নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলেটির কথায় দাদার আক্কেলগুড়ুম ; পর্ব (১-৫) :-/

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৩

পর্ব - ১

সুনীলরা বন্ধু-বান্ধব মিলে যেখানে প্রতিদিন আড্ডা মারে, সেখানেই প্রায়ই হাজির হয় তাদের সিনিয়র এক দাদা । এলাকার দাদা হিসেবে সিনিয়র নয়, অনেকটাই বন্ধুর মতই তাদের সাথে মিশে সে । তবে দাদার বউ অর্থাৎ বৌদির জন্য এলাকার সকল পোলাপাইনই মনে গোপন চিন্তাধারার বন্যা বইয়ে দেয় । সে যাই হোক, একদিন সুনীল আড্ডায় এসে দেখলো, সেই দাদা অনেক আগে থেকেই এসে হাজির হয়েছে । সম্ভবত আজকে দাদার অফিস ছুটি রয়েছে ।

- দাদা, একটা বিড়ি হবে ?
- তা বাপু, তুমি আবার কবে থেকে বিড়ি টানা শুরু করলে ?
- ঐ বিড়ি, সিগারেট একই কথা । হবে নাকি ?
- হুম, হতো যদি আর একটু আগে চাইতে, একটু আগেই টেনে শেষ করেছি ।
- ওহ, তাহলে প্যাকেট হবে ?
- প্যাকেট মানে ?
- আরে ধুর, সব কিছু কি আপনাকে ভেঙ্গে বলতে হবে ?
- আরে বলই না বাপু । প্যাকেট কি ?
- লাল-সাদা পাউডার । গাজা, হিরোইন এইগুলাই । হবে নাকি ?
- না, বাপু, পাউডারের কারবার আমার কাছে নেই ।
- ওহ, ধুর, মুডটাই দিলেন খারাপ করে । এখন পকেটে টাকাও নেই যে এইসব কিনবো আলিমের দোকান থেকে । হারামজাদা আবার বাকিও দিতে চায় না । আচ্ছা, বলেন তো দাদা, আমরা কি ওর টাকা নিয়ে ভেগে যাবো নাকি ? ও ছাড়া আমরা এই সব পাবোই বা কোথায় ?
- তা যা বলেছো বাপু, তোমার বৌদির জ্বালায় এগুলো তো বাড়ি খেতে পারি না । এমনকি সিগারেটটাও ধরাতে দেয় না ঐ মহিলা । বলে কিনা ধোঁয়ায় নাকি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার । ধুর, মাঝে মাঝে মেজাজটা এত খারাপ হয় জানো, মনে হয় ঐ মাগির মুখটা চেপে ধরে নাকের ফাকে সিগারেটের ধোঁয়া হুর হুর করে করে টেনে ঢুকিয়ে দেই । এরপর দেখি, কত শ্বাস নিতে পারে ও ।
- কি যে বলেন দাদা, অমন সুন্দরী বৌদির সাথে এমন করলে কি চলে !! বাদ দিন তো । তার চেয়ে এক কাজ করেন, কাল যেন কি বলছিলেন, ঐটা আরেকবার বলেন তো ।
- কোনটা বাপু ?
- ঐ যে সত্য নিয়ে কি যেন বলছিলেন !! সত্য কথা মনে হয় ।
- ওহ, সত্য কথা নিয়ে ? হুম, ঐ বলছিলাম যে সত্য কথাগুলো অনেক তিতা হয় । শুনতে তিতাই লাগে আর বলতেও । সবার দ্বারা সত্য চর্চা হয় না ।
- দাদা, তাহলে আপনাকে একটা সত্য বলি ?
- বাহ, বাহ, নীতিকথাই দেখছি নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে । বলো শুনি ।
- দাদা, বৌদিকে কি মাল লাগে মাইরি । মাল একেবারে মাথায় চড়ে বসে ।
- (ছেলেটার কথা শুনে দাদাবাবুর তো আক্কেলগুড়ুম) থাক বাপু, নেশা বেশিই চড়েছে বোধ হচ্ছে । আজকে তবে আমি বাড়িই ফিরে যাই । কাল আবার দেখা হবে নে, কেমন !

