নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাল টিপ

০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:২৮

লাল টিপ

কয়দিন ধইরা শীত পড়তাছে খুব, তার ওপর মরার কুয়াশা, শীতের মইদ্যে রাস্তায় খরিদ্দারের আশায় খাড়াইয়া থাকতে খুব কষ্ট অয়। না খাড়াইয়াও উপায় নাই, ক্ষিদা লাগে যে, ভোরবেলায় ঘুমাইলে অনেক বেলায় ঘুম ভাঙাইয়া দেয় যে- তার নাম ক্ষিদা। প্যাটের মইদ্যে মোচড় মারে, গুড়গুড় করে! শালার এত মাইনষের লগে শুইলাম, কতজনই তো মজা না লাগার দোহাই দিয়া কন্ডম ছাড়াই করল, এট্টা মাইনেষের বাচ্চা প্যাটের মইদ্যে বড়ো অইল না! কত দিন শুইয়া শুইয়া ভাবছি, কোনো দিন যদি প্যাটের মইদ্যে ক্ষিদা মোচড় না মাইরা, এট্টা মাইনষের বাচ্চা মোচড় মাইরা ঘুম ভাঙাইতো, তাইলে এই মানব জনমডা কী সুন্দরই না অইত!

তবু গরমের থেইকা শীতই ভালা, শীতের কালে খরিদ্দার বেশি পাওন যায়, রোজগার অয় বেশি। আর গরমের কালে খরিদ্দার কম, রোজগার কম, কাম করতেও বেশি কষ্ট অয়, নিজের গাও যেমনি ঘামে, তেমনি মাইনষের গাও-ও ঘাইমা চটচটে অইয়া থাহে, গা ঘিন ঘিন করে।

খাড়াইয়া আছি তিন রাস্তার মোড়ে আমরা দুইজন, আমি আর অঞ্জনা, আমরা গালগল্প করি, গাড়ি দ্যাখলে আউগাইয়া যাই, গাড়ি শাঁই শাঁই কইরা চইলা যায়, কেউ কেউ গাড়ি থামাইয়া মশকরা করে, শালার রাইত বাজলো দেড়টা অথচ এট্টা খারিদ্দারের মুখ দ্যাকলাম না, দ্যাকলাম কয় জোড়া খাইষ্টা পুলিশের মুখ, গাড়ি নিয়া ঘুরতাছিল, গল্পে গল্পে আমরা খেয়াল করি নাই, এক্কেরে পিডের কাছে গাড়ি থামাইছে, একশো টাহা দিয়া বিদায় দিছি!

আমি আর অঞ্জনা গুজ গুজ করতাছি, দেহি দক্ষিণদিকের রাস্তা দিয়া এক পোলা আমাগো দিকে আইতাছে, বয়স একুশ-বাইশ অইবো, পরনে লুঙ্গি-গায়ে গেঞ্জি। পোলারে দেইখা আমার তেমন আশা জাগে নাই, তাই চাদরে যেমনি ঘোমটা দিয়া আছিলাম তেমনিই থাকি, অঞ্জনার গায়েও চাদর, তয় ঘোমটা দেওয়া না। পোলা কাছে আইতেই আমরা ওর চোক্ষের দিকে চাইয়া থাহি, অঞ্জনা ভ্রূ বাঁকাইয়া একটু ইঙ্গিতও করে। পোলা আইয়া খাড়ায় আমাগো সামনে, আমাগো দিকে চাইয়া কয়, ‘যাইবানি?’

অঞ্জনা কয়, ‘কই?’
পোলা রাস্তার দিকে চাইয়া কয়, ‘এই তো এই রাস্তার ডানদিকে দুই নম্বর গলির চার নম্বর বাড়ি।’
অঞ্জনা আবার কয়, ‘যাব। দুইজনরেই লাগবো, না একজন?’
‘একজন।’ পোলা আমার দিকে চাইয়া কয়, ‘তুমি ঘোমটা খোলো, দেহি কারে নেওন যায়!’

