নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্মান্তর (উপন্যাস: পর্ব-ষোলো)

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

এইসব অমানবিক ঘটনা আমাকে ব্যথিত করে, বিচলিত করে। ভেতরে ক্ষোভ জন্মায়, হাত নিশপিশ করে কিছু লেখার জন্য, গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দ শব্দজালে রূপান্তরিত হয়ে আমাকে জড়িয়ে তীব্রভাবে টানে, জলবিম্বের মতো ঠেলে ওঠে ভাবনা। ওয়ার্ডে নতুন একটি পেজ খুলি, ফেসবুকে স্ট্যাটাস নয়, ব্লগের জন্য একটি প্রবন্ধ লিখবো। না চাইলেও এখন জোর করে মনের পর্দায় ভেসে উঠছে বিশজন মানুষকে শিরোচ্ছেদ করার নির্মম দৃশ্য, গরম রক্ত ছিটকে-গড়িয়ে যাবার বীভৎস দৃশ্য! নিরপরাধের রক্ত শব্দ হয়ে বিক্ষুব্ধ ঝড়ের মতো ধেয়ে আসছে আমার চৈতন্যে, কী-বোর্ডে আঙুল স্পর্শ করতেই শব্দগুলো আছড়ে পড়তে শুরু করে-



ইসলাম: ধর্ম বা দর্শনের প্রচলিত প্রথা ভাঙা রাজনৈতিক এবং সন্ত্রাসী মতবাদ



সনাতন ধর্ম লোকাচার বা লোকসংস্কৃতি; বহু বছর ধরে মানুষের জীবনযাত্রা, চিন্তা, খাদ্যাভাস, কর্ম, বিশ্বাস, যৌনাচার প্রভৃতির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এই লোকাচার-লোকসংস্কৃতি। আদিম মানুষ যখন স্বাদ-গন্ধ নিতে শিখেছে, বনের ফল কুড়িয়ে খেতে শিখেছে, পাথরে আঘাত পেলে ব্যথা অনুভব করেছে, একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করতে শিখেছে, একে অন্যের শরীরের গন্ধ-উত্তাপ অনুভব এবং যৌনসঙ্গম শুরু করেছে, একটি ফল দু-জন বা অধিক লোকে ভাগ করে খেয়েছে, সন্তান ভূমিষ্ট হলে তাকে লালন-পালন করেছে, বৃষ্টি পড়লে গুহার ভেতরে কিংবা গাছের আড়ালে আশ্রয় নিতে শিখেছে, শীত লাগলে গাছের বাকল গায়ে জড়াতে শিখেছে, অরণ্যে দাবানল শুরু হলে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচতে শিখেছে; তখন থেকেই সনাতন ধর্মীয় সংস্কৃতির যাত্রা শুরু। এই মানুষেরাই দাবানল দেখে ভীত হয়ে আগুনকে, প্রখর দাবদাহ থেকে রেহাই পেতে সূর্যকে, বরফ পড়ার সময় তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে বরফকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করেছে। এসব পূজা তারা এই বিশ্বাস থেকে করেছে যে তাহলে আগুন হয়তো তুষ্ট হয়ে তাদের অরণ্যে দাবানল সৃষ্টি করবে না বা সূর্য হয়তো তাদেরকে একটু কম দগ্ধ করবে, বরফ হয়তো শীতে একটু কম কষ্ট দেবে। এরাই একসময় পাথরের অস্ত্র তৈরি করে পশু শিকার করতে শিখেছে, পশুর হাড় দিয়ে অস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরি করতে শিখেছে, দাবানলে পোড়া মাংসের স্বাদ পেয়েই বুঝিবা পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কার করেছে, তীর-ধনুক বানিয়ে পাখি শিকার করতে শিখেছে, জঙ্গল কেটে ছাপ করে কৃষিকাজ করতে শিখেছে, আরো পরে তামা-লোহা আবিষ্কার এবং এর ব্যবহার শিখেছে, এইসব আদিম মানুষদেরই বংশধর আমরা আজকের এই আধুনিক মানুষেরা।

কালের আবর্তে আদিম মানুষেরা যতো সামনে এগিয়েছে তাদের সনাতন ধর্মীয় সংস্কৃতির রীতি-পদ্ধতিও একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়েছে; ভিন্ন ভিন্ন যুগের মানুষেরা পুরাতন রীতি-পদ্ধতির কিছু বাদ দিয়ে যোগ করেছে নতুন কিছু রীতি-পদ্ধতি, নতুন-পুরাতনের সংমিশ্রণে সনাতন ধর্ম সামনে এগিয়েছে। মানুষ যতো সামনে এগিয়েছে ততো তার চিন্তা-ভাবনার প্রসার ঘটেছে, বিচরণ ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে, একদিকে যেমনি হয়ে উঠেছে পূর্বের চেয়ে অধিকতর চৌকষ অন্যদিকে তেমনি হয়ে উঠেছে পূর্বের চেয়ে অধিকতর ধূর্ত এবং স্বার্থান্বেষী। কালক্রমে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পুরোহিততন্ত্র, নিজেদের স্বার্থ কায়েম করতে সনাতন ধর্মে সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন উদ্ভট সব রীতি-পদ্ধতি, করেছে গোষ্ঠীভেদ-বর্ণভেদ। নতুন নতুন সব আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-পদ্ধতি আর জটিল সব তত্ত্বের ভারে সহজ-সরল আদিম মানুষের সহজ-সরল সনাতন ধর্ম যেমনি জর্জরিত হয়েছে, তেমনি জর্জরিত হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। লোহা আবিষ্কারের পর কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হলেও মুষ্টিমেয় মানুষের ধর্মীয় শোষণ-শাসনে সমাজে বাড়তে থাকে বৈষম্য। ধর্মীয় অনুশাসনে শাসকশ্রেণি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি করে যাতে সম্পদ তাদের হাতে কুক্ষিগত হয় আর তারা যুগ যুগ ধরে শোষণ করতে পারে সাধারণ মানুষকে। এর ফলে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে, সমাজের একটা অংশ প্রচলিত রীতি-পদ্ধতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ-ই শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড়ানো পুরনো রীতি-পদ্ধতি ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে না। আবার বংশ পরম্পরায় প্রচলিত বিশ্বাসও তাকে পিছু টানে, ফলে তারা শোষিত হয়েও প্রচলিত বিশ্বাসের পথেই হাঁটে। কিন্তু পুরনো বিশ্বাস ঝেড়ে ফেলে কেউ না কেউ পুরনো সমাজ সংস্কারের জন্য জেগে ওঠেই, অধিকাংশ-ই হয়তো ব্যর্থ হয়, কিন্তু কেউ কেউ কম-বেশি সফলও হয়।

