নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৪

পড়ন্ত বিকেলে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবি স্মৃৃতিসৌধের দক্ষিণ-পশ্চিমদিকের একটি বেঞ্চে বসে মোবাইলে নজরুলগীতি শুনতে শুনতে মেঘময় আকাশের দিকে তাকিয়ে আত্মমগ্ন হয়ে আছেন মুফতি আলফাজ আলী; বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, মুখে সুন্নতি দাড়ি, গোঁফ নেই। মাথায় সাদা টুপি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, পরনের সাদা পাজামা টাকনুর ওপর পর্যন্ত। তিনি মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক; অবসর পেলেই এখানে এসে বসে থাকেন, মোবাইলে গান শোনেন, সিনেমা দ্যাখেন, বই পড়েন। মোবাইলে তিনি ইসলামী সংগীত শোনেন না; শোনেন-পঞ্চকবির গান, আধুনিক গান এবং উচ্চাজ্ঞসংগীত । গান শুনতে শুনতে বই পড়েন, তার মোবাইলে অসংখ্য পিডিএফ বই আছে। কোরান-হাদীস বা ইসলামী বই তিনি জীবনে অনেক পড়েছেন; এখন পড়েন দেশ-বিদেশের লেখক-কবিদের লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান বিষয়ক বই, আর পড়েন ব্লগের বিভিন্ন ধরনের লেখা।

মাদ্রাসায় তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনেন, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে তিনি কী শুনছেন। কোনো সহকর্মী হুজুর যদি কখনো জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কী শুনছেন, তখন ওয়াজ বা ইসলামী গানের কথা বলেন। ইসলামে সংগীত হারাম হলেও তিনি রোজই সংগীত শোনেন। সংগীত তার হৃদয় পরিশুদ্ধ করে, উন্মোচিত করে ভাবনার নতুন তেপান্তর। তিনি মনে করেন, যে সংগীত শোনে না, যে সংগীত পছন্দ করে না, সংগীতের সুর যার হৃদয়কে আন্দোলিত করে না; সে মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি, সে ইতরপ্রাণি বিশেষ।
মাদ্রাসার হুজুরদের মধ্যে তিনি ব্যতিক্রম, সবার সঙ্গে কম কথা বলেন, নিজের মতো করে নিজের জগতে ডুব দিয়ে থাকেন। অন্য হুজুররা ভাবেন তিনি অহংকারী।

হেডফোনটা ভুল করে মাদ্রাসায় ফেলে এসেছেন, ফলে এখন তিনি হেডফোন ছাড়াই মোবাইলে নজরুল সংগীত শুনছেন। মোবাইলে বাজছে পূরবী দত্ত’র কণ্ঠ-
পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা
আমার জীবনে শুধু আঁধারের লেখা
বাহিরে অন্তরে ঝড় উঠিয়াছে
আশ্রয় যাচি হায় কাহার কাছে।

মুফতি আলফাজের পিছনদিকে বাচ্চারা খেলছিল, হঠাৎ ওদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ায় একে অপরকে গালাগালি শুরু করে। ওদের মুখে গালি শুনে তিনি ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনদিকে তাকাতেই চমকে ওঠেন, তৎক্ষনাৎ লজ্জিত-শঙ্কিত হয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলের গান বন্ধ করেন। তার থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার ছাত্র শাহেদ। বছর বাইশের শাহেদ আগামী বছর ফাযিল পরীক্ষা দেবে।

মুফতি আলফাজ আমতা আমতা করে বলেন, ‘শাহেদ, তুমি এখানে কী করো?’

