নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
স্ক্রল করে নিচে নামতে নামতে শাশ্বতীদির একটা পোস্ট চোখে পড়ে, শাশ্বতীদি তার ব্লগের পোস্ট শেয়ার দিয়েছেন। কমেন্ট বক্সে কেউ কেউ শাশ্বতীদির লেখার প্রশংসা করেছে, আর যথারীতি আছে কিছু মুমিন বান্দার অশ্লীল গালিগালাজ। এই মুমিন বান্দারা যুক্তির ধারে-কাছেও নেই, কিন্তু গালাগালিতে তুখোর! মুমিনরা বোধ হয় সারাক্ষণ মগজের কোষে লিঙ্গ বয়ে বেড়ায়, কেননা তাদের অধিকাংশ গালাগালি-ই লিঙ্গ সম্পর্কিত; বিরোধী মতাদর্শের সব নারীদেরকে হয়তোবা ওরা গণিমতের মাল ভাবে! শাশ্বতীদির অতি নিরীহ পোস্টেও মুমিনদের গালি থাকে, কে জানে মুমিনরা গালি দিয়ে কী সুখ পায়! নাকি ভিন্নমতাদর্শীদের গালিগালাজ করাতেও সোয়াব আছে, কী জানি!
শাশ্বতীদি মুক্ত চিন্তক, পরিচ্ছন্ন চিন্তার মানুষ; তার লেখার মুগ্ধ পাঠক আমি। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের মতো সমাজের কাছে ভাল থাকার জন্য নিজের বিশ্বাসকে বোরকাবৃত করে রাখেন না তিনি। যা বিশ্বাস করেন, অকপটে তা-ই বলেন; কালোকে কালো, ভালকে ভাল বলেন। আমার মতোই তারও বিশ্বাস, শরীরে বোরকা পরা মানুষের চেয়ে নিজের বিশ্বাসে বোরকা পরানো মানুষগুলোও প্রগতির জন্য কম ক্ষতিকর নয়; কারণ শরীরে বোরকা পরা মানুষ দেখলেই আমরা তার বিশ্বাস-দর্শন সম্পর্কে একটা ধারণা পাই, সব জায়গায় তারা একই রকম; কিন্তু বিশ্বাসে বোরকা পরানো মানুষের তল খুঁজে পাওয়া কঠিন, তারা একেক জায়গায় একেক রকম!
সংগ্রামে ভরা জীবন শাশ্বতীদির। সত্য এবং নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে সমাজ আর পরিবারের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর এক আদর্শ চরিত্র। ঘুম যেহেতু আসছেই না, লেখাটা পড়েই ফেলি। ক্লিক করে ওর ব্লগে ঢুকে পড়তে শুরু করি-
জন্মান্তর (পর্ব-এক)
রতিক্লান্ত দেহে আমার বর এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে তার ভাঁজ করা ডান হাত আমার বুকের ওপর দিয়ে বাঁ-কাঁধের কাছে আর দ আকৃতির ডান পা দুই ঊরু ও তলপেটের ওপর রেখে; তার নিঃশ্বাস পড়ছে আমার গলার ডানদিকে, ডান গালেও। আমরা দু-জনই নগ্ন! এই যে আমার বর নগ্ন হয়ে তার ডান হাত আর ডান পায়ের ভর রেখেছে আমার শরীরের ওপর, আমার শরীরের সাথে লেপটে সে দিব্যি ঘুমোচ্ছে, এই অভিজ্ঞতা আমার আজই প্রথম নয়; অনেক রাত আমরা এভাবে পার করেছি। তবু আমার মনে হচ্ছে আজই প্রথম, আজই প্রথম আমি বরের স্পর্শ সুখ পাচ্ছি; আজই প্রথম আমার জীবন পূর্ণতা পেয়েছে, নারী জীবন! কী যে সুখ অনুভূত হচ্ছে, কী যে ভাল লাগছে, কী যে আনন্দের হড়কা বান বইছে আমার হৃদ চরাচরে, সেই অনুভূতি কখনোই আমি শব্দে শব্দে লিখে বা মুখে বলে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবো না কারো কাছে; এমনকি আমার বরের কাছেও নয়। এই সুখ, ভাললাগা, আনন্দের অনুভূতি