নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।
সাত
বহির্ষ্মতী থেকে কয়েক যোজন উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত অরণ্যে দু-দিন পূর্বে আগুন লাগলেও থামেনি এখনো, বাতাসে ছাই উড়ে আসে, গন্ধ ভেসে আসে, দিনের বেলা কিছু দেখা না গেলেও সন্ধ্যা থেকেই উত্তর-পশ্চিমের আকাশ লালচে দেখায়। ওই অরণ্যের আশেপাশে যে-সব আর্য এবং অনার্য গোত্রের বসতি ছিল, তারা তাদের বসতি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন পথ ধরে নিন্মভূমির পাতালের দিকে চলে যেতে থাকে পরিবার-পরিজন এবং পালিত পশুর পাল নিয়ে নতুন বসতির খোঁজে। এমনিতে আর্য এবং অনার্যদের মধ্যে প্রায়শঃ যুদ্ধ হলেও এই বিপর্যয়কালে তারা কেউ কারো দিকে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে যায় না, শীতের ঝিরির শান্ত জলের মতো হাঁটতে থাকে নিচের দিকে বুকে বিষাদের বুনট মেঘ নিয়ে। ওদিকে যে-সব আর্যরা বাস করত, তারা বহির্ষ্মতীর মানবদেরই জ্ঞাতি, বহুকাল আগে তাদের পূর্ব-পুরুষেরা বহির্ষ্মতীর আর্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমদিকের বিভিন্ন জায়গায় বাস করতে শুরু করে। উদ্বাস্তু আর্যদের চেয়ে অনার্যদের কষ্টটা অনেক বেশি, কেননা আর্যদের গৃহ তেমন মজবুত নয়, অস্থায়ী বসতি গুটিয়ে এমনিতেই হয়ত তারা একটা বা দুটো শরৎ পর নতুন কোথাও গিয়ে বসতি গড়ে তুলত। কিন্তু অনার্যরা তা নয়, তাদের বসতি স্থায়ী, গৃহ মজবুত, উন্নত ও নিপুণ। বংশ পরম্পরায় দীর্ঘকাল একই জায়গায় বসবাসের কারণে বসতির প্রতি ওদের মায়া জন্মে যায়, সঙ্গত কারণেই দাবানলের দাপটে ফেলে আসা বসতির জন্য ওদের কষ্ট অধিক, অনেকে চোখের জল ফেলতে ফেলতে এগিয়ে যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
অরণ্যে দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় অনেক পশুপাখি আগুনে পুড়ে মারা যায়, অনেক পশুপখি দৌড়ে কিংবা উড়ে যেতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে, এমন কথাই শোনা যায় উদ্বাস্তু মানুষের মুখ থেকে। যে-সব উদ্বাস্তু দল বহির্ষ্মতীর পাশ দিয়ে যায়, নৃপতি বেণ তাদের মুখে দাবানলের ভয়াবহতার কথা শোনেন, দাবানল এদিকেও ধাবিত হবার সম্ভাবনা আছে কি না তা জানতে চান, নানাজন নানা কথা বলে, কেউ হাউমাউ করে কাঁদে, চিন্তায় পড়ে যান বেণ। সন্ধ্যায় অন্ধকার নামলেই উত্তর-পশ্চিম আকাশের লালচে আভার দিকে তাকিয়ে বেণ বোঝার চেষ্টা করেন দাবানল কত দূর এগোলো, আর দিনের বেলায় পাতালের দিকে ধাবমান উদ্বাস্তুদের কাছে খোঁজ নেন। কেবল তিনি একা নন, বহির্ষ্মতীর অনেকেই তাঁর মতো চিন্তিত। তাই তাঁরই মতো অন্যান্য অনেক নারী-পুরুষ বসতির বাইরে গিয়ে উদ্বাস্তুদের যাত্রাপথে ভিড় করে তাদের দেখার জন্য, তাদের সাথে কথা বলার জন্য। তারা উদ্বাস্তুদের নানা প্রশ্ন করে, ওদের কথা শোনে আর নিজেদের মধ্যে দাবানল নিয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা রকম গল্প করে। গ্রামের বৃদ্ধরা স্মরণ করেন- তাদের যৌবনে তারা একবার দাবানলের কবলে পড়েছিলেন, বসতি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। তবে গত দশ-বিশ বৎসরে এমন ভয়াবহ দাবানলের কথা তারা শোনেননি।