সনাতন ধর্ম ব্যতিত বেশিরভাগ ধর্ম বা দর্শন-ই একেকটি প্রতিবাদ তৎকালীন সনাতন ধর্মীয় রীতি, নীতি-নির্ধারক এবং সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে; তা ভারতবর্ষে উদ্ভূত বৌদ্ধ, জৈন, বৈষ্ণব, শৈব, শিখ প্রভৃতি ধর্ম এবং বার্হস্পত্য বা বাউল দর্শনের ক্ষেত্রে যেমনি সত্য; তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে জন্ম নেওয়া ইহুদি, খ্রিষ্ট এবং ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও সত্য। মানব সভ্যতার উন্মেষকালের পর থেকে পৃথিবীজুড়ে এরকম আরো অনেক ধর্ম বা দর্শনের জন্ম হয়েছে স্ব স্ব সমাজ ও ধর্মীয় ব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্টি, অনাস্থা, বিতৃষ্ণা এবং প্রতিবাদের ফল স্বরূপ; আবার বিনাশও হয়েছে অনেক ধর্ম এবং দর্শনের, পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে, মানুষ এখন সে-সব ধর্ম বা দর্শনের নামও জানে না। এই যে স্ব স্ব সমাজের প্রতি এইসব ধর্ম প্রবর্তক বা দার্শনিকদের প্রতিবাদ, একে আমি স্বাগত জানাই। আমি শ্রদ্ধা জানাই তাদের মানসিকতাকে এজন্য যে বংশপরম্পরায় প্রচলিত পুরনো অন্ধ বিশ্বাস এবং কু-সংস্কারকে তারা অস্বীকার করতে পেরেছিলেন এবং এর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাদের বোধ জাগ্রত হয়েছিল নতুন দর্শনের সন্ধানে।

প্রথমত তারা লড়াইটা করেছিলেন নিজের সঙ্গে; বংশ পরম্পরায় প্রচলিত বিশ্বাসকে অস্বীকার করাটা সহজ কাজ নয়, এর জন্য নিজের সঙ্গে অনবরত লড়াই করতে হয়; বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে খুব কম মানুষই এই লড়াইয়ে জিততে পারে। এইসব ধর্ম বা দর্শনের প্রবর্তকেরা নিজের সঙ্গে করা এই লড়াইয়ে জিততে পেরেছিলেন। এর পরের লড়াইটা তাদের করতে হয়েছিল পরিবার এবং সমাজের মানুষের বিরুদ্ধে; যারা পুরোনো প্রথাতেই সন্তুষ্ট ছিল এবং পুরনো পথকেই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করতো। নিজের সঙ্গে তাদের লড়াইটা কিন্তু কখনোই শেষ হয়ে যায়নি, অবিরাম চিন্তা করেছেন, নতুন দর্শনের সন্ধান করেছেন; মানুষের অদম্য কৌতুহল আর রাশি রাশি প্রশ্নের চাপ বহন করেছেন; লব্ধ দর্শন দিয়ে নির্বাপিত করেছেন মানুষের কৌতুহল, দিয়েছেন রাশি রাশি প্রশ্নের উত্তর। তাতে হয়তো কেউ কেউ সন্তুষ্ট হয়েছে, কেউবা হয়নি। হয়নি বলেই নতুনের পাশাপাশি পুরনো সনাতন ধর্ম আজও টিকে আছে।

স্ব স্ব ধর্ম ও সমাজের প্রতি ধর্মপ্রবর্তক বা দার্শনিকদের এই প্রতিবাদী মানসিকতার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। শ্রদ্ধাশীল সমাজের সেইসব মানুষের প্রতিও যারা এইসব নতুন ধর্ম বা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হননি কিন্তু মুকুলেই বিনষ্ট না করে বেড়ে উঠতে দিয়েছেন। যদিও সর্বদা ধর্ম প্রবর্তক বা দার্শনিকদের পথ মসৃণ ছিল না। সেই সমাজের সেইসব মানুষকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় এজন্য যে তারা যদি ধর্ম বা দর্শন প্রচারের শুরুতেই বুদ্ধ, পার্শ্ব কিংবা মহাবীর, বৃহস্পতি লৌক্য, যীশু, মুহাম্মদ, গুরু নানকসহ অন্যান্যদেরকে হত্যা করতো; তবে নতুন ধর্ম ও দর্শনের উদ্ভবই হতো না। নতুন চিন্তা, নতুন দর্শনের পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। নতুন দর্শনের পথ যেমনি রুদ্ধ করা যাবে না, তেমনি পেশিশক্তির প্রয়োগে পুরনো দর্শনকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টাও ত্যাগ করতে হবে। পুরনো এবং নতুন উভয় দর্শন-ই থাকবে, যার যে দর্শন ভাল লাগবে সে সেটাই গ্রহণ করবে; গ্রহণ করা বা না করা ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর নির্ভরশীল। পৃথিবী বৈচিত্র্যময়; একই সময়ে কোথাও তীব্র দাবদাহে দগ্ধ হচ্ছে অরণ্য-জনপদ, আবার কোথাও তুষারপাত হচ্ছে, কোথাও মেঘাচ্ছন্ন কিংবা ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশ, কোথাওবা হচ্ছে ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাত। প্রত্যেক মানুষ দেখতে একই রকম নয়; কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ খাটো, কেউবা লম্বা। জাতি বা গোষ্ঠীভেদে খাদ্যাভাস আলাদা; এমনকি একই গোষ্ঠীর মানুষ হলেও কেউ মাংস খেতে ভালবাসে, কেউ ইলিশ মাছ কিংবা কই মাছ, কেউবা নিরামিষাশী। সকলে একই রকম বা একই রঙের পোশাক পরে না; কেউবা পোশাক পরেই না, নগ্ন থাকতে ভালবাসে; যেমন-ভারতবর্ষের নাগা সন্ন্যাসী কিংবা আন্দামান-নিকোবর দীপপুঞ্জের বিভিন্ন আদিবাসী, জৈন ধর্মের মহাবীরের আদর্শে আস্থাশীল ভদ্রবাহু’র অনুগামী যারা দিগম্বর নামে পরিচিত; আফ্রিকা কিংবা ব্রাজিলের আদিবাসী। আমাদের দেশে কতো পাগল নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়, অশালীনতার দোহাই দিয়ে আমরা তাদের হত্যা করতে পারি না। প্রত্যেকের ভাললাগা-মন্দলাগা ভিন্ন ভিন্ন।

