![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন চলবে জীবনের মতো— এই সত্যটা বুঝতে আমাদের বছরের পর বছর লেগে যায়। যারা গল্প-উপন্যাস লেখেন, তাদের কারও কাছেই জীবনটা জীবনের মতো আর থাকে না। জীবন হয় গল্পের মতো, কিংবা গল্পের রসদ না থাকলে সে-জীবন যে ব্যর্থ—এটা বোঝাতে শিল্পীরা কত কোশেশই না করছেন নিরন্তর। এই দেখে দেখে আমাদের হয় কি, একটু ভাবালু হলেই চোখের সামনে সিনেমার দৃশ্য ভেসে ওঠে— আহ্, আমার জীবনেও কত দু:খ! নায়ক-নায়িকাদের মতো। শিশুরাও বালিশের গায়ে ঘুষি দিতে গিয়ে বলে— ইয়া ঢিশুম, ঢিশুম । যেনো ঢিশুম না বললে ঘুষিটা জমে না মোটেই ।
মাসান নিয়ে এই কথাটা বিশেষ করে বলার মতো— ভালো না লাগুক, এখানে গল্পের মতো জীবন টেনে আনার কসরত লক্ষ্য করা যায় নি । এখানে জীবন চলেছে জীবনের মতো ।
দেবী— এই ছবির প্রধান চরিত্র, এই মেয়েটা যখন তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মিলিত হতে গিয়ে একটা স্ক্যান্ডালের মুখে পড়ে, অর্থাৎ কয়েকটা নোংরা পুলিশ মোবাইলে ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেলের পর্যায়ে নিয়ে যায় পরিস্থিতিটাকে এবং একই সঙ্গে টয়লেটে পীযুষ ছেলেটা হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করে, তখন দর্শক হতাশ হয়ে ভাবতে বসে, এরপর দৃশ্যে দেখা যাবে, এই ভিডিও ক্লিপ অন্তর্জালে দেয়া হবে, ইউটিউবে বদৌলতে ছড়িয়ে যাবে হাতে হাতে, তারপর মেয়েটা লড়াইয়ে নামবে— এমন নানান কিছু । অথচ ছবিতে এমন কিছুই ঘটে না । কেবল পুলিশ ঘরে এসে দাপটে যায়, অর্থের জন্যে । সেই অর্থও বাবা পরিশোধ করেন, করতে থাকেন । তিনলক্ষ রুপি পরিশোধ নিয়েও কোনো বুর্জোয়া গল্প হয় না, বাবা-মেয়ের সংসার, সেখানে হাপিত্যেশ করারও কেউ নেই । পুলিশের পীড়ন দেখে মনে ক্রোধ জাগলে মনে হয়, এই পুলিশটা শেষমেশ শ্মশানে জ্বলবে । কিন্তু জীবন যেহেতু সিনেমার মতো পরিণতি বয়ে আনে না, তাই এখানেও পুলিশ বেঁচে যায়, আমাদের সমাজের পুলিশের মতোই ।
একটা শিশু অভিনেতা আছে এই ছবিতে— নিখিল সাহনি । শিশুর জৌলুস নেই তাতে, দরিদ্র প্রকট করে তুলবারও কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় নি । শিশুটা পানিতে ডুবে ডুবে দেবীর বাবার জুয়ার পয়সা তোলে এবং একবার তলিয়েও যায়, তারপর বেঁচেও ওঠে । জলে যায় ১০ হাজার রুপি, কিন্তু উঠে আসে সোনার আংটি । না, এখানেও কোনো নাটকীয়তা নেই, তবে নাটক তো আছে অবশ্যই ।
এই আংটিটা কোত্থেকে এলো, সেই গল্পও আছে সিনেমায়। দেবীর গল্প যেমন এখানে টালমাটাল, বৈধ-অবৈধ নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি। তারই পাশাপাশি একটা মিষ্টি প্রেমের সমান্তরাল কাহিনি চলতে থাকে অবিরল। যে প্রেমের ভিতরেও এক প্রকান্ড সামাজিক ব্যবধান। জাতিভেদ— এই বিষয় নিয়ে বহু ছবি হয়েছে, কিন্তু এখানে তা ‘মুখে’ বলার কোনো জোর চেষ্টাই উঠে আসে নি। তাই দেখতে দেখতে চোখ ভিজে আসে ভালো লাগায় । একটা অচেনা প্রেমের সুর বেজে ওঠে হু হু করে বৈশাখী বাতাসের মতো।
শ্মশান— হ্যাঁ, মাসান মানেই শ্মশান । এই শ্মশান ডোমে যারা মড়া পোড়ায়, সেই নিম্নবিত্ত থেকে উঠে আসা একটা চিত্র হলো দীপক। প্রেমটাও হয় স্বাভাবিক, সবার যেমন হয় আজকাল, তেমন করেই । ফেসবুকে যোগাযোগ গাঢ় হয়, বন্ধুর বাইকে ঘুরতে যাওয়া হয়, হয় মনোমলিনতা, তারপর বিরহ। এখানেও নাটকীয়তা ছাড়া একটা নাটক জমে ওঠে । নিজ হাতে নিজের প্রেয়সীকে শ্মশানে পোড়ানোর নাটক । ‘মানুষকে কখনো জ্বলতে দেখেছো? কিভাবে জ্বলে অঙ্গার হয় জানো?’ জানে না প্রেয়সী, অভিমান... কিংবা সেটা জানতেই মড়ক হয়ে ফিরে আসে শ্মশানে । এ এক অসম্ভব চিত্র ! শ্মশানের ছাই থেকে তুলে আনা প্রেয়সীর আংটিটাও বিরহে অস্থির হয়ে যখন ছুঁড়ে ফেলে প্রেম, তখনও কে জানতো, এটাই নিখিলের জুয়ার পয়সা তুলতে গিয়ে তলিয়ে যাবার আসল কারণ।
