাতত প্রত্যাখ্যান” করা মার্কিন কর্তৃপক্ষের নিকট অনেকবেশী জরুরী ছিল। সরকারের নিজস্ব দলিল-পত্র এবং সেই সাথে যুক্তিসঙ্গত অনুমানের উপর ভিত্তি করে রাটনার এবং স্মিথ যেমন দেখায়, বৈধ ও আইনগত অন্যান্য শাখা হতে সি আই এ এর স্বতন্ত্রতা(Automony) এটার দাবীকে সহজতর করে এবং এগুলো আসছে হোয়াট হাউজ থেকে, সুতরাং আটকাবস্থায় চে কে হত্যার বিষয়ে তাদের কিছুই করার ছিল না। চে কে হত্যার ঘটনায় ওয়াশিংটনের হাত আছে, পেছনের এই সত্যটি জানতে পারলে ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে গনবিদ্রোহ অগ্নিগিরির লাভার মত জ্বলে উঠত। পুরো ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গন এবং যুব আন্দোলনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চে অনেক বেশী শ্রদ্ধেয় এবং জনপ্রিয় ছিল -আজকের দিনেও ঠিক তেমনটিই আছে। প্রকৃতপক্ষে, কিউবান জাতীয় গনপরিষদের প্রধান ব্যাক্তি রিকার্ডো আলারকন এই বইয়ে তার সঠিক তথ্যাদি সমৃদ্ধ মুখবন্ধে দেখায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যনির্বাহী শাখাগুলোর সি আই এ এর আধাসামরিক এবং সন্ত্রাসবাদী কলা-কৌশলগুলো গোপন করার চেষ্টার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল। রাষ্ট্রপতি আইজেন আওয়ার দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করেছিল “গোপন অপারেশনগুলোর[ পরিণামস্বরূপ কিউবাতে বে অফ পিগস আক্রমনের মত] খুটিনাটি “জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ”(NSC) এর কাছে পরিবেশিত হোক এটা সে চায় না।

পরবর্তীতে, সি আই এ এবং রাষ্ট্রপতির আদেশে সংগঠিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডগুলোর তদন্ত করতে মার্কিন সিনেটের চার্চ কমিটি(প্রধান তদন্তকারী সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ-এর নামে এটার নামকরণ করা হয়) কর্তৃক গৃহীত শুনানী, সি আই এ এজেন্ট রড্রিগেজ এর কাছ থেকে আসা “আমরা এটা করিনি, সত্যি বলছি, আমাদের করার প্রশ্নই আসে না” এধরনের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, সে দাবী করে যে, চে কে হত্যা করার আদেশ সে পেয়েছে বলিভিয়ার উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তার কাছ থেকে। রাটনার এবং স্মিথ, রড্রিগেজ এর বীভৎস অতীত এবং চে হত্যা-কান্ডের পূর্বে এবং পরে তার খুনে প্রবৃত্তি এবং মিথ্যা বলার প্রবণতা পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রকাশ করে। আজকের দিনে, মিথ্যা বলা এবং অর্ধসত্য কাহিনী প্রচারকার্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক শ্রেণী এবং গন মাধ্যমে- এবং সি আই এ ও সরকারের অন্যান্য শাখার গোপনীয় এবং সুরক্ষিত চতুর্সীমানাতে অনেক বেশী শক্তি ব্যয় করে চলেছে।



