নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
সম্ভবত ঊননব্বইয়ের শেষ অথবা নব্বইয়ের শুরুতে ঠাকুরগাঁও থেকে রাজবাড়ীতে আমাদের নিজ গ্রামে ফিরে আসি। বাবা বদলি হয়ে আসেন আমাদের উপজেলা শহরে। ভর্তি হই গ্রামের স্কুলে। তখন থেকেই নতুন একটি বাক্যের সাথে পরিচিত হই-‘অমুক মানুষের পাছায় বাঁশ দিয়ে বেড়ায়’। তখন প্রায়ই বড়দের মুখে শুনতাম, ‘হারান মাস্টারের কাজই হলো মানুষের পাছায় বাঁশ দেওয়া।’ হারান মাস্টার আমার শিক্ষক। প্রাইমারীতে বছর খানেক পেয়েছি ওনাকে, এরপর অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর হাতে অফুরন্ত সময়। লোকটা তখন নানান সাইজের, নানান জাতের বাঁশ দিতে শুরু করলো মানুষের পাছায়। বাঁশ দিতে দিতে একদিন মরেও গেল। জেনেছিলাম মানুষের পাছায় যে বাঁশ দেয়, সে খারাপ প্রকৃতির লোক। সঙ্গত কারণেই হারান মাস্টারকে কোনদিন ভাল চোখে দেখিনি, মরার পরেও না। এরকম আরো বেশ কয়েকজন ছিলেন এবং এখনও কেউ কেউ আছেন। এদের কাজই হলো গ্রামে ভেজাল লাগানো। মানুষে মানুষে দন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি করা। গ্রামের সাথে বহুদিন যোগাযোগ না থাকলেও বেশ ক’বছর যাবৎ শুনছি অনিল নামের একজন মানুষের পাছায় বাঁশ দেয়। এই গুণটা অনিল পেয়েছে পৈত্রিক সূত্রে। ওর বাবা রুক্ষভাবে দিলেও কাকা মোলায়েমভাবে এখনও বাঁশ দেয়। যাইহোক, এই বাঁশ দেওয়াটা মোটেই ভাল মানুষের কাজ নয় এবং ব্যাপারটা গর্বেরও নয়। ব্যাপারটা যদি রূপকের জায়গা থেকে বাস্তবে এনে দেখি, একজন আস্ত মানুষের পাছায় কেউ বাঁশ দিচ্ছে! ভাবলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে।
অতি সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনের কল্যাণে পাছায় বাঁশ দেওয়া ব্যাপারটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। অতি উৎসাহীরা বাঁশ বাহকের ছবিতে নানান রকম ক্যাপশন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বাঁশ দেওয়া বিদ্যা জাহির করছে। আমাদের নাটকে, কবিতায়, কথাসাহিত্যে, সঙ্গীতে কতো ভাল কিছু আছে, সেগুলোর প্রচার হয়না। সেসব আলোচনায় আসে না। এমনকি যে উপলক্ষে এই বাঁশ দেওয়া কথাটা জনপ্রিয় হলো, সেই ক্রিকেট নিয়েও গঠনমুলক আলোচনা কমই হচ্ছে। কিন্তু একটা অসভ্য চিন্তার প্রতিফলন ঘটা একটা বিজ্ঞাপন মানুষ খুব সহজেই লুফে নিলো। নিলো তো নিলো, গর্বে বুক ফুলিয়ে বাঁশ দিতেও শুরু করলো। মিডিয়ার কল্যাণে এখন অনৈতিক অনেক কিছুই বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে, অসভ্য-অশালীন অনেক কিছুই সমাজে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। আসলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দর বাড়ছে!
আমাদের সমাজের মধ্যে বাঁশ দেওয়া ব্যাপারটার প্রচলন থাকলেও, আমাদের দেশ কখনও কোন দেশের পাছায় বাশঁ দিয়েছে বলে মনে পড়ে না। বরং অন্যরা আমাদের পাছায় বাঁশ দিয়েছে। এখন মিয়ানমারও দিচ্ছে। কথা হচ্ছে আমরা কেন বাঁশ দিতে যাব? কেন পাকিস্থানকে বাঁশ দিতে যাব? কেন বাঁশ দিতে যাব ভারতকে? আর কেনইবা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য প্রস্তুত রাখবো বাঁশ? আজ হয়তো আমরা জিতে মুলি বাঁশ দিচ্ছি, কাল যে কেউ আমাদের হারিয়ে পাহাড়ী মোটা বাঁশ দেবে না এর গ্যারান্টি কি?কেন আমরা সেই মোটা বাঁশ ঢুকানোর জায়গা তৈরি করে দিচ্ছি?একটা খেলার ফলাফলের ক্ষেত্রে এই বাঁশ দেওয়া ব্যাপারটা রীতিমতো অশোভনীয় মনে হয়। ভাষা প্রয়ােগের ক্ষেতে্র আমরা আরেকটু সু-রুচির পরিচয় দিতেই পারি।মনে রাখা দরকার দিন শেষে ক্রিকেট একটা খেলা। বিনোদনের মাধ্যম, যুদ্ধের নয়। ছোটবেলা থেকেই হা ডু ডু খেলা আমি দু-চোক্ষে দেখতে পারি না। কারণ, যেখানেই হা ডু ডু খেলা হতে দেখেছি, সেখানেই দেখেছি মারামারি-রক্তারক্তি হতে। হা ডু ডু খেলাটাকে অসভ্যদের খেলা মনে হতো আমার কাছে। দোষ অবশ্য খেলাটার নয়, মানুষের। খেলা যদি মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি না বাড়িয়ে, জাতিগত বিদ্বেষ আর সম্পর্কের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, তবে তা কিসের খেলা! হ্যাঁ, আমাদের ভেতরে অনেক বছর ধরে জমানাে অপমানের ভান্ডার আছে, কিন্তু তার জবাব আমাদের ছেলেরা মাঠেই দিয়ে চলেছে একের পর এক। এর চেয়ে ভাল জবাব আর কী হতে পারে! আশা করি ডেল স্টেইনের জবাবটাও ওরা দিতে পারবে।
সেই ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ভদ্রলোকের খেলা সম্পর্কে কথার অলংকার শোভন হলেই বেশি মানায়। কেউ বলতেই পারেন, ওরা তো এই এই করেছে। হোক না ওরা হারান মাস্টার কিংবা অনিল, আমরা নাইবা হলাম!
ঢাকা।
২৩.০৬.১৫
২৩ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।
ভাল থাকবেন।
শুভকামনা নিরন্তর................
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি অবশ্য এ্যাডটা দেখি নি, তবে এটা সম্পর্কে নানাবিধ মতামত পড়ে এটাকে মোটেও রুচিশীল কিছু মনে হয় নি।