নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এম আর জান্নাত স্বপন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে খুব ভালবাসি। ব্লগিং করা উপভোগ করি
গভীর রাত। রাতের গভীরতার মতো গভীর ঘুমে অনেকেই। তবে রাতের এই গভীরতা কিছু রোহিঙ্গার দৌড়-ঝাঁপ কমাতে পারেনি। কমাতে পারেনি কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ব্যস্ততা। থেমে থেমে ঘুরছে আমাদের গাড়ির চাকাও। ক্লান্ত শরীর। তবুও তন্দ্রা কিংবা ঘুম নেই। বালুখালী পয়েন্টে আমাদের গাড়ির চাকা থেমেছে। তবে সচল হয়েছে আমাদের পা।
সড়কের পাশে বসে আছেন মোহাম্মদ আলী। সাথে তার স্ত্রী ও সন্তানরা। পাহাড়-সাগর পেরিয়ে এখানে আসা। ৫দিনের দূর্বিসহ সেই মৃত্যুঞ্জয়ী যাত্রায় কতো প্রাণের যে মৃত্যু দেখেছে তারা! খাবারের কথা তাদের এখন আর মনে নেই। মনে গেঁথে রয়েছে প্রাণের কথা। প্রিয় প্রাণ যে বাঁচাতে পেরেছে। মৃত্যুপুরীর দৃশ্য এখনও ভাসছে চোখে-মুখে। চারদিকে অন্ধকার। হঠাৎ অন্ধকার থেকে এক যুবক এসে একটি খাবারের প্যাকেট তাদের সামনে রাখল। যুবকটি আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।
“ওগো দেখো, ফেরেস্তা আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ আমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। বেহেস্তের খাবার। বাচ্চাদের দাও। তুমিও খাও। কতোদিন যে খাবার খাওনি।” এভাবে আল্লাহর শুকরিয়া করে করে কান্না করছেন মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী।
হেড লাইটের আলোয় অন্ধকার ঠেলে একটি ট্রাক এদিকে এগিয়ে আসছে। সেই আলোতে খাবারের প্যাকেটটি নাড়াচাড়া করছেন তারা। দেখছেন একে অপরের মুখের দিকেও। এই দেখাদেখিতে যেন তারা নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন- নিজেরা সত্যিই বেঁচে আছেন। ট্রাকটি অনেক কাছে এগিয়ে এসেছে। গতি কিছুটা কমেছে। ট্রাক থেকে একটি পানির বোতল ফেলে অন্ধকারের দিকে গতি বাড়িয়ে ছুটে গেলো ট্রাকটি।
মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী আবার কান্না শুরু করে দিলো। “ওগো দেখো, আল্লাহ আমাদের জন্য পানিও পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফেরেস্তাদের গাড়ি দেখেছো কতো বড়ো!”
নতুন আসা মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রীর কাছে ত্রাণদাতারা ফেরেস্তা। তাদের কাছে গভীর রাতে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমারও বিশ্বাস হলো, ত্রাণদাতারা ফেরেস্তা। আর আল্লাহ তায়ালাই সবকিছু পাঠাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের জন্য। ফেরেস্তারা বেহেস্তের খাবার দিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের।
নিউজ উৎস - দি প্রবাসী
©somewhere in net ltd.