দাদাবাবুর এমন হঠাৎ প্রস্থান ছেলেগুলোর মধ্যে হাসির উদ্রেক ঘটালো । সুনীল যে এমনটা বলে ফেলবে তা আর কেইবা ভেবেছিল । তবে এ যাত্রায় সকলেই সুনীলের পীঠ চাপড়ে দিতে লাগলো । আর সুনীলও মুখ চেপে বাঁদরামির হাসি দিতে লাগলো ।

পর্ব - ২

এবারের কথোপকথন ফেসবুক খুলে দেওয়া নিয়ে । দীর্ঘ ২৩ দিন পর ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে, আর সেটা নিয়ে কোন কাহিনী হবে না, তা কি হয় ? তবে এদের কথাবার্তার শেষ কিন্তু ঐ বৌদিকে নিয়েই । পড়ুন তাইলে.......

- দাদা, শুনেছেন নাকি ?
- কি বাপু ?
- শুনলাম তারানা হালিম নাকি খুলে দিয়েছে ?
- ছিঃ, ছিঃ, এই মহিলার এত বয়স হয়েছে, তাও কি একটু লজ্জা-শরম নাই নাকি ?!?!
- মানে, দাদা ?
- কেন, বাপু, তুমিই না বললে, সে নাকি কি খুলে দিয়েছে ?
- ধুর, দাদা, আপনার তো দেখছি ডার্টি মাইন্ড । আমি তো ফেসবুকের কথা বলছিলাম ।
- ওহ, তা আগে বলবা তো বাপু । আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি......
- তা, দাদা, বৌদির খবর কি ?
- ধুর, আবার শুরু করলে নাকি বাপু ? না, এখানে তো আর বসা যাবে না ।
- আরে, দাদা, বসেন, বসেন, আপনার সাথে একটু মশকরা করছিলাম । এত অল্পতে চটে যান কেন ?
- আর, না, বাপু, তোমাদের সাথে কি চটা যায় ? খালি দয়া করে তোমার বৌদির কথাটা উঠায়ো না । ভালো লাগে না বাপু । তা আর কি জানি বলছিলে......
- ওহ, হ্যাঁ, ফেসবুকের কথাই বলছিলাম । কি যে অবস্থা হয়েছিল আমাদের ঐ পোলাপাইনগুলার ফেসবুক ছাড়া । আপনি যদি একবার দেখতেন দাদা, তাইলেই বুঝতেন ।
- হ্যাঁ, দেশের তরুণ-তরুণীগুলা তো ঐ ফেসবুক ফেসবুক কইরাই নষ্ট হইয়া গেলো । আমাদের সময় কি আর এই ফেসবুক আছিলো !! আমরা তো কত্ত সুখে আছিলাম ।
- দাদা, আমাদের তো এই ফেসবুকেই সুখ । যাক, দাদা, আপনার ফেসবুকে একাউন্ট নাই ?
- আর ফেসবুক !! আমাদের মত পুরনোযুগের মানুষের জন্য এইসব না । তবে তোমার বৌদির নাকি একটা একাউন্ট আছে এই ফেসবুকে । আমারে না জিজ্ঞাসা কইরাই খুলছে । আমাকে পরে অবশ্য বলছে ।
- তাই নাকি দাদা ? তা বৌদির ফেসবুক একাউন্টের নামটা কি, বলেন তো ।
- কি আর, ঐ যে লাল পরী নাকি, কি যেন ।
- ধুর, দাদা, আপনার মত কালো শয়তানের ঘরে লাল পরী !!!! না ব্যাপারটা ঠিক মানতে পারলাম না ।
- ধুর, সুনীল, তুমি না......!!!!! না, বাপু, আমি আর বসবো না ।

দাদাবাবু আর সহ্য করতে না পেরে অবশেষে উঠেই গেলেন । ওদিকে ছেলেগুলোও মিটিমিটি করে হাসতে লাগলো মুখ টিপে । দাদাবাবুকে জ্বালাতে বেশ লাগে তাদের কাছে ।

পর্ব - ৩

এবারের বিষয় সুনীলের বই লেখা নিয়ে । সুনীলের মত আড্ডাবাজ ছেলেরাও পড়াশুনা শুরু করবে, আর কোন কাহিনী হবে না তা কি হয় ? তবে বরাবরের মত কথাবার্তার শেষ কিন্তু ঐ বৌদিকে নিয়েই । পড়ুন তাইলে.......

