নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালমোহন আর তার মেঘপরী

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

কিছুক্ষণ আগে যে তরল আগুন নিজের উদরে ঢেলেছে লালমোহন, সেই আগুনের লালচে আভা এখন ছড়িয়েছে তার দুই নয়নাকাশে। নয়নাকাশের কৃষ্ণ নক্ষত্রদ্বয়ের জ্যোতি পড়েছে তার সমুখে শয়ান বিদিশার মুখের ওপর। বিদিশার দু-চোখ নিমীলিত, অচঞ্চল চঞ্চু, বিস্রস্ত চুল। আহা, স্বপ্নপরী! মেঘপরী!
সেই সদ্য যৌবনের তপ্ত আঙিনায় রেখে দূর্বিনীত পা, লালমোহন প্রথম দেখেছিল বিদিশাকে অনেকটা এরকমই, তবে দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে! সেদিনও বিদিশার চোখ ছিল নিমীলিত, অচঞ্চল চঞ্চুতে ঈষৎ হাসির আভা ছিল, বুকে চেপে রেখেছিল পরচুল পরা আধবুড়ো নায়কের মাথা। বিদিশার মায়ায় ভরা মুখখানিতে সেদিন ছড়িয়ে ছিল দখিনা হাওয়ায় উড়ন্ত শরতের মেঘসুখ! তখন বিদিশার বয়স বাইশ কি তেইশ। আর লালমোহনের আঠারো-উনিশ। বিদিশার মুখের ঐ শরতের মেঘসুখ দেখেই লালমোহনের বুকের সবুজ চরের কাঁশফুলে দোলা লেগেছিল। সেটাই ছিল বিদিশার প্রথম সিনেমা। আধবুড়ো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নায়কের জন্য সিনেমা ফ্লপ, কিন্তু বিদিশা হিট! বিদিশাকে মনে ধরেছিল পরিচালকদের, দর্শকদের, লালমোহনেরও!

বিদিশার দ্বিতীয় সিনেমাটা দারুণ হিট করেছিল। এরপর বিদিশাকে আর পায় কে! লক্ষ-কোটি তরুণের হৃদয়সিংহাসন নাড়িয়ে দেওয়া নায়িকা তখন বিদিশা! লালমোহনের যৌবনের সেই উত্তাল দিনগুলো বিদিশার ঘোরে কেটেছে-সিধু দাদুর হাতের দিশি মদের ঘোরের মতো। বিদিশার প্রতিটা সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনই দেখতো সে। শুধু একবার নয়, দু-তিনবারও দেখতো কোনো কোনো সিনেমা। শোবার ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতো বিদিশার যৌন আবেদনময় পোস্টার। বিছানায় শুয়ে যখন পোস্টারের বিদিশার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতো তখন তার বুকের ভেতরটায় জলোচ্ছ্বাস বয়ে যেতো। চোখ টিপতো, ছুঁয়েও দেখতো! একলা নিরলে তার কল্পনার ময়ূরপঙ্ক্ষী নিরর্গল ছুটতো গোধূলির মেঘের মতো আবিররঙা-কোমল মায়াময় বিদিশাকে নিয়ে, আত্মরতির সুখআঁচের হাওয়ায় ভেসে!

বিয়ের পরপরই এক রাতে লালমোহন তার নববধূ লিপিকার বস্ত্রবিন্যাস অবিন্যস্ত করে বলেছিল, ‘তোমার শরীলখানা বিদিশার মতোন, সোন্দর!’

সেই মধ্যরাতে, হাত ফসকে মেঝেয় পরা কাঁসার থালার মতো আচমকা আওয়াজ উঠেছিল লিপিকার বুকের মধ্যে! শরীরে তখনও হলুদের গন্ধ, সেই গন্ধে নাক গুঁজেই মরদ কিনা বিদিশা না ফিদিশা কোন মাগির শরীরের ছাফাই গাইছে! ক’জনের সাথে শুয়েছে কে জানে! শরীরে কোনো রোগ বাধিয়ে আসেনি তো! লিপিকাকে চুপ করে থাকতে দেখে লালমোহন বলেছিল, ‘কথা কইছো না ক্যানে?’
লিপিকা চুপ করেই ছিল। তারপর লালমোহনের পুনর্বার প্রশ্নে আর্দ্র গলায় বলেছিল, ‘বিদিশা কেডা?’