কোনো একটি দর্শন বা তত্ত্বে বিশ্বাসী মানুষ যদি তাদের দর্শনকে শ্রেষ্ঠজ্ঞান করে পৃথিবীর বাকি সব দর্শন এবং দর্শনের মানুষকে ধ্বংসের প্রয়াস চালায়, তাহলে একদিকে যেমনি পৃথিবী তার বৈচিত্র্য হারাবে অন্যদিকে লঙ্ঘিত হবে মানবাধিকার; ওই একটি দর্শন তখন আর দর্শন থাকে না, হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী মতবাদ, আর সন্ত্রাসী মতবাদের কাছে হেরে যায় মানবতা। কিন্তু কোনো মতবাদ বা দর্শন নয়, মানুষই শ্রেষ্ঠ; দর্শনের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই দর্শন।

আমরা যদি একটু পিছন ফিরে প্রাচ্যের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে ঋগ্বৈদিক যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০-খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দ) বৈদিক ধর্মের শোষণ-শাসনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বেদকে অস্বীকার পূর্বক বস্তুকে চরম সত্য জ্ঞান করে বস্তুবাদী দর্শনের প্রচার করেন বৃহস্পতি লৌক্য। কিন্তু তিনি নিজের দর্শন প্রচারে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেননি, বেছে নেন যুক্তিতর্কের পথ।

পরবর্তী বৈদিক যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০- খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দ) পুরোহিততান্ত্রিক ব্রা‏‏‏হ্মণ্য ধর্মের (ব্রা‏হ্মণ্য ধর্মের পূর্ববর্তীরূপ বৈদিক ধর্ম এবং পরবর্তীরূপ হিন্দু বা সনাতন ধর্ম) শোষণ-শাসন এবং যজ্ঞকেন্দ্রিক আচার-সর্বস্ব ধর্মানুষ্ঠানের প্রতি অনেক মানুষ বিরক্ত এবং বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। এসময় এবং এর কিছু পরে ব্রা‏হ্মণ্য ধর্মের বিপরীতে আত্মপ্রকাশ করে অনেক ধর্মীয় মতবাদ বা দর্শন; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, শৈব ধর্ম, আজীবিক ধর্ম।

এ যুগেই বৈদিক ব্রা‏‏হ্মণ ঋষি আর পুরোহিতদের চিন্তা এবং আধিপত্যে প্রবলভাবে ধাক্কা মারে চার্বাক দর্শন। যে যুগে ব্রা‏হ্মণরা ছিল প্রবল প্রতাপশালী, ধূর্ত ব্রাহ্মণরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ ও অন্যান্য বর্ণের মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে ‘কর্মফলবাদ’ ও ‘জন্মান্তরবাদ’ নামে নতুন এক আধ্যাত্মিক তত্ত্বের উন্মেষ ঘটায় এবং এই তত্ত্বের প্রচার করে মানুষের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় পরকালের ভয়। সেই যুগে দাঁড়িয়ে চার্বাকরা উচ্চারণ করেন বিশ্ব সৃষ্টিতে প্রকৃতির ভূমিকাই মূখ্য; ঈশ্বর, পরলোক, পুনর্জন্ম বা জন্মান্তর বলে কিছু নেই; মৃত্যুর পর মানুষের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। বেদবিশ্বাসী মানুষের মাঝে তারা এই নাস্তিক দর্শন প্রচার করেন। মুলত চার্বাকরা বৃহস্পতি লৌক্য’র মতানুসারী, বৃহস্পতি লৌক্য-ই চার্বাক মতের আদি প্রবর্তক। বৃহস্পতি লৌক্য’র মতোই চার্বাকরাও তাদের দর্শন প্রচারের ক্ষেত্রে সহিংসতার পথ অবলম্বন করে হাতে তরবারি তুলে নেননি, নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্রাহ্মণ বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোনো মানুষকে হত্যা করেননি। তারা বেদজ্ঞ ঋষিদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে লিপ্ত হন।

