নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিলান ও ছবির গল্প - সিরিজ গল্পের শুরু থেকে উপাখ্যান, শেষ হইয়াও হবে নাকো শেষ...

১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:২৪

১.
- তোমার হাতটা একটু ধরি ?

মিলানের কথায় ছবি একটু ধাক্কামত খেলো । মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে ছবি মিলানকে যতটুকু চিনেছে, সেখানে ছেলেটির পক্ষে হাত ধরার ব্যাপারটা অনেকটা অবাক হওয়ার মত । ছবি আর মিলান এখন যেখানটা বসে আছে, সেটা পার্কের এক কোণায় । ছবির খুব পরিচিত একটা জায়গা কিন্তু মিলানের জন্য নতুন জায়গাটা । ছবির বন্ধুরা কয়েকজন আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে, সম্ভবত ওরা মিলানকে ছবির সাথে দেখতে পেয়েছে । বন্ধুদের কাজই তো আরেক বন্ধুর বিষয় নিয়ে মজা করা । ছবির সাথেও মজার পর্ব চলছে মিলানের সাথে পরিচয় হওয়ার পর এক বন্ধকে কথায় কথায় বলার পর থেকে । আশেপাশে ভালো করে একবার তাকিয়ে ছবি মিলানের দিকে তাকালো ।

- কি হলো, দেবে না হাতটা ?

ছবি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো, না, সে হাতটা দেবে না । মিলান একটু মন খারাপ করে পাশে তাকাতেই ছবি ফিক করে হেসে দিলো । আর কি !! মিলানের মনটা গলে গেলো । এই মেয়েটাকে হাসতে দেখা মিলানের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি এই মুহূর্তে । হাত না ধরতে পারায় যতটুকু মন খারাপ হয়েছিল এতক্ষণ মিলানের, এখন কেন জানি সেই মন খারাপ লাগাটুকু কাজ করছে না ।

- কি ব্যাপার, হাত না দিয়ে আবার হাসো কেন ?

মিলান দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করলো ছবিকে । ছবি উত্তর করলো, এমনিতেই, কিছু না । এই দুষ্টুমির ব্যাপারটাই অনেক উপভোগ করছে মিলান । আচ্ছা, মেয়েটার সাথে পরিচয়ের ব্যাপারটাও অনেকটা অদ্ভুত । কেমন জানি, বললে কেউ বিশ্বাসই করবে না । তবে সেটা একটা লম্বা ইতিহাসও বটে । সেই কথা মনে করে এখনকার সুন্দর মুহূর্তটুকুকে নষ্ট করতে চাইছে না মিলান ।

- কি ব্যাপার, কি চিন্তা করেন ?

ছবির প্রশ্নটাই কেমন জানি চিন্তার জগত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো মিলানকে । মিলানের ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে গেলো ।

- উহু, কিছু না । কিছু খাবে ? চলো, কোথাও বসে কিছু খেতে খেতে গল্প করি ।

কমপক্ষে এসির বাতাস কিংবা ফ্যানের বাতাস খেতে খেতে তো গল্প করা যাবে । গরমে বসে বসে ঘামের চেয়ে সেটা ঢের উত্তম । মিলানের প্রস্তাবে ছবি রাজী হলো । ফলাফল, তারা পার্ক থেকে বেরিয়ে ভালো একটা বসার জায়গা খুঁজতে লাগলো ।

২.

ছবি তার হাতটা মিলানের হাতে দিতেই মিলান অনেকটা শক্ত করে হাতটা ধরলো যেন তার হাত থেকে ছবির হাতটা কোনভাবেই ছুটে না যায় । ছবি অবশ্য বিষয়টা টেরই পায়নি । তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন নদীর দিকে আর দূরের অনেক অনেক লাইটসের দিকে । মিলান আর ছবি নৌকা ভ্রমণে বেরিয়েছে, অবশ্য একা না, আশেপাশে অনেক লোকজন আছে । সন্ধ্যার পর নদীর চারপাশ খুব শান্ত হয়ে যায় । নদীর ধীরলয়ের ঢেউগুলো তখন যেন গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করে । অনেক অস্পষ্ট সেই গান কেউই বুঝতে পারে না, শুধু চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করতে পারে সেই গানের মাধুর্য ।

- অনেক সুন্দর না চারপাশটা ? আমি না কখনই রাতের বেলা এরকম নদীর পারে এসে দাড়াইনি । কখনও রাতের বেলা নৌকাতে উঠিনি । বিষয়গুলো আমার কাছে এখনও স্বপ্নের মত লাগছে । দেখেন দেখেন, ঐ যে দূরে ব্রীজের গা ঘেঁষে ভিড় করা আলোর মিছিলগুলো কেমন মায়াবী না ?

