নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-আঠারো)

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮

দুপুরে বারান্দায় বসে বিষন্ন মনে শিরীষ কাগজ দিয়ে ভাস্কর্য ঘষছে আর ক্ষণে ক্ষণে আনমনা হয়ে পড়ছে নীলু। এই বিশ্বসংসারে সময়ের স্রোতে জীবনতরী বেয়ে সে একলা ভেসে যাচ্ছে ভাটির দিকে, তট কিংবা ঘাট অজানা। কোনো সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার নেই। সবাই তার কাছে আসে কিছুক্ষণের জন্য অথবা কয়েকদিনের জন্য। তারা ফিরে যেতেই আবার একলা নীলু। তাইতো কিছুক্ষণের জন্য অথবা কয়েকদিনের জন্য কাউকে কাছে পেলে আঁকড়ে ধরতে চায় সে, আত্মার আত্মীয় মনে হয় তাকে। চলে যাবার পর সে শূন্যতার ঘোরে আচ্ছন্ন থাকে একবেলা, একদিন কিংবা দু-দিন। তখন জীবন অর্থহীন মনে হয়। ঘাসের ডগা চিবোতে চিবোতে খানিকক্ষণ রেললাইন ধরে হেঁটে আসে। চেনা মানুষের সাথে কথা বলে, কথা বলে চেনা গাছ কিংবা ঘাসের সাথেও। ঘন ঘন তাকায় রাঙাবউয়ের বাড়ির দিকে, এক নজর তাকে দেখতে পেলেই বিষাদের ওপর যেন ভাললাগার আবিরের প্রলেপ পড়ে! এরপর কাজের ব্যস্ততায় নিজের অভ্যস্ত জীবনে ফিরলে শূন্যতার ঘোরটা কেটে যায়, মনে হয় এই জীবনই বেশ।

দু-দিন পর আজ সকালে চলে গেছে বিদেশীরা। ওরা চলে যাবার পরও সেই একই রকম অনুভূতি হয়েছে নীলুর। সে ওদের ভাষা বোঝেনি। মনের ভাব যতোটুকু আদান-প্রদান করার শোভন আর আজাদের মাধ্যমেই করেছে। তারপরও ওদের সঙ্গ সে দারুণ উপভোগ করেছে। লরেন্স পেন্সিল দিয়ে তার একটি ছবি এঁকে দিয়েছে। ছবি আঁকার সময় তার খুব মজা লাগছিল, চুপ করে সোজা হয়ে মোড়ায় বসে ছিল সে। মশার কাপড়ে কিংবা শরীরের কোথাও চুলকানোর জন্য একটু নড়লেই লরেন্স বলেছে, ‘Don’t move Nilo, don’t move.’

লরেন্সের মুখে নিজের নামের ভুল উচ্চারণ শুনে খুব হাসি পাচ্ছিল তার। সে ভেবেছিল লরেন্স ছবিটা নিয়ে যাবে। নেয়নি, তাকে দিয়ে গেছে। তবে তার অনেক ছবি তুলে নিয়ে গেছে ক্যামেরাবন্দী করে। লরেন্সের আঁকা ছবিটা যত্ন করে রেখে দিয়েছে সে, ঠিক করেছে শ্যামলের দোকান থেকে কাঁচ দিয়ে বাঁধিয়ে এনে ঘরে টাঙিয়ে রাখবে।

গত কয়েকদিন রাঙাবউয়ের সাথে তার দেখা হয় না। রাঙাবউ দিনে আসেনি, রাতেও না। নিশ্চয় শুনেছে যে তিনজন বিদেশী এসেছে শোভনের সাথে, বিদেশীরা তার এখানেই দিন-রাত আড্ডা দেয়। এজন্যই বোধহয় রাঙাবউ আসেনি। কারণ ওদের আসার কথা গ্রামের সবাই জানে। অনেকেই দেখতে এসেছে ওদেরকে, গ্রামের পথে কিংবা বাজারে গেলে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থেকেছে। গতকাল বিকেলে জুলিয়াকে দেখে লোকে খুব মজা পেয়েছে। জুলিয়া কাল শোভনের মায়ের শাড়ি পরেছিল, শোভনের মা পরিয়ে দিয়েছিল। জীবনের প্রথম শাড়ি পরা তার। শাড়ি পরে সে যখন রেললাইনের ওপর দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাঁটছিল, তখন বার বার ওর আঁচল খসে পড়ছিল।

ওরা তিনজন তার কাছ থেকে তিনটি ভাস্কর্য নিয়ে গেছে। ভাস্কর্যের মূল্য হিসেবে দিয়ে গেছে ছয় হাজার টাকা। সে টাকা নিতে চায়নি। এমনিই উপহার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা জোর করেই দিয়ে গেছে টাকাটা। সে আর কী উপহার দেবে অতিথিদের? তিনজনকে তিনখানা কুমারখালীর গামছা দিয়েছে, আজাদকেও দিয়েছে একখানা। পুকুরে স্নান করার সময় জুলিয়া তার গামছা পছন্দ করেছিল। এজন্য উপহার হিসেবে গামছার কথাই তার প্রথম মনে হয়েছিল। গামছা পেয়ে খুব খুশি হয়েছে ওরা!

বারান্দায় বসে শিরীষ কাগজ দিয়ে ভাস্কর্য ঘষতে ঘষতে আনমনা হয়ে ওদের কথাই ভাবছে নীলু। সাত সমুদ্দুর ওপারের কতো দূরের মানুষ ওরা। বাংলাদেশের এই অঁজো পাড়াগাঁয়ে বেড়াতে এলো। আবার চলেও গেল। আর হয়তো কোনোদিন-ই এদেশে আসবে না। দেখা হবে না আর কোনোদিন ওদের সাথে। কিন্তু যে স্মৃতি ওরা রেখে গেল তা সারাজীবন মনে রাখবে সে। তার ভাবনায় ছেদ পড়লো সাইকেলের বেল শুনে। প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইব্রাহিম; ইব্রাহিমের বাড়ি পঞ্চমী মাসিমার বাড়ির কাছে। ইব্রাহিম প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে বেল বাজানো মানেই মাসিমার কোনো সংবাদ।

সে বললো, ‘আসো ইব্রাহিম ভাই, বসে যাও। মাসিমা কেমন আছে?’
‘না, বসপো না। তুমার মাসিমা কাল সহালে তুমারে যাবার কইছে।’
‘ক্যা?’
ইব্রাহিম ঠোঁট উল্টালো, ‘তা তো জানিনে। কোলো নীলু যেন অবশ্যই আসে।’
‘আচ্ছা, মাসিমারে কোয়ো, আমি সহালেই যাবানে।’
সাইকেলে উঠে বাজারের দিকে চলে গেল ইব্রাহিম।

রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় বসলো নীলু। বাইরে ঠাণ্ডা তবু বসলো, মন যে রাঙাবউয়ের সঙ্গ চাইছে এখন। বারবার তাকাচ্ছে প্ল্যাটফর্মের দিকে। অপেক্ষা করছে রাঙাবউয়ের জন্য। আজ তার মিতের কথাও খুব মনে পড়ছে। মিতেটা সেই যে যাত্রা দেখে গেল আর আসেনি। এই ক’দিন মিতে থাকলে কতো মজা হতো! জুলিয়ারা নিশ্চয় মিতেকে পছন্দ করতো। অথচ মিতে কোথায় আছে কে জানে! এ ক’দিন না হয় না এলো। আজ তো আসতে পারতো। আজ তার বড়ো একা একা লাগছে। মিতে এলে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যেতো। ভেতরে কতো কথা জমে আছে! এ ক’দিনে যা যা হয়েছে, বিদেশীদের সাথে কেমন সময় কাটলো, ওরা কীভাবে খায়, কীভাবে কথা বলে, কীভাবে তাকে ‘নিলো’ বলে ডাকে, সব কথা জমে আছে। অথচ আজ মিতে তো এলোই না, রাঙাবউও না। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো নীলু।