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ মধ্যগাঙ্গেয় উপত্যকায় আত্মপ্রকাশ করে বৌদ্ধধর্ম, এর প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ (আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৬- খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দ)। তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় সন্তান, পূর্বে তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তার পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তুর শাক্য নামে একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান। শাক্যরীতি অনুযায়ী সিদ্ধার্থও শৈশবেই অস্ত্রশিক্ষা, অশ্ব ও রথচালা শেখেন। বিয়ে করেন যশোধরাকে। কিন্তু বৈভবের জীবন তার অন্তরে প্রশান্তি এনে দিতে পারেনি। ঊনত্রিশ বছর বয়সে যেদিন তার পুত্র রাহলের জন্ম হয় সেদিনই স্ত্রী-পুত্র, ঘর-সংসারের মায়া ত্যাগ করে পরিব্রাজকের জীবন বেছে নিয়ে পথে পা বাড়ান। নিজের ভেতরে রাশি রাশি প্রশ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়, সাধু সন্ন্যাসীর শিষ্যত্বও গ্রহণ করেন, কৃচ্ছ্রসাধন করেন, কিন্তু মেলেনি তার প্রশ্নের উত্তর। একসময় উপলব্ধি করেন যে কৃচ্ছ্রসাধনে কেবল দেহ ক্ষয় হয়; দুঃখ লাঘব হয় না, অন্তরের প্রশান্তি মেলে না। এক পর্যায়ে সকল সঙ্গ ত্যাগ করে একা একা ঘুরতে থাকেন আর খুঁজতে থাকেন নিজের প্রশ্নের উত্তর। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে গয়ার নিকটবর্তী উরুবিল্ব গ্রামে পিপল্ গাছের নিচে উনপঞ্চাশ দিন ধ্যান করার পর তার আত্মোপলব্ধি হয়, নিজেই খুঁজে পান নিজের প্রশ্নের উত্তর। অনুধাবন করতে পারেন মানুষের দুঃখ-কষ্টের কারণ এবং তা থেকে মুক্তি উপায় সম্পর্কে। এরপরই তিনি তার আদর্শ এবং দর্শনের প্রচার শুর করেন। অনেকেই তার নতুন দর্শনে সন্তুষ্ট হয়ে তার ধর্মে দীক্ষিত হয়। মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায় তার ধর্মের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের মাঝে নিশ্চয় তিনি তার ধর্ম প্রচারে কিছু বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু তিনি কখনোই উগ্রতার পথ বেছে নেননি, তিনি বেছে নেন অহিংসার পথ। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম যেখানে যজ্ঞের নামে অবাধে গো-হত্যা করে চাষাবাদ তথা কৃষি এবং বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছিল, সেখানে তিনি ব্রাহ্মণদের গো-হত্যার বিরুদ্ধাচারণ করে জীবের প্রতি অহিংসার বাণী প্রচার করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে সুদের বিনিময়ে অর্থলগ্নির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলেও ব্রাহ্মণ্য ধর্মে সুদের ব্যবসা ছিল ঘৃণিত এবং সুদ গ্রহীতাদের হাতে ব্রাহ্মণদের অন্নভক্ষণ নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধ বাণিজ্যের প্রয়োজনে অর্থলগ্নিকে খারাপ চোখে দ্যাখেননি। বাণিজ্যের প্রয়োজনে তখন বণিকদের সমুদ্রযাত্রার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও বৈদিক গ্রন্থগুলোতে এ সম্পর্কে বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় ব্রাহ্মণরা সমুদ্রযাত্রার স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু বুদ্ধ তার ধর্মে এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি। বৈদিক ধর্মানুসারে ব্রাহ্মণরা যেখানে নারীদের ওপর নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে তাদের পায়ে শিকল পরিয়েছিল, বুদ্ধ সেখানে নারীদের জন্য পৃথক মঠ স্থাপন করে নারী স্বাধীনতার এক বৈপ্লবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সংঘ বা বিহার পরিচালনার ক্ষেত্রে বুদ্ধ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটান। নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিহারগুলোর অন্তর্ভূক্ত ভিক্ষুদের ভোটের মাধ্যমে বিহারের সভাপতি নির্বাচিত হত। এমনকি ভিক্ষুদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে উপসমিতি গঠন করা হত। শিক্ষা এবং সংস্কৃতির বিকাশে বিহারগুলি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। উত্তরকালে এই বিহারগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়, যেমন- বিহারের বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাচ্যের গৌরবোজ্জ্বল জ্ঞানপীঠ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রাচ্যবাসীর, সভ্যতার কলঙ্ক ইসলামী আগ্রাসন ধ্বংস করে সমস্ত জ্ঞানপীঠ।

তৎকালীন সময়ে যেখানে সমাজের বুকে জগদ্বল পাথরের মতো চেপে বসে ছিল ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, সেখানে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিপরীতে গৌতম বুদ্ধের এই অহিংস ধর্ম প্রচার এবং সমাজ সংস্কার ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। যেখানে ব্রা‏‏হ্মণরা ঈশ্বরের নামে বিবিধ যাগযজ্ঞে ব্যস্ত; সেখানে বুদ্ধ ঈশ্বরকে অস্বীকার করার কথা বলেন, অন্যথায় ‘মানুষ স্বয়ং নিজের প্রভু’ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়। যেখানে ব্রা‏‏হ্মণরা আত্মা-জন্মান্তর ইত্যাদি জুজুর ভয় দেখিয়ে স্বার্থসিদ্ধিতে রত; সেখানে বুদ্ধ আত্মাকে নিত্য অস্বীকার করার কথা বলেন, নইলে নিত্য একরস মানলে তার পরিশুদ্ধি বা মুক্তির প্রশ্নই ওঠে না। যেখানে ব্রা‏হ্মণদের কাছে জীবনাচার-ধর্মাচারের ক্ষেত্রে বেদ-ই একমাত্র প্রমাণ্য গ্রন্থ এবং বেদ বাক্যই শেষ কথা; সেখানে বুদ্ধ কোনো গ্রন্থকে স্বতঃ প্রমাণ হিসেবে স্বীকার না করার উপদেশ দেন, অন্যথায় বোধবুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি যে সাহসী এবং সত্য বাণী উচ্চারণ করেন, আজ এতোকাল পরেও সেই একই ভূমির বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই সাহসী এবং সত্য বাণীর মর্মোদ্ধারে ব্যর্থ! আর ব্যর্থ বলেই আজও ধর্মের নামে রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে প্রাচ্যভূমি।