মিলান ছবির করা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না । নদীর দিকে তার মনোযোগটা কমই বরং ছবির দিকে তার মনোযোগটুকু বেশি । মেয়েটা কেমন জানি শিশুসুলভ আচরণ করছে সেই শেষ বিকেল থেকেই । এমন না যে তাকে জোর করে আনা হয়েছে কিংবা এমন কিছু বলা হয়েছে যার কারণে মন খারাপ করে মেয়েটা এখানে এসেছে কিন্তু সেই ঘণ্টা দুয়েক ধরেই মেয়েটা আনমনে বলেই চলেছে, ইশ, কত দেরী হয়ে যাচ্ছে । বাড়ির লোকজন চিন্তা করবে, আমার আসলেই এখানে আসাটা উচিৎ হয়নি । মিলান ছবির এই কথাগুলো প্রথম দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেও এখন আর শুনছে না । অনেকটা কথা পাশ কাটিয়ে দেবার মত । মিলানের মনে হলো, এখন একটা গান গাইলে কেমন হয় । সে নদীর দিকে তাকিয়েই হঠাৎ গুনগুন করে গান ধরলো । ছবি এতক্ষণ নদীর দিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল কিন্তু মিলানের গুনগুন করা গান শুনে চারপাশ ভুলে মিলানের দিকেই দৃষ্টি চলে গেলো ছবির ।

- কি গান গাচ্ছেন ? একটু জোরে গান । আমিও শুনি ।
- কি যে বলো না !! আমার মত বেসুরোদের কাছ থেকে আবার গান শোনার আবদার !! জোরে গাইলে আশেপাশের মানুষ নৌকা থেকে হয় নদীতে লাফ দেবে নয়তো ঘুরে সবাই মিলে গণপিটুনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে । তখন কেমন হবে, বলো তো ?
- ভালো হবে তো । অনেক মজা হবে ।

ছবির মুখে এই কথা শুনে মিলান কিঞ্চিৎ বিরক্তি প্রকাশ করে উল্টো দিকে তাকাতেই মিলানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছবি ফিক করে হেসে দিলো । আবারও সেই হাসি !! আচ্ছা, মেয়েটা কি সত্যি মিলানকে পাগল করার ফন্দি এঁটেছে ? মিলান মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে । এই মেয়েটার সাথে পরিচয় হওয়ার পর সবকিছুই তো তার স্বপ্নের মতই লাগছে । মিলান নিজের গায়েই সামান্য চিমটি কেটে নিলো । উহু !! ব্যাথা করলো তো, তার মানে এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব । অনেক মধুর আর স্বপ্নিল বাস্তব ।

৩.

- আমার কাছে না সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত লাগছে ।
- মানে ?
- এই যে হঠাৎ পরিচয় । এরপর শখের বশে দেখা করতে আসা । দেখা করতে এসেই যেন মোহে আটকে পড়া । তারপর থেকেই পরপর দেখা করা, তবু মনে অতৃপ্তি থেকে যাওয়া । এরপর বাসায় যাওয়া, সেখানেও পূর্বে যা হয়নি, সেরকম হওয়া, আপনার কথা স্মরণ করা । এসব কি আদৌ বাস্তব ?

ছবির কথাগুলো শুনে মিলান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ছবির দিকে তাকালো । তারপর আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকালো । মিলান ভাবছে, ছবির করা প্রশ্নের উত্তর কি সে মজা করে দেবে নাকি সিরিয়াস হয়ে । মজা করে দিলে উত্তরটা হতো এরকম যে,

- কি ছবি, something something নাকি ?

অনেকটা উত্তরের বদলে আরেকটি প্রশ্ন । আর নতুন করা প্রশ্নের উত্তরে ছবি কিছুই বলতো না, খালি একটুখানি ফিক করে হেসে দিতো । আর পরিবেশটাও বেশ হালকা হয়ে যেতো কিন্তু না, মিলান সিরিয়াস হয়েই উত্তর করলো,

- দেখো, ছবি । আমার ফিলিংসের ব্যাপারটা তোমাকে আগেই জানিয়েছি, তুমি জানতে আমাদের মধ্যে কিছু শুরু হলে সেটা কোন দিকে গড়াবে । বিষয়গুলো শুরুও কিন্তু তোমাকে জোর করে করা হয়নি । তুমি সবই জানতে । কিন্তু তুমি লুকোচুরি খেলতে চেয়েছিলে । অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তুমি প্রশ্রয় দিয়েছিলে । আজ তুমিই যদি এই কথাগুলো বলো, তাহলে আমাদের মধ্যবর্তী অবস্থান কিন্তু আরও জটিলতর হবে, এটা কি তুমি জানো ?