ঘুম থেকে উঠেই গায়ে সরিষার তেল মাখতে লাগলো নীলু। স্নান করতে যাবে। যেতে হবে পঞ্চমী মাসিমার বাড়িতে। আজ কুয়াশা তেমন গাঢ় নয়। হালকা রোদ উঠেছে। কিন্তু শীত পড়েছে বেশ। পুকুরের ধোঁয়া ওঠা জলে পা দিতেই সারা গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নীলুর। পায়ের যে অংশটুকু জলে ডুবিয়েছে, মনে হচ্ছে সেটুকু জমে গেছে। প্রথম ডুবটা দিতে পারলেই হয়, তারপর আর ভয় নেই। শীত সয়ে যায় তখন। গা দিয়ে ধোঁয়া বের হয়। কী অদ্ভুত! আগুন আর জল ঈর্ষাকাতর দুই সতীন, আবার দু-জনেরই ধোঁয়া আছে! আগুনের বারোমাস, জলের শুধু শীতকালে। ভাবতে ভাবতেই ঢুপ ঢুপ করে পরপর তিনটে ডুব দিলো সে। কয়েক মুহূর্ত শরীরের গোপনে-সদরে কসাইয়ের ছুরি চালানোর মতো গতিতে হাত চালিয়ে আরও দুটো ডুব দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় তার চোখে পড়লো নৌকা নেই! নৌকা কি চুরি হয়ে গেল? নাকি কেউ শয়তানি করে ডুবিয়ে দিয়েছে জলে? ভাবলো, এখন থাক, কাল দুপুরে স্নান করার সময় খুঁজে দেখবে। জল থেকে কাঁপতে কাঁপতে উঠে পড়লো সে।

নীলু পঞ্চমী মাসিমার বাড়িতে গিয়ে দেখলো ইতুপূজা ব্রত’র আয়োজন চলছে। ইতুপূজা ব্রতকে এদিকের মানুষ বলে চুঙোই পুজো, দোলো পুজোও বলে থাকে কেউ কেউ, দাঁত খোয়ানো কোনো কোনো দিদিমা কিংবা ঠাকুমার মুখে শুনতে পাওয়া যায়-দুঃখে পুজো; আবার কিছু এলাকার মানুষ বলে চুঙ্গির পুজো।

ইতুপূজা ব্রত একেবারেই বাঙালির নিজস্ব আচারানুষ্ঠান; অবৈদিক, অপৌরাণিক, অব্রাহ্মণ্য পূণ্যপুুকুর ব্রত, সন্ধ্যামণি ব্রত, জয়মঙ্গলের ব্রত, কুলকুলটি ব্রত, যমপুকুর ব্রত, তারণ ব্রত, মাঘমণ্ডল ব্রত, ইতুকুমার ব্রত, বসন্ত রায় ব্রত, নখছুটের ব্রত প্রভৃতি বাঙালির আরো অনেক ব্রত’র মতোই ইতুপূজা ব্রতও ব্রা‏হ্মণ কর্তৃক স্বীকৃত নয়। প্রাচীন কালে বাংলায় আগত আর্য ব্রাহ্মণরা তাদের নিজস্ব যাগযজ্ঞ-আচার অনুষ্ঠান বাঙালির ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু বাঙালির নিজস্ব আচারানুষ্ঠানকে তারা বর্বরতা আখ্যা দিয়ে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। ব্রতচারী বাঙালিকে তারা করেছে ব্রাত্য। তবে স্বীকৃতি দিতে না চাইলেও কখনো কখনো বাঙালির বিদ্রোহী মনোভাব লক্ষ্য করে, নিজেরদের অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির কথা চিন্তা করে বাঙালির কিছু কিছু আচারানুষ্ঠানকে তারা স্বীকৃতি দিয়েছে এবং উক্ত আচারানুষ্ঠানের পৌরহিত্য পালন করেছে। যেমন- ষষ্টী ব্রত, শিবরাত্রি ব্রত, মঙ্গলচণ্ডী ব্রত, সুবচনী ব্রত, সুখরাত্রি ব্রত, কোজাগর-পূর্ণিমা ব্রত ইত্যাদি। তবুও ব্রা‏হ্মণ কর্তৃক অস্বীকৃত অনেক ব্রত বংশ পরম্পরায় এখনো টিকে আছে, যার একটি ইতুপূজা ব্রত।

পঞ্চমী মাসিমা বাড়িতে যে আয়োজনই করেন না কেন, খবর পাঠিয়ে নীলুকে তিনি আনবেনই। ওকে দেখেই খুব খুশি হলেন মাসিমা। মুখে হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘বাবা আইচিস? দুই দণ্ড বসে কয়খান কলাপাতা আর নলখাগড়া কাটে নিয়ে আয়।’

এ বাড়ির কোথায় কোন গাছ আর কোথায় কিসের বাগান, তা নীলুর অজানা নয়। সে বাগান থেকে বিচিকলার পাতা আর নলখাগড়া কেটে প্রক্রিয়াজাত করে ধুয়ে এনে পূজারীদের কাছে রাখলো। হাত-পা ধুয়ে এসে ঘরে গিয়ে টেলিভিশন চালিয়ে রিমোর্ট নিয়ে বারান্দার খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসলো। বারান্দায় বসেই টেলিভিশন নজরে আসে। বিটিভি’তে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ম্যাচ দেখাচ্ছে সরাসরি। রান্নাঘরে কয়েকজন নারী মিলে চুঙোই পূজার বিশেষ প্রসাদ ‘দোলো’ রান্না করছে, চিনি-গুড় বিহীন সাদা রঙের দোলো, পূজার পর খেঁজুরপাটালি দিয়ে খাবে ব্রতচারিণী এবং অন্যরা। রান্নাঘর থেকে দোলোর ঘ্রাণ ভেসে আসছে বাতাসে।

তুলসীতলার কাছে কাদামাটির আলাদা আসন বানিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মাসিমা কয়েকটি ঘট আর পাতাসহ নলখাগড়ায় সিঁদুরের ফোঁটা দেবার পর ঘট আসনে বাসিয়ে ঘটের ভেতর রাখলেন নলখাগড়া। একজন মধ্যবয়সী মাসিমার পিছনে বসে ফল কেটে কেটে সাজিয়ে রাখছেন পরাতে, আরেকজন আঁতপচাল মাখানোয় ব্যস্ত। যুবতী এক বধু তাদেরকে এটা-সেটা এগিয়ে দিচ্ছে, কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ঘর থেকে এনে দিচ্ছে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের এক নারী হাতের পরাতে ফলমূল এবং আরো কিছু প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে পাশের বাড়ি থেকে আসতেই যুবতী বধু তার সঙ্গে রসিকতা করলো তার বিলম্বিত আগমনের জন্য। এরই মধ্যে অন্য দু-জন নারী রান্নাঘর থেকে দোলো এনে কলাপাতায় ভাগ ভাগ করে ঢাললেন, সাতজন ব্রতচারিণীর জন্য সাত ভাগ। আর যারা ব্রতচারিণী নয়, অর্থাৎ ব্রতচারিণীদের ছেলে-মেয়ে কিংবা নিকটজন তাদের দোলো পাত্রে রাখা হয়েছে, ব্রত শেষে পরিবেশন করা হবে কলাপাতায়।

সব আয়োজন শেষে পূজায় বসলেন পঞ্চমী মাসিমা। ইতুপূজা ব্রত ব্রাহ্মণ কর্তৃক স্বীকৃত নয় বলে কোনো ব্রাহ্মণ পুরোহিত পৌরহিত্য করেন না। কয়েকজন নারী একসঙ্গে পূজার আয়োজন করেন যে কোনো একজনের বাড়িতে। তাদের মধ্য থেকেই একজন পূজা করেন। পূজা শেষে পূজারি ব্রতকথা বলেন। ব্রতকথাকে এদিকের কেউ বলেন বেতকতা, বেত্তকথা, কেউবা বলেন শাস্তর। বরাবরই মাসিমার বাড়িতে ইতুপূজা ব্রত’র আয়োজন করা হয় এবং তিনিই পূজা করেন ও ব্রতকথা বলেন। ব্রতচারিণীদের ছোটো ছোটো যেসব ছেলে-মেয়েরা এতোক্ষণ বাড়িময় দৌড়-ঝাঁপ করছিল; কেউ কেউ খেলছিল, কেউবা গাছে ঝুলছিল; পূজা শুরু হতেই তারা সবাই ঘন হয়ে এসে বারান্দায় বসে কেউ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলো, কেউবা নিজেদের মধ্যে শুরু করলো আষাঢ়ে গল্প। একজন প্রৌঢ়া ধমক দিয়ে আষাঢ়ে গল্পকারদের থামালেন।

মাসিমা গলায় বস্ত্র জড়িয়ে পূজা শুরু করলেন। ছয়জন ব্রতচারিণী ফুল-দূর্বা হাতে নিয়ে বসেছেন মাসিমার পিছনে। ফুল-দূর্বা ছিটিয়ে পূজা করছেন মাসিমা। নিউজিল্যান্ডের উইকেট আরেকটা পড়লো; নীলু আগে থেকেই টেলিভিশন মিউট করে রেখেছে, তাই উইকেট পতনের উল্লাস কানে বাজলো না, বারান্দায় বসা কচিকাঁচার দল ধমকের ভয়ে নিঃশব্দে নিজেদের মধ্যে আনন্দ প্রকাশ করলো। মাসিমা সর্বশেষ ফুল-তুলসী-দূর্বা ঘটে ছিটিয়ে প্রণাম করে অন্য ব্রতচারিণীদের উদ্দেশে ব্রতকথা বলতে শুরু করলেন-