আমি ঘোমটা খুইলা ফেলি, পোলায় একবার আমার দিকে চায়, আবার অঞ্জনার দিকে। তারপর আমার দিকে দৃষ্টি স্থির রাইখা কয়, ‘তোমারে নিমু। কত লইবা?’
আমি কই, ‘কতক্ষণ থাকতে অইবো?’
‘এই ধরো ঘণ্টা খানেক।’
‘এক ঘণ্টা! কয়জনে করবি রে ছ্যামরা?’
‘একজনই।’
‘বাব্বাহ, তুই দেহি মস্ত পালোয়ান! আইচ্চা, পাঁচশো দিস।’
‘ইস…পাঁচশো! পাঁচশো ট্যাহায় তো….।’

এই পর্যন্ত কইয়াই পোলা থাইমা যায়, কিন্তু আমি জানি অয় কী কইতে চাইছিল, কতজনের মুখে যে এমন কতা শুনছি! প্রথম প্রথম খারাপ লাগত, রাস্তায় কাম করতে আসা মাইয়াগো শরীর দ্যাকলে হিংসায় বুকটা জ্বইলা যাইত আর কান্দনও আইত, অহন হিংসাও অয় না, কান্দনও আহে না, এসব কতা আর গায়েও মাখি না।

পোলায় আবার কয়, ‘দুইশো নিও।’
অঞ্জনা চেইত্তা যায়, ‘বাসায় যাইয়া হাত দিয়া কাম সাইরা ঘুমায় পড়গা যা।’
পোলায়ও ধমকায় অঞ্জনারে, ‘ধুর বেডি, তর লগে কতা কইতাছি নাকি!’

আবার আমার দিকে চায় পোলা, ‘ওই, তুমি তিনশোয় যাইবা? নইলে আমি যাইগা, অন্য জায়গায় দেহুম, হাতে বেশি টাইম নাই।’
আমি অঞ্জনার দিকে একবার চাইয়া তারপর পোলারে কই, ‘আর পঞ্চাশ দিস।’
পোলায় বিরক্ত অইয়া কয়, ‘পঞ্চাশ-টঞ্চাশ বুঝি না, তিনশো-ই সই। গেলে চলো, নইলে গেলাম গা।’
পোলায় পা বাড়াইতেই কই, ‘ওই খাড়া, অতো ফাল পারস ক্যা! চল, দেহি আসল জায়গায় কেমন ফালাইতে পারস!’
অঞ্জনারে কই, ‘তুই কাম পাইলে সাইরা আবার এহান আইসাই খাড়াইস।’

পোলার পাশে পাশে ফুটপাত ধইরা হাঁটতে থাহি, পোলায় লুঙ্গি ভাঁজ কইরা হাঁটুর ওপরে তুইলা হেইলা-দুইলা চলতে থাহে, একুশ-বাইশ বছরের টাটকা পোলা, দ্যাকতেও বেশ ভালা, আমার মনে ধরে, সব রাইতে খরিদ্দার মনে ধরে না।

মজা কইরা ওরে কই, ‘কী রে পারবি তো?’
পোলায় আমার দিকে চাইয়া কয়, ‘আরে আমি না, আমি এইসব কামে নাইক্যা।’
‘তাইলে ক্যাডা?’

‘আমার বাড়িওয়ালা।’ তারপর একটু নিচুস্বরে বলে, ‘হ্যায় তো পোলাখোর, হ্যার নজর আছিল আমার দিকে। একদিন তো আমার ঘরে আইয়া আমার হাত ধইরা কাকুতি-মিনতি কইরা যা কইলো, হুইনা তো আমি আকাশ থেইকা পড়ছি, দ্যাশে আমি এক মাইয়ারে ভালোবসি, আর হ্যায় নাকি আমার…! তারপর আমি কইছি, হুনেন নানা, আমি এসব করতে পারুম না, আমারে আর কক্ষনো এসব কতা কইবেন না, নইলে আমি কিন্তু আপনের পোলারে কইয়া দিমু। পোলার ডরে ব্যাডায় আর আমারে ঘাডায় না।’

‘বুইড়া নাকি?’
‘ওই ষাট-বাষট্টি বছর অইবো।’
‘হ্যার বউ নাই?’
‘আছে। বেডি তো বারোমাস ওষুধ খায়, মুরুক্ষু বেডিরে এই ব্যাডায় মাঝে মইদ্যে ওষুধের লগে ঘুমের বড়ি খাওয়াইয়া আস্তে কইরা নিচে আইয়া আমারে কয়- এট্টারে লইয়া আয়।’
‘ওরে শালা, এ তো জটিল কেস! পাঁচশোর নিচে অইবো না!’