মাসানে কিচ্ছু নেই, কোনো কাহিনীর আরাধ্য পরিণীতি নেই, কোনো প্রত্যাশিত তর্ক নেই, কোনো এপিক, এথিক, ফিলোসফি নেই । তবু কেনো ফ্রান্সের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের পর উপস্থিত দর্শকরা দীর্ঘ পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিলো, সেটা বুঝতে বোদ্ধাদের একটুও কষ্ট হয় না। তসলিমা এই ছবি দেখে বাক হারিয়ে ফেলুক, পরিণীতি দেখতে দেখতে অঝোর ধারায় কাঁদুক, কিংবা আমিরেরা সস্ত্রীক সিনেপ্লেক্সে গিয়ে প্রমোদ লাভ করুক, তাতে বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠী ছাড়া কার কি স্বার্থ আছে, বলুন! কিন্তু আমরা বলি, মাসান জীবনকে জীবনের মতো চলতে দেয়ার যে আজান দিয়েছে, সেই শিক্ষাটা অন্তত আমাদের কুশলীরা হাসিল করুক— এইটুকু যেনো আমরা আগামি দিনে স্বচক্ষে দেখি, তাহলেই মাসান স্বার্থক হবে।
Film : Masaan
Rating : 8.2/10 (5,419 votes)
Director : Neeraj Ghaywan
Writer : Varun Grover
Stars : Richa Chadda, Sanjay Mishra, Vicky Kaushal, Pankaj Tripathy
Runtime : 109 min
Rated : N/A
Genre : Drama, Romance
Released : 24 Jun 2015
Plot : Four lives intersect along the Ganges: a low caste boy hopelessly in love, a daughter ridden with guilt of a sexual encounter ending in a tragedy, a hapless father with fading morality, and...
০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৭
মনযূরুল হক বলেছেন: আগে কখনো মুভি রিভিউ লিখি নি । তবে মাঝেমধ্যেই লিখতে ইচ্ছে করে ।...
দেখার ইচ্ছে জেগেছে জেনে প্রীত হলাম...
২| ০৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার রিভিউ।
০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই .।
৩| ০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
পলক শাহরিয়ার বলেছেন: সাহিত্য মেশানো,তৃষ্না বাড়ানো দুর্দান্ত রিভিউ।
০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯
মনযূরুল হক বলেছেন: দেখেছেন তো ? আমার মনে হয়, জীবনের সেরা ছবি দেখেছি আমি...
৪| ০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
অদৃশ্য বলেছেন:
মুভিটা চমৎকার... আপনার লিখাটিও চমৎকার...
শুভকামনা...
০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:২৮
মনযূরুল হক বলেছেন: শুভকামনা আপনাকেও...।
৫| ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪
নুর পাগলা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
০৮ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:০৫
মনযূরুল হক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
৬| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৫
অসম্ভব কথা বলেছেন: ছবিটা দেখেছি । এটা আমার দেখা সেরা ছবির মধ্যে একটা । আপনার লিখাটিও চমৎকার ।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০৭
মনযূরুল হক বলেছেন: আমার দেখাও সেরা ছবির মধ্যে একটা...
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:১১
সুমন কর বলেছেন: আপনার দেয়া রিভিউ আগে পড়েছি কিনা মনে পড়ছে না। দারুণ লিখেছেন এবং দেখার ইচ্ছে হলো। +।

দিলাম ডাউনলোড।