‘এক দ্যাশে ছিল এক গরিব বাওন। তার ছিল মা মরা ছোট ছোট দুডে মিয়া, উমুনে আর ঝুমুনে। পুজো-পার্বণ করে যা আয়-রোজগার হতো তাই দিয়েই সুংসার চালাতো বাওন। পুজো-পার্বণের কামে বাওন সারাদিন বাইরে বাইরেই থাহে। এদিক মিয়া দুডের সে কী কষ্ট! দুই বুনি মিলে-ঝিলে রান্না করে খায়। আজ একজনের হাত পোড়ে তো কাল আরেকজনের পাও পোড়ে। শ্যাষে মিয়া দুডের কষ্ট সহ্য করবার না পারে বাওন আবার বিয়ে করলো। যাতে সতাই মা আসে মিয়াগের দেহেশুনে রাকপার পারে। কিন্তু সতাই মা আসে কী অলো? মিয়াগের দুঃখ-কষ্ট আরও বাড়লো। সতাই মা মিয়া দুডের মোটে দ্যাকপার পারে না। খালি মিয়াগের দিয়ে কাম করায় কিন্তু খাবার দেয় না ঠিক মতোন। বাওন আয় রোজগার করে যা আনে, তা সতাই মা নিজি খায় আর তারে খাওয়ায়। ক্ষিদের জ্বালায় মিয়া দুডে মনের দুঃখে বনে-জঙ্গলে ঘোরে আর ফল টল কুরোয়ে-টুরোয়ে খায়। কিছুদিন পর সতাই মা’র এক ছাওয়াল অলো। সেই ছাওয়ালডা আবার দিদিগের বেজায় ভক্ত। এহেবারে দিদি বিনে অজ্ঞান! উমুনে-ঝুমুনেও ভাইডারে খুব আদর করে। সতাই মা তার ছাওয়ালডারে এতো ভাল-মন্দ খাওয়ায়, তাও ছাওয়ালের স্বাস্থ্য ভাল অয় না। কাঠির মতো শুকনো। আর উমুনে-ঝুমুনের খাবার দেয় না। তারা বনে-জঙ্গলে ঘুরে কী-সব ছাই-ছাতা খায় তাও তাগের শরীল কতো ভাল! সতাই মা হিংসেয় জ্বলে মরে। উমুনে-ঝুমুনেরে মারধর করে। তারপর একদিন ছোট ভাইতি উমুনে-ঝুমুনেরে জিজ্ঞেস করলো, “এ দিদি, মা তোগের খাবার দেয় না, তাও তোগের শরীল কতো ভাল। আর আমারে এতো ভাল-মন্দ খাওয়ায় তাও আমার শরীল খারাপ। তোরা কী খাস রে?”

উমুনে-ঝুমুনে কোলো, “কী আর খাব রে ভাইডি, গাছের লতা-পাতা খাই!”
ভাইতি যদি মা’র কাছে কোয়ে দেয়, এই ভয়ে উমুনে-ঝুমুনে ভাই’র কাছে মিত্যে কতা কয়। কিন্তু ছোট ভাই মাঝে মাঝেই দিদিগের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে, “এ দিদি, সত্যি কতা ক তো, তোরা কী খাস?”

শ্যাষে ছোট ভাই’র কতা শুনে উমুনে-ঝুমুনের মায়া অলো। তারা পরদিন বনে যাওয়ার সময় ভাইরে নিয়ে গেল। আর ছোট ভাইরে সাবধান করে দিলো, “মা’র কাছে কিন্তু কোসনে।”

ভাই দ্যাহে তার দিদিরা মাকাল ফল খায়। সেও দিদিগের সাথে প্যাট ভরে মাকাল ফল খায় আর কয়, “কী সুন্দর মিষ্টি ফল রে দিদি! এই জন্যে তোগের শরীল এতো ভাল!”

মাকাল ফল তহন মিষ্টি’ই ছিল। তারপর বাড়ি ফিরে মা খাবার ডাকলি ভাইতি কোলো, “আমার ক্ষিদে লাগে নাই, খাব না।”
মা কয়, “খাবিনে ক্যা, তুই কী খাইছিস?”

ভাই আর কয় না। শ্যাষে মা’র হাতে মারধর খায়ে ভাই সত্যি কতা কোয়ে দিলো। শুনে মা তো হিংসেয় বেজায় আগুন! সাথে সাথে বনে চলে গেল। বনে যায়ে সব মাকাল ফলের মইদ্যে ছাই ভরে থুয়ে আসলো। আর কোয়ে আসলো, “মাকাল ফল তুমার ভিতরে যেন আর মিষ্টি না থাহে। ছাই-ই যেন থাহে।”

পরদিন উমুনে-ঝুমুনে মাকাল ফল খাবার যায়ে দ্যাহে মাকাল ফলের মইদ্যে ছাই। যেইডে ছিঁড়ে খাবার যায়, সেইডের মইদ্যেই ছাই। খালি ছাই আর ছাই। সেই কারণেই আজও মাকাল ফলের মইদ্যে ছাই!’

এই পর্যন্ত বলে মাসিমা সাদা থানে চোখের জল মুছলেন, নাক টানলেন। তার পিছনে বসা ব্রতচারী নারীদের মধ্যে কারো চোখ ছলছল করছে, কারোবা অধরে জলের ধারা নেমেছে, উমুনে-ঝুমুনের দুঃখে তাদের অন্তর বিদীর্ণ হয়েছে। তাদের চোখে এখন ভাসছে জনম দুঃখিনী উমুনে-ঝুমুনের ছবি। বারান্দায় বসে থাকা কচি-কাঁচাদের চোখও চলছল করছে, ওরা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে নিজেদের মা-কাকিমা-দিদিমাদের দিকে, কিন্তু ওদের মনটা হয়তো উমুনে-ঝুমুনের কাছে!

মাসিমার ব্রতকথা বলার ঢঙটি দারুণ শৈল্পিক! মহাভারতে উল্লিখিত, ব্যাসের বরে সারথী সঞ্জয় যেমনি দিব্যচক্ষুলাভ করে রাজপ্রাসাদে বসেই দিব্যচক্ষু দ্বারা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন আর যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করে শুনিয়েছেন অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে; তেমনি মাসিমাও যেন দিব্যচক্ষু দ্বারা ব্রতকথার দৃশ্যগুলো একের পর এক দেখছেন আর বর্ণনা করছেন! গল্পবলা এতোটাই সাবলীল যে শ্রোতাদের মনোযোগ ছুটে যাবার উপায় নেই। শ্রোতাদের জল ছলছল চোখ মাসিমার দিকে আর মন উমুনে-ঝুমুনের দিকে। আগে হলে এই দৃশ্য নীলুকেও সংক্রমিত করতো, কিন্তু নীলু এখন অন্য নীলু। সে ব্রতচারিণীদের দিক থেকে দৃষ্টি ফেরায় টেলিভিশনের দিকে। বাংলাদেশের স্পিনের সামনে ধুঁকছে নিউজিল্যান্ড। মাসিমা আবার শুরু করলেন-

‘তারপর, উমুনে-ঝুমুনের আবার সেই আগের মতোই খাবার কষ্ট শুরু অলো। সতাই মা খাবার দেয় না। উমুনে-ঝুমুনে বনে বসে কাঁদে। বাওনও এসব জানে কিন্তু বউরে ভয় পায় বলে কিছু কবার পারে না। শ্যাষে মিয়াগের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করবার না পারে বাওন একদিন কোলো, “মণিরে চল, তোগের মাসিবাড়ির তে বেড়ায়ে নিয়ে আসি।”

বাপের কথা শুনে উমুনে-ঝুমুনে কোলো, “মা বাঁচে থাকতি তো কোনোদিন শুনলাম না যে আমাগের মাসিবাড়ি আছে। এহন আবার মাসিবাড়ি অলো ক্যামনে?”
বাওন কোলো, “আছে। চলতো আমার সাতে।”

উমুনে-ঝুমুনে বাপের কতা বিশ্বেস করলো। পরদিন খুব সহালে বাওন উমুনে-ঝুমুনেরে সাতে নিয়ে মাসিবাড়ির উদ্দেশে রওনা করলো। যাতি-যাতি, যাতি-যাতি, বন-জঙ্গল নদী-নালা পার অয়ে মেলা দূর চলে গেল। উমুনে-ঝুমুনে কোলো, “বাবা, আর কদ্দুর?”
বাওন কোলো, “এই তো আর দুই গিরাম পরে।”