অন্ধকার ঘরের নির্জনতা বিপন্ন করে হো হো করে হাসতে হাসতে লিপিকার মুখের ওপর ঝুঁকে, নাকে নাক ঘষে লালমোহন বলেছিল, ‘এই বেটিগুলানের মনে খালি হিংসে, হিংসে! আরে বিদিশা আমার আপন কেউ হইলে আমি কী এই ঘুপচি ঘরে পইড়ে থাকতাম! আমি তো রাজা হইয়ে যাইতাম। লায়িকা, লায়িকা, সিনেমার লায়িকা বিদিশার কথা কইছি আমি। আর তুমি কিনা ভাইবে লিলে আমি কুনো বেটির শরীলে হাত বুলায়ে সুখ লিয়ে আসিছি! হা, হা, হা....!’

তারপর লিপিকা ভেজা ভেজা চোখ, সারা মুখে লজ্জা আর ঠোঁটে খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে লালমোহনকে তার কায়া সরোবরে অবগাহন করিয়েছিল দারুণ উচ্ছ্বাসে!

বিয়ের পর বিদিশার ঘোর খানিকটা কেটে গেলেও সিনেমা দেখা বাদ দেয়নি লালমোহন। তখন লিপিকাকে নিয়ে প্রায়ই সন্ধ্যার শো দেখতে যেতো মধুমিতায়। লালমোহন লিপিকাকে বিদিশার মতো সাজতে বলতো। নিজের মরদকে খুশি করতে লিপিকা ইচ্ছে মতো সাজতো। বিদিশার মতো করে চুল বিন্যাস করতো। সদ্য দেখে আসা সিনেমায় বিদিশা যে রঙের শাড়ি পরে নায়কের সাথে ঘুরতে যেতো, ছুটির দিনে লিপিকাও সেই রঙের শাড়ি পরে লালমোহনের সাথে ঘুরতে যেতো বলধা গার্ডেনে, আহসান মঞ্জিলে।

বিদিশার শীতল কপালে আঙুল ছুঁইয়ে আগুনে আঁচ লাগার মতো হাত টেনে নিলো লালমোহন। বুকের ভেতরটায় ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো যেন! কতোদিন হলে গিয়ে বিদিশার সিনেমা দেখে না সে! ঐ যে... যেদিন বিকেলবেলা লিপিকার ব্যথা উঠলো, রাত বারোটায় সুবীরের জন্ম হলো, তার আগের রাতে বিলুর সাথে মধুমিতায় গিয়ে দেখেছিল বিদিশার সিনেমা। সিনেমায় যাওয়ার আগে সদরঘাটে বিলুর পত্রিকার দোকানে একটা ম্যাগাজিনে বিদিশাকে নিয়ে খবর পড়েছিল সে। ম্যাগাজিনের কাভারে ছিল বিদিশার ছবি। শিরোনামটা এখনও মনে আছে তার-‘দিশাহীন বিদিশা!’। ভেতরের খবর পড়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল লালমোহনের। তার স্বপ্নের ‘লায়িকার’ জনপ্রিয়তা ফুরিয়েছে, পা বাড়িয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন চোরা গলিতে, ঘন ঘন পুরুষ সঙ্গী বদলাচ্ছে, তার হাঁটুর বয়সী একজন পুরুষ সঙ্গী আর ইয়াবা সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে উত্তরার একটি হোটেলে। উপরওয়ালার ফোনে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলেও গোপন থাকেনি সে কথা। ম্যাগাজিনগুলো রসিয়ে রসিয়ে ফলাও করে লিখেছে সে-সব কথা। সেই ঘটনার সুত্র ধরে লিখেছে আরো নানান রগরগে খবর এবং ছেপেছে লাস্যময়ী ছবি! সবই নেতিবাচক।

সুবীরের বয়স এখন পাঁচ।

সেই শেষ। তারপর, তার স্বপ্নের লায়িকা, তার মেঘপরী’র আর কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। মাঝে মাঝে বিলুর দোকানে বসে পত্র-পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে বিদিশাকে নিয়ে কিছু খবর পড়েছে। কিন্তু সবই নেতিবাচক, চটুল। কখনও কখনও টিভিতে বিদিশার দু-একটা ছবি দেখেছে লালমোহন। তাও কতোদিন হলো!