- দাদা, আজ দেখি জলদি চলে এসেছেন । একেবারে আমাদেরও আগে ।
- আর বলো না, আজ অফিসে যাইনি ।
- কেন দাদা ?
- শ্বশুর মশাইয়ের শরীর নাকি খুব খারাপ । তোমার বৌদি সে জন্য কেঁদে কেঁদে বাড়িটাকে মাথায় তুলে রেখেছে । অফিসের চাপে না পারছি তাকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতে আর ওদিকে তোমার বৌদিকেও না পারছি একা ছাড়তে । আর শালা-সম্বন্ধীও নেই যে এসে ওকে নিয়ে যেতে বলবো । এই ভেবেই আজ সারাদিন মনটাই খারাপ । তাই আজ আর অফিসে যেতে পারিনি ।
- আরে দাদা, সব ঠিক হয়ে যাবে । মৌসুম চেঞ্জ হচ্ছে তো তাই রোগ-বালাই টুকটাক হচ্ছেই । দোয়া করে দিচ্ছি দাদা সব ঠিক হয়ে যাবে । অমন সুন্দর বৌদির চোখের পানির দাম কি সৃষ্টিকর্তা দেবেন না নাকি ?

(দাদাবাবু একটু অবাক হয়ে চাইলেন, পরক্ষনেই আবার দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে নিলেন । অবশ্য দৃষ্টি নামাতে নামাতে একটু জোরেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন)

- তা, সুনীল, তুমিও দেখছি আজ একা । বাকী পোলা-পাইনগুলো কোথায় ?
- আর বলবেন না দাদা । কি একটা হিন্দি ছবি নেমেছে না নতুন, ঐ যে "হেট স্টোরি ৩" নাকি ? ঐ ছবিটাই সবাই আশিসদের বাসায় মুভি থিয়েটার বানিয়ে দেখছে ।
- তা তুমি দেখলে না বাপু ?
- না, দাদা, কেন জানি ভালো লাগলো না । তাই এখানে চলে এলাম । অবশ্য ভাবিনি আপনি এখানে থাকবেন । আমি তো আসতে আসতে ভাবছিলাম, একা একা কিছুক্ষণ বসে চলে যাবো বাড়িতে । তবে দাদা, ইদানিং ভাবছি একটা বই লেখা শুরু করবো ।
- বই ? তাও তুমি ? কবে থেকে মাথাটা খারাপ হতে শুরু করলো তোমার ?
- ধুর, দাদা, কি যে বলেন না । আমি কি লিখতে পারি না ?
- না, তা পারো । তা কি নিয়ে লিখবে, ভেবেছো ?
- দাদা, মাথায় দারুণ একটা গল্প ঘুরপাক খাচ্ছে ।
- তাই নাকি ? তা গল্পের সারাংশটা কি একটু বলা যাবে বাপু ?
- হুম, যাবে না কেন । শোনেন তাইলে । একজন বেশ্যার সাথে রঙ নাম্বারে আলাপ শুরু হয় সুরেশ নামক একটি ছেলের । ছেলেটা আর ঐ বেশ্যাটার মধ্যে এরপর আলাপ চলতেই থাকে । ছেলেটা কথায় কথায় ঐ বেশ্যাটাকে নিজের সব খুলে বললেও বেশ্যাটা ঐ ছেলের কাছে নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে যায় । গল্পের শেষে দেখাবো, ছেলেটি যখন না জেনেই বেশ্যাটাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে । তখন মেয়েটি সত্য বলার তাগিদে ছেলেটিকে নিজের আসল পরিচয় দেয় । এরপর তাদের মধ্যে ফোনালাপ বন্ধ হয়ে যায় । আসলে কি দাদা, জানেন, ঐসব প্রেম-ট্রেম বলে কিছু নেই । সবই হয় রূপ না হয় শরীর না হয় টাকার কারবার ।
- তোমার গল্পের ধারণাটা তো দারুণ কিন্তু তোমার শেষের কথাটার সাথে একেবারেই একমত হতে পারলাম না বাপু । প্রেম আসলেই স্বর্গীয় একটি ব্যাপার । এই দেখো না, আমার আর তোমার বৌদির মধ্যে কত প্রেম, দেখো না ?
- সেটা হয়, বৌদির মত সুন্দরী নারীর জন্য আমাদেরও আছে একটু-আকটু ।
- এই আবার শুরু করলে ইয়ার্কি ? না, তোমাদের সাথে আর পারি না ।
- দাদা, যাওয়ার আগে তাইলে একটা কথা শুনে যান ।
- কি কথা বাপু ?
- বৌদির সাথে কিন্তু কখনই ঝগড়া-বিবাদে জড়াইয়েন না । কারণ কি জানেন ? একটা জড়পদার্থ ভেঙ্গে গেলে আবার ঠিক তার খাঁজে খাঁজে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু দুটি মানুষকে যেখানে বিচ্ছিন্ন করা হয় দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আর ঠিক সেখানে রেখায় রেখায় মেলে না । কারণ, মন জিনিসটা সজীব পদার্থ, নিমেষে নিমেষে তাহার পরিণতি এবং পরিবর্তন ।
- বাহ, এত উঁচু লেভেলের কথাটা কি তোমার ?
- আরে না, আমার হতে যাবে কেন । এই কথাটা বলেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
- তুমি আবার পড়াশুনাও শুরু করলে নাকি ?
- এই তো টুকটাক । তবে দাদা, বৌদির ব্যাপারটা যা বলছিলাম......
- থাক, থাক, আমি আজ যাই বাপু, তোমার বৌদি হয়তো বাড়িতে বসে এখনও কান্নাকাটি করে যাচ্ছে । আমি না গেলে তাকে থামাবে কে ?