যখন, সি আই এ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চে কে হত্যার পরিকল্পনা সমন্ধে রাটনার এবং স্মিথ কর্তৃক সরবরাহ করা অঢেল তথ্য-উপাত্ত এমনিতেই অনেকবেশী পর্যাপ্ত ছিল, তখন পাসো ইগনাকো টাইবো(দ্বিতীয়) এর চমৎকার জীবনীগ্রন্থ গুয়েভারা, যা চে নামেও পরিচিত, আরো কিছু সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়। সেখানে টাইবো(দ্বিতীয়) তখনকার প্রচলিত লোককাহিনী “চে এর অভিশাপ” সমন্ধে লেখে যেগুলো বের হয়ে পড়ে যখন চে এর গ্রেফতার এবং তাকে হত্যা, ঠিক তেমনিভাবে তার লাশ অন্তর্ধান হয়ে যাওয়ার সাথে, পরবর্তী পনের বছরে আরো কিছু অপঘাতে মৃত্যুর সাথে এগুলোর সম্পৃক্ততা দিনের আলোতে চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডন্ট রেনে ব্যারিয়েন্টস, চে কে হত্যা করার আদেশ দেওয়ার কিছুদিনপরে তার হেলিকপ্টার অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বিধ্বস্ত হলে সে মারা যায়; চে কে গ্রেফতারকালীন সময়ের কমান্ডিং অফিসার মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়; এবং চে কে গ্রেফতারকারী আর্মি ক্যাপ্টেন ১৯৮১ সালে গুলিবিদ্ধ হয় এবং পরে পঙ্গুত্ব বরন করে নেয়। সি আই এ এজেন্ট নিজেও শিকার হয় হাঁপানি রোগের, এই রোগটি ইতিপূর্বে কখনও ছিল না, তবে শারিরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তেমন কিছুই ধরা না পড়লে ডাক্তার শেষমেশ জানায় এটা হয় মানসিক সমস্যা না হয় “চের অভিশাপ” এর ফল।



রাটনার-স্মিথের বইটির বাড়তি সুবিধাটি হচ্ছে তা কতিপয় তৎকালীন জীবনী গ্রন্থ, কিউবান এবং আমেরিকান গভেষকদের সাথে আলোচনা, লেখকদ্বরের বছরব্যাপী কিউবান বিপ্লবের ইতিহাস ঘাটা-ঘাটি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে আমাদেরকে চে এর জীবনের যথাযথ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা সরবরাহ করে। তরুন পাঠকদের মনে তখনকার এবং আজকের দিনে চে এবং কিউবার প্রভাব বোধগম্য করতে তাদের এই সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত বইটিতে পুরো বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা বিষয়গুলোকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকটা স্কুল লাইব্রেরীতে বইটি রাখা উচিত এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বুনিয়াদী, সুলভ পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যাবহৃত হওয়া উচিত।



এর একটি কারন হচ্ছে, তার মৃত্যুর চুয়াল্লিশ বছর পর এখনও চে অনেকবেশী গুরুত্বপূর্ণ, এবং চে কি ছিল এবং কেন তাকে খুন হতে হল- এগুলো সমন্ধে সমগ্র বিশ্বের অগণিত মানুষ আরো অনেক কিছু জানতে চায়। রাটনার এবং স্মিথ এর বইটি রহস্যটির মূল চাবি-কাঠি তুলে ধরে। ২০০৫ সালে নির্বাচিত বলিভিয়ার প্রথম নির্ধন প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস এর একটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বইটি শেষ হয় যা সে তার স্বাগত ভাষনের একটি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় এসে বলেছিল। চে, প্রেসিডেন্ট মোরালেস স্পষ্ট ভাষায় ব্যাক্ত করে, সাম্যের নতুন জগত গড়ার জন্য লড়াই করেছে। কেন সে চে কে পছন্দ করে, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, আমি চে কে ভালোবাসি কারন সে সাম্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করেছে। সে সাধারন মানুষের লড়াইয়ে নামার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে নি, তাদের সংগ্রামকে সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কিছু মিলিশিয়া যারা চে এর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে ছিল অথবা তার গেরিলা বাহিনীকে সহযোগীতা করেছিল, তারা এখন বলিভিয়া সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে নিযুক্ত আছে।



আজকের দিনে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া চে টি-শার্ট গণনার বাইরে চলে গেছে, কিভাবে পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্রকে খেয়ে ফেলে তার আরেকটি উদাহরন, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ইদানিং কালের গন আন্দোলনগুলোতে চে এর ভাবমূর্তিকে উর্দ্ধে তুলে ধরা আমাদেরকে অন্যকিছুর সম্ভাবনা দেখায়। “চল্লিশ বছর পূর্বে আমি হাঁটছিলাম(চল্লিশতম হত্যাদিবসে চে এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়ে)” নামক একটি কবিতায় আমি যেমন লেখেছিলাম,

