![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব-https://www.somewhereinblog.net/blog/mhanif89/3029953
আপনার শৈশবের কথা মনে পড়ে জজো?
হুঁ, শৈশবটা রাজশাহীতে কাটিয়েছি। বড় বড় আম বাগান। একটু বৃষ্টি হলেই দৌঁড়ে যেতাম।দল বেঁধে আম কুড়াতাম। আপনার?
আমারটা বললে ফুরাবে না। রাতের বেলা অন্ধকারে জোঁনাকী ধরতাম। ভোরবেলা ফুল কুড়াতে যেতাম। পূর্ণিমা রাতে পুকুর ঘাটে বসে চাঁদের আলোয় গল্প করতাম। ইস, সেদিনগুলো যদি ফিরে পেতাম। সেই সুখের দিনগুলো।
অতীতের দিনগুলো কখনো ফিরে আসে না। তবু নিজের ভালবাসা দিয়ে আবার শৈশবে ফেরা যায় খেয়া।
আপনি পূনর্জন্মের কথা বলছেন?
সবাই সন্তানের মাঝে তার অস্তিত্ব খূঁজে পায়। এটাকে পূনর্জন্ম বলতে দোষ কোথায়?
দোষ আছে জজো। ওটা আরেকটা জীবন। সে জীবনের মাঝে নিজেকে কল্পনা করা যায় মাত্র, অস্তিত্ব নয়। অস্তিত্বের জন্য চাই নিজেকে। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস আর কর্মকে। এ ও বড় চিরন্তন। স্বাভাবিকতার দ্বারে দ্বারে তার অবস্থান। আপন আপন শক্তি দিয়েই তাকে মাপতে হয়। সন্তান সে অন্য জিনিস। ভালবাসার উৎসর্গ হৃদয় নিংরানো ধন।
হুঁ, সবাই সন্তানকে গভীর ভাবে ভালবাসে।
কারণ মানুষের ভালবাসা অনেকটা পৃথিবীর মত। পৃথিবী যেমন সব কিছুকেই তার কেন্দ্রের দিকে টানে। স্নেহ-ভালবাসাও সেরকম, সেটা নিম্নমুখী।
আপনার সন্তানকে কি নামে ডাকতে চান খেয়া?
সেতো ভেবে দেখিনি জজো। তবে ছবি বলে ডাকবেন। এ ডাকনাম। মেয়ে হলে রাখবেন। এটুকু আপনাকে দিলাম।
আর ছেলে হলে?
তবে রোজ।
আপনার স্মৃতিকে রেখে দিতে চান?
আমি স্মৃতিহারা নই, স্মৃতি রাখতে ভালবাসি।
বেশ, কথা দিলাম। আর কিছু?
এর বাইরে কিছু নয়।
বলে জজো ক্যামেরাটা আমার হাতে তুলে দিল। আমি ছেলেমেয়েদের লাফালাফি আর গায়ে জল ছিটানোর ফটো তুললাম। আমার সাথে জজোও তুললো। আমার হাতে একটা সাদা কাগজ ছিল। কাগজটা দিয়ে আমি একটা নৌকা বানালাম। কাগজের নৌকা। বানিয়ে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দিলাম। নৌকাটা ভেসে ভেসে মাঝপুকুরে চলে গেল।
ভজজো বললো, এটাই কি আমাদের শেষ দেখা?
আমি বললাম, আমায় দেখতে আসবেন? যদি চান তো?
যদি না চাই?
তবে হঠাৎ যেন দেখা হয়।
তাতে লাভ?
আজ যেমন আপনি শৈশবে ফিরে গেছেন, সেদিন আমিও নিজেকে ফিরে পাব।
সে ফিরে পাওয়ায় কোন আনন্দ থাকবে না জজো।
তবে কি এখানেই আমার শেষ খেয়া?
আমি জানি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আপনারতো কষ্ট হবার কথা নয় খেয়া?
সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় না জজো।
তবে কি ভেবে নিব আপনিও আমায় ভূলে থাকতে পারবেন না?
আপনি কিছুই ভাববেন না। তাতে শুধুই কষ্ট পাবেন।
কষ্ট পেলেও আমি ভাববো। আমায় ভাবতে হবে খেয়া।
সেটুকু আপনার, আমি জোর করব না।
আপনাকে করতে হবে।
বেলা ডুবে যাচ্ছে। আজ চলুন।আমাকে যেতে হবে।
আপনি যাবেন না খেয়া।
না জজো। আমাকে যেতেই হবে। প্লিজ আমাকে আটকাবেন না। সূর্য ডুবতে বসেছে। সন্ধ্যা হচ্ছে। আমার আর দেরি করা যায় না।
আর একটু সময় খেয়া। প্লিজ আর একটু সময়।
জজোর রিকোয়েস্ট আমার পক্ষে রাখা সম্ভব হল না। আমি চলে আসলাম। তখন সূর্য ডুবে গেছে। আঁধার নেমেছে চারিদিকে।
জজো বারবার করে বললো সে রেখে আসবে কিন্ত আমার ভাল লাগছিল না। মনে হচ্ছিল ওর ভালবাসা আমাকে দূর্বল করে তুলছে। আমি যেন ওকে ভালবেসে ফেলছি।
জোরে হেঁটে এসে আমি একটা ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সি ছুটে চলতে লাগলো। রাস্তার চারপাশে কোলাহল। কিছুক্ষন চলার পর জানালার ফাঁক দিয়ে ভরা পূর্ণিমার আলো এসে আমার মুখের উপর পড়লো। আমার বুকটা বিষাদে ফেটে যেতে লাগলো। শরীরে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করলো। আনমনা মনটা নিয়ে বাইরে তাকালাম। কিন্তু আমার বড় একা লাগা শুরু হল। আমি ভাবতে লাগলাম। এতক্ষণ কে যেন আমার সঙ্গে ছিল? আমায় ভালবাসতো। আমাকে আপন করে নেয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল। অথচ আমি এখন একা। কিছুক্ষন পর আরো একা হব। জজো আজ অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। ও চলে গেলে আমার কষ্ট হবে না তো? সইতে পারবো তো হৃদয় হারানোর এ জ্বালা?জজো ভাল থাকবে তো? মনে রাখবে তো আমাকে? জজো পাশে থাকলে ভাল লাগে। এখন থাকলেও ভাল লাগতো। ভীষন ভালো।
অথচ এখন থেকে আমি একা। বড় একা।
জজো---আমার প্রেম, আমার ভালবাসা। আমার একদম কাছের কেউ----একদম কাছের----অন্তরের-----একদম নিশ্বাসের ভিতরকার।
না, না, জজো কোথায়? কোথায়----? কতদূরে-----? আমাকে ফিরে যেতে হবে। জজোকে আটকাতে হবে-- হবেই-----।
কিন্তু পূবালী হাওয়া বইছে। পালে ঝড় নেমেছে ভীষণ, দমকা উঠেছে। ফিরবার পথ কোথায়?
সমাপ্ত।
©somewhere in net ltd.