![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাতের হাতিরঝিলকে বড় অদ্ভুত লাগছে। পানির পঁচা গন্ধও লাগছে ফুলের সুভাসের মতো। হাতিরঝিলের লাইটগুলি দেখে, শৈশবে ফিরে যায় সাজিদ। ছোট বেলায় তার ফুফুর বিয়েতে তাদের বাড়িকেও এমন অদ্ভুত লেগেছিল। বাসায় ফিরে যেতে মন চাচ্ছে না সাজিদের। আর ফিরে যাওয়া সম্ভবও নয়। বাড়িওয়ালা নিশ্চয় এতক্ষণে সদর দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আজকের রাতটা যেনো দোকানদারদের দোকান বন্ধ করা দিবস। কি একটা হাউকাউয়ের জন্য রাত দশটার পর থেকেই এদিককার সব দোকান বন্ধ। হেঁটে হেঁটে মধুবাগ যেখানটাতে অনেক রিকশার গেরেজ ওদিকে এক চা-পান বিক্রেতার দেখা মেলে। মামা, একটা মার্লবুরো গোল্ড দিন তো। দাম কিন্তু ১৫ টাকা। ১৩ টাকার সিগারেট ১৫ টাকা শুনে সাজিদের রিকশাওয়ালাদের মতো বলতে ইচ্ছে হলো শাউয়ার পোলা টাকা কি বলদের পুটকি দিয়া পড়ে? তোর বাবাগো দোকান বন্ধ দেইক্ষা কি দাম তিনগুন নিবি! দশ টাকা নে! নইলে সিগারেট তোর পুটকি দিয়া ভইরা দিমু! বেকার হলেও ভদ্রসদ্র বলেই এলাকায় পরিচিত সে। একজন নিরীহ গরিবকে এমন গালি দেয়া তার শোভা পায় না। তার ভদ্রভাবে অনুনয় বিনয়ের ইচ্ছেটাও এখন কাজ করছে না। তাই অগত্যা ১৩ টাকার সিগারেট ১৫ টাকা দিয়ে ধরিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে কাকরাইল চলে গেলো সাজিদ। সময় পেলেই সে এখানকার ফুট ওভার ব্রিজের উপর দাড়িয়ে থাকে। মাস ছয়েক আগে এখানেই মৃত্তিকার সাথে তার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে তাদের দেখা সাক্ষাৎ নেই, অথচ মৃত্তিকাকে চিনতে তার সময় লাগেনি একটুকও। আজও সে এখানে। তবে ফুট ওভার ব্রিজে দাড়িয়ে থাকতে আসেনি সে। আব্দুল খালেক মিয়ার সাথে দেখা করতে এসেছে। খালেক মিয়ার বয়স ৬০ এর কম হবে না। রাত হলে এখানেই পাওয়া যায় তাকে, বিচারপতি ভবনের সামনে।
খালেক মিয়াকে প্রথম দেখেছে সে বই মেলায়। পরনে ময়লা একটা পাঞ্জাবি, বইমেলার স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছে খালেক মিয়া। পাঞ্জাবির বুক পকেট থেকে টাকা বের করে বইও কিনছে সে। তার দিকে নজর পড়ার বিশেষ কারণ হলো খালেক কিনছে নিৎসের দ্য উইল টু পাওয়ার। মেলা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে সাজিদ। বাবা, এই গাড়িতে যাবেন না। আকষ্মিক পিছন থেকে ডাক শুনার কারনে গাড়িতে উঠা হলো না সাজিদের। এই যে চাচা, ডাকার আর সময় পেলেন না? দিলেন তো গাড়িটা মিস করিয়ে। 'আসলে আপনাকে কেন জানি দুর্ঘটনায় ফেলাতে ইচ্ছে হলো না। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি মারা গেলে আমার খুব মনখারাপ হবে। সামনেই এক্সিডেন্ট করবে এই গাড়ি। খালেক মিয়াকে পাগল মনে হলো সাজিদের। খালেক মিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠা হয়নি আর। হেঁটেই চললো কাকরাইলের দিকে। খালেক মিয়াও চললো সাথে সাথে। আশ্চর্যের বিষয়, মৎস্য ভবন পার হতে না হতেই গাড়িটি উল্টে পরে। ২জন শিশু বাদে সবাই স্পট ডেড। সারাজীবন অলৌকিক বিশ্বাসকে অবহেলা করে আসা সাজিদ হঠাৎ অলৌকিক বিশ্বাসে খালেককে পীর ভাবা শুরু করলো। তার নামধাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো।
চাচা, কি করেন আপনি?
গরিব মানুষ, রিকসা চালাই।
শিক্ষিত মানুষ আপনি, রিকসা কেন চালান?
লেখাপড়া করিনাই তো বাবা, আর এই বুড়া বয়সে চাকরি দিবে কে?
বই কার জন্য কিনলেন?
