নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুঁজিবাদের “একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার” নির্লজ্জ নীতি!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫



একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয়, দ্বিতীয় বার ব্যবহারের উপযোগী থাকে না- এমন ধরনের পণ্যের উদ্ভাবন একমাত্র পুঁজিবাদের হাতেই হয়েছে। মানব সভ্যতার অন্য কোন ধরনের সমাজ ব্যবস্থায় এই ধরনের পণ্যের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার দখল করার যুদ্ধে এই ধরনের পণ্য তার অন্যতম হাতিয়ার। এই প্রক্রিয়ায় সে আমাদের জনসাধারনের মধ্যেও জোরেশোরে এই “একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার” প্রবণতা চাগিয়ে তোলে। যার ফলে আমাদের পরস্পরের মাঝখানে তৈরী হয় বিচ্ছিন্নতার বিশাল ফাটল এবং সমাজের অভ্যন্তরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলে বিশৃঙ্খলা। এই বিচ্ছিন্নতার ভার সহ্য না করতে পেরে এবং বিশৃঙ্খলার ফাঁদে আটকা পড়ে আমরা জড়িত হয়ে পড়ি নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে এবং সমাজে একে একে খুলে যেতে থাকে দুর্নীতি ও লুটপাটের সকল দ্বারমুখ। আপনাদের সকলে খুব ভালোভাবে অবগত থাকায়, আমাদের সমাজে নিয়মিত ঘটতে থাকা অপরাধী কার্যক্রমগুলোর ফিরিস্তি বর্ণনা করা এবং দুর্নীতি, লুটপাটের উদাহরণ হাজির করার বিশেষ প্রয়োজন নেই।



আরেকটি ব্যাপার হল, এই ধরনের পণ্য বিশাল সংখ্যকভাবে তৈরী করতে গিয়ে (যেহেতু একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়, সেহেতু তৈরীও করতে হয় সুপ্রচুর) উৎপাদিত হচ্ছে বিপুল, বিষাক্ত বর্জ্য এবং একবার ব্যবহৃত হওয়ার পর এই পণ্য নিজেও রূপান্তরিত হচ্ছে বর্জ্যে। এই বর্জ্য ভয়ানক মাত্রায় পরিবেশন দূষণ ঘটিয়ে আমাদের এই ফুলে-ফলে-সবুজে সুশোভিত, মহাবিশ্বের মধ্যে এখন পর্যন্ত মানুষের খুঁজে পাওয়া প্রাণীর বসবাস যোগ্য একমাত্র গ্রহকে তার অবধারিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে চলছে। খোলা চোখে হয়ত আমরা এই পৃথিবীর মুমূর্ষু অবস্থা দেখতে পাইনা, তবে মানব তৈরী দূর্যোগ বিষয়ে বিজ্ঞানী কার্ল সাগান ও স্টিফেন হকিং এর বক্তব্য শুনলে হয়ত ব্যাপারগুলো কিছুটা হলেও অনুধাবন করা যাবে।



যাহোক, আমরা যদি খানিকটা তলিয়ে দেখি তাহলেই বুঝতে পারব, এই ধরনের “একবার ব্যবহার উপযোগী” পণ্য আসলে আমাদের তেমন কোন ব্যবহারিক কাজে আসেনা বরঞ্চ দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের বিড়ম্বনা ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য সমূহ ক্ষতিকর। আমরা এই পণ্যগুলো ক্রয় করি সাধারণত বাহারী বিজ্ঞাপনের মোহে আক্রান্ত হয়ে। বিজ্ঞাপনগুলো এমনভাবে পণ্যগুলোকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে যেন এগুলো এই মুহুর্তে কিনে ব্যবহার না করলে, আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকারা আমাদের ত্যাগ করে চলে যাবে, অফিসের বস আমাদেরকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করবে ইত্যাদি আরো নানা ধরনের সমূহ বিপদ এগিয়ে আসবে, ফলত আমাদের সমাজিক, অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি নেমে যাবে অনেক নিচু স্তরে এবং শেশমেষ হয়ত আমাদের জীবনটাই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংশপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। টেলিভিশনের পর্দা থেকে চোখ সরিয়েই টাকার থলেটা পকেটে ঢুকিয়ে দৌড় দেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা ইদানীংকালে শহরাঞ্চলের অল-গলিতে গজিয়ে উঠা চেইনশপ গুলোর দিকে।



