![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশের গোল সূর্যটা যখন বিরাট একটা রক্তিম থালার মত হয়ে পশ্চিমাকাশে হেলে কিছুটা দুর্বল হয়ে গাছ গাছালির পাতার ফাঁক দিয়ে পৃথিবীর উপর সমান্তরালে আঁচড়ে পড়েছে তখন নিশিতার বুকের ভেতরটা সীমাহীন শুণ্যতায় মরুভূমির তপ্ত বালুর মত খাঁ খাঁ করে উঠল। তার বার বার এই মনে হল আজ তার জীবনটা দু:খের সাগরে ডুবে ডুবে যাচ্ছে। অথচ দুদিন আগেও তার জীবনটা অন্য রকম ছিল। আর দশটা মেয়ের মত সেও হাসি ঠাট্টা করে জীবনের এবেলা কেটে দিতে পারত কিন্তু কি করে কি হয়ে গেল। জীবনের এ বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে তার একটি কথায় মনে হল, দুনিয়াতে পুরুষ বলে দাবী করে যারা সমাজে নারীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে তাদের সাথে বনের পশুদের কোন অমিল নেই। তাদের চেহারা ঠিক মানুষের মত মনে হলেও এরা মানুষ রুপি ছদ্মবেশী হিংস্র হায়েনার জাত। এদের থেকে পালিয়ে বাঁচার পথ সংকীর্ণ।
ভাবতে ভাবতে কেঁদে উঠল নিশিতা। তার চোখের জল নরম তুলতুলে গাল দুটো ভিজিয়ে মাটিতে আঁচড়ে পড়ল। চিন্তায়, বিষণ্ণতায় একেবারে ভেঙ্গে পড়ে সে জানালার গ্রিল ধরে বাইরের অশান্ত প্রকৃতির দিকে একমনে তাকিয়ে রইল।
এভাবে ক্ষণিক অতিবাহিত হলে মা নাজমা এসে তার বাহু স্পর্শ করে ডাকলো- মা, নিশিতা।
চেতনা ফিরিয়ে নিশিতা বলল- কিছু বলবে মা?
-এমন করে একা না থেকে বাইরে আয়। সবার সাথে গল্প করলে ভাল লাগবে তোর।
-আমার আর ভাল মন্দে কি আসে যায় মা। জীবনের সবথেকে পরম যে ধন তাতো আর নেই। সমাজে কি করে এ মুখ দেখাব আমি? বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল।
মেয়ের কান্নায় নিজের চোখের জল আটকাতে না পেরে শাড়ির আচল দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছে বলল- এমন করে ভেঙ্গে পড়িস না মা। যা হবার তাতো হয়ে গেছে। পৃথিবী উল্টালেও তো ফেরানো যাবে না অতীত। তুই স্বাভাবিক হ মা।
-কি করে স্বাভাবিক হব মা? স্বাভাবিক হবার মত কিছু কি আছে?
উত্তর দেবার মত কিছু না পেয়ে নাজমা একদৃষ্টিতে মেয়ের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর অভয় দিয়ে বলল- শোন মা, সারা দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। পেপারে, টিভিতে সবখানে নিউজ হয়েছে। যে পাপিষ্ঠ এই কাজটি করেছে পার পাবে না সে। তুই শুধু বল ছেলেটা দেখতে কেমন? যাতে তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের সুবিধে হয়।
মায়ের কথা শুনে ফিরে তাকালো নিশিতা। মায়ের শুকনো মুখের দিকে ছলছল চোখদুটো স্থির করে বলল- ও তো ছেলে নয় মা, ও তো পশু। কি করে আঁকব একটা পশুর ছবি? তাছাড়া কি হবে এঁকে? ধরা পড়লে তার কারাদন্ড হবে এইতো? তাতে কি লাভ আমার? আমারতো কোন লাভ নেই তাতে। বরং পরিবারে, সমাজে, দেশে সকলেই জানল নিশিতা নামের এই মেয়েটি ধর্ষিত। মেয়েদের সব থেকে দামী যে সম্পদ, সেটি নেই তার।
লজ্জায় রক্তিম হল নাজমা। মেয়ের কাছে অপরাধীর মত মনে হল নিজেকে। খানিক নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে দুফোটা অশ্রু ফেলে ঘরের বাহির হয়ে গেল।
আরও কিছুক্ষণ গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকল নিশিতা। নীরবে কেঁদে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবল নিজের যা হয়েছে হোক, অন্য কোন মেয়ের যেন মুখোমুখি হতে না হয় এ কঠিন বাস্তবতার। তাই শাস্তি প্রয়োজন আছে তার। প্রয়োজন আছে এ সমাজে এ সকল ধর্ষকের মুখোশ খুলে দেবার।
দাঁড়িয়ে থেকে ধর্ষকের মুখটা মনে করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে যেমন চারপাশের জিনিসগুলো দেখতে দেখতেই অদৃশ্য হয়ে যায়, তেমনি ভাবে তার মুখটা মনের কোনে ভেসে আসতে আসতেও অদৃশ্য হয়ে গেল।
জ্ঞান ফেরার পর থেকে এ অবধি সে আঁকতে পারল না ধর্ষকের ছবি। কেবল একটা দুঃস্মৃতির বিষ বাষ্পে জর্জরিত হৃদয়ের করুণ আর্তনাদ সমুদের ঢেউ এর মত তীরে আঁচড়ে পড়তে লাগল। পৃথিবীর কাছে নিজেকে পরাজিত ভেবে এটুকু সান্ত্বনা দিল নিজেকে, কি হবে তার মুখটা এঁকে? কি লাভ তাকে চিনে? এ প্রখর দিবালোকের আলোকিত আকাশে যে পাপিষ্ঠ হৃদয়ের মুখখানি দেখা হয় নাই, তার জন্য এত চেষ্টা করার কি আছে? তার চেয়ে বরং জগতের কাছে তার একটা পরিচয় থাক সে পশু, সে পাপিষ্ঠ, ধর্ষক এই একটাই তার পরিচয়। এদের কোন জাত নেই। এরা দেখতে যত রকমই হোক না কেন মনের হিংস্রতায় কোন অমিল নেই।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২০
এম এ হানিফ বলেছেন: ধন্যবাদ জীবনানন্দের সোনালী ডানার চিল ভাই। সেই সাথে শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালবাসা। বর্তমান আর ভবিষ্যতের কলাম যোদ্ধারা আপনার কথার মতই হোক আত্মবোধে বলিয়ান।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: অল্প কথায় ভাল লিখেছেন।
ব্লগে সুস্বাগতম! শুভ হোক আপনার ব্লগযাত্রা!
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০
এম এ হানিফ বলেছেন: শুভকামনাটুকু হৃদয়ে গাঁথা থাকলো। পথ প্রদর্শকের মত সামনে থেকে পথ চেনাবেন এটুকু চাওয়া। নিরন্তর ভালবাসা আপনার জন্য।
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৫
আসোয়াদ লোদি বলেছেন: মুখোশ খুলে দিলেই মনে হয় ভালো হতো।
০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
এম এ হানিফ বলেছেন: ধন্যবাদ লোদি ভাই। মুখোশের আড়ালে যারা তাদের মুখোশ খুলে দেয়াই ভাল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:৪৮
সোনালী ডানার চিল বলেছেন:
চমৎকার লিখেছেন।
শুভকামনা রইল- কলম হয়ে উঠুক আত্মবোধের হাতিয়ার!