শাহেদ লজ্জিতভাবে বলে, ‘হুজুর আমি এই দিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, আপনাকে দেখে দাঁড়ালাম।’

শাহেদকে কী বলবেন বুঝতে পারেন না মুফতি আলফাজ। শাহেদ কি গান শুনতে পেয়েছে? যে মাত্রায় ভলিউম দিয়ে তিনি গান শুনছিলেন, তাতে শাহেদের শুনতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। শাহেদ যদি শুনতে পায় তাহলে মাদ্রাসার অন্য ছাত্র বা হুজুরদের বলে দেবে না তো?
মুফতি আলফাজ নিজের লজ্জা-শঙ্কা সামলে নেবার চেষ্টা করে বলেন, ‘সামনে আসো।’
শাহেদ সামনে এসে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। মুফতি আলফাজ বলেন, ‘এখানে তুমি প্রায়ই আসো?’
শাহেদ একইভাবে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলে, ‘জী হুজুর। হুজুর মাফ করে দ্যান, আর কখনো আসবো না।’

এবার মুফতি আলফাজ কিছুটা সাহস পান, বেটা নিজেই এখানে আসার অপরাধবোধে ভুগছে, তাহলে আর তার গান শোনার কথা কাউকে বলবে না। তিনি বলেন, ‘এখানে আসতে তোমাকে কেউ নিষেধ করেছে?’
‘জি হুজুর, আব্বাসউদ্দিন হুজুর এখানে আসতে নিষেধ করেছেন।’
‘কী বলেছেন তিনি?’
‘বলেছেন যে ওটা হলো মুরতাদ-নাস্তিক আর দেশদ্রোহীদের কবরস্থান। একাত্তর সালে তারা পাকিস্তান ভাঙার চক্রান্ত করেছিল, দেশপ্রেমিক মুমিন মুসলমান ভাইয়েরা তাদেরকে হত্যা করে এখানে ফেলে রেখেছিল। পরে নাস্তিক সরকার এখানে স্মৃতিসৌধ বানিয়েছে। এখন বছর বছর ওখানে ফুল দিয়ে পূজা করে, মূর্তি গড়িয়ে পূজা করা আর স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া একই কথা, শিরক। কোনো ইমানদার মুসলমানের শিরক করা উচিত নয়।’

একটু থামে শাহেদ, তারপর মুখ তুলে বলে, ‘এখানে আসাও নাকি গুনাহ।’
‘তাহলে তুমি আসো কেন?’
চুপ করে থাকে শাহেদ। মুফতি আলফাজের পুনর্বার প্রশ্নে উত্তর দেয়, ‘আমার ভাল লাগে হুজুর, এই স্মৃতিসৌধটা দেখতে খুব সুন্দর, সূর্য ডোবার সময় খুব সুন্দর দেখায়। হুজুর বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলবো?’
‘বলো।’
‘হুজুর, এখানে আসা গুনাহ জেনেও আপনি কেন আসেন? আমি এর আগেও অনেকবার আপনাকে দেখেছি।’

মুফতি আলফাজ এবার অপ্রস্তুত হয়ে যান। তিনি এখানে কেন আসেন এই প্রশ্নের সত্য উত্তর কি তিনি তার ছাত্রকে দেবেন? তিনি কি ওকে বলবেন যে দেশদ্রোহী নয়, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এখানে ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আর তাদের দোসর এদেশের রাজারকার-আলবদররা। কিন্তু ও যদি মাদ্রাসায় গিয়ে বলে দেয়, আর কথাটা যদি বড় হুজুরের কানে যায়, তাহলে তো তার চাকরিটাই থাকবে না। ওকে এখন বিদায় দেওয়াই ভাল।

‘শাহেদ, তুমি এখন যাও। তুমি যে এখানে আসো একথা আমি কাউকে বলবো না। তুমিও কাউকে বোলো না যে আমি এখানে আসি।’
‘জি হুজুর। আসসালাম ওয়ালায়কুম।’

মুফতি আলফাজ সালামের জবাব দেন না, মাদ্রাসার বাইরে পারতপক্ষে তিনি কারো সালামের জবাব দেন না। শাহেদ পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করে, কয়েক পা গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, আবার ফিরে এসে দাঁড়ায় মুফতি আলফাজের সামনে, ‘হুজুর, বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলবো?’