বিদিশা যখন তার কাছে অনেকটাই ঘন কুয়াশায় ঢাকা অবয়ব, ভীষণ আবছা, ঠিক তখনই যেন কুয়াশা ফুঁড়ে একেবারে নাগালের ভেতরে, ছোঁয়ার আয়ত্তে চলে এসে তাকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে! উসকে দিয়েছে তার সেইসব দিনের যতো বাউণ্ডুলে স্মৃতি!

লালমোহন আবার ডানহাতের আঙুল ছোঁয়ালো বিদিশার কপালে। ঠান্ডা, কী ভীষণ ঠান্ডা! সে প্রতিদিন-ই এমন শীতল কায়া ব্যবচ্ছেদ করে। কিন্তু পেশাদারিত্ব আর অভ্যস্ততার কারণে সেই শীতলতার অনুভূতি তার কাছে অনেকটাই ভোঁতা। কিন্তু আজ যেন খুব তীক্ষ্ণ, বড় জাগ্রত তার অনুভূতি!

এবার দুই হাতের আঁজলায় বিদিশার মুখটা ধরলো লালমোহন। যেন আপন মনে বিদিশার উদ্দেশে বলে চললো- এভাবে কী চলে যেতে হয় মেঘপরী! তুমি না স্বপ্ন দেখাতে মানুষকে! ভালবাসতে শেখাতে, হাসিখুশি থাকতে শেখাতে, সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখাতে! সে-সব কি মিথ্যে, কেবলই অভিনয়? ঐ সব চরিত্রের জীবন থেকে কি ছিঁটেফোঁটাও নিতে পারোনি, শিখতে পারোনি কিছুই? নাকি ঐ জীবনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কালের কালো স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিলে তোমার নিজের জীবন। অন্তর্দহন সইতে পারলে না, তাই পোকাধরা জীবনজ্বালা জুড়াতে বেছে নিলে এই আত্মাহুতির পথ!

ভাবনার মধ্যে পকেটের মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। বিলুর ফোন-
‘হ্যালো....’
‘কহন আইবি রে?’
‘নয়টা বাইজবে।’
‘বউ গেছে বাপের বাড়ি, আয় রাধে ছলা করি!’
‘মানে?’
‘আরে ব্যাটা, বউ বাপের বাড়িত গ্যাছেগা। বাসা খালি। হান্নান আর অতুল আইবো। আমি কাছিমের মাংসের ব্যবস্থা করতাছি। তুই একটা বোতল নিয়া চইলা আয়। আইবি তো?’

ভাবনায় পড়লো লালমোহন। বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত। তারপর বললো, ‘হ, আইসবো।’
‘ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চইলা আহিস। আইজকা বউয়ের প্যানপ্যানানি নাই। খামু আর পাংখা লাগাইয়া উড়মু...!’

লাইন কেটে দিলো বিলু। লালমোহন ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো। বিদিশার মুখের দিকে তাকালো। তারপর দৃষ্টির আবেশ বুলিয়ে দিলো বিদিশার সারা শরীরে। খয়েরি গাউনে আবৃত বিদিশার গলার নিচ থেকে জঙ্ঘার প্রান্ত দেশ পর্যন্ত। হঠাৎ-ই তার মাথায় অদ্ভত খেয়াল চাপলো, বিদিশার সঙ্গে ছবি তুলবে। তার এক সময়ের স্বপ্নের রানি, মেঘপরীকে এতো কাছে পেয়েও তার সাথে স্মৃতি ধরে রাখার সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চাইলো না। হোক মেঘপরী চিরনিদ্রিত, তবু তো সে তার মেঘপরী!

লালমোহন মোবাইলের ক্যামেরা অন করে বিদিশার কয়েকটি ছবি তুললো। চুলগুলো পিছন থেকে কাঁধের ডান পাশ দিয়ে বুকের ওপর এনে আরো কয়েকটা ছবি তুললো। দু-চোখ নিমীলিত, যেন ঘুমিয়ে আছে তার মেঘপরী। কেবল মুখের রঙ কিছুটা নীলাভ।

বিদিশার মাথার পাশে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে সেলফি তুললো সে; তারপর বিদিশার মুখের কাছে মুখ নিয়ে পর পর কয়েকখানা তুললো। রাতে যখন সে বিলু, অতুল, হান্নানকে এই ছবিগুলো দেখাবে, বিস্ময়ে ওদের চোখ কপালে উঠে যাবে। মেঘপরী! তাদের প্রথম যৌবনের মেঘপরীকে ছুঁয়ে দেখেছে লালমোহন! সে তখন গর্বিত ভঙ্গিতে ওদেরকে দেখবে।