অব্যক্ত; সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেবার পরও হৃদয়ের কোটরে কিছু গোপন থেকেই যায় যা কারো কাছে ব্যক্ত করা যায় না, এই অনুভূতির কোনো শরিক হয় না। কোনো শব্দেই গাঁথা যায় না এই সুখানুভূতির মালা, কোনো উপমাতেই স্পর্শ করা যায় না এই সুখানুভূতির নিগূঢ় নিগদ, কোনো ভাষায়ই অনুবাদ করা যায় না এই সুখানুভূতির পংক্তিমালা; এ এক অপার সুখের অলিখিত বিমূর্ত সুখকাব্য, যার রসাস্বাদন কেবল নিজেই করা যায়, তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায়! এই অতুল আনন্দে, বিপুল সুখে ঘুম আসছে না আমার। এখন রাত কতো? দুটো তো হবেই। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামছে, আষাঢ়ে বৃষ্টি। মহল্লায় কোনো সাড়াশব্দ নেই, সারা মহল্লার মানুষ এখন হয়তো ঘুমোচ্ছে; আমি-ই কেবল জেগে জেগে হাবুডুবু খাচ্ছি অথৈ সুখের ভাবালুতায়। মনে হচ্ছে রাত দীর্ঘ হোক, এমনি করে অঝোর ধারায় কামুক বৃষ্টি নেমে ভেজাক মাটির জরায়ু, যাতে আমি দীর্ঘ সময়ব্যাপী একা একা এই সুখ উদযাপন করতে পারি!
আজ আমার কতো কিছু মনে পড়ছে; শৈশব-বাল্য-কৈশোরের কথা, বাবা-মায়ের কথা, স্কুলের বন্ধুদের কথা, পাড়া-পড়শি এবং আত্মীয়-স্বজনের কথা। মনে পড়ছে সেইসব অপমান, অবহেলা, দুঃখগাঁথা দিনগুলোর কথা। আজকের এমন সুখের রাতে সেইসব কথা মনে করতে চাইনে যা আমার জন্য মোটেও সুখকর নয়, তবু মনে পড়ছে। তা বলে সেইসব দুঃখগাঁথা দিনের কথা মনে করে আমি আজকের এই সুখের রাতে এই ভেবে কাঁদতে বসবো না যে আহা, কতো অশ্রু দিয়েই না আমি কিনেছি এই সুখ; সেইসব দিনের কথা স্মৃতিতে উথলে উঠবে আর আমি আনন্দ অশ্রু বিসর্জন করে বুক ভাসাবো, বালিশ ভেজাবো, বরের গা ভেজাবো; অমন মেয়েই আমি নই। কান্নার দিন আমি অনেক পিছনে ফেলে এসেছি, এখন কেবল হাসবো। হাসবো আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবো জীবন, আহা নারী জীবন!
আমি জানি যে আমার এই সুখের জীবন আরো সুখের হতে পারে যদি সমাজের মানুষের হাতে হাত ধরে, পায়ে পা মিলিয়ে পথ চলতে পারি। কিন্তু সেই সৌভাগ্য কি এই পোড়া দেশে আমার হবে? সমাজের কেউ কেউ কাঁকর বিছিয়ে রাখবে আমার পথে, এখন যেমন রাখে; বাক্যবাণ নিক্ষেপ করে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করতে চাইবে, এখন যেমন করে। তবু এই বিরূপ সমাজের ভেতর থেকেই যে অল্প ক’জনকে সঙ্গে পাব তাদের হাত ধরেই আমি এগিয়ে যাব ভবিষ্যতের পথে। যাত্রাপথে কিছু লোক গায়ে হুল ফুটালে, পায়ে কামড় দিলে তা আমি আমলে নেব না। এরা মহাকালের কাঁকড়া-বিছা জাতীয়; অতীতে ছিল, এখনো আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের জন্য মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা কোনোকালে থেমে থাকেনি, ভবিষ্যতেও থেমে থাকবে না।
