![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব-https://www.somewhereinblog.net/blog/mhanif89/30299489
জজো ভাল ছেলে। কত মেয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাবার কথা। আর সে কিনা আমার মত একটা সামান্য উঠকো মেয়ের প্রেমে পড়েছে।
কয়েকদিন থেকে এটা নিয়ে ভাবলাম। কিন্তু কিছুই গুছিয়ে ভাবতে পারলাম না। কেন যেন খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদলাম।
জজোর সাথে আমার আবার একদিনদেখা হল। আমি মাথা নিচু করে বললাম, আপনার এমন করা ঠিক হচ্ছে না।
জজো বললো, কেন ঠিক হচ্ছে না?
সব বিষয় জানতে চাওয়া যায় না।আমাকে যেতে হবে। আমার তাড়া আছে।
জজো বললো, আমি গাড়ি করে রেখে আসব।
এ হয় না জজো।
কেন হয় না?
সব বিষয়কে কেন দিয়ে মাপা যায় না।
দেখুন এক বিচ্ছিন্ন জীবনের দ্বারপ্রান্তে আমার অবস্থান। জানিনা কখন এ বিচ্ছিন্নতা আমার সত্ত্বাকে বাইরে টেনে এনেছে। কিন্তু এ শুধু আপনার জন্য খেয়া।
আমি তা করতে বলিনি। এ বিষয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।
এ ক্ষমা নয় খেয়া। এ চিরন্তনকে মিথ্যা বানানো।
আমি চিরন্তন থেকে বহু দূরে। দমকা হাওয়ার সাথে অঙ্গ মিলাতে আমার ভাবনা আছে। সেটুকু শুধু আমার জন্য। আমাকে দয়া করুন।
প্রেম দয়া নয় খেয়া। প্রেম-ভালবাসা দিয়েই জীবন পূর্ণতার পরিসমাপ্তি আঁকে।
আমি আঁকতে চাই না।
কেন এ পণ?
আমারটা আমাকে ভাবতে দিন।
আমি ধ্বংস হব তাতে। এ গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত আমাকে আর টানছে না। আমার অস্থিত্বে আর সে ফুল-পাখি নেই। আমি সেটা ফিরিয়ে পেতে চাই খেয়া।
আমাকে যেতে দিন জজো। আমি এখনও নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত। নিজের জন্যই আমার প্রানপণ ছুটে চলা। পায়ের গোড়ালি থেকে মাথার চুল পর্যন্ত আমি নির্ভার, রসহীন এলো যৌবনি বালিকা। সেখান থেকে আমাকে ফিরিয়ে আনবেন না। আমি চলছি, পিছন থেকে আমাকে ডাকবেন না।
বলে আমি চলে আসলাম।
এরপর আরও একসপ্তাহ কাটল।এর প্রত্যেকটা দিন জজো আমাকে কয়েকবার করে ফোন করেছে। একদিনও রিসিভ করিনি। আমি চাই নি জজো আমার জন্য তার জীবনটা নষ্ট করুক। কিন্তু আজ রাতে আমার কাছে দু'টো মেসেজ আসলো। একটা পাঠিয়েছে জজোর ভাবী।
" জজো ইজ অ্যা গুড বয় খেয়া। বাট নাউ হী ইজ নট নরমাল। ইউ শুড টক টু হিম"
অপরটা জজো।
" আমি আজ অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি। যাবার বেলা একবার হলেও আপনাকে দেখার ইচ্ছেটা রয়ে গেল। যদি সম্ভব হয় তো কিছুটা সময় আপনার সাথে কাটাতাম। আমার এ শেষ আবদারটুকু ভেবে দেখবেন"
জজো।
মেসেজটা পড়ার পর থেকে একটু একটু খারাপ লাগছে। যদি ওর কিছু হয়ে যায়?
কিন্তু সে আমার কে? কেনই বা তার সাথে কথা বলব, তার কিছু হলেই বা আমার কি?
রাত গভীর হবার সাথে সাথে মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। মনে হল জজো যেন আমার সব। তাকে আটকাতে হবে।ভালবাসা দিয়ে সেরে তুলতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে সারারাত কাটল।ঘুমোতে পারলাম না।
অনেক ভাবাভাবির পর বিকেলে জজোর সাথে দেখা করতে গেলাম। ও আমাকে বললো, চল গাড়িতে ঘুরে ঘুরে শহরটা দেখি।
গাড়িতে উঠে আমি বললাম, আমায় ক্ষমা করবেন জজো।
ভুলতো আমারই, যাবার বেলা আমায় কষ্ট দিচ্ছেন কেন?
আমি কষ্ট দিতে চাই নি জজো।
ও কথায় আর ফিরে না যাই। আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হল।
আমার কষ্টের চেয়ে আপনার বেদনাটা বড়। আপনার এ সুন্দর শরীরটা কেমন মুছড়ে পড়েছে। আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি, আমার জন্য আপনার এত কষ্ট হবে।
জজো মুছকি হেসে বললো, আমায় নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি ভাল থাকব খেয়া।
সে পারবেন না জানি।
যদি পারি তো।
শ্বাস ফেললে জীবনের অস্তিত্ব থাকে, কিন্তু জীবনটা শুধু শ্বাসের জন্য নয়। এর বাইরেও জীবনের প্রয়োজন অনেক।
সেটা শেষ হয়ে গেছে।
আপনি উঠে দাঁড়ালে----
কী হবে? আর কাউকে নিয়ে ----- এ কথা বলছেন?