এবার গাউনের ফিতের গিঁট খুলে বিদিশার শরীর অনাবৃত করলো লালমোহন, বুকের ওপর থমকে গেল তার দৃষ্টি। ডান স্তনে লালচে দাগ। দেখেই প্রতীয়মান হচ্ছে এ দাগ কামড়ের। বাম স্তনেও আঁচড়ের ক্ষত। নিচের দিকের গাউন সরালো, পরনে কিছু নেই। নাভির কাছটায় এলোমেলা রেখার মতো নখের আঁচড়। তবে যে খবর রটেছে আত্মহত্যা করেছে বিদিশা! কিন্তু এই দাগ তো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে বিদিশার ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। শবদেহ কাটতে কাটতে এখন আঁচড়-কামড় দেখেই লালমোহন বোঝে যে কোনটা অত্যাচারের আর কোনটা আদরের।

লালমোহন এবার ভিডিও করতে শুরু করলো বিদিশার শরীর। মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে গলা, বুক, পেট, নাভিমূল, তলপেট! তলপেটে ক্যামেরা থামিয়ে বিদিশার যোনিতে দৃষ্টি রাখলো সে। না, মেঘপরীর গুপ্তদেশ গুপ্তই থাক। গুপ্তদেশ বিলুদের দেখাবে না সে। রূপকথার দেশের মতো মেঘপরীর গুপ্ত অঙ্গ অদেখা রহস্য হয়েই থাক বিলুদের কাছে! ক্যামেরা আবার ওপরের দিকে এনে স্থির করলো বিদিশার মুখের ওপর। কোথা থেকে উড়ে এসে একটা নীলমাছি বসেছে বিদিশার ঠোঁটের ওপর। বাম হাত দিয়ে মাছিটাকে তাড়িয়ে দিলো সে।
এখন বাইরে গোধূলি নেমেছে। এই ব্যবচ্ছেদখানার জানালার পাশে একটা বর্ষীয়ান নিমগাছ মৃদুমন্দ বাতাসের পূরবীরাগে বড় প্রশান্তিতে মাথা দুলিয়ে চলেছে। দিনের কর্মযজ্ঞ গুটিয়ে নিমনীড়ে ফিরেছে একটা কাক। ডেকে ডেকে হয়রান হচ্ছে। হয়তো এখনও ফেরেনি তার সঙ্গিনী। নিমগাছের পাশ দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা যায়। তাতে গোধূলির মুখশ্রী দর্শনের পূর্ণ চিত্তসুখ পাওয়া না গেলেও কপোলের কিছুটা দেখেই অনুমিত যাচ্ছে, গোধূলি আজ ভীষণ সেজেছে প্রকৃতির আবিরে। এমনি এক গোধূলিবেলায় বুড়িগঙ্গার পারে বসে দিশি মদ খেয়ে বিলু আর অতুলের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে গোধূলির রঙ দেখে সে বলেছিলো, ‘বিদিশার গায়ের রঙও এমন। গোধূলির মেঘের মতোন রঙ, পরীর মতোন যৌবন!’ সেই থেকে বিদিশা ওদের মেঘপরী!

দুই

শেষ রাত থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। এখন সকাল। বৃষ্টি বাড়েওনি, কমেওনি। যেন কোনো অভিনিবিষ্ট বীণাবাদক বীণার তারে আঙুলের আলতো পরশ বুলিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে একই ভৈরবী রাগ। টানা গরমের পর এই বৃষ্টি যেন শীতল আদর বুলিয়েছে। এই পরিবেশে ঘুমাতে বেশ আরাম লাগে। আকাশেও মেঘের যা আধিপত্য তাতে সহসাই সূর্য দাপট দেখাতে পারবে বলে মনে হয় না। লালমোহনের আজ ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার তাড়া নেই। কাল রাতে দুঃসহ গরমে ঘুমিয়েছিল। শেষ রাতে মৃদু বাতাস আর শীতল বৃষ্টির ছাঁটের মোলায়েম আদরে ঘুম ভেঙে গেছে তার। জানালা বন্ধ করতে গিয়েও থেমে গেল। বাতাসের সাথে শীতল বৃষ্টির ছাঁট মুখে লাগায় ভাল লাগছে তার। সারা শরীরে অদ্ভুত মাদকতা ছড়িয়ে পড়ছে! বৃষ্টির শীতলতা ঘুমের রেশ কাটিয়ে কামের আবেশ ছড়িয়ে দিলো শরীরে। শরীরকে উস্কানি দিলো। বাইরের অন্ধকার থেকে সে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলো লিপিকার ঘুমন্ত মুখে। ঘুমে কাদা হয়ে আছে লিপিকা। তার ওপাশে সুবীরও।