আজ আমার মনে পড়ছে তুলিভাবীর কথা। বেচারি তুলিভাবী! অমন ভরপুর যৌবন, কিন্তু বর ইংল্যান্ডে থাকায় তার যৌবন গুমরে কাঁদতো দেহের অন্দরে একলা ঘরে। বাড়িতে ছিল কেবল শাশুড়ি আর শ্বশুর। আমাদের বাড়ি আর ভাবীদের বাড়ি ছিল পাশাপাশি; ফরিদপুর শহরের শেষ প্রান্তের দিকে, যেখান থেকে শুরু ফসলের উন্মুক্ত মাঠ আর মাঠের পরে গ্রাম। যার ফলে আমরা গ্রাম আর শহরের মিশ্র স্বাদ পেতাম। আজ থেকে পনের বছর আগের কথা, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এতোদিনে নিশ্চয় আমাদের পাড়াটা বদলে গেছে; হয়তো বদলে গেছে মানুষও। তখন আমাদের পাড়ায় তো আমরা সবাই সবাইকে চিনতাম, এমনকি ভাড়াটিয়াদেরকেও।
ভাবী তখন বাইশ-তেইশ বছরের যুবতী, তার শরীরে উছলে পড়া যৌবন; যৌবন ভরা শরীরে নতুন স্বাদ আর লোভ জাগিয়ে তার বর ইকবাল ভাই ফিরে গেছেন ইংল্যান্ডে, এদিকে সে তো যৌবন যাতনায় অধীর চঞ্চল! ভাবীর শ্বশুরের নাম সিরাজুল ইসলাম, আমরা সিরাজ চাচা বলে ডাকতাম। সিরাজ চাচা, চাচী আর ভাবীর সঙ্গে আমাদের পরিবারের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। এ-বাড়ির ভাত-তরকারি ও-বাড়িতে যেতো, ও-বাড়ির ভাত-তরকারি এ-বাড়িতে আসতো। যেহেতু ইকবাল ভাই থাকতো বিদেশে, আর সিরাজ চাচা এবং চাচী খুব বৃদ্ধ নয় বলে তাদের সেবাযত্নেও অতিরিক্ত সময় ব্যয় হতো না, ফলে সংসারের টুকিটাকি কাজ সামলেও অনেক অবসর পেতো ভাবী। তাই যখন-তখন আমাদের বাসায় আসতো সে, মা এবং আমার বড় দুই আপুর সঙ্গে গল্প করে আর লুডু খেলে সময় কাটাতো। আমি তখন আঠারোয় পা দিয়েছি, মাঝে মধ্যে আমিও লুডু খেলতাম তাদের সঙ্গে। এই তুলিভাবীর সঙ্গেই আমার প্রথম যৌন সম্পর্ক!
মহাভারতে একটা গল্প আছে। ওই যে যুদ্ধ শেষের কুরুক্ষেত্রে ওঘবতী নদীর তীরে পিতামহ ভীষ্ম যখন শরশয্যায় শায়িত তখন যুধিষ্ঠির তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘পিতামহ, স্ত্রী-পুরুষের মিলনকালে কার স্পর্শসুখ অধিক হয়?’
এই প্রশ্নের উত্তরে পিতামহ ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে এই গল্পটি শুনিয়েছিলেন-
‘ভঙ্গাস্বন নামে একজন ধার্মিক রাজর্ষি পুত্রকামনায় অগ্নিষ্টুত যজ্ঞ করে শতপুত্র লাভ করেছিলেন। এই যজ্ঞে কেবল অগ্নিরই স্তুতি করা হতো, এজন্য বরাবরের ঈর্ষাকাতর ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হয়ে রাজর্ষি ভঙ্গাস্বনের অনিষ্ট করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। একদিন ভঙ্গাস্বন মৃগয়া করতে গেলে ইন্দ্র সুযোগ পেয়ে তাকে বিমোহিত করলেন। ভঙ্গাস্বন দিগভ্রান্ত, শ্রান্ত এবং পিপাসার্ত হয়ে অরণ্যে ঘুরতে লাগলেন, ঘুরতে ঘুরতে একটি সরোবর দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে তিনি প্রথমে তার অশ্বকে জল পান করালেন। তারপর নিজে সরোবরে অবগাহন করলেন এবং তৎক্ষণাৎ স্ত্রী-রূপ পেলেন। নিজের এই আকর্ষিক রূপান্তর দেখে বিস্মিত, লজ্জিত ও চিন্তিত ভঙ্গাস্বন তখনই অশ্বের পৃষ্ঠে আরোহন করে রাজপুরীতে ফিরলেন। তাকে দেখে তার পত্নী-পুত্রগণ এবং রাজপুরীর অন্যান্যরা চিনতে না পারলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে সকল বৃত্তান্ত সবাইকে জানালেন। এরপর তিনি তার পুত্রদেরকে ডেকে বললেন, “আমি বনে চলে যাব, তোমরা সকলে একত্র থেকে সৎভাবে রাজ্য ভোগ করো।”