আমি তা বলিনি জজো।
আমি জানি আপনি আমায় ভালবাসেন।আমি ভুল বললাম খেয়া।
আপনি এমনটা ভাববেন না জজো।
কালের যাত্রার ধ্বনি কালকে ঘিরেই খেয়া।
কালের ভিতর দু'টো দিক থাকে জজো। একটার বিপরীতে আরেকটার জন্ম হয়। এসব দিয়ে জীবন মাপা যায় না।
সারা জীবন প্রকৃতির ছবি উঠিয়েছি। প্রকৃতি চিরকালেই স্বাভাবিক। ক্ষনে ক্ষনে ঝড় ঝাপটায় সে অনেক আঘাত পায়। তাতে যে ক্ষতিটা হয়, প্রকৃতি কিন্তু ঠিকই তা সামলে নেয়। আবার গাছে ফুল ধরে, ফল হয়। কিন্তু এর পরও কি ঘটে জানেন?
কী জজো?
একটা চিহ্ন রেখে যায়।
জীবন সম্পর্কে আপনার ধারনা সুন্দর জজো।
না; সে সৌন্দর্যকে আমি লালন করতে পারি নি। পারলে আমার দ্বারা এ ভূল হত না।
কেউ চিরন্তনের ঊর্ধ্বে নয়।
আপনি কেন তা চাইছেন খেয়া?
এ প্রশ্নের জবাব আমি আপনাকে দিতে পারব না। আপনি আমায় জোর করবেন না।
আমার প্রবাস জীবনে একটি মেয়ে আমায় ভালবাসতো। তখন আমি ছিলাম প্রকৃতির দ্বারে দ্বারে। আজ তাকে খুব মনে পড়ছে।
সে শুধুই আমার জন্য, তাই না জজো?
এ বড় জটিল প্রশ্ন। আমি উত্তর দিতে অপারগ।
আপনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
এ কষ্টটা চিরন্তনের কাছে তুচ্ছ। আর এ তুচ্ছটাই আমার সম্বল। এটাকে ঘিরেই আমার বাকী জীবনের আয়োজন। ক্ষণিকের ভালবাসা নিয়ে আপনার আগমন ছিল, কাল ফুরালেই সেটা হারিয়ে যাবে না। সেটাকে বইবার ক্ষমতা আমার আছে।
ক্ষনকে নিত্যকালের সাথে মিলাবেন না জজো।
যদি মেলাতে হয় খেয়া।
ক্ষনটা হারিয়ে যেতে দিন। কুয়াশা সূর্যের দাপটে হারিয়ে যাবে। এটাকে বিদায় না দিয়ে তো উপায় নেই।
তবু কি ক্ষনটা মিথ্যে?
এত ভালবাসেন কেন আমায়?
কিছু অস্থিরতার মাঝে সুখ থাকে খেয়া। সে সুখটাই না হয় আপনাকে সফল করে তুলবে।
আর আপনি?
আমি ভবঘুরে। হয়তো আবার কোথাও আপনার সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে।
সে দিনটা যেন না আসে জজো।
কালের ঘোরপাকে যদি এসে যায়?
প্রকৃতি ভেবেই আমার ছবিটা তুলবেন।
সেদিন যদি আমার হাতটা কেঁপে উঠে খেয়া?
আমায় আর কষ্ট দিবেন না।
জগৎ বড় বেহিসাবী, তাই না?
জবাব না দিয়ে আমি নীরব থাকলাম।
একটা বড় পুকুরের সামনে এসে জজো গাড়ি থামালো। পুকুরে একদল ছেলে মেয়ে লাফালাফি করছে।একজন আরেজনের গায়ে পানি ছিটাচ্ছে আর ডুব দিচ্ছে।
আমি বললাম, ছেলে মেয়েগুলো কি সুন্দর করে পানিতে খেলছে।
জজো বললো, আমার ওদের খুব ভাল লাগে। আপনার ভাল লাগে?
হু লাগে। আপনি ক্যামেরা এনেছেন?
ছবি উঠাবেন?
হু, যদি দিতেন।
স্মৃতি রাখতে চান?
না, আসলে আমি তা ভাবিনি।
দুটো উঠাই।
দুটো কেন?
আপনার উঠানো ছবিটার পাশে আমার টা রেখে দিব।
এ হয় না জজো।
প্রকৃতিতে কত রঙ। এ সামান্য রঙটুকু আমি আপনার কাছে চাইছি খেয়া।
তা আপনার অনেক ক্ষতি করবে।
যদি সেটাতেই আমার সুখ থাকে।
এ সুখ নয় জজো। অশ্রু ঢেলে নিজেকে সুখী ভাবা যায় না।
তাহলে তো আপনিও সুখী নন খেয়া?
কে বললো আমি সুখী নই।
আপনার চোখদুটো খেয়া।
আপনি এভাবে আমাকে তাকাবেন না।
আজ আমাকে তাকাতে হচ্ছে খেয়া।
আমাকে রেখে আসুন জজো।
ফিরবার পথ সব বন্ধ খেয়া।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.