মিলানের করা প্রশ্নের উত্তর কি ছবির কাছে আছে ? হয়তো আছে কিন্তু ছবি উত্তর দিতে চায় না । সে চায় মজাটুকু থাকুক, সম্পর্কের পরিণতি ভাবার সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টুকু এখনও আসেনি । বিষয়গুলো কখনই জটিল করার ইচ্ছা ছবির ছিল না বরং মজা আর সহজতর করে সম্পর্কটা সাজাতে চেয়েছিল ছবি কিন্তু মিলানকে কিছুই বুঝতে দেইনি সে । তারা দুইজনে হাঁটছে, আনমনে, পাশাপাশি । খোলা রাস্তার কোলাহল, ধূলিযুক্ত অবস্থা, রাস্তার পাশের ব্যস্ততা কিছুই তাদের ছুঁতে পারছে না । মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে এখন দুইটাই মাত্র মানুষ । মিলান আর ছবি । আর তাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে অসংখ্য না বলা কথা-প্রশ্ন । যেগুলোর উত্তর মিলান আর ছবির কাছে আছে কিন্তু পৃথক পৃথক । এমন সম্পর্কই কি তারা চেয়েছিল ? যেই সম্পর্কে বিশ্বাসটুকু নেই, সেটা আবার কিসের সম্পর্ক !! এই কথাটা মিলানও জানে, ছবিও জানে কিন্তু তাদের জানার পথটুকু কোথায় গিয়ে মিলিত হয়েছে, সেটা তাদের কেউই জানে না ।

৪.

- তুমি একবার ভেবে নাও তবুও ।

হঠাৎ-ই ছবি এই কথাটি বললো মিলান কে । হ্যাঁ, তাদের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে একটু ঘনিষ্ঠ । সম্বোধনও "আপনি" থেকে "তুমি" হয়েছে । ছবির কথা ধরতে না পেরে, মিলান জিজ্ঞাসা করলো,

- কি নিয়ে ভাববো ?
- এই যে, আমরা যে স্পেশাল সময়গুলো কাটাচ্ছি, সেগুলো তোমার ক্ষণিকের ঝলক না তো ?
- মানে ?
- এই যে, আজকে তুমি আগ বাড়িয়ে এলে, ভালো লাগার কথা বললে । আমি তোমাকে এও বললাম যে আমার লাইফে অন্য একজন আছে । তবু তুমি কিছুই মানলে না । আমাকে নিয়ে যেন হারিয়ে গেলে একেবারে স্বপ্নের দুনিয়ায় । যেই দুনিয়ায় নিজেকে রাজা বানালে আর আমি না চাইতেও রানী হয়ে গেলাম ।

ছবির কথা থামার আগেই যেন মিলানের শরীরে একটু ঝটকা লেগে গেলো । কি বললো মেয়েটা ? নিজেকে কি স্বপ্নের দুনিয়ার রানী বললো মেয়েটা ? তাহলে কি অবশেষে... !! এতদিনের চাওয়া কি অবশেষে পূরণ হওয়ার পথে মিলানের ? ছবির মত ঘুরিয়ে কথা বলার ইচ্ছা নেই এখন মিলানের । সে এখন আসল কথাটাই শুনতে চায় ছবির মুখ থেকে । কিন্তু মেয়েরা কি মুখ ফুটে এই কথাগুলো আগ বাড়িয়ে বলে কখনও !! ছবি কি ব্যতিক্রম হবে ?

- তার মানে তুমি বলতে চাইছো...... !!
- দেখো, তোমার সাথে দেখা করার আগে, তোমার সাথে সময় কাটানোর আগে, তোমার কথাগুলো শুনার আর বুঝার আগে আমি কখনই সিরিয়াস ছিলাম না কোনকিছুতেই । আমার লাইফটা একটু এলোমেলো, অদ্ভুত । আমি এই লাইফ নিয়ে কখনই সিরিয়াস হয়ে কিছু ভাবিনি । বাড়ির ছোট মেয়ে হওয়ার সুবাদে কখনই একটা জিনিস একবারের চাইতে বেশি চাওয়া লাগিনি । আমার লাইফে কখনই দুঃখের কোন ছায়া পড়েনি । আমি ভালো করে কখনও চোখের পানি ফেলিনি । আজকে তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাকে অভয় দিচ্ছে, সাহস দিচ্ছে আর লাইফে সিরিয়াস হওয়ার তাড়না যোগাচ্ছে । কিন্তু ভয় হচ্ছে । এই আনন্দটুকু ফিকে হয়ে যাবে না তো ? আজকে যেভাবে তুমি আমাকে সময় দিচ্ছ, এটা কমে যাবে না তো ? সারাদিন আমাকে পাওয়ার তাড়না শেষ হয়ে যাওয়ার পর তোমার আগ্রহ কমে যাবে না তো ? ভাবো, তুমি, ভালো করে ভাবো ।

ছবির কথাগুলো শুনতে হয়তো একটু খারাপ লাগছে কিন্তু কথাগুলো অনেকটা বাস্তব । এতকিছু ভেবে হয়তো মিলান ছবিকে পছন্দ করেনি । জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে দেখে ভালো লাগা, পিছনে লেগে থাকার তাড়না, মেয়েটির কথা বলার ধরন, আচরণের মোহে পড়ে সেই যে পিছনে লাগা, এতকিছুর পিছনে কোন কারণ কি ছিল ? মিলান জানে, না, ছিল না । কিন্তু আজকে মেয়েটা এতটা সিরিয়াস হওয়ার তাড়না দিচ্ছে । মেয়েটার কথাও তো ফেলার মত না । আসলেই কি পারবে সিরিয়াস হতে ? রিলেশনে যাওয়ার পর পুরো দায়িত্ব নিজের কাধে নিতে ? ভবিষ্যতের অনেক দূরের পথের চিন্তা করতে ? মিলান উপরে তাকালো । আপাত দৃষ্টিতে মিলান উপরে তাকিয়ে আছে বলে মনে হলেও তার দৃষ্টি শুন্যে, যাকে আবার অসহায় দৃষ্টিও বলা চলে ।

৫.