‘ধুরো, তুমি আর আমারে জ্বালাইও না। এমনিতেই ব্যাডার জ্বালায় অস্থির অইয়া আছি, কোনদিন ব্যাডার পোলার হাতে ধরা পড়ুম, আমার চাকরিডাও যাইবো, আর হ্যার পোলার পিডানি খাইয়া আমার হাড্ডিগুড্ডিও ভাঙবো!’
‘তুই ওই বাড়িতে কী করস?’
‘দারোয়ানের কাম করি। ব্যাডায় অহন আমার ঘরে বাত্তি নিবাইয়া বইয়া আছে চোরের নাহাল। হুনো, কাছে আইয়া পড়ছি, ওই যে লাইটপোস্টের উল্টোদিকের বাড়িডা, আমি আগে যাই, তুমি এট্টু আইবা। শব্দ য্যান না অয়, নিচতলায় ভাড়াটিয়া আছে।’

আমি পোলার কতা মতো এট্টু পরে লাইটপোস্টের উল্টোদিকের বাড়িডার গেট দিয়া সাবধানে ঢুইকা পড়ি, পোলায় আমারে লইয়া অন্ধকার ঘরের দরজার কাছে গিয়া ফিসফিস কইরা কয়, ‘নানা, এই যে লন, বহু কষ্টে পাইছি! কাল দুপুরে বিরিয়ানী আর মিষ্টি পানের কতা ভুইলা যায়েন না আবার!’

আমি ঘরে ঢুকতেই ফিসফিস কইরা ব্যাডায় কয়, ‘দরজাডা লাগাইয়া দে।’

আমি দরজা লাগাইয়া দেই, ঘুটঘুইট্টা অন্ধকার, কিচ্ছু দ্যাহন যায় না। আমিও ফিসফিস কইরা কই, ‘আপনারে তো দেহি না, আলো জ্বালাইবেন না?’
‘জ্বালামু, খাড়া।’

আলো জ্বইলা ওঠে, বিছানায় পা ঝুলাইয়া বইয়া থাহা ব্যাডার দিকে চাইয়া থাহি আমি, পোলায় ঠিকই কইছে, বয়স ষাট-বাষট্টি-ই অইবো, বেশ স্বাস্থ্যবান। মাথার পাতলা চুল বেশিরভাগই সাদা, মুখের দাড়িও তাই, গোঁফ নাই। পরনে লুঙ্গি, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। ব্যাডার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা, কপালে জমিতে জোয়াল টানা বলদের ঘাড়ের নাহাল কড়া পড়া নামাজ পড়ার কালা দাগ।

আমি গায়ের চাদরডা খুইলা বিছানায় রাইখা ব্যাডার দিকে চাইয়া দেহি হ্যায়ও আমার দিকে চাইয়া আছে চোখ বড়ো বড়ো কইরা।
আমি মজা কইরা কই, ‘কী গো নাগর, আমারে পছন্দ অইচে?’
ব্যাডা অদ্ভুতভাবে আমার দিকে চাইয়া কয়, ‘তুই হিন্দু নি?’

আমি নিঃশব্দে মুচকি হাইসা কই, ‘হিজড়ার আবার জাত-ধর্ম কী! হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খিরিষ্টান কোনো মা-বাপই তো হিজড়ারে বাড়িতে জায়গা দেয় না!’

ব্যাডা আবার প্রশ্ন করে, ‘তর বাপ-মায় হিন্দু না মোছলমান?’
আমার বিরক্ত লাগে, ‘আপনার অতো কতায় কাম কী! যা করনের লাইগা ডাকাইয়া আনছেন, কইরা ছাইড়া দ্যান।’
‘তুই কপালে টিপ পরছোস ক্যা?’
‘ভাল্লাগে, আমারে সুন্দর দ্যাহায়, তাই পরছি।’
‘সুন্দর না ছাই, তরে পেত্নীর মতোন লাগতাছে!’
‘লাগুক, তাতে আপনের অসুবিধা কী? আপনের যা করনের তাই করেন।’

কইয়া আমি কাঁন্ধের ওপর থেইকা শাড়ির আঁচল নামাইয়া কোমরের কুঁচিতে হাত দিতেই ব্যাডা কয়, ‘ওই খাড়া, কাপড় খোলনের আগে তোর কপালের টিপ খোল।’

বিরক্ত অইয়া ব্যাডার দিকে চাইয়া দেহি হ্যায় একবার আমার টিপের দিকে চায় আরেকবার আমার বুকের দিকে! আমি ঝাঁজের সাথে কই, ‘ক্যান, টিপ খুলুম ক্যান?’