মুফতি আলফাজ শাহেদের চোখের দিকে তাকান, ‘বলো।’
‘হুজুর, আপনার মতো আমিও গান শুনি।’
‘গান শোনো তুমি!’
‘জি হুজুর।’

মুফতি আলফাজের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বেঞ্চের বামপাশের খালি জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘বোসো এখানে।’
বসে শাহেদ। কাঁচা ডিমের কুসুমের মতো সূর্যের দিকে তাকায়।
মুফতি আলফাজ বললেন, ‘কী গান শোনো?’
মুফতি আলফাজের চোখে চোখ রাখে শাহেদ, ‘আধুনিক গান শুনি, রবীন্দ্রসংগীত-নজরুলগীতি শুনি।’
‘তোমার ভাল লাগে গান শুনতে?’
‘খুব ভাললাগে হুজুর। গান শুনলে আমার মন ভাল হয়ে যায়।’
‘তুমি যে গান শোনো সেটা মাদ্রাসার আর কেউ জানে?’
‘আমার বন্ধু রহিম জানে। আরো কেউ কেউ ধারণা করে যে আমি গান শুনি।’
‘ওরা যদি বড় হুজুরকে বলে দেয়?’
‘ওরা বলবে কী হুজুর, ওরা নিজেরাও তো গান শোনে! বলাকা হলে গিয়ে সিনেমা দ্যাখে। বিকেলবেলা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে পর্ণোগ্রাফি আর সিনেমা ডাউনলোড করে আনে মোবাইলে, পরে সুযোগ পেলেই দ্যাখে।’

ছাত্ররা মোবাইল ব্যবহার করে তা জানেন মুফতি আলফাজ, লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ কেউ সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দ্যাখে তাও তার অজানা নয়। কিন্তু সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে পর্ণোগ্রাফি ডাউনলোড করে আনে তা তার জানা ছিল না। তিনি বুঝতে পারেন একারণেই মাস কয়েক আগে হাটহাজারী মাদ্রাসায় তল্লাশী চালিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে দুই হাজার মোবাইল পুড়িয়ে দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, যার মধ্যে শ’পাঁচেক ছিল স্মার্টফোন।

তিনি যেমনি ইসলাম এবং মুহাম্মদের বর্বরতা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, শিশুকামিতা, যৌনদাসী বেচা-কেনা, বহুগামিতা ইত্যাদি সম্বন্ধে জেনে-বুঝেও একজন মাদ্রাসা শিক্ষকের অভিনয় করে যাচ্ছেন পেটের দায়ে; তেমনি অনেক ছাত্রও আছে যাদের কাছে ইসলাম এবং মুহাম্মদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে, কিন্তু আর ফেরার পথ নেই জেনে মুখ গুঁজে পড়ে আছে মাদ্রাসাতেই। ফলে তারই মতো তার অনেক ছাত্রও ইসলাম বিরুদ্ধ কাজকর্ম করছে, গান শুনছে, সিনেমা দেখছে, এমনকি কেউ কেউ পর্ণগ্রাফিও দেখছে।

মুফতি আলফাজের মনে হয়, কোনো বাঁধ দিয়েই সময়ের এই স্রোত আটকানো যাবে না; স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় এবং ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটায় সমাজে এবং মানুষের জীবন-যাপনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যার ছোঁয়া লেগেছে মাদ্রাসাতেও। শত চেষ্টা করেও আগামীতে আর মাদ্রাসা ছাত্রদের অশিক্ষার অন্ধকারে রাখা যাবে না। কারণ, ওদের হাতে এখন স্মার্টফোন-ইন্টারনেট, যেখানে আছে ইতিহাস-বিজ্ঞান-দর্শনের যাবতীয় তথ্য। ওরা জানতে শুরু করেছে ইসলামের অন্তসারশূন্যতা, ইসলামের ভণ্ডামী, মুহাম্মদের কোরান নাজিলের মিথ্যাচার। ফলে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসার পরিবেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। ভবিষ্যতে কোনো একদিন নিশ্চয় এই দেশ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বিলুপ্ত হবে, যেমনি বিলুপ্ত হয়েছে সংস্কৃত শিক্ষার টোল। হয়তো অনাগত কালে মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো পরিণত হবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। সেই দিন সত্যিকারের সভ্য হবে এই দেশের মানুষ, কিন্তু তিনি হয়তো সেই সুসময় দেখে যেতে পারবেন না।