- চলো, কোথাও নিরিবিলি যেয়ে বসি ।

আজও মিলান আর ছবি ঘুরতে বেরিয়েছে । তাদের একসাথে দুইজনের ঘুরতে বেরুনো অনেকটা প্রাত্তাহিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদিও এটা মিলানের এক প্রকার পাগলামির জন্যই ঘটছে কিন্তু ছবিরও ভালো লাগছে মিলানের এই পাগলামিগুলো, কেন জানি ।
মিলানের কোথাও বসতে চাওয়ার প্রস্তাবে ছবি রাজী হয় । তাদের প্রথম দেখা হওয়া পার্কটিতে সন্ধ্যার পর অনেক লোকজন যায়, আজকে তারা আবার গেলো । যেখানে যেয়ে এক জায়গায় ফাঁকা দেখে ছবি আর মিলান বসলো । জায়গাটা একটু অন্ধকার । আলো আধারি মুহূর্তগুলো ভালো লাগার ফিলিংসগুলো অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয় । হয়তো এই কারণেই সেখানে বসা । পাশেই ঘাস থেকে ছোট্ট একটা ফুল ছিঁড়ে ছবি মিলানের হাতে দিলো । মিলান ফুলটি নিয়ে কি করবে কিছুক্ষণ ভেবে হঠাৎ ফুলটিকে আংটির মত করে ছবির আঙ্গুলের ফাঁকে গুঁজে দিলো । সত্যিই, মনে হচ্ছে মেয়েটা একটা আংটি পড়ে আছে ।

- যাও, তোমার আর আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়েই গেলো !!

মিলান এই কথা বলতেই দুইজনে মিলেই হেসে ফেললো । এরপ ঘাসের আরও কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে ছবি এদিক ওদিক তাকিয়ে দড়ি খুঁজতে লাগলো । উদ্দেশ্য ফুলগুলোলে একজায়গায় বাঁধা । কিছুক্ষণ পর কিভাবে যেন দড়ি ম্যানেজ করে ফেললো ছবি আর বেঁধে ফেললো ফুলগুলো । এরপর যেই কাজটা করলো, তার জন্য মিলান প্রস্তুত ছিল না একেবারেই । ছবি মিলানকে ফুলগুলো দিলো । কিন্তু মিলান ফুলগুলো হাতে নিলো না ।

- উহু , হবে না । ফুলগুলো দিতে চাইলে, সাথে মুখে কিছু বলতে হবে ।
- ও মা, আমি আবার কি বলবো ?
- যা ইচ্ছা । বলতে পারো, এই ফুলগুলো শুধু তোমারই জন্য । অথবা এই বদমাইশ ছেলে, এই ফুলগুলো নাও । অথবা এই বজ্জাত ছেলে, ফুলগুলো হাতে নিয়ে ফেলে দাও ইত্যাদি ।

মিলানের কথা শুনে ছবি কি যেন একটা ভাবলো বেশ অনেকক্ষণ ধরে । এরপর প্রায় কিছু একটা বলতে গিয়ে হেসে দিলো । মিলান বুঝতে পারলো না এই হাসার পিছনে কারণটা কি । মিলানের দেওয়া শর্ত মানলো না ছবি, কিছু না বলেই ফুলগুলো মিলানের দিকে ছুঁড়ে মারলো ছবি ।

মিলান বুঝলো না কিন্তু ছবির অবস্থা এদিকে সঙ্গিন । তো সে প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল, মিলানকে সে তার ভালোবাসার কথাটি আজই বলে ফেলবে । কিন্তু জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত অনেক ভেবেচিন্তে নিতে হয় । তাই তো ছবিও প্রথমে I LOVE YOU বলবে ভেবেও আর বললো না । ছুঁড়েই যেহেতু দিয়েছে, কি আর করার !! মিলান ফুলগুলো হাতে নিলো । হোক না, রাস্তার এক কোণার ঘাসের পাশে ধরেছে ফুলগুলো কিন্তু এই ফুলগুলো তো ছবি তাকে দিয়েছে, তাই এই ফুলগুলোর মূল্য এখন মিলানের কাছে অনেক বেশি । মিলান মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, এই ফুলগুলোকে রেখে দেবে নিজের কাছে, পারলে সারাজীবনের জন্য ।

৬.

