নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুযর্কুন্ডু

সুযর্কুন্ডু › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিত্র শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৫ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৫:৫৬

রবি ঠাকুর ঘটা করে ছবি আঁকা শুরু করেন ১৯২৪ সালে,তখন তাঁর বয়স প্রায় ৬৩ বৎসর। তাঁর লেখার খাতায় আঁকিবুঁকি করা থেকেই ছবি আকার শুরু।রবি ঠাকুর তাঁর ছবি আঁকাকে গুরুত্তের সঙ্গে নেন,যখন আর্জেন্টিনার অন্যতম জনপ্রিয় লেখিকা ভিক্টোরিয়া অকাম্পো তাঁর কবিতার খাতা ঘাটাঘাটি করার সময় তাঁর আঁকা "পুরবী" ছবিটি দেখেন এবং এর ভূয়সী প্রসংসা করেন। লেখিকা ভিক্টোরিয়া অকাম্পোর সাথে কবিগুরুর দেখা হয় ১৯২৪ সালে, বুএনস আইরেস এ ভ্রমন এর সময়। এই স্বনামধন্য লেখিকাই কবিগুরুর প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন প্যারিস এ ১৯৩০ সালে। পরে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এই প্রদর্শনী চলে। বিশেষ করে বারমিংহাম, লন্ডন, বার্লিন, মিউনিখ,কোপেনহেগেন, জেনেভা, মস্কো, বোস্টন, নিউ ইয়র্ক, এবং সর্বশেষে ১৯৩১ সালের মে মাসে ফিলাদেলফিয়া তে এই প্রদর্শনী শেষ হয়।

ইউরোপ ও আমেরিকার আর্টিস্ট এবং ছবি অনুরাগীরা চিত্রকলায় রবি ঠাকুরের শক্তি অনুধাবন করেন, এবং তাঁকে স্বাগত জানান। তাদের এই উষ্ণ অভ্যর্থনা রবি ঠাকুরকে ছবি আঁকতে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তলে। তিনি আরো বেশি খুশী হন যখন বার্লিন ন্যাশনাল মিউজিয়াম তাঁর ৫ টি ছবি কিনে নেয়।

রবি ঠাকুর এর ছবি গুলো থেকে প্রমান হয়, একজন কবি যিনি কিনা ছিলেন বাংলা শব্দ ব্যাবহারের ঈশ্বর, তাঁর অনুভুতি গুলো কোন অংশেই তাঁর আঁকা ছবিতে কম ছিল না। এখানেই ছিল চিত্রশিল্পী রবি ঠাকুরের সার্থকতা। রবি ঠাকুরের ছবি গুলোর বৈশিষ্ট্য হল, তাঁর ছবিতে রঙ এর চেয়ে আঁকিবুঁকি বেশি থাকত। তিনি সাধারনত কলমের কালি,ইন্ডিয়ান ইঙ্ক বেশি ব্যবহার করতেন, এবং ছবি আকার ক্ষেত্রে তিনি নতুন বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন। তিনি আকার ক্ষেত্রে তাঁর কলম,কলমের পেছনের অংশ এবং নিজের হাত ব্যবহার করতেন।

শিল্পী রবি ঠাকুরের প্রতিভা লুকিয়ে ছিল তার ছোটকালে, যদিও তিনি ছবি আঁকতেন অবচেতন মনে, বেশীরভাগ সময় কবিতার খাতায় কাটাকাটি করতে গিয়ে। কিশোর বয়সে তিনি যে পকেট বইটি সাথে রাখতেন তাতে প্রচুর ছবি এবং ডীজাইন পাওয়া যায়। কিন্তু যখন তিনি ছবি আকার প্রেমে পরে যান, তখন তিনি একে যথেষ্ট গুরুত্ত দিতে শুরু করেন। ছবি আঁকায় তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও যেহেতু তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত তাই তাঁর ছবিগুলোতে তাঁর চিন্তাধারা, তাঁর আদর্শ, তার অভিজ্ঞতা, এবং সচেতন মনের চিন্তা ভাবনা ফূটে উঠত।

নন্দলাল বোস,শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত শিল্পী রবি ঠাকুরের ছবি গুলো সম্পর্কে বলেন, রবি ঠাকুরের ছবিগুলোতে তিনটি মুল জিনিস লক্ষ্য করা যায়, ছন্দ, ভারসাম্য এবং চরিতার্থতা। এই গুন গুলো তিনি পেয়েছেন তাঁর লেখা অসঙ্খ কবিতা আর গান লেখার অভিজ্ঞতা থেকে।

রবি ঠাকুর নিজে তাঁর ছবি গুলো নিএ খুবি বিনয়ী ছিলেন। তিনি একবার যামিনী রায় কে লেখা এক চিঠিতে লিখেছিলেন, আমার ছবি আঁকায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। হয়ত আমার ছবি গুলো সম্পূর্ণ নয়, যেমনটি তাদের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যামিনী রায় নিজে ছিলেন রবি ঠাকুরের ছবিগুলোর ভক্ত। তিনি এই সম্পর্কে বলেন, আমি রবি ঠাকুরের ছবি গুলো পছন্দ করি কারন ছবি গুলোর অভ্যন্তরীণ শক্তি, এবং অবিশ্বাস্য ছন্দের জন্য। এবং ছবিগুলোতে শিল্পীর যে শৈল্পিক সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় তা বর্ণনার ভাষা আমার নেই।