সেই দুই গিরাম আর শ্যাষ অয় না! আরো কতো গিরাম আর মাঠ পাড়ি দেয় তাও পথ শ্যাষ অয় না।
উমুনে-ঝুমুনে আবার কোলো, “বাবা, মাসিবাড়ি আর কদ্দুর?”
বাওন কোলো, “ঐ যে দূরি এট্টা বটগাছের মাতা দ্যাহা যাতেছে, তার পরের গিরামে তোর মাসিবাড়ি।”

হাঁটতি হাঁটতি মিয়া দুডে দূর্বল অয়ে পড়লো। বটগাছের নিচে আসে বাওন কোলো, “সামনেই তো তোগের মাসিবাড়ি। আয় বটগাছের নিচে বসে এট্টু জিরেয়ে নেই।”

উমুনে-ঝুমুনেরও পাও লাগে গেছে। বাবার কতায় বটগাছের নিচে বসে পড়লো তারা। বেজায় কিলান্ত শরীল। বসার সাতে সাতেই ঝিমুনি আসে গেল দুই বুনির। বাবার কোলের ওপর দুই বুনই ঘুমায়ে পড়লো। তারপর বাওন আস্তে করে উমুনে-ঝুমুনের মাতা কোলের তে মাটিতি নামায়ে নিজির হাত কাটে রক্ত ছড়ায়ে থুয়ে বাড়ি ফিরে গেল। সন্ধের সময় ঘুম ভাঙলো উমুনে-ঝুমুনের। ঘুমের তে উঠে দ্যাহে বাবা নাই, চারপাশে রক্ত ছড়ানে! উমুনে-ঝুমুনে ভাবলো তাগের বাবার বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। দুই বুন বাবার জন্যে খুব কাঁদলো। কাঁদতি কাঁদতি রাত অয়ে গেল। দুই বুন রাত্তির করে আর কনে যাবি! শ্যাষে বটবিরিক্ষের কাছে মিনতি জানালো- “বটবিরিক্ষ তুমি যদি সত্যি অও তয় দুই ভাগ অও, আমাগের তুমার প্যাটে আশ্রয় দাও।”
বটবিরিক্ষ দুই ভাগ অলো, উমুনে-ঝুমুনে বটবিরিক্ষের প্যাটে আশ্রয় নিলো। তারপর সহালবেলা পাখ-পাহালির ডাক শুনে ঘুম ভাঙলি দুই বুন বটবিরিক্ষের কাছে আবার মিনতি জানালো-“বটবিরিক্ষ তুমি যদি সত্যি অও তয় দুই ভাগ অও, আমরা বাইর অই।”

বটবিরিক্ষ দুই ভাগ অলো। উমুনে ঝুমুনে বাইরে আসলো। ততোক্ষণে ক্ষিদেয় ওগের প্যাটের মইদ্যে জ্বালা-পুড়া শুরু অয়ে গেছে। হাঁটতি হাঁটতি এক গ্রামের মইদ্যে আসলো দুই বুন। দেকলো পুষ্কনির ঘাটে এক বুড়ি কাপড় ধুতেছে। দুই বুনি যায়ে বুড়ির হাতে-পায় জড়ায়ে ধরলো, “ও মাসি, তুমি আমাগের আশ্রয় দাও। তুমি আমাগের মাসি।”

বুড়ি ধোপানি। বাড়ি বাড়ি কাপড় ধুয়ে খায়। বুড়ি কোলো, “আমার কোনো বুনঝি আছে বলে তো শুনি নাই। শুনছি আমার বুনরা তো কবেই মরে গেছে।”

উমুনে-ঝুমুনে বুড়ির হাত-পাও ছাড়লো না, কোলো “না, তুমিই আমাগের মাসি। মা মরার আগে কোয়ে গেছে, ওমুক গাঁয়ে তোগের মাসি আছে তোরা তার কাছে যা। এহন তুমি ছাড়া আমাগের আর কেউ নাই।”

অচেনা বুনঝিগের জন্যে বুড়ির মায়া অলো খুব। চোখ ফাটে জল আসলো বুড়ির। মরা বুনির জন্যেও খানিকক্ষণ কাঁদলো। তারপর উমুনে-ঝুমুনে আশ্রয় পালো বুড়ির বাড়ি। বুড়ি বাড়ি বাড়ি কাপড় ধুয়ে যা পায় তাই দিয়েই তিনজনের কোনোমতে খায়ে-প’রে চলে যায়।
তারপর, একদিন এক রাজা আর এক মন্ত্রী শিকারে আইছে। শিকারের পাছে পাছে ছুটতি ছুটতি তাগের জল পিপাসা পাইছে। কাছে-পিঠে কোনো জায়গা জল পায় না। শ্যাষে খুঁজতি খুঁজতি আইছে বুড়ির বাড়ি। ঘরের সামনে দাঁড়ায়ে রাজা কোলো, “বাড়ি কেউ আছেন? আমাগের বড্ড পিপাসা পাইছে। এট্টু জল খাব।”

বুড়ি তহন বাড়ি নাই, ঘাটে কাপড় ধুবার গেছে। উমুনে আর ঝুমুনে বাড়ি। রাজার ডাক শুনে উমুনে বাইরে আসে; জল খাওয়ায়। ঝুমুনেও আসে। রাজা আর মন্ত্রী জল খায়ে চলে যায়। কয়দিন পরই বুড়ির বাড়ি পেয়াদা আসে হাজির। তারা খবর নিয়ে আইচে রাজা আর মন্ত্রী উমুনে আর ঝুমুনেরে বিয়ে করবার চায়। বুড়ি তো মহা খুশি! উমুনে-ঝুমুনেও খুশি! বিয়ে ঠিক অয়। রাজা পেয়াদা পাঠায়ে বুড়ির বাড়ি সাজায়। বুড়িরে খরচের টাহা-পয়সা পাঠায়। মহা ধুমধামে রাজার সাথে উমুনে আর মন্ত্রীর সাথে ঝুমুনের বিয়ে অয়। শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় বুড়ি উমুনে-ঝুমুনের কানে কানে কয়ে দিলো, “মারে, তুরা কিন্তু চুঙোই পুজো করিস।”

উমুনে ভাবলো আমি রাজার বউ। রাজার কতো টাহা-পয়সা। আমি ক্যা চুঙোই পুজো করবো! শ্বশুর বাড়ি যাবার সময় সে বুড়ির চুঙোই পুজোর ঘটের জল দিয়ে পাও ধুয়ে গেল। পথে যাতি যাতি-ই রাজার দুডে ঘোড়া আর এট্টা হাতি মরে গেল। রাজার বেজায় মন খারাপ, এতো আয়োজন করে বিয়ে করলো অথচ নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার আগেই হাতি-ঘোড়া মরে গেল! দেখতি দেখতি কিছুদিনের মইদ্যে রাজার অবস্থা খুব খারাপ অয়ে গেল। জমিজমা সব বেহাত অয়ে গেল। তরতাজা হাতি-ঘোড়া বেঘোরে মরলো। খুব গরিব অয়ে গেল রাজা। রাজার শরীলও খুব খারাপ অয়ে গেল, অসুস্থ অয়ে ঘরে পড়ে গেল রাজা।

ওদিক মন্ত্রী তহন আলাদা রাজ্য গড়ে রাজা অইচে। তার অবস্থা দিনকে দিন উন্নতির পথে। ধাই ধাই করে বাড়বার লাগলো বিত্ত-বৈভব!
আর অভাবের চোটে আগের রাজার সংসার আর চলে না। রাজার ছাওয়াল দুডেও খাবার পায় না ঠিক মতো। একদিন উমুনে ছাওয়াল দুডেরে ডাহে কোলো, “মণিরে আমাগের তো অভাবের সুংসার। তুরা অমুক রাজ্যে যা। সেই রাজ্যের রানি তোগের মাসি। তুরা কয়দিন মাসি বাড়ি যায়ে মণ্ডা-মিঠাই খায়ে আয়গে।”

উমুনের দুই ছাওয়াল যায়ে উঠলো তার মাসি বাড়ি। ঝুমুনে বুনপুতগের পায়ে বেজায় খুশি! তাগের খুব খাতির-যত্ন করলো, খাওয়ালো-দাওয়ালো। বেশ কয়দিন কাছে রাহে আদর-যত্ন করলো। তারপর যাবার সময় দুই বুনপুতির কাছে অনেক খাবার-দাবার দিয়ে দিলো। দুই ভাই হাঁটতি হাঁটতি বাড়ি ফিরতেছে। কিন্তু মদ্যিপথে তাগের সেই খাবার-দাবার কাড়ে নিলো এক বুড়ি। কাড়ে নিয়ে ছাওয়াল দুডের গায় ছাই-ভস্ম মাহায়ে দিলো। সেই বুড়ি আসলে চুঙোইদেবী, ছদ্মবেশ ধারণ করছিল। তারপর কাঁদতি কাঁদতি বাড়ি আসলো ছাওয়াল দুডে। দুই ছাওয়ালের গায় ছাই-ভস্ম দেহে উমুনে তো খুব রাগে গেল। ছোট বুনরে শাপ-শাপান্ত করবার লাগলো। তারপর ছাওয়ালরা কোলো, “মা মাসির কোনো দোষ নাই। মাসি আমাগের অনেক কিছু দিছিলো। পথে এক বুড়ি আমাগের মারে সব কাড়ে নিয়ে গেছে।”

কয়দিন পর উমুনের দুই ছাওয়াল আবার গেল মাসি বাড়ি। এবার ঝুমুনে বুনপুতগের কাছে জিজ্ঞেস করলো, “হ্যারে মণি, তোগের অবস্থা তো ভাল ছিল। এতো খারাপ অলো ক্যামবা? তোর মা চুঙোই পুজো করে না?”