পুত্রদের হাতে রাজ্য সমর্পণ করে স্ত্রী-রূপী ভঙ্গাস্বন রাজ্য ত্যাগ করে অরণ্যে গিয়ে এক তপস্বীর আশ্রমে বাস করতে লাগলেন। কালক্রমে সেই তপস্বীর ঔরসে ভঙ্গাস্বনের গর্ভে একশ পুত্রের জন্ম হলো। একদিন তিনি তার এই শতপুত্রকে নিয়ে রাজপুরীতে গিয়ে পূর্বজাত শতপুত্রকে বললেন, “তোমরা আমার পুরুষ অবস্থার ঔরসজাত পুত্র, আর এরা আমার নারী অবস্থার গর্ভজাত পুত্র। তোমরা তোমাদের এই ভ্রাতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাজ্যভোগ করো।”
ভঙ্গাস্বনের আদেশ অনুসারে তার দুইশত পুত্র একত্রে মহানন্দে রাজ্য ভোগ করতে লাগলো। তাদের সুখ-শান্তি দুষ্টু ইন্দ্রের সহ্য হলো না; ইন্দ্র ভাবলেন, আমি রাজর্ষি ভঙ্গাস্বনের অপকার করতে গিয়ে উল্টো উপকারই করেছি। তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে রাজপুরীতে গিয়ে ভঙ্গাস্বনের ঔরসজাত পুত্রদের বললেন, “যারা এক পিতার পুত্র তাদের মধ্যেও সৌভ্রাত্র থাকে না; কশ্যপের পুত্র সুর এবং অসুরগণের মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। তোমরা রাজর্ষি ভঙ্গাস্বনের ঔরসজাত পুত্র আর ওরা একজন অরণ্যচারী তপস্বীর ঔরসজাত পুত্র; এই পৈত্রিক রাজ্য ভোগ করার অধিকার কেবল তোমাদের, ওরা তোমাদের পৈত্রিক রাজ্য ভোগ করছে কেন?”
ইন্দ্র কু-বুদ্ধি দেবার পর ভঙ্গাস্বনের ঔরসজাত এবং গর্ভজাত পুত্রদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হলো, তারা যুদ্ধ করে পরস্পরকে বিনষ্ট করলো। পুত্রদের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ভঙ্গাস্বন মুষড়ে পড়লেন। তখন ইন্দ্র তার কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি আমাকে আহ্বান না করে অগ্নিষ্টুত যজ্ঞ করেছিলে, সেজন্য আমি রুষ্ট হয়ে তোমাকে শাস্তি দিয়েছি।”
ভঙ্গাস্বন পদানত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ইন্দ্র প্রসন্ন হলেন। বললেন, “আমি তুষ্ট হয়েছি; বলো, তুমি তোমার কোন পুত্রদের পুনর্জীবন চাও-তোমার ঔরসজাত পুত্রদের, না গর্ভজাত পুত্রদের?”
তপস্বিনীবেশী ভঙ্গাস্বন তখন কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, “আমি আমার স্ত্রী অবস্থার গর্ভজাত সন্তানদের পুনর্জীবন চাই।”
ইন্দ্র বিস্মিত হয়ে বললেন, “তোমার গর্ভজাত পুত্ররা ঔরসজাত পুত্রদের চেয়ে বেশি প্রিয় হলো কেন?”
ভঙ্গাস্বন বললেন, “দেবরাজ, পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রী অধিক স্নেহময়ী, পুরুষের চেয়ে স্ত্রীর স্নেহ-ই প্রবল।”
ইন্দ্র প্রীত হয়ে বললেন, “সত্যবাদিনী, আমার বরে তোমার সকল পুত্রই জীবিত হোক। এখন তুমি বলো, পুরুষত্ব না স্ত্রীত্ব চাও তুমি?”