মুফতি আলফাজ হেসে বলেন, ‘শাহেদ, আমি যদি তোমাকে শাস্তি দেই!’
শাহেদ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে, ‘আমি জানি হুজুর, আপনি আমাকে শাস্তি দেবেন না। কারণ, আপনি অন্য হুজুরদের মতো না। আপনি যে এখানে এসে প্রায়ই মোবাইলে গান শোনেন আর সিনেমা দ্যাখেন তা আমি আর রহিম জানি।’
মুফতি আলফাজের চোখে বিস্ময়, ‘কী করে জানলে?’
‘এখান দিয়ে হাঁটার সময় আমরা আপনাকে অনেকবার দেখেছি গান শুনতে আর মোবাইলে সিনেমা দেখতে।’
মুফতি আলফাজ মৃদু হাসেন, তারপর বলেন, ‘সাবধান এসব কথা কাউকে বোলো না।’

‘কাউকেই বলবো না হুজুর। হুজুর, আমি ইন্টারনেটে নাস্তিকদের লেখা অনেক বই পড়ি, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পড়ি। আমার ভিতরে অনেক প্রশ্ন জাগে। এই পৃথিবী, এই মহাবিশ্ব নিয়ে আমার ভিতরে অনেক প্রশ্ন জাগে। কিন্তু এসব প্রশ্ন আমি কাউকে করতে পারি না। কোরানের সূরা আম্বিয়ার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-“আমি আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ।” অথচ বিজ্ঞান পড়ে আমি জেনেছি যে আকাশে কোনো ছাদ নেই, আকাশের কোনো সীমানা নেই, আকাশ অসীম। পৃথিবী, মহাবিশ্ব এবং সৃষ্টিরহস্য নিয়ে কোরানে এরকম আরো অনেক আয়াত আছে যা বিজ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পৃথিবী, মহাবিশ্ব এবং সৃষ্টিরহস্য নিয়ে স্কুলে একরকম পড়ানো হয়, আর আমরা মাদ্রাসায় আরেকরকম পড়ি। কিন্তু দুটোই তো সঠিক হতে পারে না। এসব ভাবলে আমার কেমন অস্থির লাগে মাঝে মাঝে। কোরান-হাদিসের অনেক বিষয় নিয়ে আমি সংশয়ে ভুগি। আমি আপনার সাথে এসব নিয়ে আলাপ করতে চাই হুজুর।’

মুফতি আলফাজ গভীর চোখে শাহেদের দিকে তাকান। যেন ওর ভেতর তিনি দেখতে পান নিজের ছায়া। অনেক আগেই কোরান-হাদিস সম্পর্কে তার ভেতরে সংশয় জেগেছিল। অনেক নির্ঘুম রাত, অনেক অস্থির সময় তিনি পার করেছেন। মাদ্রাসার হুজুররা মুখে মুখে যে মানবতা এবং শান্তির কথা বলতেন, তার সঙ্গে তিনি কোরান-হাদিস, ইসলামের ইতিহাস এবং চলমান বিশ্বের ইসলামকে কিছুতেই মেলাতে পারতেন না। অনেক প্রশ্ন জাগতো মনে, কোনোদিন কাউকে সেসব প্রশ্ন করেননি ভয়ে। এখনকার মতো তখন ইন্টারনেট ছিল না। ধর্ম, মহাবিশ্ব, বিজ্ঞান বিষয়ে এতো লেখা তখন পাওয়া যেতো না। ফলে এক ধরনের সংশয়ের ভেতর দিয়েই তিনি লেখাপড়া করে মুফতি হয়েছেন, মাদ্রাসার শিক্ষকতায় ঢুকেছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ইসলামী শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তার ভেতরের দ্বন্দ্ব কাটতো না। তারপর একসময় তিনি পড়েন আরজ আলী মাতুব্বর, ড. আহমদ শরীফ, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদের বই। তার সংশয় দূর হয়। এরপর ইন্টারনেট এসে যায় হাতে, ইন্টারনেটের জগত তাকে বদলে দেয় ঠিকই কিন্তু তখন আর ফিরবার পথ নেই। ঘরে স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং মা। সংসারের বোঝা তার কাঁধে। ইসলামী শিক্ষা ছাড়া তিনি আর কিছু শেখেননি যে তার মাধ্যমে নিজের এবং পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করবেন। ফলে তাকে এখন মাদ্রাসা শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করে যেতে হচ্ছে, সংসারের কর্তব্য পালনের জন্য হয়তো জীবনের আরো অনেকগুলো বছর তাকে এই অভিনয় করতে হবে।