লিপিকাকে জাগাতে ইচ্ছে হলো না তার। বেচারী ঘুমোচ্ছে ঘুমোক। অগত্যা শরীরকে বশে আনতে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করলো সে। সিগারেটটা টানতে টানতে যদি আপনা-আপনিই লিপিকার ঘুম ভাঙে তো বেশ হয়! জ্বলতে জ্বলতে সিগারেটের দেহভস্ম হলো, জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন করলো। তবু লিপিকা জাগলো না। কিন্তু দেহের ভেতরকার অশান্তি-ই বা কতোক্ষণ পুষে রাখা যায়! জুড়োতে দেহের অশান্তি, সে ভাঙলো লিপিকার ঘুমের প্রশান্তি!

শেষ রাতের রতিক্রীড়া সাঙ্গ করে, রতিক্লান্ত দেহের সাথে লিপিকাকে জাপটে ধরে এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে লালমোহন। লিপিকার ওপাশে সুবীর ঘুমের ঘোরে চু চু শব্দে ডান হাতের বুড়ো আঙুল চুষছে!

মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। লিপিকার মোবাইল। লালমোহনের শরীরের সাথে লেপটে থাকা নিজের শরীর খানিকটা মুক্ত করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো লিপিকা। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, ‘হ্যালো বিলুদাদা......ঘুমাইতেছে।........দিতেছি। ’
লিপিকা তার বুকের ওপর রাখা লালমোহনের বাম হাতে নাড়া দিয়ে বললো, ‘এই...শুইনছো...ধর, বিলুদাদার ফোন।’
লালমোহন অর্ধনিমীলিত চোখেই লিপিকার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, ‘কী রে......!’

শুয়ে শুয়ে কয়েক মুহূর্ত বিলুর কথা শোনার পর ধড়মড় করে উঠে সোজা হয়ে বসলো সে। ভোরের রতিক্লান্ত দেহে প্রশান্তির ঘুমের রেশ কেটে গেল মুহূর্তের মধ্যে। প্রশান্তির সাদা মেঘ উড়ে মুখের অভিব্যক্তিতে দেখা দিল দুশ্চিন্তা আর শঙ্কার অশনি কালো মেঘ! ঘুম ঘুম চোখে তার দিকে তাকালো লিপিকা। তার মুখের দুশ্চিন্তা আর শঙ্কার মেঘ ধরা পড়লো লিপিকার চোখেও। লালমোহনের হাঁটুতে হাত রাখলো লিপিকা। লালমোহন তাকাতেই ইশারায় জানতে চাইলো কী হয়েছে। লালমোহন বাম হাত উঁচিয়ে চুপ করতে বললো লিপিকাকে।

ফোনটা কাটার পর দ্রুত বিছানা থেকে নামতে নামতে লালমোহন বললো, ‘আমি এক্ষুনি বাইর হবো।’
দুশ্চিন্তা আর শঙ্কা ছড়িয়েছে তার কণ্ঠেও।

‘কী অইছে?’ লিপিকার জিজ্ঞাসু চোখ তার মুখে। লিপিকা উঠে বসলো বিছানায়। অজানা আশঙ্কায় তার বুক ধুকধুক করছে।
‘পরে বইলবো। এখন সময় নাই। কেউ আমার খোঁজ করতে আইসলে বইলবা তুমি আমার খবর জানো না।’
লালমোহন ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। লিপিকা হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইলো বাথরুমের দরজার দিকে।