দাদাবাবু জোরেশোরেই বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন । লোকটিকে বৌদির ব্যাপারে কিছু বললেই ভাবেন হয়তো কথাগুলো অন্য দিকেও মোড় নিতে পারে । দাদাবাবু আসলে পারেনও, সুনীল মিটিমিটি করে হাসছে আর মাথা চুলকাচ্ছে । বই লেখা নিয়ে তাকে সিরিয়াসলি ভাবনা শুরু করতে হবে এবার ।

পর্ব - ৪

এবারের বিষয় সুনীলের কবিতা লেখা নিয়ে । সুনীলের মত আড্ডাবাজ ছেলেরাও কবিতা লেখা শুরু করবে, আর কোন কাহিনী হবে না তা কি হয় ? তবে বরাবরের মত কথাবার্তার শেষ কিন্তু ঐ বৌদিকে নিয়েই । পড়ুন তাইলে.......

- আরে, দাদা যে, কখন এসেছেন ? আরে ধুর, যখনই এসে থাকেন আগে আসেন কোলাকুলিটা সেরে নিই ।
- কোলাকুলি !!! সে আবার কেন বাপু ?
- ধুর, দাদা, আপনিও না, কেমন জানি, বড্ড বেরসিক । নতুন আরেকটা বছর আসলো না, সেই খুশিতেই আপনার সাথে কোলাকুলি করতে চাচ্ছিলাম ।
- ওহ, আচ্ছা, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আসো আসো ।
(দাদাবাবু আর সুনীল কোলাকুলি করে নিলো)
- তা দাদা, এই নতুন বছরটা কেমন আশা করছেন ?
- বেশি কিছু চাওয়ার নেই বাপু । খালি এই চাকরীটাতে একটি ছোটখাট প্রমোশন, ঘর আলো করে নতুন একজন অতিথি - এই দুইটি আশা আর তোমার বৌদির সাথে একবার কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান আছে এই নতুন বছর ।
- বলেন কি দাদা !! আপনার এতকিছু চাওয়ার পরও আর চাওয়ার কিছু থাকতে পারে নাকি !! যাই হোক, কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যানটা কিন্তু জোশ । দেখি, ঐ সময়টা ফ্রি থাকতে পারি কিনা ।
- মানে ? তুমি ফ্রি থাকলে কি হবে ?
- না, মানে, আপনি বৌদিকে নিয়ে এতদূর যাবেন, এরপর হোটেল, বাস, বোট, জাহাজ কতকিছুর ম্যানেজমেন্ট করবেন, তখন তো বৌদি একা থাকবে, একটু না হয় বৌদিকে সঙ্গই দিলাম । আর তাছাড়া কক্সবাজার আমি নিজেও কখনই যাইনি ।
- ধুর, খালি মশকরা করো !! তোমাদের নিয়ে আর পারি না । তা, সুনীল তোমার ঐ বই লেখাটার কি হলো ?
- কোনটা যেন দাদা ?
- ঐ যে, কি যেন বেশ্যা আর মোবাইলের রং-নাম্বারের প্রেমের একটা কাহিনী বলেছিলে না, ঐটা ।
- ওহ, আচ্ছা, সেইটা । ছেড়ে দিয়েছি, বাদ দিয়ে দিয়েছি । গল্প-টল্প আমাকে দিয়ে হবে না । ভাবছি কবিতা লিখবো । একটা কবিতা এই মুহূর্তে মাথাতেও আছে । শোনাবো দাদা ?
- (দাদাবাবু হঠাৎ পুলকিত হয়ে গেলেন) শোনাও তো বাপু ।
- "বেলা শেষে কহিলেন হারু শেখ