যাহোক, এই “একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার” নীতি অবলম্বন করে পুঁজিবাদ যেমন নিজের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে তুলে ধ্বংশের ধাবিত হয়, ঠিক তেমনিভাবে সে টিকে থাকারও আপ্রাণ চেষ্টা চালায়, এই নীতির উপর ভর করেই। কারন পুঁজি কোন কিছুকে নিজের প্রয়োজনে একবার ব্যবহার করলেই সেটার মধ্যে তার নিজের ধ্বংশের বীজ বপন হয়ে যায়। তাই সে যত তাড়াতাড়ি পারে, সেই একবার ব্যবহার করা জিনিসটি থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য অস্থির হয়ে উঠে, বিষাক্ত সাপ যেমন ভাবে কিছুদিন অন্তর অন্তর ব্যবহৃত খোলস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য কাতরাতে থাকে। আলফ্রেড হিচকক তার পরিচালিত ভারটিগো(Vertigo) চলচ্চিত্রে পুঁজিবাদের এই ব্যাপারটির একটা অসাধারণ সুন্দর উপস্থাপনা হাজির করেছেন। পুঁজিবাদী সমাজে আমাদের চোখের সামনে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলছে। আমাদের দেশে এই মুহুর্তে ঘটে চলা এই ধরনের একটি ঘটনার কথা নীচে উল্লেখ করা হলঃ



তৈরী পোষাকের কারখানা তাজরীনে শত শত শ্রমিককে পুড়িয়ে মারার অপরাধে অপরাধী, নির্লজ্জ, গণহত্যাকারী পুঁজিপতি দেলোয়ার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজেরই মালিকানাধীন তোবা গ্রুপের ১৬০০ শ্রমিককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। পুঁজির পৃষ্ঠপোষকতাকারী রাষ্ট্রের সর্বোত সহযোগীতায় কি নিকৃষ্ট কায়দায় পুঁজিপতির নিজস্ব প্রয়োজনে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে সেই সমন্ধে আপনারা সবাই কম-বেশী জানেন। খুনী দেলোয়ার তার কাজ হাসিল হওয়ার (জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার) সাথে সাথেই সেই ব্যবহৃত হওয়া শ্রমিকদেরকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভবনের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে কারখানা বন্ধের নোটিশ!



পুঁজিপতি যদি এদেরকে ছুড়ে ফেলতে সক্ষম হয় তাহলে এরা কোথায় যাবে? অন্য ফ্যাক্টরীর মালিকরাও এদেরকে কাজে নিতে চাইবে না কারন তারা মনে করবে, এদের মধ্যে খুব ভালোভাবেই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার বীজ বপন হয়ে গেছে এবং এদেরকে কাজে নিলে তার ফ্যাক্টরীর অন্য শ্রমিকদের মধ্যে সেই বীজ ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেকটা ঠিক এধরনের কারনেই, রানা প্লাজার ভবন ধ্বসে আটকা পড়েও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের এখন আর কোন পুঁজিপতি তাদের ফ্যক্টরীতে কাজ দেয় না। কাজ না পেয়ে এই ঢাকা শহরে বেঁচে থাকার নিতান্ত তাগিদে কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শ্রমিকরা হয়ত জড়িত হয়ে পড়বে নানা ধরনের অপরাধী কর্মকান্ডে। নারী শ্রমিকদের অনেকে হয়ত বাধ্য হয়ে বেছে নিবে নিয়মিত ধর্ষিত হওয়ার মত যন্ত্রনাদায়ক দেহ ব্যাবসার কাজ। কেউ কেউ চলে যাবে মাদক-চোরাচালানীর ব্যবসায়। অনেকেই হয়ত পরিণত হবে, পুঁজির দালাল ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর, ভাড়াটে গুন্ডায় যারা হয়ত পঞ্চাশ-একশ টাকার বিনিময়ে হরতাল-অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে পরিবহন বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারবে তাদেরই শ্রেণির লোকজনদের। শহরে অব্যাহত ভাবে বাড়তে থাকবে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনা, তারপর একদিন উন্মত্ত জনতার পিটুনি খেয়ে রক্তাক্ত মাংশপিন্ড হয়ে পড়ে থাকবে তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে জীর্ণ দেহ।



Crash the Capitalism down to the ground! And raise up the Flag of Communism all together!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

তাহ্জীর ফাইয়াজ চৌধুরী বলেছেন: তবুও আমারা পুঁজিবাদে বেচে আছি!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.