নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্যার, আরেকটা কম্বল নেওয়া যাবে ?

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১২

- স্যার, আরেকটা কম্বল নেওয়া যাবে ?
- আরেকটা কম্বল মানে ?
- না, মানে, আমার দাদীর জন্য আরেকটা কম্বল কি দেওয়া যায় ?
- মানুষ একটা পায় না, আর এই হালা আইছে দুইটা কম্বল নিতে!!! যা ফুট এখান থেকে ।

কলিম শেখের অর্ডারে আশেপাশে থাকা দুই সাঙ্গ শরীফকে ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে বের করে দিলো । শরীফ ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে । তার হাঁটুটাও কেটে গেছে । ভালোই ছুঁলে গেছে, রক্ত পড়ছে সেখান থেকে । ধাক্কাটা খেয়ে নয়, রক্ত দেখে চোখে পানি চলে এলো ওর । কি দোষ ছিল ওর ? একটা কম্বলই তো বেশি চেয়েছে, তাই না !!

বাবা নেই শরীফের । দুই বছর আগে, বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে আসি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি কোনদিন । দাদাও ছেলের শোক সহ্য করতে না পেরে চলে গেছেন নিষ্ঠুর এই দুনিয়া ছেড়ে । বাবার মৃত্যু শরীফের মা ঠিকভাবে নিতে পারেননি । সেদিন থেকে মা-ও শয্যাশায়ী । ডাক্তার দেখানো হয়েছে অনেক । প্যারালাইজড হয়ে গেছেন তিনি । এখন সংসারের পুরো হালটুকু তারেকের ঘাড়েই । তারেক শরীফের বড় ভাই । এইট পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছে তারেক, বাবার মৃত্যু পর্বতসমান দায়িত্ব এনে দিয়েছে তার ঘাড়ে । অতটুকুন ছেলেটা দিন-রাত এক করেই মাঠে কাজ করে । শরীফ ক্লাশ থ্রি তে পড়ে । সেও অবশ্য বসে থাকে না । এলাকার ছেলেগুলোর সাথে ব্যাপারী পাড়ায় গিয়ে বোতল কুড়ায় । সেই বোতল বিক্রি করে প্রতিদিন ২০-৩০ টাকার মত আয় সেও করে ।

কলিম শেখ শহরেই থাকে । এই অজপাড়া গাঁয়ে তার পা ঠিক নির্বাচনের আগ মুহূর্তেই পড়ে । যেই লোকটার মুখ দেখাই যায় না, সেই লোকটাই কিনা নির্বাচনের আগে জনদরদী হয়ে উঠেন হঠাৎ করেই । সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া, কম্বল-শীতকাপড় দান, এমনকি টাকা-পয়সা দিয়েও সাহায্য করে থাকেন এলাকার মানুষদের । তবে সবক্ষেত্রেই যেন প্রচার ঠিক হয়, সেটাও খেয়াল রাখেন ।

চারিদিকে ম্যালা মানুষ । কম্বল নেওয়ার লাইন দুইটা পড়ছে । পুরুষ মানুষগুলা এক লাইনে দাড়াইছে আর মহিলা মানুষগুলা এক লাইনে । শরীফ এই কম্বল দানের খবর আগের দিনই পাইছিল । তাই তো সে সকাল সকাল এসেই লাইনে দাঁড়াইয়ে পড়ছিল । মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাই শরীফ খেয়াল করলো, চারিদিকে ম্যালা মানুষ ক্যামেরা নিয়ে দৌড়াইতেছে । অনেক নাকি টিভির লোক আইছে এখানে । এমনকি পেপারের লোকও । শরীফকে ধাক্কা দেওয়ার ব্যাপারটা যেন কোন টিভি-পেপার কভারেজ না পায়, সে ব্যাপারটা খেয়াল রেখেই তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে ।

শরীফ উঠে দাড়ায় । বাড়ি যাবে এখন সে । আচ্ছা, এখন তাইলে এই একটা কম্বল কাকে দেবে সে ? আম্মাকে নাকি দাদীকে ? ভাবতে ভাবতেই বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সে । গরীবের ঘরে এটা একটা সমস্যা !! এখানে সহসা নতুন কোন জিনিস আসে না আর আসলে সেটা নিয়ে ভাগাভাগি অনেক অশান্তি সৃষ্টি করে । যাই হোক, পায়ে অনেক ব্যাথা করছে শরীফের । সে একরকম খোঁড়াতে খোঁড়াতেই ফিরতি পথে হাঁটা ধরলো । খালি ফেরার সময় একবার পিছনে ফিরেছিল সে, কলিম শেখ বারবার হাসিমুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দিচ্ছে ।

আজকাল এরকম দানের ব্যাপার তো আসলেই অনেকটা দেখানোর ব্যাপার !! যে যতটা দেখাতে পারে, তারই তো বাজিমাত হয়, তাই না ?

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৬

Mohammad hridoy shikder বলেছেন: আসলেই মানুষের মনে দয়া মায়া বলতে কিছু নেই

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫৭

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ঠিকই বলেছেন । একমত হলাম ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১২

একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: এইসব কলিম শেখদের অধ্যায় কবে শেষ হবে এই ৫৬ হাজার বর্গমাইল থেকে ?
আর কতকাল জাতি দাসী হয়ে থাকবে এদের ।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: মনে হয় না এই অধ্যায় আদৌ শেষ হবে । আর হলেও সেটা হবে পৃথিবী ধ্বংসের প্রারম্ভে শুধু ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২৫

উন্মুক্ত অাঙ্গিনা বলেছেন: দুঃখের ইতিহাস/সব সকালের সাক্ষী হয় থাকবে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: একমত ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: :( :( :(

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: :((

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০৫

জুন বলেছেন: এখনকার দান ধ্যান সবই লোক দেখানো। ভালোলাগলো তিক্ত বাস্তব নিয়ে লেখাটি।
+

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: একমত ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: কম্বল নেওয়ার লাইন দুইটা পড়ছে ।

এক লাইনে মন্ত্রীরা, আরেক লাইনে আমলারা!

সরকারে যেভাবে গলাবাজী করছে তাতে দেশে কম্বল নেওয়ার জন্য মানুষের লাইন থাকার কথা না। যেহেতু মানুষের কম্বল নেওয়ার কথা না নিশ্চয় সেখানে মন্ত্রী আর আমলার আছে!

আপনি গল্পে ভুল-বাল লিখছেন, কারেকশন করে দেন।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায় । থাক, এতকিছু আমলে নিয়ে পারা যাবে না ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।

৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: লেখক বলেছেন: পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায় । থাক, এতকিছু আমলে নিয়ে পারা যাবে না ।

ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।


একদম ঠিক কথা বলেছেন। দেশে আমলা ও মন্ত্রীদের কথাবার্তায় প্রকৃত অবস্থা বুঝা যায় না।

আপনাকেও ধন্যবাদ, ঠিক লাইনটা ধরতে পেরেছেন।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: হুম, একমত আপনার সাথে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.