রহিলো কি আমার গোয়াল ঘরে ?
নিয়ে গেলো যাহা কুড়াইয়া লহিবে তাহা
মোর তরে লুটাইবে তা নিশিথে" - এই তো দাদা এইটুকুই ।
- বাহ, আর আছে...... ? নাকি এই চার লাইনই লিখেছো?
- আপাতত এই চার লাইনই । আরেকটা কবিতা বেশ কয়েকটা লাইনও মাথায় খেলছে ।
- বাহ, আরও একটা !!! তুমি দেখছি মারাত্মক কবি হয়ে গেছো । কি কবিতা ?
- বৌদিকে নিয়ে একটা কবিতা ।
- থাক, থাক বাপু, এইটা শোনানোর দরকার নেই । অন্য আরেকদিন শুনবো, কবিতা লেখা শেষ হওয়ার পর । আজ তাহলে উঠি । সন্ধ্যার আগে বাড়ি না পৌঁছালে তোমার বৌদি বলেছে খবরই আছে ।
- মিথ্যা বলছেন কেন দাদা ? বৌদি তো এরকম বলতেই পারে না ।
- তোমরা এখনও তোমাদের বৌদিকে চিনতেই পারোনি । যাই হোক, ভালো থেকো, আজ তাহলে গেলাম ।

দাদাবাবু বৌদি প্রসঙ্গ আসতেই বরাবরের মত মজলিশ ছেড়ে ভাগলেন । সুনীলের সাথে সাথে অন্য ছেলেগুলোও হাসছে দাদাবাবুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে । ওদিকে সুনীল ভাবছে, দাদাবাবুকে তো দিব্যি বলা হলো বৌদিকে নিয়ে কবিতার কথা, এখন তো সেটা নিয়ে ভাবতে হবে । পরে যদি সত্যি সত্যি কবিতাটা শুনতে চান......

পর্ব - ৫

এবারের কথোপকথন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ চুরি সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে । একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ১০ লক্ষ ডলার পরিমাণ অর্থ চুরি করে সরিয়ে নেওয়া হবে, আর সেটা নিয়ে কোন কাহিনী হবে না, তা কি হয় ? তবে এদের কথাবার্তার শেষ কিন্তু ঐ বৌদিকে নিয়েই । পড়ুন তাইলে......



- হ্যালো সুনীল, আছো কেমন ?
- হ্যাঁ, দাদা । ভালোই আছি । আপনি কই ? অনেকদিন আপনাকে দেখি না । এদিকে আসবেন-টাসবেন না নাকি ?
- আরে, আমি তো সেই জন্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি । তুমি আছো ওখানে ? তাইলে আমি আসছি ।
- হ্যাঁ, দাদা, আছি । ছেলে-পেলেগুলোও আছে । আপনি আসেন ।

সুনীলের সাথে এতটুকু কথা বলেই ফোন রেখে দেয় দাদাবাবু । দাদাবাবু চাকরী করেন অগ্রণী ব্যাংকে । সরকারী চাকরী বলে কথা, ইচ্ছেমত যান আবার হুট করে হয়তো বেরিয়েও আসেন । তবে ইদানিং একটি বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত । এখন তার খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে । একা একা খেতে ভালো লাগবে না ভেবেই তিনি সুনীলকে ফোন দিয়েছেন । ছেলেগুলো আসলে খুব মিশুক ।