সেদিন, ঐ যেদিন গোধূলিবেলায় লালমোহন তার মেঘপরীর বুকে অস্ত্র চালিয়ে ব্যবচ্ছেদ করলো, সেদিন লাশকাটা ঘর থেকে রাত সাড়ে আটটার দিকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গিয়েছিল বিলুর বাসায় মনটাকে একটু হালকা করতে। মনটা সেদিন হালকা হয়েছিল। শিমুল তুলোর মতো হালকা হয়ে নেশার বাতাসে উড়েছিল। দিশি মদের সাথে ঝাল ঝাল কচ্ছপের মাংসের ভুনা। বিলুটার রান্নার হাত পাকা গিন্নীকেও হার মানায়! জুয়ার আসরটাও জমেছিল দারুণ! রাত সাড়ে তিনটায় নেশার ভারে মাথা যখন আর কাজ করছিল না, তখন ভাঙলো জুয়ার আসর। বিলু বারবার বলেছিল ওর বাসাতেই শুয়ে থাকতে, কিন্তু থাকেনি সে। নেশায় বুদ হয়ে টাল খাওয়া পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাসায় ফিরছিলো।

জুয়ার আসর চলাকালীন লালমোহন বিদিশার ছবি আর ভিডিও দেখিয়েছিল ওদের। ওদের তিনজনের তো চক্ষু ছানাবড়া! তখন নেশা ধরেছে বেশ। বিলু মোবাইলটা হাতে নিয়ে তাদের প্রথম যৌবনের মেঘপরীর ছবি এবং ভিডিও নিজে দেখছিল আর হান্নান ও অতুলকে দেখাচ্ছিল। লালমোহন গর্বিত চোখে তাকিয়ে ছিল ওদের দিকে। মনে মনে বলেছিল, ‘শালা, সবাই আমারে ডোমের পো কয়। আমার ডোম জীবন আজ সার্থক হইলো।’

মোবাইলের ছবির বিদিশার নগ্ন বুকে আঙুল স্পর্শ করে নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে চু চু শব্দ করে অতুল বলেছিল, ‘শালা, এই দুইডা দ্যাখবো বইলা কতো টাকা খরচ কইরা, কতোবার হলে গেছি। একবারও দ্যাখতে পাই নাই। শালা বাসর ঘরের সিন্ এ যতোবারই নায়ক বুকের কাপড় সরাইতে গেছে অমনি বাত্তি অফ!’

‘ছি! মরা মানুষ নিয়া এমনে কইতে আছে!’ কপাল কুঁচকে অতুলের দিকে তাকিয়ে বলেছিল বিলু।
‘ধুর শালা, সিনেমা দেইখা আইসা কতোদিন বিদিশার কথা ভাইবা ঝন্টুরে আপ-ডাউন করাইছো, আর অহন ব্রত কথা মারাইতাছো!’
ওদের যুক্তিতর্ক, শরীরতত্ত্ব আরো নিন্মমার্গে পৌঁছেছিলো সেদিন!

বিলুর বাসা থেকে বেরিয়ে টাল খাওয়া পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আর গলায় গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে লালমোহন যখন বাহাদুর শাহ্ পার্কের কাছে এলো, তখন ভোরের মৌনতা ভেঙে ধ্বনিত হলো আযান। সুনসান রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল লালমোহন। নিজেকে রাজা-বাদশার মতো মনে হচ্ছিল তার। প্রায়ই সে যখন মধ্যরাতের পর নেশার ঘোরে এমনিভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে একা একা বাসায় ফেরে, তখন নিজেকে রাজা মনে হয় তার। আশপাশে কোনো জনমানব নেই। এত্তোবড় রাস্তা তাকে কুর্নিশ করে বুক পেতে থাকে পদব্রজের জন্য! একের পর এক লাইটপোস্টগুলো নতশিরে স্বচ্ছ চোখ মেলে রাখে রাস্তার ওপর। সেই স্বচ্ছ চোখের জ্যোতিতে পথ চলে সে। যা খুশি তাই করতে পারে। হাসতে পারে, গাইতে পারে, চিৎকার করতে পারে। এমনকি তার অস্তিত্ব টের পেয়ে দণ্ডায়মান রাস্তার নেড়ি কুকুরগুলোর সাথে কথা বলতে বা ওদেরকে ধমকাতেও পারে ইচ্ছে মতো। হঠাৎ-ই কোথা থেকে দুজন মানুষ এসে তার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছিল। ধমকে উঠেছিল লালমোহন, ‘তোরা কারা রে হতভাগা?’