হঠাৎ মোবাইল হাতে নিয়ে মিলান দেখতে পেলো ১২ টি মিস কল । এতগুলা মিসকল দেখেই সে অবাক হয়ে গেলো । কি দিতে পারে এতগুলা মিসকল !! হ্যাঁ, ছবি । তাই বলে ১২টি !! যে মেয়েটা নিজেই ফোন দিলে বেশিরভাগ সময় ধরতে চায় না, আজকে সে-ই কিনা নিজে ১২ বার কল !! মিলানের অবাক হওয়ার ব্যাপারটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগলো । মিলান মেলায় এসেছে, তার ক্যাম্পাসের বৈশাখী মেলায় । হ্যাঁ, আজকে পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন । বাঙালি সংস্কৃতির অনেক আনন্দের দিন । বন্ধুদের আড্ডায় এতটাই ব্যস্ত ছিল মিলান যে ছবি যে তাকে এতবার করে কল দিচ্ছে সেটাই টের পায়নি সে । কিন্তু ছবির এতবার কল দেবারই বা উদ্দেশ্য কি !! জানার জন্য মিলান ছবিকে কল ব্যাক করলো । না, কল টা ধরলোই না মেয়েটা । কি ব্যাপার, আবার রাগ করলো না তো ? মিলান আরও ২-৩ বার ট্রাই করলো কিন্তু নাহ, কোনবারই ফোনটা ধরলো না মেয়েটা । মিলান কিছুটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে আবার আড্ডায় শরীক হয়ে গেলো ।

তারও প্রায় আধা ঘণ্টা পর মিলানের মোবাইল মেসেজ, ছবির মোবাইল থেকে । "তোমার ক্যাম্পাসের মেলায় এসেছিলাম কিন্তু মানুষজন তো অনেক ব্যস্ত । ঠিক আছে, আমি চললাম । পরে যেন কেউ না বলে, তার এত করে বলার পরও আমি আসিনি" । মেসেজটা পড়ার পরই মিলান ফিক করে হেসে ফেললো । তার মানে ছবি তার ক্যাম্পাসে ? মিলানের মনে হলো হঠাৎ আনন্দে সে একটা চিৎকার দেয় । কিন্তু নাহ, আশেপাশে অনেক মানুষ । চিৎকার দিলে তাকে পাগল ভাবার সম্ভাবনা অনেক । মিলান কিছুক্ষণ চিন্তা করে ছবিকে কল দিলো । অবশেষে মেয়েটা ফোনটা ধরলো ।

- কোথায় তুমি ?
- আমি চলে যাচ্ছি । তোমার ক্যাম্পাসে এসেছিলাম কিন্তু পরিচিত কাউকেই তো পেলাম না । ভালো লাগছে না । তাই চলে যাচ্ছি ।
- ইয়ার্কি করো নাকি তুমি ? এই মুহূর্তে কোথায় তাই একবার বলো ।
- কেন, বললে কি হবে ?
- কিছু না । এমনিতেই জিজ্ঞেস করছি, কোথায় তুমি ?
- এমনিতে জিজ্ঞেস করলে যদি আমি এমনিতে উত্তর না দেই ?
- দেখো, ছবি, প্লিজ বলো না, কোথায় তুমি ?
- তোমার ক্যাম্পাসের মেইন গেটে । কিন্তু তুমি এখন দৌড়ে আসলেও লাভ নেই । আমি এখনই চলে যাবো । খুঁজে পাবে না আমাকে ।

মিলান আর কিছু না বলে ফোনটা রেখেই দৌড় লাগালো তার ক্যাম্পাসের মেইন গেটের দিকে । বন্ধুদের আড্ডা, ক্যাম্পাসের এত জনসমাগম কিংবা এত এত উৎসব, অনুষ্ঠান কিছুই আর তাকে টানছে না । তার ভালোলাগার, ভালোবাসার মানুষটার এরকম সারপ্রাইজ তার মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলেছে পুরোটুকুই । আচ্ছা, মেয়েটা কি সত্যিই পাগল ? মিলান দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে মেইন গেটের সামনে গিয়ে দেখলো, একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে শুধু তার জন্যই । হ্যাঁ, মেয়েটা ছবিই । মিলান দৌড় থেমে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো । ছবি কিছুক্ষণ কপট রাগ দেখিয়ে সেও মিলানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো । হাজার হলেও উদযাপনগুলো প্রিয়জনদের সাথেই ভালো হয় । প্রিয়জন ছাড়া আবার কিসের উৎসব ? কিসের উদযাপন ?

৭.

হন্তদন্ত হয়েই হাসপাতালে ঢুকলো ছবি । আশেপাশের কাউকে ভ্রূক্ষেপ না করে একেবারে মিলানের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো । মিলান অবশ্য ছবির এমন আচরণ আশা করেনি । মিলানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছবি বলতে লাগলো,