- আরে, দাদা, এসেছেন ? আছেন কেমন ?
- ভালো নেই সুনীল । একেবারেই ভালো নেই ।
- কেন দাদা ? (দাদাবাবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে সুনীল মনে মনে ভাবলো, আবার বৌদির কি কিছু হয়েছে)
- কেন তুমি জানো না ? দেশের সকল মানুষই তো জানে ।
- (দাদাবাবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে সুনীল এতটুকু আশ্বস্ত হলো, যাক বৌদির কিছু হয়নি) কি হয়েছে দাদা ? একটু খুলে তো বলবেন ।
- আরে দেশ থেকে যে ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা চুরি হয়ে গেলো, তুমি শোনো নি ?
- হুম, শুনেছি তো । কিন্তু দাদা, দেশে এত পুলিশ-র‍্যাব-আর্মি থাকতে এটা হলো কি করে ?
- আরে ধুর, এ তো হ্যাকিং হয়েছে, এখানে পুলিশ-র‍্যাব-আর্মির কিছুই করার নেই ।
- যা শালা, এই হ্যাকিং জিনিসটা আবার কি দাদা ?
- কি জানি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাকি চুরি । আমিও ব্যাপারটা ভালো করে জানি না । যাই হোক, ব্যাংক থেকে এখন হেব্বি প্রেশার দিচ্ছে । কিভাবে ব্র্যান্ডিং বাড়াতে হবে, কিভাবে একাউন্ট আরও খোলা যায়, কিভাবে লোকজনকে আরও ব্যাংকিং খাতের উপর বিশ্বস্ত করে তোলা যায় ইত্যাদি নিয়ে চাকরীতে সেই প্রেশার । লোকজন তো এখন ব্যাংকে টাকা রাখতেই একরকম ভয় পাছে, বুঝলা না ?
- হুম, সে তো হওয়ারই কথা দাদা । এটাই তো স্বাভাবিক । তা দাদা, আমাদের বৌদিকে আবার এসব নিয়ে টেনশন দিচ্ছেন না তো ?
- তোমাদের বৌদিকে এসব নিয়ে টেনশন কেন দেবো ? এমনিতেই তো আমি তার আবদার মিটিয়ে পারি না ।
- কি বলেন দাদা ? বৌদির আবার কি আবদার ? আপনি না পারলে আমাদের তো বলতে পারেন । আমরা আছি কোন দিনের জন্য ?
- ধুর, বাপু, বাজে বকো না তো । তোমাদের কষ্ট দিতে যাবো কেন ?
- কি যে বলেন, দাদা, বৌদির জন্য এই কষ্ট কোন কষ্ট হলো ?
- নাহ, তোমাদের নিয়ে আর পারি না । ভাবলাম, একা একা সিগারেট খাওয়ার চেয়ে একটু তোমাদের সাথে নিয়ে খাই, তাও শান্তি নেই । আমি বরং যাই ।
- যাবার আগে একটা কথা তো বলে যান দাদা......
- কি কথা ?
- ঐ টাকা কি আদৌ উদ্ধার হবে ?
- ২০০ কোটি টাকার মত উদ্ধার তো হয়েছে, দেখা যাক, বাকী টাকার ক্ষেত্রে কি হয়...... কিছুই বলা যাচ্ছে না এখন ।

এই বলেই দাদাবাবু প্রস্থান করলেন । লোকটা বউয়ের প্রশংসা কেউ করুক, এটা শুনতেই পারেন না । ওদিকে সুনীল নিচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে কামড়াতে লাগলো । সে যখন অতিরিক্ত চিন্তায় পড়ে যায়, তখন ওর এমনটা হয় । ৬০০ কোটি টাকা, এতোগুলো টাকা, কম তো নয় । আদৌ কি উদ্ধার হবে এতোগুলো টাকা ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

শামীম সরদার নিশু বলেছেন: অনেক লম্বা।
শোকেসে রাখলাম আস্তে আস্তে পড়ে নিব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.