মুফতি আলফাজ বলেন, ‘আজ তো সন্ধ্যা হয়ে এলো, চলো আমরা এখন উঠি। আরেকদিন সময় নিয়ে এসে তোমার সঙ্গে আলপ করবো। আমারও অনেক বিষয়ে আলাপ করতে ইচ্ছে করে, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করার মতো মানুষ পাই না। তাই একা একা কেবল গান শুনি, সিনেমা দেখি আর বই পড়ে সময় কাটাই।’

সেদিনের পর আরো অনেক বিকেলে মুফতি আলফাজের সঙ্গে দেখা করে শাহেদ, সঙ্গে রহিমকেও নিয়ে আসে। রহিম শাহেদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। রহিম যখন দাখিল পাস করে এই মাদ্রাসায় এসে ভর্তি হয়, তখন মাদ্রাসার অনেক ছেলেই ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইতো। গায়ে পড়ে রহিমের সঙ্গে কথা বলতো, ওর হাত ধরতো, কাঁধে কিংবা কোমরে হাত দিতো। রহিম চেষ্টা করতো এইসব ছেলেদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার। কেননা রহিম জানতো যে এইসব ছেলেদের লোভ তার শরীরের ওপর।

মাদ্রাসায় যখন নতুন কোনো ছেলে আসে, সে যদি দেখতে একটু শ্যামলা বা ফর্সা হয়, চেহারা একটু গোলগাল ধরনের হয়, আর তার স্বভাব যদি হয় একটু মেয়েলি ধরনের, তাহলে তার সঙ্গে অনেকেই বন্ধত্ব করতে চায়। যারা বন্ধুত্ব করতে ব্যর্থ হয় তারা সেই ছেলেটির চোখের চাহনি, কোমরের দুলুনি, বুকের উচ্চতা ইত্যাদি নিয়ে রসালো হাসি তামাশা করে; যেমনটা অনেক সময় কোনো মেয়েকে দেখলে দুষ্টু ছেলেরা করে থাকে। মাদ্রাসায় অনেকের মধ্যেই বন্ধুত্ব হয়, সেই বন্ধুত্ব গড়ায় শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত। রাতের বেলা অন্ধকার ঘরে একজন আরেকজনের কম্বলের নিচে ঢুকে যায়, কিংবা বিল্ডিং এর চিপা-চাপায় গিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। অনেক সময় হুজুররাও ছাত্রদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে, দোজখে যাবার ভয় দেখিয়ে, আবার কখনো জোর করে তাদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। হুজুরদের বালাৎকারের ব্যাপারে অধিকাংশ ছাত্রই নীরব থাকে। বড় হয়ে এই ছাত্রদের অনেকেই যখন মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশায় আসে তখন তারাও ছাত্র বালাৎকার করে। এরা সবাই যে প্রকৃতিগতভাবে সমকামী তা নয়, অনেকেই আচরণগত সমকামী, নারীর অভাবে পুরুষের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হয়।
রহিম দেখতে ফর্সা, গড়ন মাঝারি, স্বাস্থ্যও মাঝারি। মুখে দাড়ি খুব কম। ওর হাঁটাচলার মধ্যে একটু মেয়েলি ভঙ্গি আছে। ফলে মাদ্রাসার অনেক ছেলেই রহিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করতে চাইতো, এখনো চায়। কিন্তু রহিম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সে আগে যে মাদ্রাসায় ছিল সেখানে এক বড় ভাই এবং এক হুজুর জোর করে তার সঙ্গে ছহবত করেছিল। ফলে এই মাদ্রাসায় শুরু থেকেই সে সতর্ক। এই যে শাহেদের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব হয়েছে, এটা মাদ্রাসার অনেক ছেলেই তা ভালো চোখে দ্যাখে না। ছেলেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে যে-‘শাহেদ রহিমের পুটকি মারে’। কয়েকজন মুখের ওপর বলেছেও। একারণে মাদ্রাসায় শাহেদ আর রহিম খুব বেশি সময় একসাথে থাকে না। তবে সযোগ পেলেই মাদ্রাসার বাইরে এসে একসঙ্গে বসে গল্প করে, খায়, আড্ডা দেয়।