বিজ্ঞানের এই অগ্রসর যুগে বুদ্ধের কোনো কোনো মতের সঙ্গে অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক; কিন্তু তৎকালীন সময়ে সমাজ সংস্কারে তার ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, স্বীকার করতেই হবে যে বিজ্ঞানের অনগ্রসর সেই যুগে কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের শোষণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বুদ্ধ মানব সভ্যতাকে আলোর পথ দেখান। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির পথ দেখান মানুষকে, যদিও সবাই যে পুরোনো প্রথা ঝেড়ে ফেলে বুদ্ধের দেখানো পথে আসে তা নয়; যারা আসে তারা সাহসী। কিন্তু বুদ্ধের মৃত্যুর কিছুকাল পর থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয় শুরু হয়। কালক্রমে অনেক ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের কু-সংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে যা একদা বুদ্ধ বর্জন করেছিলেন।

বুদ্ধের আদর্শ এবং নতুন দর্শনে মুগ্ধ হয়ে অনেক নৃপতি, ধনী বণিক এবং বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন; তিনি তাদেরকে প্ররোচিত করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম উৎখাত এবং নিজের ধর্ম বিস্তারে ব্রা‏হ্মণ্য ধর্মাবলম্বীদেরকে জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করার প্রয়াস চালাতে পারতেন, ব্রাহ্মণ্য ধর্ম নির্মূল করার জন্য ব্রাহ্মণদেরকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারতেন; নৃপতিদেরকে প্রলুব্ধ করতে পারতেন ব্রাহ্মণ্য ধর্মাশ্রয়ী রাজ্যসমূহ আক্রমণ করে সম্পদ ও নারী লুণ্ঠন, ক্রীতদাস সংগ্রহ এবং রাজ্যের দখল নিতে; কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি কেবল সত্য, ন্যায় এবং অহিংস পথে তার ধর্ম প্রচার করেন।

বৌদ্ধধর্মের মতো জৈন ধর্মও আত্মপ্রকাশ করে মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকায়। পার্শ্বনাথকে জৈনধর্মের তেইশ তম তীর্থঙ্কর বলা হলেও তার পূর্বের বাইশজন ঐতিহাসিক চরিত্র নন, পার্শ্বনাথকেই জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। পার্শ্বনাথ ছিলেন বেনারসের রাজা অশ্বসেনের পুত্র, তিনি বিবাহিত ছিলেন। ত্রিশ বছর গৃহে থাকার পর তিনি কঠোর তপস্যার পথ বেছে নেন। জৈন ধর্মের প্রসারে তিনি খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেননি। বাংলার সম্মেত পর্বতে তার মৃত্যুর হয়। তার মৃত্যুর আড়াইশো বছর পর জৈন ধর্মের চব্বিশতম এবং শেষ তীর্থঙ্কর হিসেবে আবির্ভাব হয় মহাবীরের। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে মহাবীর বৈশালীর কুণ্ডগ্রামের এক ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধের পিতার মতো তাঁর পিতা সিদ্ধার্থও ছিলেন কুণ্ডগ্রামের জ্ঞাতৃক নামক একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর প্রধান আর তার মাতা ত্রিশলা ছিলেন লিচ্ছবী নৃপতি চেতকের বোন। যৌবনে তিনি যুবরাজ হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ এবং যশোদা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন; তাদের এক কন্যা সন্তান হয়। গৌতম বুদ্ধের মতো তিনিও সংসারে প্রশান্তি খুঁজে পাননি। ফলে তার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ত্রিশ বছর বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করে তপস্যার জীবন বেছে নেন, প্রথম দিকে বস্ত্র পরিধান করলেও তপস্যা শুরুর তেরো মাস পর থেকে বাকি জীবন নগ্ন অবস্থায় অতিবাহিত করেন। তিনি কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি তপস্যার ত্রয়োদশ বছরে বর্ধমান কৈবল্য বা বিশুদ্ধ জ্ঞান ও নির্বাণ লাভ করেন। কৈবল্যজ্ঞান লাভের মাধ্যমে তিনি সুখ-দুঃখ জয় করেন, এজন্য তাকে জিন এবং তার অনুসারীদেরকে জৈন বলা হয়। দীর্ঘ ত্রিশ বছর তিনি গাঙ্গেয় উপত্যকার বিভিন্ন জনপদে পরিব্রাজন এবং তার ধর্মমত প্রচার করেন। মুক্তিলাভের উপায় হিসেবে মহাবীর তিনটি পথের নির্দেশ দেন যা ত্রিরত্ন হিসেবে পরিচিত-সৎ জ্ঞান, সৎ বিশ্বাস, সৎ আচরণ। জৈন ধর্মও অহিংস, বৌদ্ধ ধর্মের মতোই জৈন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নৃপতি, বণিক এবং বহু সাধারণ মানুষ জৈন ধর্মে দীক্ষিত হন। তথাপি মহাবীর ধর্ম প্রচারের জন্য তাদেরকে জবরদস্তিমূলক বা নৃশংসপথে চালিত করেননি; ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজে যেমনি উগ্রপন্থা অবলম্বন না করে অহিংস পথ বেছে নেন, তেমনি তার অনুসারীদেরকেও উগ্রপথে ঠেলে না দিয়ে অহিংস পথই দেখান।

ভারতবর্ষের আরো দুটি উল্লেখযোগ্য ধর্ম-বৈষ্ণব এবং শৈব ধর্ম। দুটো ধর্মই একেশ্বরবাদী-ভক্তিবাদী। পশ্চিম ভারতের অধিবাসীরা বৈদিক দেবতাদের মধ্য থেকে বিষ্ণুকে বেছে নেন সর্বশক্তিমান একেশ্বর হিসেবে। বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরাও ব্রাহ্মণ্য ধর্ম কিংবা অন্য কোনো ধর্মকে উৎখাতের চেষ্টা করেনি; বৈষ্ণবরা অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া দূরে থাক, অন্য ধর্মের ধ্বংস কামনা করে কোনো প্রকার উস্কানিমুলক বক্তব্য সম্বলিত পুস্তকও লিপিবদ্ধ করেনি। তারা অহিংসভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করেছে।