ভগ্নাস্বন বললেন, “আমি স্ত্রী-রূপেই থাকতে চাই।”
ইন্দ্র আরো বিস্মিত হয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “দেবরাজ, স্ত্রী-পুরুষের মিলনকালে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীর-ই অধিক সুখলাভ হয়, আমি স্ত্রী-রূপেই তুষ্ট আছি।”
ইন্দ্র তার ইচ্ছাপূরণ করে বিদায় নিলেন।’
আমি একালের ভঙ্গাস্বন। তবে দুষ্টু দেবরাজ ইন্দ্র কিংবা অন্য কোনো দেবতা আমার রূপান্তর ঘটাননি; প্রকৃতিই আমার ভেতরে বপন করে রেখেছিল নারীত্বের বীজ, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। প্রকৃতিই আমার মনের ভেতরে নারীত্বের বিস্তার ঘটিয়েছে, আর আমার শরীরের রূপান্তর ঘটিয়েছে শল্য চিকিৎসক। আমার লিঙ্গ রূপান্তরের কথা শুনে কেউ কেউ আমাকে শয়তান কিংবা ডাইনি বলতে শুরু করেছে, কেউ বলছে এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ, পুরুষমানুষ আবার নারী হয় নাকি? এদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে হয়, পুরুষ নারী আর নারীও পুরুষ হয়, যদি প্রকৃতি পুরুষের ভেতর নারীত্বের আর নারীর ভেতর পুরুষত্বের বীজ বপন করে রাখে; যেমনি আমার ভেতরে বপন করা ছিল নারীত্বের বীজ।
শুধু কি মানুষ, প্রাণিজগতের আর কোনো প্রাণির মধ্যে এমন রূপান্তর ঘটে না? নিশ্চয় ঘটে, প্রাণিজগতের আরো অনেক প্রাণির মধ্যে নিশ্চয় এমন রূপান্তরের ঘটনা ঘটে। এতোবড় পৃথিবীতে অগণিত প্রাণির বাস; নিশ্চয় প্রতি মুহূর্তে বিবর্তন ঘটছে, প্রতি মুহূর্তে বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে এই পৃথিবী; আমরা তার কতোটুকুই বা জানতে পারি! তবু বিজ্ঞানের কল্যাণে, বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে মাঝে মাঝেই আমরা এমন কিছু ঘটনা জানতে পারি, যে ঘটনার কথা আমরা কোনোদিন কল্পনাও করিনি, যে ঘটনা আমাদের পরিচিত প্রাণিদের মধ্যে আমরা কখনো ঘটতে দেখিনি। ফলে এই অদেখা-অজানা ব্যাপারটা কারো কারো কাছে অস্বাভাবিক বা প্রকৃতিবিরুদ্ধ মনে হলেও আদতে তা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। উত্তর আমেরিকার ক্লিনার ফিশের কথাই ধরা যাক, এই মাছের মধ্যে রূপান্তরকামীতার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম- Laborides Dimidiatus, এই প্রজাতির পুরুষ মাছ একসঙ্গে পাঁচ থেকে দশটা স্ত্রী মাছের সঙ্গে থাকে এবং যৌনাচার করে। এটা কিন্তু মানুষের মতোই স্বাভাবিক। আমরা জানি যে শ্রীকৃষ্ণের একাধিক স্ত্রী এবং অসংখ্য সখি ছিল; হযরত মুহাম্মদের তেরো স্ত্রী এবং গণিমতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত একাধিক যৌনদাসী ছিল; আগের দিনের রাজা-বাদশাহ এবং পুরোহিতগণ ডজন ডজন স্ত্রী এবং যৌনদাসী রাখতেন; এখনো সৌদি আরবের বাদশাহ এবং বনেদীদের বিবির বহরের কথা আমরা জানি; আর আজকাল আমাদের দেশের অনেক সামর্থ্যবান মানুষও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে ঘরে এক পত্নী রাখলেও অন্যত্র একাধিক গোপন উপপত্নী রাখেন!