লোক দুজন লালমোহনের দু-পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে ওর হাত এবং অন্য হাতে পকেট হাতড়ালো। দ্রুত পকেট থেকে মোবাইল আর মানিব্যাগ তুলে নিলো তারা। লালমোহন আপনমনে বলেই চললো, ‘ছাড়, ছাড় আমাকে।’

বলেই বাম হাত সজোরে ঝাড়ি দিলো লালমোহন। বামপাশের লোকটি ছিটকে ফুটপাতে পড়ে যেতেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সজোরে ঘুষি চালালো ডান পাশের লোকটির মুখে। ‘উড়ে আল্লা’ বলে ডান পাশের লোকটি মুখ ধরে বসে পড়লো। এবার বাম পাশের লোকটি তড়িৎ গতিতে ফুটপাত থেকে উঠে এসে এলোপাথারি কিল, ঘুষি মারতে লাগলো লালমোহনের বুকে, মুখে, পেটে, সারা শরীরে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ডান পাশের লোকটিও লালমোহনকে বেধড়ক মারতে লাগলো। মুখে ঘুষি খাওয়ায় তার রোষ যেন আরো বেশি। লালমোহন মাটিতে পড়ে গেল। তার পাঁজরে আরো কিছু লাখি ছুঁড়ে তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে লোক দুটি মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল বাহাদুর শাহ্ পার্কের দিকে। প্রহারের ব্যথায়-যাতনায় কেঁদেই ফেললো লালমোহন।

সে রাতে ছিনতাইকারীদের কাছে ‘নির্জন রজনীর রাজা’ লালমোহনের মোবাইলটা খোয়া গিয়েছিল। এখনও নতুন মোবাইল কিনতে পারেনি। অথচ মোবাইল হারানোর আফসোস না ফুরোতেই গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সপ্তাহ খানেক পরেই যে সেই হারানো মোবাইলটা হারানো অবস্থায়ই তার জীবনে মহাবিপদ ডেকে আনবে, তা সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। কী দিন এলো-হারানো জিনিস মনে তো শান্তি দেয়ই না, উপরন্তু অশান্তি ডেকে আনে!

মোবাইলটা ছিনতাইকারীদের হাত ঘুরে কার হাতে পড়েছিল কে জানে! যার হাতেই পড়ুক, সেই দূষিত চিন্তার মানুষটি, সেদিন ব্যবচ্ছেদখানায় তোলা বিদিশার ছবিগুলো আর ভিডিও কিপসটা ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। আর এসব বিষয় আন্তর্জালিক দুনিয়ায় এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, পরমানু অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তাও এতো দ্রুত ছড়াতে পারে না বোধহয়! সেই ছবি আর ভিডিও নিয়ে আন্তর্জালিক দুনিয়ায় এখন তুমুল শোরগোল চলছে। বিদিশার মতো এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও অন্তর্জালে প্রকাশ করায় চারিদিকে নিন্দার ঝড় বইছে। এই অপকর্মের অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

তার তোলা ছবি আর ভিডিও নিয়ে যে এতোসব কাণ্ড হচ্ছে, লালমোহন সেসব কিছুই জানতো না। লিপিকার ফোনে কল করে বিলু এসব বলেছে তাকে। আজ সকালে বিলু পত্রিকা হাতে নিয়েই দ্যাখে বিদিশার সাথে লালমোহনের সেই সেলফি ছাপা হয়েছে পত্রিকার পাতায়! তারপর বিস্তারিত খবর পড়ে বিলুর তো চক্ষু-ছানাবড়া! দ্রুত লালমোহনকে ফোন করেছে। বলেছে যতো দ্রুত সম্ভব গা ঢাকা দিতে।
বাসা থেকে বেরিয়ে লালমোহন সোজা চলে এলো বুড়িগঙ্গার পারে। বুড়িগঙ্গা এখন ভীষণ ব্যস্ত। লঞ্চ ভিড়ছে ঘাটে, ছেড়েও যাচ্ছে ঘাট। অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা যাত্রী পারাপার করছে। জিঞ্জিরা আর কেরানিগঞ্জ থেকে স্রোতের মতো মানুষ আসছে এপারে, অফিস-স্কুল-কলেজ ধরতে। লালমোহন একটা নৌকায় চেপে বসলো। আপাতত জিঞ্জিরাতে পিসির বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকবে। তারপর যা হয় করবে।