- কি হয়েছে তোমার ? কি ভাবে হলো ? দেখে সাইকেল চালাতে পারো না ? কি ভাবছিলে উল্টাপাল্টা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ? এখন তো হাতের উপর দিয়ে সামান্য প্যাড়া গেলো কিন্তু যদি বেশিকিছু হয়ে যেতো ? যদি প্রাণটাই যেতো ? কারও কথা ভাবতে চাও না, তাই না ? তোমার কিছু হলে আমার কি হতো ? এটা কি ভেবে দেখেছো ? নাকি এখানেও তোমার হেঁয়ালিপনা ?
প্রায় এক নিঃশ্বাসেই কথাগুলো বলে গেলো ছবি । মেয়েটা হাঁপাচ্ছে, ভালো পরিমাণেই । এক পলক ছবিকে দেখে মিলানেরই ভয় ধরে গেলো । ও মা, মেয়েটা আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে না তো !! কিন্তু মিলানের বিছানার পাশেই মিলানের মা আর মিলানের এক চাচা বসে ছিল, এই বিষয়টা ছবি একেবারেই খেয়াল করেনি এতক্ষণ । ওদিকে মিলানও সরাসরি বলতে পারছে না । মিলান ইচ্ছা করে কাশি দিয়ে ছবির মনোযোগ ঘুরানোর চেষ্ঠা করতেই ছবি আবারও বলে উঠলো,

- কি ব্যাপার, কাশিও বাঁধিয়েছ ? বাহ, আর কিছু ? আচ্ছা, কবে থেকে নিজের শরীরের প্রতি যত্নটা নেওয়া শুরু করবা, একবার বলো তো...

অবস্থা বেগতিক আর ছবির বেখেয়ালি মনোভাব বুঝতে পেরে মিলান এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে মা কে বললো,

- মা, ও ছবি । আমার বান্ধবী । তুমি মনে হয় ওকে কোনদিন দেখোনি !!!

মিলানের মা একটা ছোট্ট করে মুচকি হেসে বললো,

- তোর বান্ধবীর মনে হয় তোকে নিয়ে চিন্তা অনেক । এক কাজ কর, আমি আর তোর চাচা একটু বাইরে যাচ্ছি, তোরা কথা বল ।
এতক্ষণ মিলানের মা যে মিলানের পাশে বসে ছিল, এটা এতপরে বুঝতে পেরে ছবি নিজের জিহ্বাতে কামড় দিলো । ইশ, কি লজ্জা !! মিলানের মায়ের সামনেই এতকিছু করা হয়ে গেছে অথচ মিলান তো ছবির ব্যাপারে তার মা কে কিছুই জানায়নি । ছবি মিলানের মা কে সালাম দিলো । ঘটনার আকস্মিকতায় মিলান অনেকটা নীরব হয়ে গেছে । ছবিও বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিৎ !! মিলানের মা অবশ্য সবই বুঝতে পেরেছে । ছেলের সাথে এই ব্যাপারে পরে কথা বলা যাবে, এই চিন্তা করে মিলানের চাচাকে নিয়ে হাসপাতালের রুমের বাইরে চলে গেলো মিলানের মা । মা চলে যেতেই ছবি আর মিলান দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো । তাহলে এতদিনে, বাসায় জানানোর সময় চলে এসেছে !! ওদিকে মিলান আবার ভাবতে লাগলো মা সবকিছু ভালোভাবে নেবে তো !!

৮.

- একটা গান গাও না ?
- আবার ?
- আবার !! মানে ?
- তুমি কি চাও আশেপাশের মানুষগুলো সব দৌড়ে পালাক ?
- পালালে তো ভালোই হবে । তুমি আর আমি একাকী কিছু সময় পেয়ে যাবো । একে অন্যের সাথে গল্প
করবো, হাসবো, খুনসুটি করবো - আরও কত কি ।
- তাহলে এর জন্য আমার গান গাবার দরকার কি ? এর থেকে নিরিবিলি কোথাও গেলেই তো হয় ।
- না, এমনিতে আমার খুব গান শুনতে ইচ্ছে করছে । তোমার কাছ থেকে, তুমিই গাইবে ।

ছবির আবদারগুলো ছেলেমানুষি টাইপের । মিলান যতই না করবে, মেয়েটার ছেলেমানুষি আবদার ধীরে ধীরে কপট রাগে পরিণত হবে, সেই রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে আবার অতিরিক্ত পনেরো-বিশ মিনিট তো লাগবেই । এর থেকে গান গেয়ে ফেলাটাই ভালো । মিলান চোখ বন্ধ করে গান ধরলো, "মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের মানুষেরই সনে" । বেশ খানিকক্ষণ গাওয়ার পর মিলান থেমে গেলো, চোখ খুলেই ছবির দিকে তাকালো । মেয়েটা এতক্ষণ খুব মজা করেই গানটি শুনছিল । আচ্ছা মেয়েটা কি বুঝছে মিলন কার সাথে হওয়ার জন্য মিলান এই গানটা ধরেছে ? হয়তো বুঝেছে, হয়তো না । হঠাৎ ভাবতেই ভাবতেই মিলান হেসে দিলো । হঠাৎ মিলানের হাসি দেখে ছবি অবাক হয়ে গেলো ।