এই যে এতোদিন ধরে শাহেদ রহিমের সঙ্গে মিশছে, এর মধ্যে শাহেদ একদিনও রহিমের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়নি। তাকে শোয়ার প্রস্তাব দেয়নি। এজন্যই শাহেদকে খুব ভাল লাগে রহিমের।

মুফতি আলফাজের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে শাহেদ আর রহিম। ইসলাম ধর্মের বাইরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং ইহুদি ধর্ম সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা করেছেন তিনি। ইতিহাস আর বিজ্ঞান সম্পর্কেও তার গভীর পাঠ আছে। এসব নিয়েই তিনজনের আলোচনা হয়, প্রশ্নোত্তর হয়।

মাঝে কয়েকদিন আসতে পারেননি মুফতি আলফাজ। আজ আবার তিনি এসেছেন রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধে। তার আসার কিছুক্ষণ পরই এসেছে শাহেদ আর রহিম। আগে এখানে এসেই মুফতি আলফাজকে সালাম দিতো ওরা। মুফতি আলফাজের নির্দেশে এখন আর দেয় না, এমনকি তাকে হুজুরও বলে না, চাচা বলে। মুফতি আলফাজ বলেছেন, ‘ওসব অভিনয় মাদ্রাসায় কোরো, এখানে করার দরকার নেই। সালাম দেবার চেয়ে হ্যান্ডশেক করে কুশল বিনিময় করা আমি পছন্দ করি।’

আজ আলোচনার এক পর্যায়ে রহিম বলে, ‘চাচা, আমার আর মাদ্রাসায় পড়তে ভাল লাগছে না। বাবা-মায়ের ভুলের খেসারত আমি দিচ্ছি। যদি স্কুলে ভর্তি করে দিতো তাহলে জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারতো।’

মুফতি আলফাজ রহিমের মুখের দিকে তাকান, বলেন, ‘আমিও আমার বাবা-মায়ের ভুলের খেসারত দিচ্ছি। আমার বাবা-মা দরিদ্র ছিল। আমাকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া শিখিয়ে এবং ভরণপোষণ দিয়ে মানুষ বানাবার কথা বলে বাবা-মাকে রাজি করিয়ে হুজুররা আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে নেয়। আর মানুষ বানাবার পরিবর্তে দিনের পর দিন ট্রেনিং দিয়ে হুজুররা আমাকে পশু বানিয়েছে। আমাকে সাম্প্রদায়িক, দেশদ্রোহী, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তা বিরোধী এক পাষণ্ড বানিয়েছে। কিন্তু আমি ইসলাম, মুহাম্মদ এবং হুজুরদের এই ফাঁকি ধরতে পেরেছি অনেক পরে। যখন আমার আর অন্য কিছু করার উপায় নেই। কিন্তু তোমরা তো যুবক, তোমরা কেন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে? আমার যদি এখন তোমাদের মতো বয়স থাকতো তাহলে আমি মাদ্রাসার এই শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে পড়তাম। দরকার হলে রিক্সা চালিয়ে খেতাম, বাদাম বেচে খেতাম।’

শাহেদ বলে, ‘চাচা, অনেকদিন ভেবেছি আমি এই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে পড়বো। কিন্তু আমার আব্বা-আম্মা আমার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না। আমাদের এখন মোটামুটি স্বচ্ছল অবস্থা, কিন্তু আমি ফিরে গেলে তারা আমাকে একটি পয়সাও দেবেন না। কারণ, পরকালে বেহেশতে যাবার লোভে তারা আমাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়েছেন। আমি তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করলে তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন।’

রহিম বলে, ‘আর আমার আব্বা-আম্মার তো আমাকে টাকা-পয়সা দেবার সামর্থ্যই নেই যে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাব। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন, খেতে পরতে দিতে কষ্ট হতো বলেই আমাকে মাদ্রাসায় দিয়েছেন। তবে আমি ফিরে গেলে শাহেদের আব্বা-আম্মার মতো তারা আমাকে তাড়িয়ে দেবেন না। কারণ আমার আব্বা-আম্মা তো তেমন বিশেষ কোনো স্বপ্ন দেখে আমাকে মাদ্রাসায় দেননি, দিয়েছিলেন অভাবের তাড়নায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের ছেলেকে তাড়িয়ে দিতে গেলে যে শিক্ষা এবং মনের জোর লাগে, তা আমার আব্বা-আম্মার নেই।’