ক্লিনার ফিশ প্রজাতিতে একই সঙ্গে পাঁচ থেকে দশটা স্ত্রী মাছের মধ্যমণি হয়ে থাকা পুরুষ মাছটির হঠাৎ মৃত্যু হলে স্ত্রী মাছগুলোর ভেতর থেকে যে-কোনো একটা মাছ বয়োজ্যেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে হোক অথবা প্রভাব খাটিয়েই হোক দলের অন্য স্ত্রী মাছগুলোর দায়িত্ব নেয়। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ক্রমে ক্রমে ওই স্ত্রী মাছটির দৈহিক পরিবর্তন হতে থাকে; মাত্র দু-সপ্তাহের মধ্যেই তার গর্ভাশয়ে ডিম্বানু উৎপন্ন বন্ধ হয় এবং নতুন পুরুষাঙ্গ গজিয়ে সে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হয়ে যায়।
রূপান্তরের উদাহরণ আরো আছে। উত্তর আমেরিকার সমুদ্র উপকূলে Atlantic Slipper Shell নামে এক প্রজাতির ক্ষুদ্র প্রাণির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা; যার বৈজ্ঞানিক নাম- Crepidula Formicata, এই প্রজাতির পুরুষেরা একা একা ঘুরে বেড়ায়, ঘুরতে ঘুরতে কোনো স্ত্রীর সংস্পর্শে এলে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়; যৌন সঙ্গমের পর পরই পুরুষটির পুরুষাঙ্গ খসে পড়ে এবং সে স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়, রূপান্তরের পর এরা আর একা একা ঘুরে বেড়ায় না, স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে।
এই যে দুটি প্রজাতির একটির স্ত্রী পুরুষে এবং অপরটির পুরুষ স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়, এটা কী প্রকৃতিবিরুদ্ধ? এই দুই প্রজাতির স্ত্রী বা পুরুষের তো এই রূপান্তরে কোনো হাত নেই, প্রকৃতির নিয়মে আপনা-আপনিই এরা রূপান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীতে নিশ্চয় এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে যা এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। তার মানে রূপান্তরকামিতা প্রকৃতির স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
অথচ মোল্লা-পুরোহিত-যাজকরা তো বটেই, সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে শুরু করে আজকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষিত প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষই রূপান্তরকামিতাকে আখ্যা দেয় প্রকৃতিবিরুদ্ধ এবং দৈহিক বিকৃতি বলে। প্রকৃতিতে উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও এরা বলে- ওসব তো আল্লাহ বা ভগবানের ইচ্ছায় এমনিতেই হয়েছে। আর মানুষ তো শল্য চিকিৎসা করিয়ে স্বেচ্ছায় নিজের শরীরের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। আল্লাহ যেভাবে পাঠিয়েছে সেভাবেই থাকা উচিত; খোদার ওপর খোদগারি করার দরকার কী!
কী আশ্চর্য! শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে রূপান্তরকামিতা যদি খোদার ওপর খোদগারি হয়, তবে তো খৎনা করাও খোদার ওপর খোদগারি! আল্লাহ-ই যদি মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকবেন তো তিনি নিশ্চয় মানুষকে অপূর্ণাঙ্গভাবে পাঠাননি, যার যেখানে যতোটুকু প্রয়োজন নিশ্চয় ততোটুকু দিয়েই তিনি পাঠিয়েছেন। সেই হিসেবে পুরুষ এবং নারীর যৌনাঙ্গ সৃষ্টিতেও তিনি কোনো অপূর্ণতা রাখেননি। তাহলে ইহুদিদের রীতি গ্রহণ করে মুসলিম পুরুষরা কেন তাদের পুরুষাঙ্গের বাড়তি চামড়াটুকু কেটে ফেলে? নিশ্চয়-ই ওই চামড়াটুকুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বলেই আল্লাহ চামড়াটুকু দিয়েছেন! খৎনা করে চামড়া কেটে ফেলা কি খোদার ওপর খোদগারি নয়? আফ্রিকার কোনো কোনো দেশের মুসলিম নারীদেরকেও খৎনা করা হয়, নিশ্চয় তাও খোদার ওপর খোদগারি! মুসলমানদের দেহে যেকোনো ধরনের অস্ত্রপাচার করাও নিশ্চয় খোদার ওপর খোদগারি; কারণ সৃষ্টি যখন আল্লাহ্ করেছেন, রোগও নিশ্চয় তিনি-ই দেন!
