নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
ভেঙে গেছে বিশ্বাসের মহেঞ্জোদারো। চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে অবিশ্বাসের উপকরণ। সুশোভিত সরোবর ছলনায় ভরাট। এখন বিশ্বাসের বৃষ্টিফোঁটা, বিশ্বাসের জোছনাছটা, বিশ্বাসের রোদজামাটা নিজের কাছেই রেখেছি জমা।
সেই কোন শৈশবে মা বলেছিলেন, ‘কারো গায়ে পা দিতে নেই।’
আমার স্বভাবসিদ্ধ প্রশ্ন, ‘পা দিলে কি হয়?’
‘পাপ হয়।’
‘পাপ হলে কি হয়?’
‘নরকে যেতে হয়।’
‘নরকে গেলে কি হয়?’
‘ভগবান শাস্তি দেয়।’
একদিন সিঁড়ির গোড়ায় বসে আপন মনে নিজের সাথে নিজেই বলছিলাম কথা। কালিকাকু বারান্দা থেকে সাইকেল নিয়ে নিচে নামার সময় তার পায়ে আমার পা লেগে যায়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই কালিকাকু সাইকেলে চেপে উঠোন পেরিয়ে চলে যায় রাস্তায়। অতঃপর চোখের আড়ালে। আমি সিঁড়ির গোড়ায় বসেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম। অনেকক্ষণ পর মা আমায় কাঁদতে দেখে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই মাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম। কান্নার দমক কমিয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলেছিলাম, ‘কালিকাকুর পায়ে আমার পা লেগেছে। আমার পাপ হবে। ভগবান আমায় শাস্তি দেবে।’
মা আমায় সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোর কাকু বাসায় ফেরার পর তাকে প্রণাম করলে আর পাপ হবে না। ভগবান শাস্তি দেবে না।’
তবু আমি ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছিলাম যতক্ষণ না কালিকাকু বাসায় ফিরেছিলো, যতক্ষণ না কালিকাকুকে প্রণাম করেছিলাম। প্রণাম করার পর আমাকে কোলে তুলে কালিকাকুর সেই আদর আজো আমার স্মৃতির সমৃদ্ধ সঞ্চয়।
এর ক’দিন বাদেই দেখি আমাদের গলিতে পাগলা কুকুরের মতাে উন্মত্ত মিলিটারি! সামনে পুরুষ মানুষ পেলেই তাকে বেধরক পেটাচ্ছে, মাটিতে ফেলে বুটের এলোপাথারি লাথিতে করছে রক্তাক্ত। আমি মায়ের কোলে, মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে, ভয়ে-বিষ্ময়ে হতবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম!
আর এখন তো গুটিকতক দেশের রাষ্ট্রনায়ক, মানুষ কোন ছাড়, গোটা পৃথিবীটাকে নিয়েই ফুটবল খেলছে কি দুর্বিনীত ভঙ্গিমায়! তবু ওদের ভগবান নির্বিকার! মায়ের কাছে করার মতো কতো প্রশ্ন জমে আছে। অথচ মা এখন সকল প্রশ্নোত্তরের উর্দ্ধে!
শত চেষ্টাতেও নারিকেল গাছে ওঠা শিখতে পারিনি কখনও। চৈত্রের দুঃসহ দুপুরে বাল্য-কৈশোরের খেলার সাথীদের দক্ষতায় আমাদের পোড়ো ভিটের গাছের ডাব পেড়ে খেয়েছি সমান ভাগে। পরে যখন জেনেছি আমার অবর্তমানে ওরা আবারও ডাব পেরে খেয়েছে, আমি স্তম্ভিত হ’য়ে গেছি! কেঁদেছিও একা একা। ডাবের শোকে নয়, আমার বিশ্বাসের মহেঞ্জোদারোর প্রাচীরে ফাটল দেখে!