‘টিপ পরা গুনাহ, দ্যাহস না আমার কপালে নামাজের দাগ, তর কপালের টিপের লগে ঘষা লাগলে আমারও গুনাহ অইবো!’

ব্যাডার কপালের নামাজ পড়ার কালা দাগের দিকে চাইয়া আমি হাইসা ফেলি, সেক্স করনের সময় আমার কপালের টিপের লগে ব্যাডার কপালের নামাজ পড়ার দাগের ঘষা লাগলে হ্যারও গুনাহ অইবো, এই কতা শুইনা ক্যাডা না হাসবো! ব্যাডায় আমারে ধমকায় হাসি থামানোর লাইগা।

আমি কই, ‘ওরে আমার বুজুর্গ রে! কপালে টিপ পরা হিজড়ার লগে শুইলে গুনাহ অইবো, আর টিপ ছাড়া হিজড়ার লগে শুইলে গুনাহ অইবো না তা কোন কিতাবে ল্যাহা আছে!’

আমি আমার কপালের লাল টিপে হাত দেই, কয়েক নিমেষ পর আমার হাতটা নাইমা আসে নাক, ঠোঁট, থুতনি ছুঁইয়া; টিপটা না তুইলাই। লাল টিপ, আমার সাধের লাল টিপ! এই লাল টিপের লাইগা ছোডবেলায় মা’র হাতে কত পিডানি খাইছি! ফেরিওয়ালা তোরাব চাচা চুড়ি, ফিতা, টিপ বেচতে আইতো আমাগো গ্রামে। আমার বাল্যকালে মা যহন চুড়ি, ফিতা, টিপ আর ক্লিপ কিনতো তোরাব চাচার কাছ থেইকা; আমি ফ্যাল ফ্যাল কইরা চাইয়া থাকতাম তোরাব চাচার কাঁচের ঢাকনাওয়ালা কাঠের বাক্সটার দিকে। আমার মনে অইতো, আহারে এই বাক্সডা যদি আমার অইতো, আমি ইচ্ছে মতোন সাজতাম- হাতে চুড়ি পরতাম, কপালে টিপ পরতাম, ঠোঁটে লিপস্টিক দিতাম! ক্যান জানি মা কোনোদিন লিপস্টিক কিনতো না, কোনোদিনও মায়রে ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে দেহি নাই। মা শুধু চুড়ি, ফিতা, টিপ আর চুলের ক্লিপ কিনতো। আমার আফসোস অইতো মা লিপস্টিক কিনতো না বইলা!

মা যহন তার কেনা নতুন গন্ধমাখা জিনিসগুলান ঘরে রাইখা দিতো, অন্য কোনো জিনিস না, আমি শুধু টিপের পাতা থেইকা লাল টিপগুলান নিয়া লুকাইয়া রাখতাম। মা যহব বাইরে সংসারের কামে ব্যস্ত থাকতো, আমি তহন আমাগো বেড়ায় ঝোলানো ছোড আয়নার সামনে দাঁড়াইয়া কপালে লাল টিপ পরতাম। মাথায় লাল গামছার ঘোমটা দিয়া মুখে নানান রকম ভঙ্গি করতাম, বিয়ের সময় নতুন বউয়েরা যেমনি করে!

একদিন ধরা পইড়া গেলাম মা’র হাতে, মা ধুপধাপ কইরা কয়ডা চড় মারলো পিডের উপরে, তবু আমার স্বভাব বদলাইলো না! মা’র টিপের পাতা থেইকা লাল টিপগুলান চুরি করতে লাগলাম, আর কিছুদিন পর পর পিডানি খাইতেই থাকলাম। যত বড়ো হইতে থাকলাম আমার মইদ্যে ততো মায়ের স্বভাব প্রকট অইতে থাকলো; সবার চোখের আড়ালে মায়ের শাড়ি-ছায়া-ব্লাউজ পরতাম, হাতে চুড়ি আর কপালে লাল টিপ পরতাম, মাথায় গামছা জড়াইয়া চুল ভাইবা বেণি কইরা কী যে সুখ পাইতাম! মনে মনে ভাবতাম বাবায় যেমন মায়রে বিয়া কইরা আনছে, তেমন আমারেও কোনো ব্যাডা বিয়া কইরা তার বাড়িত লইয়া যাইবো! কোনো ব্যাডার বাড়িতে যাবার আগেই একদিন লাইলী হিজড়ার দল ঢোল বাজাইতে বাজাইতে আইসা নাচতে নাচতে আমারে লইয়া গেল তাগো ডেরায়। যাওনের সময় মা’র লাল টিপটা পরছিলাম কপালে, লাইলী হিজড়া কইছিল- ‘লাল টিপে আমার মাইয়ারে কী সুন্দর লাগতাছে!’ সেই প্রথম কেউ আমারে মাইয়া কইছিল, আনন্দে কাইন্দা ফ্যালাইছিলাম! বাড়ি ছাড়নের সময় মানুষ আমারে দেখাইয়া কইতাছিল- ‘ওই যে সুজন আইজ থেইকা হিজড়া অইয়া গেল!’