ছাওয়ালরা উত্তর দিলো, “চুঙোই পুজো? সে আবার কেমন ধারা পুজো? মা তো চুঙোই পুজো করে না।

ঝুমুনে কোলো, “একদিন রবিবার-বিষ্যুদবারের আগে তোর মা’র নিয়ে আবার আসিস।”

ছাওয়াল দুডে আবার অনেক খাবার-দাবার নিয়ে রওনা হলো বাড়ির দিক। আবারও সেই বুড়ি মদ্যিপথে তাগের মারে সব খাবার-দাবার কাড়ে নিয়ে গেল। আবারও ছাওয়ালরা কাঁদতি কাঁদতি বাড়ি ফিরলো।

তারপর একদিন বিষ্যুদবার প্যাঁচায়ে দুই ছাওয়াল মারে নিয়ে মাসিবাড়ি গেল। দুই বুন অনেকদিন পর একজন আর একজনরে পায়ে কাঁদলো, সুখ-দুকখির প্যাঁচাল পাড়লো। তারপর ঝুমুনে উমুনেরে কোলো, “দিদি কাল কিন্তু তুই খাবিনে। উপোস থাকপি।”

পরদিন সহালে উঠে ঝুমুনের ঘরে অনেক খাবার দেহে উমুনের আর সহ্য অলো না। সে চিড়ে, মুড়ি, দই-খই নিয়ে খাবার বসে গেল। ঝুমুনে চান কোরে আসে দেখলো উমুনে খাতেছে। ঝুমুনে কোলো, “কী রে দিদি, তোরে না কলাম উপোস থাকপার?”

উমুনে তহন কোলো, “আরে... বুন, আমার মনে নাই!”
ঝুমুনে তহন কোলো, “আচ্ছা আজ খাইছিস খাইছিস, রবিবারের দিন কিন্তু তুই খাবিনে।”

রবিবারের দিন খুব সহালে উঠে দুই বুন গেল চান করবার। চান করে আসে উমুনেরে পুজোর জিনিস-পত্তর গুছাবার দিয়ে ঝুমুনে গেল অন্য কামে। খানিক পর ঝুমুনে আসে দ্যাহে উমুনে পুজোর ফল-মূল গুছাতেছে আর খাতেছে।
ঝুমুনে কোলো, “কিরে দিদি, তোরে দিলাম পুজোর জিনিস-পত্তর গুছাবার। আর তুই খাতেছিস?”

এদিনও পুজো অলো না। শ্যাষে পরের বিষ্যুদবারে ঘুমের তে উঠেই উমুনের চুলির সাথে ঝুমুনে নিজির চুল বাঁধে রাখলো। ঝুমুনে যেদিক যায়, উমুনেও সেদিক যায়। চুল বাঁধা অবস্থায়-ই দুই বুনি চান করে আসলো। পুজোর জিনিস-পত্তর গুছালো। তারপর পুজো দিলো। পুজো শ্যাষে অনেক জিনিস-পত্তর, খাবার দাবার দিয়ে বুন আর বুনপুতগের বাড়ি পাঠালো ঝুমুনে। আর কোয়ে দিলো, “দিদিরে বাড়ি যায়ে তুই কিন্তু চুঙোই পুজো করিস, তালি তোর কোনো দুঃখ থাকপিনে।”

বাড়ি আসে উমুনেও চুঙোই পুজো করা শুরু করলো। তারপর আবার রাজা সুস্থ হলো। জমিজমা, হাতি-ঘোড়া ফিরে পালো। রাজ্য আবার আগের মতো ভরপুর হয়ে উঠলো। তারপর তে-ই রাজ্যের ঘরে ঘরে চুঙোই পুজো শুরু অলো। চুঙোই পুজো করলি পুত্রহীনের পুত্র অয়, নির্ধনের ধন অয়, অব্বিয়েতর বিয়ে অয়, নিঃসন্তানের সন্তান অয়, অভাগীর সুখ অয়!’

মাসিমার ব্রতকথা শেষ হলে সকল ব্রতচারিণী একযোগে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। সকলেরই চোখে জলের ধারা, কিন্তু মুখে তৃপ্তির আভা; উমুনে যে তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছে, দুই বোন সকল দুঃখ-কষ্ট জয় করে যে সুখ-শান্তির দেখা পেয়েছে!

এই সকল সহজ-সরল গ্রাম্য নারীরা এসব লোকগাঁথা বিশ্বাস করে। এরা বিশ্বাস করে যে চুঙোইপূজা বা ইতুপূজা করলে সংসারে অভাব থাকে না। অথচ এদের বেশিরভাগই সকাল থেকে রাত অব্দি হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, তবু সংসারের অভাব দূর হয় না। চৈত্রমাস এলেই এইসব গ্রামের অধিকাংশ বর্গাচাষীদের ঘরের ধান ফুরিয়ে যায়, তখন ধারকর্জ করে অথবা কামলা খেটে অনেক কষ্টে চাল কিনে খেতে হয় বৈশাখের নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত। তখন অনেকেই সস্তা লাল গম কিনে ভাঙিয়ে রুটি খায়, আবার অনেককেই আধপেটা হয়ে থাকতে হয়। তখন এইসব জনপদে, দরিদ্র কৃষকদের সংসারে, কোথাও ইতুদেবীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। দরিদ্র ঘরের বউয়েরাই ইতুদেবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ধার-কর্জ করে, স্বামীর অল্প রোজগার দিয়ে এভাবে-সেভাবে সংসার চালায়। তবু এরা বিশ্বাস করে বারোমাসে তেরো পার্বণ করে। এই বিশ্বাস তারা পেয়েছে তাদের মা-মাসিদের কাছ থেকে। এরা আবার একই বিশ্বাসের বীজ বুনে দিয়ে যাচ্ছে এদের কচি মেয়েদের মধ্যে। ব্রতকথা শুনে আজকের এই কচিকাঁচাদের চোখ চলছল করছে, একদিন হয়তো ওদের চোখ থেকেও অঝোরে জল ঝরে পড়বে উমুনে-ঝুমুনের জন্য!

বিশ্বাসী এইসব নারীদের সঙ্গে নীলু রাঙাবউকে মিলিয়ে দ্যাখে। মেলে না, একেবারেই আলাদা রাঙাবউ। সংসারে থাকে বলে সামাজিকতার কারণে রাঙাবউকেও কিছু কিছু পূজা-পার্বণ করতে হয়। কিন্তু সেসব বাধ্য হয়ে করে সে, মন থেকে নয়। তপন মদ খায়, অন্য মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে, আবার বাড়িতে পূজা-পার্বণও করা চাই নিয়ম মতো!

ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করার এক আশ্চর্য মনের জোর রাঙাবউয়ের। নীলু আগে মাঝে মাঝে বলতো, ‘ভগবানকে অস্বীকার করার মতো এতো মনের জোর কনে পাও রাঙাবউ?’

রাঙাবউ বলতো, ‘মনকে মুখ থুবড়ে ফেলে রাখতি নেই সখা। মুখ থুবড়ে ফেলে রাখলি অন্ধবিশ্বাস পোকার মতো ছেঁকে ধরে। মাঝে মাঝে প্রচলিত বিশ্বাসের উল্টোপিঠটাও দেখতি হয় মনে জ্ঞানের আলো ফেলে।’
রাঙাবউ আবার বলতো, ‘তুমি এতো ভয় পাও কেন বলতো?’

নীলু বলতো, ‘ভয় কী আমি এমনি এমনি পাই রাঙাবউ, জানিনে কোন জনমের পাপের ফল আমি এই জনমে ফল ভোগ করতেছি। এজনমেও যদি পাপ করি, তার ফল যদি পরজনমে আবারও আমারে ভোগ করতি হয়!’