তারপর আরও কতো বন্ধু হলো, তারাও আমার বিশ্বাসের মহেঞ্জোদায়োয় অবিশ্বাসের কুড়াল মেরে হারিয়ে গেল! এখন বুঝি, বর্ণমালা শেখার মতো বিশ্বাসঘাতকের ছলনার হাতেখড়িও হয় বাল্যকালেই!
বাবার মুখে শুনেছিলাম, কোথাকার কোন অবুঝ বালক রোজ নাকি ঠাকুরের ছবির সামনে খাবার হাতে নিয়ে বলতো, ‘খাও, ঠাকুর খাও।’
একদিন নাকি ঠাকুর হাত বাড়িয়ে বলেছিলেন, ‘দে খাব।’
বাবার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। তারপর থেকে আমিও গোপনে গোটা বাল্য আর কৈশোর জুড়ে ছবির ঠাকুরের মুখের সামনে আম, আপেল, আঙুর, কমলা, কলা আর বাতাসা ধরে মিনতি করে বলেছি, ‘খাও, ঠাকুর খাও...।’
হতচ্ছাড়া ঠাকুর একদিনও হাত বাড়ায়নি। বলেনি, ‘দে খাব।’
ঠাকুরের সামনেই রেখে দিয়েছি খাবার, পিঁপড়ার দল এসে উৎসব করতো সেই খাবারে। বিরক্ত হয়ে একদিন আঙুরের কোয়া ঠাকুরের নাকে-মুখে থেঁতলে দিয়ে বলেছিলাম,‘খা বোকাচোদা!’
বাল্যকালে বইয়ে পড়েছিলাম-‘ঈশ্বর পরম দয়ালু। ঈশ্বরের কাছে কোনকিছু মন থেকে চাইলে ঈশ্বর তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।’ কৈশোরে উত্তরাষাঢ়া’র দিকে মির্মির মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতাম আর ঈশ্বরের কাছে আকুতি জানাতাম, ‘ঈশ্বর উত্তরাষাঢ়াকে আমার মনোভূমিতে ঝরিয়ে দাও। আমি ওকে মনোসিংহাসনে খুব যত্নে রাখবো।’
আমি বিশ্বাস করেছিলাম, ঈশ্বর আমার মনোভূমিতেই ঝরিয়ে দেবে উত্তরাষাঢ়াকে। সেই কবেই উত্তরাষাঢ়া ঝ’রে পড়েছে বিপরীত গোলার্ধে। তারপর সপ্তবিংশতি কেন, হাজারো নক্ষত্রের কোনটাই আজ অব্দি ঝ’রে পড়েনি আমার মনোভূমিতে!
মহেঞ্জোদারো, আমার সাধের মহেঞ্জোদারো! পুর্নবিশ্বাসের আড়ম্বরপূর্ণ শিলান্যাস করে তারপরও করতে চেয়েছি বিনির্মাণ আমার বিশ্বাসের মহেঞ্জোদারো। কিন্তু যতবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, ততবারই অবিশ্বাসের ভূকম্পন আর সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছে, আমার মহেঞ্জোদারো আমারই চোখের সামনে হ’য়ে গেছে প্রাচীন সভ্যতা!
বিশ্বাস! বিশ্বাস আজ ভুলে যাওয়া এক প্রাচীন সভ্যতার নাম!
ভেঙে গেছে বিশ্বাসের মহেঞ্জোদারো। এখন বিশ্বাসের বৃষ্টিফোঁটা, বিশ্বাসের জোছনাছটা, বিশ্বাসের রোদজামাটা নিজের কাছেই রেখেছি জমা।
৯ আগন্ট, ২০১৪।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪১
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
নববর্ষের শুভেচ্ছা.......। ভাল থাকুন............
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল লেখাটি।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
নববর্ষের শুভেচ্ছা....। শুভকামনা..............
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: খুব সুন্দর, অনুভূতিময় লেখা।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।
ভাল থাকুন। শুভকামনা রইলো..........
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চমৎকার বলেছেন