যাকগে, আমি তুলিভাবীকে পছন্দ করতাম তার হাসিখুশি চেহারা এবং অমায়িক ব্যবহারের জন্য। সহজেই সে সবার সাথে মিশতে পারতো, সবাইকে আপন করে নিতে পারতো। তখন বর্ষাকাল; সবে আমি ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি। শুক্রবার দুপুরবেলা; নামাজ পড়তে যাব না শুনে আব্বা গজগজ করতে করতে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে আমি ঘর থেকে বেরোলাম আমাদের গলির মোড়ের দোকানের উদ্দেশে্য। ভাবীদের বাড়ির সদর গেটের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, জানালা দিয়ে আমাকে দেখে ভাবী বললো, ‘কোথায় যাচ্ছ?’
‘সুবলদার দোকানে যাচ্ছি।’
‘কেন?’
‘এমনিতেই, কোনো কাজ নেই।’
‘সেমাই রান্না করেছি, খেয়ে যাও।’
এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়, ভাল কিছু রান্না করলে ভাবী আর চাচী হরহামেশাই আমাকে খেতে ডাকতো। ভাবী এসে গেট খুলে দিলো, আমি মহানন্দে ভাবীর পিছন পিছন চললাম সেমাই খেতে। এ-বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত। ঘরে ঢুকে বেতের চেয়ারে বসলাম, ভাবী গেল আমার জন্য সেমাই আনতে। অল্পক্ষণ পরই ছোট্ট মেলামাইনের বাটিতে একবাটি সেমাই আর চামচ এনে আমার হাতে দিয়ে ভাবী বসলো চেয়ার লাগোয়া বিছানায়। আমি খেতে খেতে বললাম, ‘চাচী কই?’
‘বাবা আর মা আজ সকালে ঢাকায় গেছে, বেলা আপার পেটের টিউমার অপারেশান হবে আগামীকাল।’
বেলা আপা, মানে সিরাজ চাচার ছোট মেয়ে; ভাবীর ননদ।
বললাম, ‘কবে আসবে?’
‘বাবা পরশুদিনই চলে আসবেন, কিন্তু মা থাকবেন আরো কিছুদিন।’
ভাবীর রান্নার হাত দারুণ! হোক তা সেমাই, মাছ কিংবা মাংস; যা রান্না করে তাই যেন অমৃত! আমি তৃপ্তির সঙ্গে সেমাই খেতে থাকলে ভাবী আদর করে আমার মাথার চুলে-কাঁধে আঙুলের স্পর্শ বুলাতে লাগলো। ভাবীর এই আদুরে স্পর্শও নতুন কিছু নয়; মা আর আপুদের সামনেও ভাবী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো, পিঠ চাপড়ে দিতো, লুডু খেলতে খেলতে বা অন্য কোনো উপলক্ষ্য পেলে আদর করে গাল-নাক টিপে ধরতো!
সেমাই খেয়ে হাত-মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে এসে আবার চেয়ারে বসলাম। ভাবীও আমার এঁটো বাটি রান্নাঘরে রেখে এসে আবার আগের জায়গায় বসলো। আমার লেখাপড়া, কলেজ, বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে করতে ভাবী একইভাবে আমাকে আদর করতে লাগলো। আমার হাতটি তার কোলের ওপর নিয়ে টিপতে লাগলো। এরপর আমার হাতটি নিয়ে তার মুখে ঘষতে ঘষতে হঠাৎ নরম স্তনে চেপে ধরলো। আমি ভয় পেয়ে বেশ জোরেই বললাম, ‘ভাবী, একি করছো!’
‘চুপ….!’ পুকুরের জলে খসে পড়া গাছের পাতার মতো নীরবে ভাবীর ডানহাতের তর্জনী স্পর্শ করলো আমার ঠোঁট।
(চলবে……)
১০ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৯
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে।
২| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: একদম সহজ করে আর সাহস করে জীবনের চরম কথা গুলো লিখে চলেছেন।
১০ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৯
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০৯
আসিফ মাহমুদ জীবন বলেছেন: মানুষের জীবনের সহজ ধারাটা আপনার লেখায় আছে। আগামি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম স্যার।
১২ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৬
মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৯
গেছো দাদা বলেছেন: আপনার লেখনির সাহসকে আমি কুর্নিস জানাই। আপনি কি বাংলাদেশে থাকেন ? ওখানে ৫৭ ধারা বলে কি একটা আইন আছে না ? ওটা বাঁচিয়ে চলার অনুরোধ জানাই । ভালো থাকুন।