এমনভাবে কইতাছিল য্যান হিজড়া হওন খুব খারাপ ব্যাপার; ধর্ষণ, ঘুষ খাওন, খুন-খারাবির চাইতেও খারাপ!

কপালে লাল টিপ পরুম বইলা জীবনের কত কিছু ছাড়ছি, কারো কতায় টিপ খুইলা ফ্যালামু বইলা তো টিপ পরি নাই। ঘাড় শক্ত কইরা ব্যাডার দিকে চাইয়া কই, ‘টিপ খুলতে পারুম না।’
ব্যাডায় আবার ধমকাইয়া ওডে, ‘টিপ খোল মাগি!’
আমিও ত্যাজ দ্যাহাই, ‘টিপ খুলুম না, কাম করলে করেন, নইলে যাই গা।’

আঁচল উডাইয়া আবার কাঁন্ধে তুইলা রাহি। ব্যাডায় বিছানা থেইকা উইঠা আইয়া আমারে জাপটাইয়া ধইরা কয়, ‘যাবি কই? বাইন্দা রাহুম খাডের লগে, টিপ তরে খুলতেই অইবো মাগি, লাগে পঞ্চাশ ট্যাহা বাড়াইয়া দিমু।’

ব্যাডায় আমার কপালের টিপ খোলার লাইগা নিজেই হাত বাড়ায়, আমারও মেজাজ চইড়া যায়, প্যাটে ক্ষিদা লাগে বইলা কাম করি, তাই বইলা কী নিজের পছন্দ, নিজের সম্মান-মর্যাদাও বিসর্জন দিমু!

এক ধাক্কায় ব্যাডারে বিছানায় ফ্যালাইয়া দিয়া কই, ‘তোর ট্যাহায় আমি মুতিও না!’

ব্যাডায় আমার রাগী রূপ দেইখা ঘাবড়াইয়া আমার দিকে চাইয়া থাহে, হঠাৎ ব্যাডার পিছনের দেয়ালে ঝোলাইনা আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে আমার চোখ পড়ে, দেহি- এই রাইতের বেলায়ও সূর্যের মতোন হাসতাছে আমার কপালের লাল টিপ, কোনো কিছুর বিনিময়েও এই হাসি আমি কোনোদিন বিসর্জন দিমু না!


ঢাকা
এপ্রিল, ২০২২

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: একটা দেশ, একটা সমাজের উন্নতি হয় না ধর্মের কারনে।
কারন বেশির ভাগ মুসলিমদের চিন্তা ধারা উন্নত হয়। তাঁরা ১৪০০ বছর পেছনে পড়ে আছে। অথচ বিশ্ব কোথায় এগিয়ে গিয়েছে! মুসলমানরা মানুষকে ধর্ম দিয়ে বিচার করে। কিন্তু এটা বুঝে না- আগে ধর্ম নয়। আগে মানুষ। পরে তার ধর্ম।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৩১

মিশু মিলন বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:০১

সোবুজ বলেছেন: সমাজের অন্ধকার দিকের একটা বাস্তব চিত্র।এমন বকধার্মিক অনেক আছে।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৩২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১১ ই মে, ২০২২ রাত ৩:৫০

মিরোরডডল বলেছেন:




আমাদের সমাজেরই একটা আংশিক চিত্রপট তুলে ধরা হয়েছে ।
দুর্দান্ত হয়েছে লেখাটা, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ।




১১ ই মে, ২০২২ রাত ৯:০৩

মিশু মিলন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.