মুফতি আলফাজ ওদের কথা শোনেন, কিন্তু তেমন কিছু বলেন না। কেবল দীর্ঘম্বাস ফেলেন।

তারপর আরেকদিন রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধের একই জায়গায় বসে তিনি ওদেরকে বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে বিশ হাজার টাকা দেব। তোমরা মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যাও। রহিম, আপাতত তোমাদের বাড়িতে গিয়ে ওঠো দু’জনই। এই টাকা দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করো। ছোট থেকেই মানুষ বড় হয়। তোমরা যদি সৎ আর পরিশ্রমী হও, তাহলে তোমরাও বড় হতে পারবে। আমি তোমাদেরকে ভালবাসি। আমি জানি তোমরা বড় হতে পারবে, তাই তোমাদেরকে এই কোরানের খাঁচা থেকে মুক্তি দিতে চাই। যাবে তোমরা?’
উত্তরের অপেক্ষায় দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন মুফতি আলফাজ। শাহেদ আর রহিম মুখ চাওয়া-চায়ি করে, ওদের দুজনের চোখেই জল চকচক করে ওঠে। তারপর দুজনেই একসঙ্গে বলে, ‘যাব, চাচা।’

শাহেদ আর রহিম যখন ঢাকা-কুষ্টিয়া সড়কের চড়াইখোল বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামে, তখন দুপুর গড়িয়ে পড়েছে বিকেলের কোলে। ভোরবেলায় কাউকে কিছু না জানিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ে মাদ্রাসা থেকে। বেরোনোর সময় ওদের গায়ে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, কাঁধে ব্যাগ। এখন শাহেদের গায়ে সাদা শার্ট, রহিমের গায়ে সবুজ টি-শার্ট। গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে বাসে ওঠার আগে টার্মিনালের টয়লেটে গিয়ে পোশাক বদল করে ওরা। দুজনেই টুপি দুটো ফেলে দেয় টয়লেটের ময়লার ঝুড়িতে, ওদের জীবনে টুপির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তারপর ওঠে কুষ্টিয়ার বাসে।

চড়াইখোল বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরমুখী পাকা রাস্তাটা শাহেদকে দেখিয়ে রহিম বলে, ‘এই রাস্তাটা রেললাইন পেরিয়ে এঁকে-বেঁকে চলে গেছে শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি।’

শাহেদ বিস্ময়ভরা চোখে তাকায় রাস্তাটির দিকে। মাদ্রাসা থেকে পালানোর পর মাথায় এতো রকম চিন্তা ভর করে আছে যে ওর মনেই ছিল না যে একদিন এই অঞ্চল লালন ফকির, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাঙাল হরিনাথের পদচারণায় মুখর ছিল। রহিমের কথায় সব মনে পড়ে ওর। ও আশপাশে তাকিয়ে দ্যাখে। এখানে কোথাও কি তাঁদের পদচি‎হ্ন পড়েছিল? এই গাছগুলো কি তাদের দেখেছিল? মাদ্রাসার হুজুরদের মুখে সে দিনের পর দিন লালন এবং রবীন্দ্রনাথের নিন্দা শুনেছে, জেনেছে যে তারা নাস্তিক-কাফের, তারা এখন হাবিয়া দোজখে আছে, দোজখের আগুনে পুড়ছে, অনন্তকাল পুড়বে!