‘সন্তান কোনো অন্যায় করলি বাবা বকাবকি করে, দুই-একটা চড়-থাপ্পড়ও মারে, তাই বলে বাবা কী সন্তানের অঙ্গহানি করে সখা!’ রাঙাবউয়ের কঠোর যুক্তি।

নীলু আবার বলতো, ‘পরকালের বিচারে ভগবান যদি তোমাকে বলে যে তুমি আমাকে মানো নাই কেন?’
‘বিচার সভায় সকলের সামনে পাছার কাপড় উদলো করে মারের দাগ দ্যাখায়ে কবোনে, সোয়ামিতি যখন আমারে পশুর মতো মারতো, তখন তুমি কনে ছিলে? এখন বিচার করতি আসিছ!’

নীলু রাঙাবউয়ের এইসব কথায় বিস্ময় বনে যায়। কোথায় পায় রাঙাবউ এই শক্ত কথার যুক্তি! তার কেবলই মনে হয় বড় অপাত্রে পড়েছে রাঙাবউ। যেন মেষের মুখের আশ্চর্য সুন্দর ফুল সে; মেষ না নিতে জানে ফুলের ঘ্রাণ, না বোঝে ফুলের সৌন্ধর্য, কেবল ক্ষুধা নিবারণ করতে জানে!

একসময় নীলুও এসব গ্রাম্য লোকগাঁথা বিশ্বাস করতো। এখন আর করে না। এমনিতেই শম্বুকবধের আখ্যান জানার পর থেকে রামের প্রতি তীব্র অভিমানে তার ঈশ্বর বিশ্বাস সংশয়ের মুখে পড়েছিল। তার ওপর শোভন আর রাঙাবউ মাঝে মাঝেই তার অন্ধবিশ্বাসের গলিতে আলো ফেলে ফেলে তার ঈশ্বর বিষয়ক সংশয় অনেকটাই দূর করেছে। শোভন তাকে বুঝিয়েছে, ‘রাম বলো আর কৃষ্ণ বলো এরা কখনোই ঈশ্বরের অবতার নয়। ঈশ্বরের অবতারের ব্যাপারটি মানুষের বানানো কাল্পনিক আখ্যান। রাম-কৃষ্ণ এরাও আমাদেরই মতো দোষে-গুণে সমৃদ্ধ রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। মানুষ এদেরকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে ভেবেছে। আর মানুষের কল্পনাপ্রসূত এক ভ্রান্ত ধারণার নাম ঈশ্বর!’

এখন আর কোনো ব্যাপারেই ঈশ্বরকে ডাকে না নীলু, ডাকার প্রয়োজনও বোধ করে না। কেননা সে উপলব্ধি করেছে যে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান থেকে শুরু করে সকল সমস্যার সমাধান তাকেই করতে হয়। সংটকালে ঈশ্বর বা ঈশ্বরের প্রেরিত কোনো দেবদূত সংকট মোচনে অবতীর্ণ হয় না। ফলে সে আর কোনো দেবতার পায়েই মাথা নোয়ায় না। পরকাল আছে কী নেই সেসব নিয়েও মাথা ঘামায় না। নিজের জীবন থেকে সে শিখেছে যে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে নিজেকেই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। তার মনে হয় ঘি যজ্ঞে ঢালার চেয়ে পেটে চালান করাই উত্তম!

সন্ধ্যার কিছু আগে পঞ্চমী মাসিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফেরার পথ ধরলো নীলু। থাকার জন্য খুব জোরাজুরি করেছিলেন মাসিমা। কিন্তু কাজের কথা বলে চলে এসেছে সে। রাঙাবউয়ের সাথে দেখা হয় না পাঁচ-ছয় দিন, অথচ মনে হয় পাঁচ-ছয় বছর! রাঙাবউ যেন মন বাড়িয়ে ডাকলো তাকে। তাই আর থাকা হলো না পঞ্চমী মাসিমার বাড়িতে। ফেরার পথে মনের বনে কেবলই পায়চারি করলো রাঙাবউ। দেড় মাইল পথ কীভাবে যে ফুরিয়ে গেল, তা যেন সে টেরই পেলো না!

কোথা থেকে একটা তেলাপোকা এসে ঘরের ভেতর উড়ছে। উড়ে গিয়ে একেকবার একেক জায়গায় বসছে। একবার নীলুর ঘাড়ের ওপর এসে বসেছে। তেলাপোকাটাকে শায়েস্তা করার জন্য ওর পিছু নিলো নীলু। কিন্তু বাগে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বেড়ায় বসছে তো এই আলনার ঝোলানো জামা-কাপড়ে। একবার গিয়ে বসলো কণিকার আবক্ষ ভাস্কর্যের ওপর। আরও জেদ চেপে গেল তার। কিন্তু থাবা দিয়ে ধরতে যেতেই উড়ে দরজা পেরিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল এবার। আর ওর পিছু নিলো না সে। দাঁড়িয়ে রইলো কণিকার আবক্ষ ভাস্কর্যের দিকে তাকিয়ে। বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ভারী দীর্ঘশ্বাস। কে জানে কণিকা এখন প্রিন্সেস আনিকা হয়ে কোথায় কোন মঞ্চে দর্শক মাতাতে ব্যস্ত, ওর কী মনে পড়ে তার কথা! প্রিন্সেস আনিকা বলেছিল, ‘কণিকাকে ভুলে যাও নীলুদা।’ ভুলতে আর পারলো কই সে কণিকাকে! এই যে ক’দিন রাঙাবউ আসে না বলে তার মন উচাটন হয়, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে রাঙাবউকে দেখার চেষ্টা করে, তবু তার ভেতরেই মনে পড়ে কণিকার কথা। তার হৃদয়ে কণিকার জন্য স্বতন্ত্র জায়গা। রাঙাবউ আর মিতের জন্যও স্বতন্ত্র আসন রয়েছে তার হৃদয়ে। তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন আসন পেতেছে তার হৃদয়ে, কিন্তু কেউ কারো চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেবল দুজনের সাথে ঘন ঘন দেখা হয়, কথা হয়। অন্যজন অন্তরাল থেকে উঁকি দেয় মনের জানালায়!

ঘরের দরজা খোলা রেখে বাতিদুটো নিভিয়ে বিছানায় বসে রইলো নীলু। রাঙাবউয়ের অপেক্ষায় তার সময় গড়াতে লাগলো, অথচ রাঙাবউয়ের দেখা নেই। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক সময় ঝিমুনি এসে গেল। বিছানায় কাত হয়ে দু-চোখ বুজতেই বাইরে শব্দ হলো। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই ভুলু তার কাছে এসে পায়ে গা ঘষতে লাগলো, গন্ধ শুকতে লাগলো, অন্ধকারেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগলো। ক্ষিধে পেয়েছে ভুলুর। ক্ষিধে পেলেই ও এমন করে মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চাটে। বারান্দার বাল্ব জ্বালিয়ে হাঁড়িতে বেঁচে যাওয়া ভাত নিয়ে বারান্দার নিচে ভুলুকে খেতে দিলো ওর জন্য নির্দিষ্ট থালায়।

হাত ধুয়ে গায়ে চাদরটা জড়িয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার জন্য প্ল্যাটফর্মের দিকে গেল নীলু। মনটা হঠাৎ ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে এমন হয়, তখন কারো সঙ্গ পাবার জন্য আকুল হয়ে ওঠে মন। তখন প্ল্যাটফর্মের একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত হাঁটে আর গান গায়। কখনো কখনো ভুলু তাকে সঙ্গ দেয়। প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে লাগলো সে। সুনসান রাত্রি, মাঝারি কুয়াশা। হঠাৎ-ই তার নাকে এলো ঝাঁঝালো পরিচিত গন্ধ। আশে-পাশে তাকালো, কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তাহলে গন্ধ আসছে কোথা থেকে! আগুনও তো দেখা যাচ্ছে না। নীলু বোঝার চেষ্টা করলো গন্ধটা কোন দিক থেকে আসছে। তারপর প্ল্যাটফর্মের একেবারে পশ্চিমদিকে এসে দাঁড়াতেই ঝোপের মধ্যে প্রথমে আগুন নজরে পড়লো, তারপর মনে মনে যাকে সন্দেহ করেছিল চিনতে পারলো সেই মানুষটাকে, নিরলে বসে আপন মনে গাঁজা টানছে। নীলু বললো, ‘কী রহমত ভাই, এই শীতের মধ্যে এই জায়গা বসে আছো যে?’

রহমত গাঁজায় আরেকটি সুখটান দিয়ে বললো, ‘কী করি ক তো নীলু, আমি নাহি সবুজি’র মা’র টাহা চুরি করছি। তুই বিশ্বেস কর, আমি টাহা চুরি করি নাই।’
‘সত্যি চুরি করো নাই?’