তারপরের কথা ভাবতেই চোখে অন্ধকার দেখলো লালমোহন। চাকরিটা তাকে ছেড়ে যাবে, আর ধরা পড়লে সে নিজে যাবে জেলে! নিজের জীবনের কথা ভাবে না সে। কিন্তু সুবীর আর লিপিকা? সে ছাড়া তো ওদের জীবন অন্ধকার। সুবীরকে এ বছর স্কুলে দিয়েছে। কোথা থেকে জুটবে ওর স্কুলের বেতন? ওরা থাকবে কোথায়? খাবে কী? অজস্র প্রশ্ন এখন জট পাকাচ্ছে লালমোহনের মাথায়। ভাবনার মধ্যেই দেখলো নৌকার অপর এক যাত্রী তার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠলো। লোকটা কি পত্রিকায় তার ছবি দেখেছে? তাই তার দিকে তাকিয়ে ছবির সাথে চেহারা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছে? লালমোহন ভয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল বুড়িগঙ্গার বুকে। কুষ্ঠরোগীর মতো ময়লা, দূর্গন্ধময় বুক বুড়িগঙ্গার। তবু সেদিকে তাকিয়েই যেন নিজেকে লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো সে। আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো লোকটার দিকে। না, এখন আর তার দিকে তাকিয়ে নেই। নৌকায় জন ছয়েক যাত্রী। একে একে সবার মুখের দিকে তাকালো সে। না, কেউই তার দিকে তাকিয়ে নেই। হঠাৎ তার বিদিশার কথা মনে হলো, তার মেঘপরীর কথা। কী কুক্ষণেই যে সেদিন অমন ছবি তুলতে গিয়েছিল! কিন্তু তার মনে তো কোনো পাপ ছিল না। কোনো অসৎ উদ্দেশে তো সে ছবিগুলো তোলেনি। শুধু লিপিকা আর বন্ধুদের দেখাতে চেয়েছিল। সেই খেয়ালি ইচ্ছার মাশুল তাকে এমন করে দিতে হবে তা সে জানকো না। খেয়ালি মনের দিন কী তবে শেষ হলো!

পৃথিবীর ভেতরে যে আরেকটি অন্তর্জালিক পৃথিবী আছে, সেই পৃথিবীর সাথে লালমোহনের কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টারনেট-ফেসবুক এসব তার কাছে পরিচিত শব্দ মাত্র। এর ব্যবহার সে জানে না। পৃথিবীটাকে তার কাছে নিষ্ঠুর মনে হয়। কিন্ত ইন্টারনেটের এই পৃথিবীটাকে যে মানুষ আরো অধিকতর নিষ্ঠুর করে ছেড়েছে তা এখন সে বুঝতে পারছে। বলা নেই, কওয়া নেই, কেউ একজন তাকে দুম করে আছড়ে ফেলেছে ইন্টারনেটের নিষ্ঠুর পৃথিবীতে-যেখানে কোনো রক্ত ঝরানো ছাড়াই মানুষ খুন করা হয়, যেখানে কোনো স্পর্শ ছাড়াই ধর্ষণ করা হয়! চুরি, ছিনতাই এমন কোনো অপরাধ নেই যা সেখানে হয় না। পাকেচক্রে সেই জগতের মায়াচক্রে পড়ে এখন খাবি খাচ্ছে লালমোহন।
কোথায় পালাবে সে? পালিয়ে যাবে কোথায়? ইন্টারনেট পৃথিবীর দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে, আরেকটু সময় গড়ালে সে যেখানে গিয়েই পালাক না কেন, সেখানকার মানুষেরাই তাকে চিনে ফেলবে, পুলিশে ধরিয়ে দেবে। তা সে জানে। তার চেয়ে ফিরে গিয়ে পুলিশের কাছে প্রকৃত সত্য খুলে বলাই ভাল নয় কি?

নৌকা বুড়িগঙ্গার অপর পারে এসে ধাক্কা লাগলে সম্বিত ফিরলো লালমোহনের। একে একে সব যাত্রী নেমে গেলেও সে দাঁড়িয়েই রইলো। কূল থেকে অন্য দু-জন যাত্রী উঠেও পড়লো নৌকায়। মাঝি তার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনি নামবেন না?’
আকাশে ভাসমান মেঘের দিকে তাকিয়ে সে দৃঢ়কণ্ঠে বললো, ‘না।’


ঢাকা।
মে, ২০১৪।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: লালমোহন আর বিদিশার গল্প। সুন্দর গল্প।
প্রতিদিন কত মোবাইল যে ছিনতাই হয় !!!

চমৎকার গুছানো লেখা।
ভাষা সহজ সরল।

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৭

মিশু মিলন বলেছেন: আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো.............

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬

মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: সুন্দর ছিল ♥

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.