শৈব ধর্মের অনুসারীরা শিবের উপাসক। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষে পূজিত হচ্ছেন শিব। শৈব ধর্মাবলম্বীরাও তাদের ধর্ম প্রসারের জন্য জোরপূর্বক অন্য কোনো ধর্মের মানুষকে ধর্মান্তরিত বা হত্যার পথ অবলম্বন করেনি।

উপরোক্ত ধর্ম ও দর্শন সমূহ ছিল প্রচলিত ধর্ম এবং প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ, কিন্তু এর প্রচার ও প্রসারে ধর্ম প্রবর্তক এবং দার্শনিকগণ ছিলেন অহিংস। নিজের ধর্ম এবং দর্শন প্রচারে তাঁরা কেউ-ই হাতে অস্ত্র তুলে নেননি। আবার তাদের ধর্মগ্রন্থ কিংবা দর্শনের কোথাও বলা নেই যে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী অথবা ভিন্ন মতাবলস্বীদের ধর্মান্তরিত বা মতান্তরিত করতে হবে; অন্যথায় তাদেরকে হত্যা করতে হবে। প্রাচ্যের কোনো ধর্মগ্রন্থে বলা হয়নি যে- ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা অবিশ্বাসীদেরকে তুমি মারছো না, মারছে ঈশ্বর; তুমি তো উপলক্ষ্য মাত্র। কোনো ধর্মগ্রন্থে অনুসারীদের উদ্দেশে লেখা নেই যে ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরকে পরাজিত করে তাদের নারী, শিশু ও ধন-সম্পদ ভোগ করবে, এগুলো ঈশ্বর তোমাদেরকে দান করেছেন উপহারস্বরূপ; বরং নারীদের সম্মান করার কথা, নারীসঙ্গ ও সম্পদ বর্জনের কথা বলা হয়েছে কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে। প্রাচ্যের কোনো ধর্ম প্রবর্তক ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে স্ব-ভূমি থেকে উৎখাত করতে উদ্যোগী হননি বা তাদের ধ্বংস কামনা করেও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেননি।

মধ্যপ্রাচ্যেও ইহুদি কিংবা পৌত্তলিকদের আচার অনুষ্ঠান আর রীতি-পদ্ধতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে, সমাজব্যবস্থা ও জীবনাচারে সত্য এবং নৈতিকতার ঘাটতি দেখে, সমাজ এবং ধর্ম সংস্কারে উদ্যোগী হন যীশু।

মুহাম্মদও বহুশ্বরবাদী কোরাইশদের পৌত্তলিকতা এবং সনাতন সংস্কৃতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং উপলব্ধি করেন মূর্তিপূজার অসারতা সম্পর্কে। তার মতো পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ এক নিরক্ষর অন্তর্মুখী বালক; যার বাল্যকাল কেটেছে অনাদরে-অবহেলায় দরিদ্র চাচার আশ্রয়ে, উটের রাখাল হিসেবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাকী সময় অতিবাহিত হয়েছে অবলা উটের সঙ্গে রুক্ষ মরুভূমিতে; শৈশব থেকেই যিনি কোরাইশদের পূজা-পার্বণের সঙ্গে পরিচিত, পাম বাগানে পাথরের দেবী ওজ্জাকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘুরে পূজা করা দেখে অভ্যস্ত; অভ্যস্ত আরবের বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে সুখ, সমৃদ্ধি ও মুক্তির আশায় কাবাঘরের বিভিন্ন মূর্তি এবং কৃষ্ণপাথরকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘুরে পূজা দিতে দেখে; শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে তিনি নিজেও এসব পূজায় অংশ নেন, দেব-দেবী সমৃদ্ধ কাবাঘর প্রদক্ষিণ করেন; এমন এক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষ জীবনের একটা পর্যায়ে স্বগোত্রীয়-সনাতন চিন্তা ঝেড়ে ফেলে উপলব্ধি করেন যে পাথরের দেব-দেবীকে পূজা করা অসারতামাত্র; নিঃসন্দেহে এটা তার চেতনার উত্তরণ এবং প্রগতিশীল মনস্কতার পরিচয়, যা প্রশংসনীয়।

এমন নয় যে আরব সমাজে তখন পৌত্তলিকতা বিরোধী বা একেশ্বরবাদের ধারণা ছিল না; ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্ম তো ছিলই, এছাড়াও আদ গোত্রের হুদ নবী, মিদিয়ান গোত্রের শুয়েব নবীও পৌত্তলিকতার বিরোধী ছিলেন। আরবের অনেক কবি ছিলেন; যেমন-কবি কাসা বিন সায়িদা আল ইয়াদি, কবি আমর বিন ফজল, কবি লবীদ; এরা সকলেই পৌত্তলিকতার বিরোধী ছিলেন, মূর্তিপূজার কুসংস্কার থেকে মানুষকে বের করে আনার জন্য পৌত্তলিকতা বিরোধী কবিতা লিখতেন এবং সে-সব কবিতা ওকাজের মেলার কবিতা সম্মেলনে আবৃত্তিও করতেন। কিন্তু এজন্য পৌত্তলিকরা তাদেরকে হত্যা করেনি, আবার তারাও মূর্তি পূজার অপরাধে পৌত্তলিকদেরকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেননি।

মুহাম্মদ মূর্তিপূজার মতো সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কুসংস্কার জীর্ণ পোশাকের মতো পরিত্যাগ করে নতুন পথের অনুসন্ধানে নামেন। বাল্যকালে তিনি একবার তার চাচার সঙ্গে সিরিয়া যান, মক্কা থেকে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর এবং আলোকিত সিরিয়ার মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা বালক মুহাম্মদের ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে। যৌবনে তিনি আবারো সিরিয়া ভ্রমণ করেন, এসময় তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের এবং মতের মানুষের সংস্পর্শে আসেন। মক্কাতেও তিনি দূর-দূরান্ত থেকে আগত সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যলাভ করেন। ইহুদিদের সিনাগগ এবং খ্রিষ্টানদের গীর্জায় গিয়ে যাজকদের সঙ্গে ধর্মীয় আলাচনা করেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এসময়েই তার মধ্যে পৌত্তলিকতার বিরোধীতা এবং একেশ্বরবাদের ধারণা দৃঢ় হয় ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং আরবের অন্যান্য একেশ্বরবাদী ধর্ম ও ব্যক্তির প্রভাবে।