সময় কাটেনা বাবা, আমার জন্যই কিনসি।
খালেক মিয়া ৫ম শ্রেণী পাশ। অথচ যেকোন ভাষার বই পড়তে পারেন তিনি। যে কোন মানুষকে দেখেই তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সব বলতে পারেন খালেক মিয়া। কিভাবে পারেন তিনি নিজেও জানেন না। খালেক মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহ। টানা পুরানের সংসারে চার মেয়ে যেন গজব হয়ে আসছে। কিন্তু সে গজব মনে করেনি কখনো, জমিন বিক্রি করে সবাইকে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছে। গেলো বছর তার বউয়ের ক্যান্সার ধরা পরে। সে জানতো, বউকে বাঁচাতে পারবেনা। তবুও সে চেষ্টার কম করেনি। বউকে বাঁচাতে তার শেষ সম্পত্তি, ভিটেমাটিও বন্ধক দিতে হয়েছে। নিঃস্ব খালেক মিয়া এসব কাউকেই বলে না। অথচ সাজিদকে বলেছে সব। কেন বলেছে জানেনা, তবে সাজিদকে ভালো লেগেছে তার। খালেক মিয়ার কথা শুনতে শুনতে বিচারপতি ভবনের সামনে চলে আসে সাজিদ। বাবা, যান তাহলে। কোথায় থাকেন আপনি? এখানেই। সাজিদ কিছু বলে না। তার কাছে ফুটপাতকে প্রাসাদ মনে হচ্ছিলো, যার বাদশা স্বয়ং খালেক মিয়া।
রাত ৯টা বাজতে না বাজতেই কাকরাইলের এই রাস্তার ফুটপাত হয়ে উঠে যেন এক কোমল বিছানা। যারা এখানে ঘুমায় তাদের কেউ ফকির না, শ্রমিক।
খালেক মিয়ার সাথে আজ সারারাত আড্ডা দিবে সাজিদ। সব গল্প শুনবে তার মুখ থেকে। শুনবে সে কার কার ভবিষ্যৎবাণী করে চমকে দিয়েছে, ভবিষ্যৎবাণী করে কোন ঝামেলার শিকার হয়েছে কি না। আজ জানবে, মৃত্তিকা তার কথা ভাবে কিনা। মৃত্তিকার সাথে আরো দেখা হবে কিনা। সে মৃত্তিকাকে যেমন ভালোবাসে, সেও কি বাসে?
নিশ্চয় খালেক মিয়া সাজিদের জন্য অপেক্ষা করছে, সে তো জানে সাজিদ আসবে। রাস্তার পাশে খালেক মিয়াকে খুঁজছে সাজিদ। এই সিট্রট লাইটের নিচেই ঘুমায় সে। কিন্তু আজ এই যায়গাটা খালি। নেই খালেক মিয়া। এত রাতে খালেক মিয়া অন্য কোথাও থাকার কথা না। হয়তো কোন দোকান খুঁজছে সিগারেটের। এক সময় যদিও বিড়ি খেতো, এখন আর বিড়ি পায়না সে। এখন বিড়ির স্বাদ সিগারেটে মিটায়। তাই তার যায়গায় শুয়ে পরলো সাজিদ, তাকে চমকে দেবে বলে। অনেক সময় পার হলো, খালেক মিয়া আসছে না। পাশের জনের ঘুম ভাঙালো সাজিদ। চাচা, খালেক চাচা কোথায় বলতে পারেন?
খালেক? এখানে খালেক নামে কেউ নাই।
নেই মানে? আমি তো গত শুক্রবারও তার সাথে দেখা করে গেলাম।
দেখেন ভাই, জ্বালায়েন না। সারাদিন এমনিতেই কাজের অনেক প্যারা গেসে, ঘুমাইতে দেন। আমি এই রাস্তায় ২ বছর যাবত ঘুমাই। এখানে খালেক-টালেক নামে কেউ থাকে না।
কথায় কথায় সাজিদ সেই লোকের সাথে বাক-বিতর্কে জড়িয়ে পরে। তাদের কথা শুনে সবাই জড়ো হয় একসাথে। আশ্চর্য, খালেক মিয়াকে কেউ চিনে না। তাদের মাঝেই একজন আরেকজনকে বলছে, “গত শুক্রবারও এই লোকটা এখানে দাড়িয়ে একা একা বক বক করছিল।” তাহলে কি খালেক মিয়া বলতে আসলে কেউ নেই? সবই কি সাজিদের বিভ্রম? সাজিদ নিজেকে পাগল ভাবতে শুরু করে। আবার ভাবে, নিশ্চয় খালেক মিয়া আছে। হয়তো কখনো দেখা হয়ে যাবে, কোন রাস্তার পাশে, স্ট্রিট লাইটের নিচে।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৬
Rakib H Ronee বলেছেন: আচ্ছা, ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:১২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ভাই, প্যারা করে লিখবেন। পড়ে আরাম পাওয়া যায়।