ছবির মাধ্যম এর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তাঁর লেখালেখির মতই স্বতঃস্পুত্র, মুক্তহস্থ এবং উদারমনা। তিনি লীড পেন্সিল, রঙ পেন্সিল, প্যাস্টেল রঙ, রঙিন কালি, এবং কিছু পাতা ও ফলের নির্যাস ব্যবহার করতেন। তিনি সাধারনত খুব তাড়াতাড়ি ছবি আঁকতেন,এবং বেশীরভাগ সময় এক বসাতেই ছবি সম্পূর্ণ করতেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়টাই ছিল তাঁর ছবি আঁকার প্রিয় সময়, কারন এই সময়টাতে ছবির রঙ খুব তারাতারি শুকিয়ে যেত। তিনি তেল রঙ পছন্দ করতেন না এর একটি প্রধান কারন ছিল এই রঙ শুকাতে অনেক সময় নিত। সোনালি হলুদ ছিল রবি ঠাকুরের প্রিয় রঙ। কারন এটি ছিল শরতের ধান খেতের রঙ,যা তাঁর কবিমনের একটি অবিছেদ্দ অংশ।

তিনি গারো বাদামী এবং কাল রঙ ও বেশি ব্যবহার করতেন।তিনি খুব কম সময়েই লাল এবং সবুজ রঙ ব্যবহার করতেন,কারন কথিত আছে যে তিনি বর্ণান্ধ ছিলেন।

রাক্তকরবি এর পাণ্ডুলিপি ঠিক করার সময় কাটাকাটি করতে করতে তিনি এঁকে ফেলেছিলেন অদ্ভুত কিছু প্রানি আর পাখীর ছবি যাদের কোন বাস্তব অস্থিত্ত ছিল না,তারা যেন ভিন গ্রহের কোন এক অদ্ভুত জীবন্ত প্রানি ।





তিনি অনেক গুলো নারী প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন, যাদের মুখছবি গুলো ছিল দুঃখিত এবং বিকৃত। একবার তিনি নন্দলাল বসু কে বলেছিলেন যে, এই ছবি গুলো তিনি তাঁর বউদি কাদম্বরী দেবী কে স্মরণ করে এঁকেছিলেন।



তিনি নিজের অনেক আত্মপ্রতিকৃতি ও এঁকেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি ছবিগুলোকে বিকৃত করার চেষ্টা না করে বাস্তবিক করে তোলার চেষ্টা করেছেন।



শান্তিনিকেতন এর আর্ট মিউজিয়াম এ আছে রবীন্দ্রনাথ এর ১৫৮০ টি পেইন্টিং। এই পেইন্টিং এর বিষয়বস্তু হল

নর প্রতিকৃতিঃ৪০৮

নারী প্রতিকৃতিঃ১৮৬

প্রকৃতিঃ৫৮

আত্মপ্রতিকৃতিঃ৯

প্রতিকৃতিঃ৯

জীবজন্তুঃ ৮৯

পাখিঃ ৮৯

বৃক্ষঃ ১১৬

নৃত্যরত প্রতিকৃতিঃ৪৭

অন্যান্যঃ ৫১৭





কলাভবনে আছে তাঁর ৭৩ টি পেইন্টিং এবং একটি স্কেচ এর খাতা। কলকাতা ফাইন আর্টস এর সংগ্রহে আছে আরও ৩২ টি পেইন্টিং। কিছু আছে বিরলার কালচার একাডেমীতে, ন্যাশনাল গ্যালারী অফ ফাইন আর্টস, নয়া দিল্লিতে। লন্ডন ও বাংলাদেশ এর যাদুঘর এ আছে বেশ কিছু পেইন্টিং। ১৮৮০ থেকে ১৮৮৬ সালের মধ্যে আঁকা স্কেচ গুলো আছে শ্রী ইন্দ্রকিশর এর সংগ্রহে।



রবি ঠাকুরের ছবিগুলো বর্তমান সময়ের চিত্র গ্রাহক ও বোদ্দাদের কাছে এক অনন্য আকর্ষণ। ভারতবর্ষ ও ইউরোপ আমেরিকায় এই ছবিগুলোর বাজার মূল্য অবিশ্বাস্য রকমের আকাশছোঁয়া। ২০১০ সালের জুনে লন্ডন এর এক অকশন হাউসে তাঁর একটি ছবির দাম উঠেছিল ২.১৩ কোটি পাউন্ড।



রবি ঠাকুরের ১৫০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ভারত সরকারের অর্থায়নে তাঁর সব ছবি গুলো নিয়ে চার খণ্ডের একটি বই প্রকাশিত হয় যাতে ছবিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০১

হ্যামেলিন এর বাঁশিওয়ালা বলেছেন: রবি ঠাকুরের আঁকা ছবিগুলোর মধ্যেও এক মোহনীয় আবেশ ছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২১

সুযর্কুন্ডু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও লেখাটি পড়ার জন্য।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৪

ইমন কুমার দে বলেছেন: সুন্দর। ভালো লাগছে।

১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৯

সুযর্কুন্ডু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১০

ফ্যাট পান্ডা বলেছেন: ভালো লাগলো।চালিয়ে যাও ভায়া।

৫| ১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১১

ফ্যাট পান্ডা বলেছেন: ভালো লাগলো।চালিয়ে যাও ভায়া।

১৫ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৪

সুযর্কুন্ডু বলেছেন: ধন্যবাদ পান্ডা

৬| ১৫ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:০৭

অরিত্রো বলেছেন: ডেস্টিনির শুয়াররা এবার স্কুল শিক্ষকদের উপর হামলা করল

Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.