- ও মা, পাগলের মত হঠাৎ হেসে দিলা কেন ?
- না, ভাবছি, মায়ের কথাটা ।
- ওহ, তাই তো । আমি তো ভুলেই গেছিলাম । তোমার মা শেষমেশ কি বললেন ?
- সে তো এক লম্বা ইতিহাস । তাও সংক্ষেপে বলি শোনো, হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর প্রথম যেদিন বাসায় পৌঁছালাম সেদিন দেখি মা আশেপাশে বেশ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন । আমি বুঝতে না পেরে মা কে জিজ্ঞেস করলাম, "কি খুঁজো ?" মা বললেন, "একাই এসেছো ? বান্ধবী আসেনি সাথে ?" মা এই কথা বলার পরপর আমার বেশ হাসি পেয়ে গেলো । মা-ছেলে দুইজনই বেশ প্রাণখুলে হাসলাম ।
- এরপর ?
- এরপর আর কি !! মা কে বলে দিলাম পুরোটা ।
- ও মা, পুরোটা মানে ? কি বলেছো তুমি অ্যান্টিকে ?
- তুমি কি মনে করেছো, আমি ভয় পাই ?
- এ্যা, এসেছে আমার বীরপুরুষ !! তা তোমার আব্বুর কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি খবরটা এখনও ?
- ওরে বাবা !! আব্বু জানলে তো একটু প্রব্লেম হবেই । বেকার ছেলের আবার প্রেম !! বাড়ি থেকে কান ধরেই তাড়িয়ে দেবে ।

এই কথা শোনা মাত্রই ছবি খিল খিল করে হেসে উঠলো । একনাগাড়ে হাস্সতেই লাগলো । কি হাসি মেয়েটার !! মিলান ছবির হাসির দিকে তাকিয়ে আছে । কি অপূর্ব ভাবে হাসে মেয়েটা !! আব্বু তাড়িয়ে দেওয়ার ভাবনাটা হয়তো এখনও মিলানের মনে আসেনি কিন্তু ছবিকে ছাড়া থাকার ভাবনাটা এসেছে । কি ভয়ংকর সে ভাবনা !! মিলান শিউরে উঠে আবারও । কি মধুর সময়গুলো কাটছে এখন !! স্বপ্ন নয়তো এগুলো ? যে স্বপ্ন ভাংলে হয়তো জীবনটাই তছনছ হয়ে যাবে । নাহ, মিলান চাই-ও না যে এই স্বপ্নটা ভেঙে যাক ।

৯.

মিলান সকাল ধরেই বেশ টেনশনে আছে । এতবার করে ফোন দিলেও ছবি ফোন ধরছে না । গত বেশ কয়েকদিন ধরে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছবিকে ফোন দিয়ে কথা বলার মাধ্যমে দিনের শুরু হয় মিলানের । প্রথম প্রথম ছবিই মিলানকে বলেছিল, "এমন ছেলেমানুষি কেন করছো ?" মিলান উত্তরে কিছুই বলেনি, শুধু হেসেছিল । মেয়েটা কখনও কি বুঝবে তার এই ছোট ছোট ছেলেমানুষিগুলোই মিলানকে অত্যন্ত আনন্দ দেয় । কিন্তু আজকে ছবি মোটেও ফোনটা ধরছে না । সম্ভবত রাগ করেছে, মনে হচ্ছে কঠিন রাগ ।

ঘটনার সূত্রপাত আসলে গতকাল রাত থেকেই । গতকাল দুপুর থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবিকে অনলাইনে আসতে না দেখে মিলানের রাগ হয় । অনেক আশা করে ফেসবুকে বসে থাকা ছেলেটা সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আরেকটি ছেলেমানুষি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে যে আজকে আর সারারাতই ছবির সাথে কথা বলবো না, এমনকি ছবি বলতে চাইলেও না । ওদিকে সন্ধ্যার কিছুপর ছবি যখন অনলাইনে আসে তখন মিলান কিছু এলোমেলো কথা বলে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে যায় । মিলানের এরকম আকস্মিক আচরণ ছবিকে অত্যন্ত বিস্মিত করে কিন্তু কারও কাছ থেকে অবহেলাটুকু এই মেয়ে যে কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না । অনেকবার নক করার পরও যখন মিলান ফিরতি রিপ্লাই দেয় না, তখন থেকেই রাগের সূত্রপাত হয় । পরবর্তীতে প্রায় ঘণ্টা খানেক পর মিলান অবশ্য ফেসবুকে এসে ছবিকে সরি বলে কিন্তু এই সরিটুকু মন গলাতে পারে না ছবির । তাহলে এখন মিলানের কাছে উপায় ?

ছবি মেয়েটার সবকিছুই ভালো । সুন্দর করে কথা বলে, হাসে, খুনসুটি করে, দুষ্টুমি করে কিন্তু যত্তঅসব গণ্ডগোল তার এই রাগেই । রাগ হলে সে একেবারেই আলাদা মানুষ । ছবির রাগ হলে পৃথিবীর কোন মানুষকেই তার তখন ভালো লাগে না । এই মুহূর্তে যেমন মিলানকে ভালো লাগছে না । কিন্তু মিলান তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে, ফেসবুকে যেয়েও অসংখ্যবার সরিও বলেছে । তবু মেয়েটার রাগ ভাংছে না কেন ?