‘না, আল্লার কসম। চুরি যে আমি করিনে তা না, কিন্তুক আজকে করি নাই।’ রহমত গাঁজার শেষাংশ না নিভিয়েই ছুড়ে ফেলে ঝোপের মধ্যে।
‘তালি সেকথা তারে বুঝায়ে কওগে।’

‘মাগি কী বুজার মাগি! আমি যে টাহা চুরি করি নাই এই কতাডা মাগিরে বিশ্বেস করাবারই পারলাম না। মাগির তাপ তো তুই জানিস। পাসরজাতে এমন এক কিল মারিছে বুজছিস, শালার দম বারে যাওয়ার যুগার! তারপর এক কতায়-দুই কতায় বঁটি নিয়ে তাড়া করলো। কী করবো, তাই বসে আছি।’

‘এতোক্ষণে দিদির রাগ কমে গেছে। এহন ঘরে যাও।’ ভুলু খাওয়া শেষ করে হয়তো নীলুকে না দেখে খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছে। এখন নীলুর পা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে রহমতের দিকে।

‘যাবানে, আরেট্টু পরে যাবানে। না গিলি কী আর রক্ষে আছে নাহি! তালি কাল সহালে ঘুমেরতে টানে উঠোয়ে আরো বেশি মারবেনে। কোবেনে, কোন মাগির কাছে যায়ে শুয়ে ছিলি! ক তো দেহি, আমার কী আর সেই বয়েস আছে! নিত্তিদিন এই খুঁটা দেয়।’

‘শোনো, রহমত ভাই, দেরি কোরো না, রাত্তিরি দেরি করে ঘরে ফিরলি মিয়া মানষির রাগ আরো বাড়ে।’
‘তুই তালি যাবার কোস?’
‘হ, যাও।’
‘তুই কাল এট্টু বুজোয়ে কোস তো, তোর কতা তো শোনে।’
‘আচ্ছা কবানে, এহন ঘরে যাও।’

রহমত ঝোপ থেকে বেরিয়ে পশ্চিমদিকে হাঁটা শুরু করলে নীলুর পিছে পিছে ভুলুও পা বাড়ালো পূর্বদিকে। ঘরে ফিরে দেখলো রাঙাবউ এসে বসে আছে বিছানায়, বারান্দার বাতির আলো শুয়ে আছে তার পা ছুঁয়ে।

‘আমি জানতাম, তুমি আজ আসপা।’ নীলুর ঠোঁটে খুশির সংযত হাসি।
‘জানো তয় বারান্দার লাইটটা নিভিয়ে রাখতি পারো নাই।’

‘এতোক্ষণ নিভানোই ছিল, ভুলুরে খাবার দিলাম তো সেই জন্যে জ্বালাইছি।’ বলে ঘরের বাতিটা জ্বালিয়ে বারান্দারটা বন্ধ করে দিলো নীলু, আর তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে পা ছড়িয়ে বারান্দায় বসে রইলো ভুলু।

নীলু এবার খানিকটা অনুযোগের সুরে বললো, ‘একবারও মনে পড়ে না সখার কথা, না?’

রাঙাবউয়ের হাতে প্লেট দিয়ে ঢাকা একটি বাটি। বাটিটা হাতে নিয়েই বিছানায় বসে বললো, ‘তোমার এখানে কেমন করে আসপো? আমার বড় ননদ আইছিল। হাড় জ্বালায়ে আজকে বিকেলে গেল। নাও পিঠে খাও।’
‘কিসির পিঠে?’
‘তেলে ভাজা আর পুলি।’ প্লেটটা বাঁ হাতে রেখে বাটিটা নীলুর দিকে এগিয়ে দিলো রাঙাবউ।
নীলু বললো, ‘এখন ক্ষিদে নাই। সকালে খাবানে রাঙাবউ।’

‘সকাল-টকাল আমি বুঝিনে। এখন দুটো মুখি দাও। বাকিগুলো সকালে খেও।’

বাটিটা হাতে নিয়ে একটা পিঠা মুখে দিতেই হলো নীলুকে। না খেলে রাঙাবউ অভিমান করবে। ভুলুর ভাত খাওয়া শেষ। সে দরজায় দাঁড়িয়ে একবার নীলুর মুখের দিকে তাকালো, আরেকবার রাঙাবউয়ের দিকে। নীলু একটা তেলেভাজা বড়া ছুড়ে দিলে ভুলুর সামনে। গন্ধ শুকে পিঠাটা পেটে চালান করে বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে রইলো ভুলু।

রাঙাবউ বললো, ‘বিদেশীরা চলে গেছে?’
‘হ, কালকে গেছে।’
‘তুমি ওদের সাথে কথা কইলে?’
‘কথা আর কলাম কই! আমি কী ওগের ইংরেজি বুঝি নাকি? ঠাই-ঠুই করে কী যে কয় কিছুই বুঝিনে। শোভন ওগের কথার বাংলা মানে কোয়ে দিছে আমারে। ইংরেজি পারলি কী আর এসএসসি দুইবার ফেল মারতাম!’
‘মেয়েটা দেখতি কী সুন্দর! আর কী লম্বা!’
‘তুমি দেখছো?’
‘দেখিছি তো। বিকেলে তোমরা যখন রেললাইন দিয়ে হাঁটতেছিলে, তখন আমি পুকুর পাড়ে দাঁড়ায়ে দেখিছি। আচ্ছা, ঐ নিগ্রোটারে দেখে তোমার ভয় লাগে নাই?’
‘ভয় কিসির!’
‘ওগের নাকি খুব রাগ?’
‘ধুর! কিডা কয়? ওর ব্যবহার খুব ভাল। আমার কাছে এক রাত ছিল তো।’
‘ঘুমাইছে কই?’
‘আমার বিছানায়।’
‘আর তুমি?’
‘আমিও।’

হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো রাঙাবউ, ‘তুমি ঐ কালাপাহাড়টার কাছে ঘুমাইছো সখা? তুমি-ই পারো!’
‘ওর মনটা খুব ভাল রাঙাবউ। পরশুদিনের আগের রাতে এমন মদ খাইছে আর উঠে যাবার পারে না। শ্যাষে সবাই ধরে আমার বিছানায় শুয়ায়ে দিলো।’

একটু থেমে নীলু আবার বললো, ‘জানো রাঙাবউ, লরেন্স আমার একটা ছবি আঁকছে। দেখতি অবিকল আমার মতোই অইচে।’
‘লরেন্স কিডা, ঐ কালাপাহাড়?’
‘না, না। ও তো টমাস। ফর্সা ছেলেটা লরেন্স।’
‘দেখি তো কেমন ছবি।’

নীলু থাক থেকে মোড়ানো আর্ট পেপারটা নিয়ে এসে খুলে দেখালো রাঙাবউকে।

দেখে রাঙাবউ বললো, ‘ওমা, কী সুন্দর! সত্যিই তো অবিকল তোমার মতো। ইস, আমার যদি এমন একটা ছবি আঁকা থাকতো!’

নীলু গর্বের হাসি হাসলো। বাইরে কুয়াশা আরও গভীর হয়েছে। গল্প-কথায় রাত গড়িয়ে গেল ভোরের দিকে। রাঙাবউ ফিরে গেল ঘরে। নীলুর চোখে ঘুম নেমে এলো।

রাত্রি, কিন্তু রুপালি জ্যোৎস্না রাত্রি নয়, আবার কালো কিংবা ফ্যাকাশে অন্ধকার রাত্রিও নয়; হালকা নীল রঙের কেমন যেন অদ্ভুত ধরনের রাত্রি! রাত্রির গতরের রঙ দেখে নীলুর ঘোর লেগে গেছে। এমন রাত্রি সে কোনোদিন দ্যাখেনি। রেললাইন ধরে হেঁটে এসে প্ল্যাটফর্মে উঠলো সে। স্টেশন ঘরের দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল! সারা স্টেশন সাদা ফুল দিয়ে সাজানো। রজনীগন্ধা, সাদা গোলাপ, বেলী, আরও নানান রকম ফুল। এতো রকম ফুলের নামও জানে না সে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো, সব ফুলের রঙই সাদা। শিমুল গাছের দিকে তাকালো সে, গাছভর্তি সাদা রঙের শিমুল ফুল! তলাতেও ছড়িয়ে আছে। অসংখ্য প্রজাপতি আর জোনাকি পোকা উড়ছে সারা স্টেশনে। প্রজাপতিগুলোর পাখার রঙ সাদা! জোনাকির আলোও সাদা, অসংখ্য সাদা আলো জ্বলছে আর নিভছে! এতো এতো সাদার ওপর রাত্রির নীল আলো পড়ে চোখে আরাম দিচ্ছে, সুখ দিচ্ছে।

প্ল্যাটফর্মে উঠে আস্তে আস্তে ঘরের দিকে এগোলো সে। ঘরের বেড়ায় বসেছে অসংখ্য সাদা প্রজাপতি। বারান্দায় উঠেই থমকে দাঁড়ালো; ঘরের মধ্যে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তার মিতে, ডালিম! ডালিমের মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত দৃষ্টি বোলালো সে। কে বলে তার মিতে নপুংশক! তার মিতে তো নারী, পূর্ণাঙ্গ নারী; অইতো মিতের স্ফীত স্তন, সুগভীর যোনি! সারা শরীরে ফুলের গহনা! মাথায় রজনীগন্ধার মুকুট, গলায় হার, হাতে চুড়ি, বকফুলের কানের দুল আর কামিনী ফুলের নাকফুল! মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে ঘর থেকে। দু-হাত ঊর্ধ্বে প্রসারিত করে ঘরের মধ্যে মৃদু লয়ে ঘুরছে আর গুনগুনিয়ে গান গাইছে মিতে। মিতের মুখে, সমস্ত শরীরে সুখ যেন উপচে পড়ছে! তাকে দেখেই হেসে বললো, ‘তুমি এতো দেরি করলে যে মিতে? জানো না আজ আমার বিয়ে?’