তিনি মক্কা থেকে রুক্ষ-শিলাময় তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় যেতেন একাকী ধ্যান করার জন্য, অনেক একেশ্বরবাদী বা হানিফ মতাদর্শীও তখন হেরা পর্বতে ধ্যান করতে যেতো। তিনি খাদ্য এবং জল নিয়ে যেতেন আর তা না ফুরোনো পর্যন্ত বাড়ি ফিরতেন না, বাড়ি ফিরে খাদ্য এবং জল নিয়ে আবার যেতেন। কখনো কখনো সকালে যেতেন আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসতেন। এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তিনি তার প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে জানান যে তিনি ফেরেশতার দেখা পেয়েছেন, ফেরেশতা তার হৃদয়ে এক আশ্চর্য কিতাব স্থাপন করেছেন। আর এর পর থেকেই নিজের বক্তব্যকে আল্লাহ’র বাণী আর নিজেকে আল্লাহ’র নবী বলে প্রচার করেন, মক্কার কোরাইশদেরকে মূর্তিপূজা বর্জন করে তার প্রতিষ্ঠিত নতুন ধর্ম ইসলামে দীক্ষিত হবার আহব্বান জানান।

ফেরেশতার দেখা পাওয়া এবং হৃদয়ে কিতাব স্থাপন করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে তার মানসিক বিভ্রান্তি। দীর্ঘদিন গভীর চিন্তমগ্ন হয়ে কল্পনার জগতে বাস করার ফলে মানুষের এ ধরনের সাময়িক মানসিক বিভ্রান্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়, অথবা তিনি সচেতনভাবেই প্রতারণার আশ্রয় নেন।

বস্তুত তার নতুন পথের অনুসন্ধান শেষ হয়ে যায় হেরা পর্বতের গুহাতেই, সনাতন প্রথা আর কু-সংস্কার পিছনে ফেলে তার ভেতরে যে উন্নত চেতনার সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছিল তার মৃত্যু হয় হেরা পর্বতের গুহার ভেতরেই, কু-সংস্কারের একটি বদ্ধ ডোবা থেকে মুক্তি পেতে তার চিত্ত লুপ্ত হয় আরেকটি কু-সংস্কারাচ্ছন্ন বদ্ধ ডোবায়! হেরা পর্বতের গুহায় আত্মমগ্ন থেকে তিনি সামনে এগোবার রাস্তার পরিবর্তে খুঁজে পান পিছনে ফিরে যাবার ভিন্ন রাস্তা। প্রথা ভাঙতে গিয়ে পুরনো প্রথার নাগপাশেই বাঁধা পড়েন। আরবের বহুশ্বরবাদী বিভিন্ন পৌত্তলিক গোত্রের কিছু কিছু প্রচলিত বিশ্বাস আর আচার-অনুষ্ঠান যেমনি ইসলামে গ্রহণ করেন; তেমনি ইহুদি, খ্রিষ্টান, জরথুষ্ট্র, সাবিয়ান প্রভৃতি একেশ্বরবাদী ধর্ম দ্বারাও প্রভাবিত হন। প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের বহুশ্বরবাদী পৌত্তলিকরা কাবাঘরে যেতো হজ ও ওমরাহ পালন করতে, ইসলামী যুগের মুসলমানরাও হজ এবং ওমরাহ পালন করতে যায়; প্রাক-ইসলামী যুগে বহুশ্বরবাদী পৌত্তলিকরা কৃষ্ণপাথরকে প্রদক্ষিণ করতো সুখ-সমৃদ্ধি-মুক্তির আশায়, ইসলামী যুগের মুসলমানরাও কাবাঘরের পাথর প্রদক্ষিণ করে একই আশায়; প্রাক-ইসলামী যুগে বহুশ্বরবাদী পৌত্তলিকরা পশু কোরবানি করতো দেবদেবীর উদ্দেশে যা এখনো হিন্দুরা করে থাকে, আর ইসলামী যুগে মুসলমানরা কোরবানি করে আল্লাহ’র উদ্দেশে। একেশ্বরবাদের অনেক প্রচলিত বিশ্বাস আর প্রথাও মুহাম্মদ ইসলামে গ্রহণ করেন। বেহেশত এবং দোজখের ধারণা গ্রহণ করেন জরথুষ্ট্রবাদ থেকে; খৎনা করা, ওজু করা, ঋতুবতী নারী বর্জন প্রভৃতি তিনি গ্রহণ করেন ইহুদি প্রথা থেকে; নেস্টোরিয়াবাদ (একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়) থেকে গ্রহণ করেন প্রাণির কিংবা মানুষের ছবি অঙ্কন আর মূর্তি নিষিদ্ধের প্রথা; কোরানের আয়াতেও যীশুর বাণীর ব্যাপক প্রভাব আছে। এছাড়াও আরো অসংখ্য চিন্তা এবং প্রথা দ্বারা প্রভাবিত হন তিনি, পুরোনো পথের আরো অনেক মসলা দিয়েই তৈরি করেন ইসলাম নামক নতুন পথ। আর প্রথা ভাঙার দোহাই দিয়ে তিনি এমন সব নীতি বহির্ভূত কাজ করেন আরব সমাজে যার প্রচলন ছিল না, নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের প্রচলন করেন তিনি। নিজের পালক পুত্র জায়েদের স্ত্রী জয়নবকে বিয়ে করেন, বিয়ে করেন আপন চাচীর বোনকে, চাচাতো বোন উম্মে হানিকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রত্যাখাত হন চাচার কাছে এবং পরবর্তীতে হানির সঙ্গে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক স্থাপন করেন। পুরোনো সব প্রথাই যেমনি খারাপ বা বর্জনীয় নয়, তেমনি পুরোনো প্রথা ভাঙার নামে নৈতিকতাহীন প্রথার প্রচলন করাও কাম্য নয়।

