![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিম্মি বারবার আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে, আজ মনে হয় পড়া শিখেনি, তাই চুরি করার চেস্টায় আছে। সাধারণত সে পিচ্চি শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক টাইপ। বইয়ের পৃস্টা সুদ্ব মুখস্ত, তাই মাঝেমাঝে পড়া না শিখে চুরি করলে তাই কিছু বলিনা।একটু আকটু চুরি না করলে কি হয়?
_ স্যার, খাচ্ছেন না কেন? খাবার গুলা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো
_ সমস্যা নেই, তুমি পড়
প্রতিদিন নিম্মিকে পড়াতে ৭:০০ টায় আসি, আসার সাথে সাথেই নাস্তা হাজির হয়।নাস্তা খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু খাওয়া যাবে না। পকেটে টাকা নেই, রাতে ভাত খেতে পারব বলে মনে হয়না, এখন নাস্তা খেলে তারাতারি হজম হয়ে যাবে, তাই বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে খাওয়া ভাল হবে।
.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।
_ মামা বাদাম খাবেন?
_ দে, ২ টাকার দে
_ ২ টাকার বেচি না, ৫ টাকার নেন
_ যা ভাগ
আজকাল ২টাকার বাদামও নেই, সব দোষ ঐ প্রেমিক গুলার। শালারা রেস্টুরেন্ট না নিয়ে জি-এফ গুলারে বাদাম খাওয়ায়ে খাওয়ায়ে বাদামের দাম বাড়ায় ফেলছে, আরে বেটা টাকা না থাকলে প্রেম করতে যাস কেন? বাদাম খাওয়ায়ে প্রেম করতে আসিস কেন? প্রেম করবি রেস্টুরেন্টে বসে বসে। পকেট হাতায়ে দেখলাম, কোন পকেটে আর কোন টাকা নেই। যেই দুই টাকা আছে ওইটাও আমার না।
নিম্মির টেবিলের উপর ছিল দুই টাকার কয়েনটা, ওখান থেকেই নেয়া, নেওয়ার সময় মনে হয় দেখেনি সে, দেখলে বা কি? ভাববে মনের অজান্তে নিয়ে নিছি
.।.।.।.।.।.।.।
এই সকালে ঘুম থেকে উঠটে মন চায় না। কিন্ত খিদার জ্বালায় আর ঘুমাতে পারলাম না। উঠেই দেখি, কেউ একজন চেয়ারে বসে আছে, দরজা মনে হয় খোলায় ছিল। লাইট দিলাম
_ শুভ সকাল স্যার
_ তুমি?
_ স্যার, আপনাকে ম্যাডাম যেতে বলছে
_ তোমার ম্যাডামকে গিয়ে বল ফ্রেশ হয়ে আসছি
_ আমার সাথেই যেতে হবে, ম্যাডাম গাড়ি নিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করছে।
_ ও। আচ্ছা মোস্তাফিজ, তোমার কাছে ১০০ টাকা হবে?
_ ছিল, কিন্তু এখন ৮৯ টাকা আছে
_ ও, কিন্ত ১১ টাকা গেল কই?
_ সকালে সিগারেট খাইছিলাম রাজু ভাই
_ ও, তোমার টাকা, তুমিতো খাবা, আচ্ছা যাও সামনের দোকান থেকে নলার জোল, আর ছ্যাকা পরটা নিয়ে আস। আর সিগারেটও নিয়ে আসিও, দুই ভাই মিলে খাব।
মোস্তাফিজ হল পুতুলের ড্রাইভার। সে এসেই প্রথমে গুড মর্নিং স্যার বলল, যখন টাকা চাইলাম তখনই রাজু ভাই বলল!!! আসলে ছোট ছোট মানুষ গুলা সহজে মানুষকে আপন করে নেয়, তার মত ছোটদের সাহায্যে হাত বাড়ায়। তার কথা না ভেবে পুরা টাকা আমার নাস্তার জন্য খরচ করতে রাজি হয়ে গেল, কিন্তু সারাদিন কিভাবে চলবে সে সেটা একটুও ভাবল না। আর বড় মানুষ গুলা? তাদের মস্তিস্কে সাহায্য নামে কোন শব্দ নেই। শুধু একটাই শব্দ - উপরে উঠো, টাকা কামাও।
_ কাল কল রিসিভ করোনি কেন?
_ গভীর চিন্তায় ছিলাম পুতুল, বুঝলে?
_ গাড়িতে উঠো জলদি, তোমার গভীর চিন্তা বের করছি
_ গাড়িতে কেন?
_ তাহলে কি? রোদে হাটব?
_ হাটা বলছো কেন? ছেলে মেয়ে পাশাপাশি হলে ঐটার নাম ঘুরাঘুরি, নট হাটাহাটি
_ গাড়িতে সমস্যা কি?
_ গাড়িতে দম লেগে যায়, তাছাড়া গাড়ির বাতাস বাহিরের বাতাসের সাথে সম্পৃক্ত না।
_ কবি বাণী বাদ দিবা?
_ দেখো, অনেকক্ষণ হাটার পর যখন একটু চিলসে বাতাস গায়ে লাগে, কি যে মধুর অনুভুতি, তা হাজারটা এসির মধ্যে বসলেও পাওয়া যাবে না
_ হইছে হইছে, চল
_ চল, আজ journey by bus উপভোগ করব
এই মেয়ে আমার সাথে কেন ঘুরে কে জানে, যতই তাকে তাড়ানোর চেস্টা করি ততই জোকের মত লেগে থাকে। মনে করে ছিলাম রোদের মধ্যে যদি হাটাহাটির কথা বললে যেতে চাইবেনা কিন্তু ঠিকঠিক এসি গাড়ি ছেড়ে লোকাল বাসে চড়তে রাজি হয়ে গেল। যেতে চাইলে আমার কি? যাক।। বাস চলছে, অনেক গরম বাসে, বাসের ড্রাইভারটা মোস্তাফিজের মত ভাল না, কিপ্টা, শুধু নিজের মাথার উপর ফ্যান চালিয়ে রাখছে, আর আমরা গরমে আলু সিদ্ব হচ্ছি। জানালা দিয়ে হালকা হালকা বাতাস আসছে । পুতুল চোখটা বুজে ফেলল । বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর এসে পড়ছে । ওড়নাটা বুকের
সাথে লেপ্টে আছে বাতাসে । চেহারার স্নিগ্ধতা যেন এই এলোমেলো বাতাসে হাজার গুণ বেড়ে গেছে। আমি তাকে একমনে দেখছি। আর ভাবছি ঐ বাদাম খাওয়ানো প্রেমিক গুলাকে পারলে এক বস্তা করে বাদাম দিব। ঠিকি আছে, এখন থেকে বাদাম খাওয়ায়ে খাওয়ায়ে প্রেম করবি, আমার মত লোকাল বাসে হালকা বাতাসে প্রেমিকার মুগ্ধতা দেখে দেখে প্রেম করবি। পুতুলের মায়াবী চেহেরায় তাকিয়ে পেটের খিদাও দমে গেছে, আসলেই সে অপরুপ, অপরুপা এক অপ্সরী, এই মুখে তাকিয়ে বহুযুগ না খেয়ে থাকা যাবে।
©somewhere in net ltd.