তারপর একদিন নিজে নিজেই সে লুকিয়ে রবীন্দ্রনাথ-লালনের গান শুনতে শুরু করে, ইন্টারনেট থেকে লালন-রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম বিষয়ক নানা ধরনের বই ডাউনলোড করে পড়তে থাকে, রবীন্দ্রনাথের গল্প-কবিতা-উপন্যাস পড়ে। সে আবিষ্কার করে এক অন্য লালনকে, অন্য রবীন্দ্রনাথকে; যার সঙ্গে মাদ্রাসার হুজুদের কথা মেলে না। এই সময় থেকেই মুফতি আলফাজের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মুফতি আলফাজ তার ভাবনার দরজা-জানালা আরো খুলে দেয়। সে বুঝতে পারে লালন এবং রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীলতা এবং জীবনদর্শনের এতো উচ্চতায় আসীন যে মাদ্রাসার হুজুরদের পক্ষে সেই উচ্চতায় পৌঁছানো তো দূরের কথা, কল্পনা করাও অসম্ভব। লালন-রবীন্দ্রনাথ যদি হয় হিমালয়, মাদ্রাসার হুজুররা তবে সমুদ্রতীরের নুড়ি পাথর!

শাহেদ রহিমের কাছে জানতে চায়, ‘লালনের আখড়া এখান থেকে কতোদূর?’
‘লালনের আখড়া গড়াই নদীর ওপরে, তোকে নিয়ে যাব একদিন।’
‘আর কুমারখালি কাঙাল হরিনাথের বাড়ি?’
‘আমরা কুমারখালির উপর দিয়েই এসেছি, তুই তখন ঘুমাচ্ছিলি। বেশি দূরে না।’

কিছুটা দূর থেকে রহিম বাসস্ট্যান্ডের একটি সেলুন দেখিয়ে দেয় শাহেদকে, শাহেদ সেলুনে ঢোকে। রহিম বাজারের ভেতরের আরেকটি সেলুনে যায়। আসবার পথে ওরা দুজনেই ঠিক করে দাড়ি শেভ করাবে। যে জীবন ওরা পিছনে ফেলে এসেছে, সেই জীবনের আর কোনো চি‎হ্ন ওরা রাখতে চায় না। দুজনে একই সেলুনে দাড়ি শেভ করালে কেউ ওদেরকে জঙ্গি হিসেবে সন্দেহ করতে পারে তাই আলাদা সেলুনে শেভ হয় ওরা। দাড়ি শেভ করিয়ে রহিমের কথা মতো শাহেদ শিলাইদাহের কুঠিবাড়ির দিকে যাবার রাস্তা ধরে এগিয়ে রেললাইনের উপর এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরেই আসে রহিম। ওরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকায়, কেমন অচেনা লাগে!

ওরা রেললইন ধরে পূর্বদিকে চড়াইখোল স্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকে। স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার পূর্বদিকে রেললাইনের কাছেই রহিমের বাড়ি। ওরা কেউ কারো সাথে কথা বলে না, একে অপরের দাড়ি কামানো গাল দেখে লজ্জা পায় হয়তো। এবারই ওদের জীবনের প্রথম দাড়ি কামানো। স্টেশনের দিকে তাকায় রহিম, দুজন লোক বসে আছে বেঞ্চে, অচেনা। স্টেশন অতিক্রম করে ওরা আবার হাঁটতে থাকে। কিছুদূর যাবার পর দাঁড়ায় রহিম, রহিমকে দেখে শাহেদও। রহিম শাহেদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম মিটি মিটি হাসে, শাহেদেও রৌদ্রজ্জ্বল মসৃণ গালে ডান হাত বুলায়। তারপর দুজনই শব্দ করে হেসে ওঠে, হাসি যেন থামতেই চায় না। হাসতে হাসতে ওরা একে অপরকে আলিঙ্গন করে। ওদের মুখে কোরানের খাঁচা থেকে মুক্তি পাবার অকৃত্রিম হাসি, পকেটে মুফতি আলফাজের দেওয়া বিশ হাজার টাকা, দু-চোখের আকাশে পাখির মতো উড়তে থাকা নতুন জীবনের স্বপ্ন।


সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ২০১৮

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: বিশাল পোষ্ট।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

মিশু মিলন বলেছেন: হুম, গল্পটা একটু বড়।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১০

আমি ৎৎৎ বলেছেন: ভাল লাগল।


ভাল থাকুন সবসময়।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনিও ভাল থাকুন।

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:২২

সাগর শরীফ বলেছেন: পুরোটা পড়তে পারলাম না, মাফ করবেন। তবে যেটুকু পড়ে সারমর্ম পেয়েছি তা অসাধারণ!

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.