হেরা পর্বত থেকে ফিরে এসে নিজেকে আল্লাহ’র নবী দাবী করে কোরাইশদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানানো পর্যন্ত তার কার্যক্রম মেনে নেওয়া যায়, এতে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। কিন্তু এরপর থেকে তিনি কোরাইশদের ওপর জোর করতে থাকেন তার প্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য। অনর্গল নিজের বক্তব্যকে আল্লাহ’র বাণী হিসেবে মিথ্যা প্রচার করেন আর মক্কায় তার নতুন ধর্ম ইসলাম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে নবুওতি প্রাপ্তির বারো বছর পর মদিনায় হিজরাত করেন, সেখানে গিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা করতে না পেরে এক পর্যায়ে বেছে নেন সন্ত্রাসের পথ। কোরাইশ, ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং আরবের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ করেন; নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করেন, সম্পদ লুণ্ঠন করেন, জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরিত করেন, নারীদের যৌনদাসী আর পুরুষ এবং বালকদের বানান ক্রীতদাস, যৌনদাসী এবং ক্রীতদাস বেচাকেনা করেন। আর এখানেই তিনি অন্যান্য ধর্ম প্রবর্তকদের থেকে ব্যতিক্রম এবং প্রথাবিরোধী; তার ভেতরের প্রথাগত ধর্মীয় চেতনার চূড়ান্ত মৃত্যু ঘটে সেদিনই, যেদিন তিনি প্রথম হামজার নেতৃত্বে ত্রিশজন মুহাজিরকে পাঠান কোরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা আক্রমণ করার জন্য।

জীবনের শেষ দশ বছরে তার নির্দেশে বা পরিচালনায় ৭০ থেকে ১০০ টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৭ থেকে ২৯ টি তিনি নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পরিচালনা করেন। এইসব যুদ্ধে তার নির্দেশে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে খুন করেছে জিহাদীরা, লক্ষ লক্ষ পুরুষ ও শিশুকে করেছে ক্রীতদাস, লক্ষ লক্ষ নারীকে করেছে যৌনদাসী। তিনি নিজেও তরবারি হাতে শিরোচ্ছেদ করেন, সেবার জন্য ক্রীতদাস রাখেন, যৌনদাসীকে ধর্ষণ করেন। কোরানের শত শত আয়াতে তিনি ভিন্ন মতাবলম্বী বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাসভূমি থেকে উৎখাত, শাস্তি, হত্যা এবং ধ্বংস করার কথা বলেন; বিধর্মীদের পরাজিত করে তাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করা, নারীদের যৌনদাসী ও শিশুদের ক্রীতদাস বানানোর কথা বলেন; যা তার অনুসারীদের অনেকেই আজ এতো বছর পরেও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে।

প্রচলিত ধর্মের প্রথা ভেঙে তিনি বেছে নেন সন্ত্রাসবাদের পথ। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে সমগ্র আরবকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করাই ছিল তার উদ্দেশ্য এবং তাতে তিনি ও পরবর্তীতে তার উত্তরসুরীরা সফলও হন। যুদ্ধবাজ ইসলামী জিহাদীরা একের পর এক যুদ্ধাভিযান চালিয়ে নতুন নতুন রাষ্ট্র দখল করে, সেইসব রাষ্ট্রের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয় ইসলাম ধর্ম, পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে বিলুপ্ত করে অসংখ্য সংস্কৃতি এবং ধর্ম ও মতবাদ।

মৃত্যুশয্যায়ও মুহাম্মদের ক্রোধোন্মত্ত কণ্ঠস্বর থেকে উচ্চারিত হয়েছে রাজনৈতিক আকাঙ্খা ও বিদ্বেষপূর্ণ বাক্য, ‘হে প্রভু, ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধ্বংস করো। প্রভুর ক্রোধ তাদের ওপর প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠুক। সমগ্র আরব ভূ-খণ্ডে ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো ধর্ম না থাকুক।’

ফলে তার প্রতিষ্ঠিত ইসলাম নামক ধর্মটি প্রচলিত আর পাঁচটা ধর্মের মতো নেহাত ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; ধর্মের প্রচলিত প্রথা ভেঙে, মানবতা পদদলিত করে তা হয়ে উঠেছে উগ্র রাজনৈতিক এবং সন্ত্রাসী মতবাদ।

গত বছর নিউইয়র্কের একটি আদালত প্রায় আড়াই হাজার বছর পর দার্শনিক সক্রেটিসকে নির্দোষ প্রমাণ করে রায় দিয়েছে, এথেন্সের আদালতেও শীঘ্রই রায় ঘোষণা করা হবে; আমি আশাবাদী যে এথেন্সের আদালতেও সক্রেটিস নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। আমার ধারণা অনাগতকালে সক্রেটিসের বিপরীত ঘটনা ঘটবে মুহাম্মদের ক্ষেত্রে। মুহাম্মদ একজন মানবতা লঙ্ঘনকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধী, ক্রীতদাসের কারবারি, ধর্ষণ ও গণহত্যার খলনায়ক। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের আলোয় মানুষ যখন বর্তমানের চেয়ে অধিক সভ্য এবং মানবতাবাদী হবে, আরো অধিক সংখ্যক মানুষ ধর্মত্যাগ করবে; তখন পৃথিবীর সভ্য দেশের আদালতে মুহাম্মদের বিচার হবে এবং দোষী প্রমাণিত হবেন বিশ্বের জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধী নবী মুহাম্মদ।



(চলবে….)


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: পুরো লেখাটা পড়লাম আগ্রহ নিয়ে।

০৮ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.