চে আজো আছে ছড়িয়ে সবখানে পৃথিবীর,

শ্রেষ্ঠতার প্রতীক মানবজাতির,

স্বপ্নের, আদর্শের সংহতির,

সততার, উদারতার, বিশ্বজনীনতার,

করে গেছে কাজ সর্বোচ্চ ধ্যানের অনুসরনে,

ন্যায়ের সমাজ, শান্তির জগত পৌঁছে দিতে মানুষেরে।



অথবা এলারকন যেমন তার মুখবন্ধের উপসংহারে লেখেছিলেনঃ

চে এখনো বেঁচে আছে, বিশেষ করে, ল্যাটিন আমেরিকাতে যা আজকের দিনে গড়ে তুলছে স্বাধীনতা এবং সংহতির নতুন রাজনীতি, এমন একটি রাজনীতি যা তার আদর্শ এবং ত্যাগের কাছে অনেক বেশী ঋনী। তার আত্মা এখনও পাঁচজন কিউবান নাগরিকঃ গ্যারার্ডো, র্যা মন, অ্যান্টেনিও, ফারনান্দো এবং রেনের জীবনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে— ওয়াশিংটনের প্ররোচনায় শুরু হওয়া কিউবা বিরোধী সন্ত্রাসবাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যারা অন্যায়ভাবে বার বছরেরও অধিক সময় ধরে কারাগারে আটকা পড়ে আছে।

প্রেমের গভীর অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত চে ছিল একজন সকল ধরনের বৈষম্যবিরোধী বিপ্লবী যে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্ট্যালিনবাদ এবং এটার বৈদেশিক নীতির সমালোচনায় মুখর ছিলেন এবং বলিভিয়াতে অবস্থানকালীন সময়ে তার সাথে ছিল লিওন ট্রটস্কি ও জর্জ লুকাসের বই। যারা একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার জন্য যুদ্ধ করে শুধুমাত্র তাদের প্রতি একটি দ্বায়িত্ব হিসেবেই যে সে আন্তর্জাতিকতাবাদকে দেখত তা নয় বরঞ্চ এটাকে অপরিহার্য প্রয়োজনীতা হিসেবেও বিবেচনা করত। সে একজন উচ্চমানের সংস্কৃতিবান লোক, লিখে রেখে গেছে চমৎকার কিছু বই, প্রবন্ধ এবং কবিতা। দাবা এবং ফুটবল খেলতে সে খুব পছন্দ করত। সারাটি জীবনধরে যখনই অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েছে, জ্ঞানগর্ভ রসিকতা করেছে সবার সাথে। ক্যামেরা চালাতে ভালোবাসত, দুর্দান্ত দুর্দান্ত সব ছবি তুলেছে। কিউবান বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিয়েছে এবং “নতুন মানুষ” তৈরীর প্রত্যাশায় গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোকে সমাজতান্ত্রিকতায় পর্যবসিত করতে জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছিল। আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে দিয়েছে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বৈঠকে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জোরালো ভাষন দিত। যে নৈতিকতা এবং আদর্শের খাতিরে বেঁচে ছিল ও মৃত্যুবরন করেছে, সেগুলোকে নির্ভীকভাবে বাস্তবজীবনে চর্চা করার মাধ্যমে প্রধিনিধিত্ব করত এমন মানুষের- হোসে মার্তির কথায় বলা যায়- “কেবলমাত্র বাস্তবিক মানুষ, যার আজকের দেখা স্বপ্ন আগামীকালের আইনে পরিনত হবে”।



রাটনার এবং স্মিথের বিধ্বংশী বইটি প্রানবন্ত, উদ্ভাসিত এবং উত্তেজনায় ভরপুর।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.