সকাল থেকে দুপুর আবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো । এই সময়ের মধ্যে মিলান কমপক্ষে ১০০ বারের চেয়ে বেশিবার ফোন দিয়ে ফেলেছে ছবি মেয়েটাকে কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই ফোন ধরছে না । ছবির এমন রাগটুকু মিলানের দুনিয়াটাকেই যেন উল্টে দিয়েছে । মিলানের কাছে সবকিছুই অস্থির লাগছে, কোন স্বাভাবিক কাজেও তার মনোযোগটুকু আসছে না । ছবির রাগ কি আদৌ ভাঙবে ? না ভাংলে তো মিলান নিজে থেকেই ভেঙে যাবে । আচ্ছা, মেয়েটা এমন অবুঝ কেন ? এত দুশ্চিন্তার পরও মিলানের হঠাৎ হাসি পেয়ে গেলো । একটি অবুঝ মেয়ের জন্য সে কিনা নিজের জীবনটাকেই অনেকাংশে বদলে ফেলেছে আর সেই মেয়েটিই কিনা রাগের মাথায় তাকে ভুলে গেছে !! মিলানের তো হাসি আসবেই, অন্য কিছু করার কি আদৌ জো আছে ?!!

১০.

- এই ছবি !! ছবি, কি ব্যাপার, শুনতে পাচ্ছ না ?

মিলানের পিছন দিক থেকে বারবার ডাকার পরও ছবি শুনতে না পেয়ে হাঁটতে লাগলো । ঝুম বৃষ্টি পড়ছে । ছবির হাতে ছাতা । বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মিলান একটি দোকানের সামনে আশ্রয় নিয়েছিল, অবশ্য সে ছবির জন্যই অপেক্ষা করছিল । ছবি সামনে দিয়ে চলে গেলো, এমনকি মিলান এতবার করে ডাকলো কিন্তু মেয়েটার কানেই ঢুকলো না । আজব তো !! অগত্যা মিলান বৃষ্টিতে ভিজেই ছবির পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো । অবশ্য মাত্র কয়েক সেকেন্ড জোরে হেঁটেই মিলান ছবিকে ধরে ফেললো ।

- কি ব্যাপার, শুনতে পাচ্ছ না ? সেই কতবার করে ডাকলাম ? নাকি আমাকে এই বৃষ্টিতে ভেজাতে চাচ্ছ ?

মিলানের ডাক সত্যিই সত্যিই শুনতে পায়নি ছবি । মিলানকে দেখে ছবি বেশ অবাক হলো কিন্তু একম একটা ভান করলো যেন তার তাড়াহুড়া অনেক । ছবির মাথার উপর ছাতা কিন্তু মিলান প্রায় ভিজে গেছে অনেকটা । মিলানের অনুরোধেই তারা দুইজনে আরেকটি বিল্ডিং এর সামনে আশ্রয় নিলো ।

- কি ব্যাপার, তুমি এখানে কেন ?
- কেন, মানে !! তোমার জন্য ।
- সে না হয় বুঝলাম । কিন্তু এরকম পাগলের মত বৃষ্টিতে ভিজছো কেন ? ঠাণ্ডা লেগে যায় যদি ?
- গেলে যাবে । হয়তো কেউ একজনকে পেয়েও যেতে পারি সেবা করার জন্য !!
- (মিলানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ছবি হাসতে হাসতেই বললো) ইশ !! বয়েই গেছে সেই একজনের ।

ছবি এই কথা বলতেই মিলান আর ছবি একসাথেই হেসে উঠলো । মিলানের ইচ্ছা করছে এই ঝুম বৃষ্টিতে ছবির হাতের ছাতাটা ফেলে দিয়ে ছবিকে হাত ধরে টেনে এনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু হঠাৎ কি মনে হওয়ায় মিলান নিজের ইচ্ছাটুকুকে দমন করলো । কিন্তু একটু পর ছবিই প্রস্তাব দিয়ে বসলো,

- ভিজবা ?

মিলানের মনের কথাটিই যেন বেরিয়ে এলো ছবির মুখ থেকে । মিলানকে আর ঢেকায় কে !! অমনি বিল্ডিং এর সামনের থেকে বেরিয়ে এসে খোলা রাস্তায় এসে হাঁটা শুরু করলো সে । একটু পর ছবিও । ভালোই বৃষ্টি, তাই রাস্তায় লোকজন নেই বললেও চলে । যারা আছে তারাও আশেপাশে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে বৃষ্টি থেকে না ভেজার জন্য । এই খালি রাস্তায় দুইটি ছেলে-মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে একসাথে । দেখার মত একটি দৃশ্য বটে !! মিলানের খুব ইচ্ছে করছে ছবির হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু এবারও সে ইচ্ছাটুকুকে দমন করলো । ছবি মেয়েটাকে কেমন জানি অনেক সময়ই অচেনা লাগে মিলানের কাছে । হঠাৎ করেই কেন জানি মনে হয়, এই মেয়েটাকে সে মোটেও চেনে না । অথচ এমনটা তো মোটেও হওয়ার কথা ছিল না । ;)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০১

মফস্বলের মেয়েটি বলেছেন: অনেক বড় গল্প। ধৈর্যে যেটুকু কুলালো পড়লাম।। ভালোই লিখেছেন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.