‘তোমার বিয়ে! আজ?’ অবাক হলো নীলু।
‘হ। আজ আমার বিয়ে। কও তো মিতে, আজ আমারে দেখতি কেমন লাগতেছে?’
‘দারুণ! কিন্তু মিতে তোমার বিয়ে অলি তো তুমি আমারে ছাড়ে অনেক দূরে চলে যাবা!’

‘যাবোই তো, অনেক দূরে চলে যাব! তাতে কী মিতে, তুমি মন খারাপ কোরো না, বাতাসের কাছে খবর দিয়ো, বাতাস আমারে তোমার খবর পৌঁছে দেবে। আমি ঠিক চলে আসপো তোমার কাছে। মিতে...’
‘কী।’
‘তুমি আজ আমার জন্যে এট্টু কষ্ট করো। তুমি আজ রাতটা অন্য কোনোখানে ঘুমাও। আজ আমাগের ফুলশয্যার রাত। আমরা তোমার ঘরেই ফলশয্যার আয়োজন করছি। কাল সকালেই আমি চলে যাব শ্বশুর বাড়ি।’

একটা সাদা প্রজাপতি এসে বসলো মিতের বুকে। মিতে হাতে নিয়ে আস্তে করে উড়িয়ে দিলো প্রজাপতিটাকে।
‘তোমার বর কই মিতে? তারে একটু দেহে যাই।’ বললো নীলু।
‘আসো। ঘরের ভেতরে আসো। আমার বর খাটে শুয়ে আছে। ও এট্টু লাজুক।’

নীলু ধীর পায়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো। অসংখ্য সাদা ফুল দিয়ে ঘর আর খাট সাজানো। বিছনার উপর দিয়ে অসংখ্য প্রজাপতি আর জোনাকি পোকা উড়ছে। সে বিছানার দিকে তাকালো। বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে টমাস। তারও সারা শরীরে কোনো বস্ত্র নেই! কুচকুচে কালো শরীর। মাথায় সাদা একটি মুকুট আর গলায় একটি সাদা ফুলের মালা। মালা আর মুকুট না থাকলে বোঝাই যেতো না, যে সে নতুন বর। সে হ্যান্ডশেক করার জন্য টমাসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই মিতে প্রায় চিৎকার করে উঠলো, ‘এই মিতে করো কী করো কী? তুমি ওরে ছুঁয়ো না। আজ রাতে ও শুধু আমায় ছোঁবে আর কাউরে ছোঁবে না!’

নীলু হাসলো। মনে মনে বললো, মিতের মুখে কিচ্ছু আটকায় না! তারপর ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হলো সে। স্টেশনের দক্ষিণ দিক দিয়ে স্টেশন মাস্টারের পুকুরের পাড়ে উঠতে উঠতে পিছন ফিরে দক্ষিণের জানালা দিয়ে একবার তাকালো। টমাস মিতেকে জাপটে ধরে মিতের গলার কাছে আদর করছে, নিবিড় সুখে নিমীলিত মিতের দু-চোখের পাতা!

নীলু লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে আনলো। ভাবলো, যাক মিতে এতোদিনে একজন বর পেলো, সংসার পেল, পার্থিব জগতের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সুখের দেখা পেল! এখন সন্তান হোক, শান্তিতে থাকুক মিতে।

দরজায় দমাদম শব্দ হচ্ছে। আচমকা শব্দে ঘুমের কোল থেকে জেগে বিছানায় উঠে বসলো নীলু। কিন্তু মস্তিস্কের পৃথিবীতে এখনও ঘুমের বিস্তীর্ণ কুয়াশা। কুয়াশা কাটিয়ে ধাতস্থ হতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো। ঘরের চতুর্দিকে তাকালো। কোথায় মিতে! তোথায় টমাস! কোথায় ফুল আর কোথায়ই বা সাদা প্রজাপ্রতি-জোনাকি! এতোক্ষণ তাহলে সে স্বপ্ন দেখছিল, বাস্তব না!

দরজায় ক্রমাগত শব্দ করেই চলেছে। সাজুর গলা না? তাই তো। কাঁদে কেন ও? কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলছে, ‘এ মিনসে, মিনসে ওঠ। আর ঘুমাসনে। সব্বনাশ অয়ে গেছে!’

সব্বনাশ কথাটা কানে আসতেই ঘুমের কুয়াশা কেটে গেল নীলুর। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দরজা খুললো। বাইরে বেশ রোদ উঠে গেছে। চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো সাজুর দিকে। সাজু কাঁদছে। তার চোখ-অধর ভেজা।

‘কী অইছে?’ তীরের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লো সে।
সাজু কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘সব্বনাশ অয়ে গেছে রে মিনসে, সব্বনাশ অয়ে গেছে। কারা যেন ডালিমরে মারে ফেলছে। শ্মশান ঘাটে পড়ে আছে ডালিমের লাশ।’

স্তম্ভিত নীলু স্থির হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। সাজুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে। শরীর কাঁপছে। পা দুটো যেন মুহূর্তের মধ্যে পাথরের মতো ভারী হয়ে গেছে! এখনও কী স্বপ্ন দেখছে সে? নীলুর মনে হলো তার সামনে দাঁড়ানো সাজু, সাজুর মুখের কথা, সাজুর চোখের জল সত্যি নয়! সকালের এই রোদ্দুর সত্যি নয়! সব মিথ্যে স্বপ্ন! সত্যি হলো মিতে তার ঘরে জোনাকির আলোয় ফুলের গহনা পরে দুই হাত প্রসারিত করে ঘুরছে দারুণ সুখে!

(চলবে...)

গাওয়াল (উপন্যাস: পর্ব-এক)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বরাবরের মতোই মুগ্ধ পাঠ :)

বর্ণনার প্রঞ্জলতা টেনে নেয় শুরু থেকে শেষ!
যেন মনের কথাগুলোই বলে গেছে কেউ ;)

:)

++++

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৪

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা.......

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: চরিত্রের নাম গুলো যেন কেমন!!!

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

মিশু মিলন বলেছেন: হা হা হা......

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: চরিত্রের নাম গুলো যেন কেমন!!!

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:০২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:




পোস্ট করেছি: ১৬৬টি
মন্তব্য করেছি: ৮০৮টি
মন্তব্য পেয়েছি: ৯৯৪টি




লজ্জাজনক ব্লগিং পরিসংখ্যান...

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪

মিশু মিলন বলেছেন: কাজ না থাকলে কতো অকাজেই যে এই জাতি সময় নষ্ট করতে পারে! ভাবলে অবাক লাগে ব্লগে লেখা পড়া নয়, কে কয়টা পোস্ট দিলো, কে কয়টা মন্তব্য পেলো, এইসব দেখে বেড়ানোও এই জাতির কারো কারো গুরুত্বপূর্ণ কাজ! যাই হোক, আমি পরিসংখ্যানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ব্লগিং করি না। আমি নিজের ইচ্ছে মতো ব্লগিং করতে চাই। আমি কিভাবে ব্লগিং করবো সেটা আমি ঠিক করবো, অন্য কেউ নয়। আমার পরিসংখ্যান নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে।

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:




জ্বি তাই করুন! সবই আপনার ইচ্ছে। আমিও আমার মত প্রকাশ করেছি! আমার ইচ্ছে।

২২ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১১

মিশু মিলন বলেছেন: নিজের মত প্রকাশের জন্য নিজের ব্লগ আছে। সেখানে যা ইচ্ছা লিখলেও কারো কিছু বলার নেই। অন্যের ব্লগে গিয়ে তার লেখার সমালোচনা করা যেতে পারে নিশ্চয়, কিন্তু কারো ব্লগিং পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলাটা কেবল অনুচিত নয় অসভ্যতাও।

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৮

বর্ণা বলেছেন: ভালো লেগেছে

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:৫৯

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.