অন্যান্যদের থেকে বেণ একটু বেশিই চিন্তিত-উদ্বিগ্ন, কেননা তিনি নৃপতি, ভালো-মন্দ যাই-ই ঘটুক না কেন, বহির্ষ্মতীতে তাঁর নিজের পরিবার-গোত্র এবং সমগ্র ব্রহ্মাবর্তের অন্যান্য গোত্রের মানবদের মঙ্গল-অমঙ্গল বিষয়েও সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্তটি তাঁকেই নিতে হবে। গোত্রের কোনো কোনো হতাশাগ্রস্ত মানুষের মুখে নানাবিধ নেতিবাচক কথা শুনে তিনি আরো উদ্বিগ্ন বোধ করেন। দাবানল এদিকে এসে পড়লে এখন গোত্রের মানুষদের নিয়ে কোথায় গিয়ে নতুন বসতি গড়বেন? এখন বসন্তের শেষ, রাত্রিবেলা শীত পড়লেও দিনের বেলায় বেশ কিছুটা পড়ে, গরমের সময় নানাবিধ রোগের উপদ্রব বেড়ে যায়, এই সময় নতুন বসতির উদ্দেশে যাত্রা করলে পথেই হয়ত অনেক মানুষ মারা যাবে রোগে ভুগে। এই সময়ে ব্রহ্মাবর্তের নিন্মভূমির দিকে নদীর পারে বসতি গড়তে গেলে বসতির স্থান এবং চারণভূমির অধিকার নিয়ে অনার্য তো বটেই আর্য মানবদের অন্যান্য গোত্রের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব হবে। এমনিতেই বসন্তকালে ভূমিতে তৃণ কম থাকে বলে পশুচারণ করা নিয়ে আর্যদের নিজেদের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যেই মাঝে মাঝে ঝগড়া-মারামারি হয়। আর ব্রহ্মাবর্তের বাইরে অতল, বিতল, সুতলের দিকে বসতি গড়তে গেলে আর্য দৈত্য-দানব এবং বিভিন্ন অনার্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। বেণ সবে নৃপতি হয়েছেন, এখনো সবকিছু ঠিকমতো গুছিয়ে উঠতে পারেননি, এখনই তিনি যুদ্ধে জড়াতে চান না। এই অঞ্চলে যথেষ্ঠ চারণভূমি রয়েছে, তাঁর ইচ্ছা এখানে আরো কয়েকটি শরৎ অতিবাহিত করে তারপর অন্য কোথাও গিয়ে বসতি গড়বেন, এখন অন্য কোথাও যাবার জন্য তিনি এবং তাঁর গোত্র মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত নন। তাছাড়া সামনে গ্রীষ্মের পরই বর্ষাকাল, এই সময়ে বসতি ত্যাগ করা মানে অহেতুক বিপদ ডেকে আনা।
এবার বসন্ত শেষ হয়ে এলেও বৃষ্টির দেখা নেই। কেন এমন হচ্ছে? মানুষের কোনো পাপের ফলেই কি সূর্যদেব এমন ক্ষেপে গিয়ে অরণ্যে অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার দিচ্ছেন? ব্রহ্মাবর্তেও কি তাই করবেন? এইসব প্রশ্ন ওঠে, নানা ডালপালা মিশ্রিত আলোচনা হয় মানুষের মধ্যে। পিতা অঙ্গ’র পরামর্শে বেণ বহির্ষ্মতীর কয়েকজন গুরুজনকে নিয়ে সন্ধ্যায় স্মরণাপন্ন হন প্রধান পুরোহিত উদয়গিরির, দাবানল যাতে এদিকে না আসে আর বৃষ্টি বর্ষিত হয় সে-জন্য তাদের কী করণীয় সেই বিধান চান উদয়গিরির কাছে। তাছাড়া অনাবৃষ্টির ফলে রোগ-বালাই বেড়ে গেছে, কয়েকজন মারাও গেছে এরই মধ্যে। উদয়গিরি তার গৃহের সামনের আঙিনায় মৃগ-চামড়ার আসনে উপবেশন করে গম্ভীর বদনে বেণ এবং অন্যদের কথা শুনতে থাকেন। তাঁর সামনে কিছুটা দূরত্বে গরুর চামড়ার বেশ বড় একটি আসনে উপবেশন করেছেন বেণ এবং অন্যরা, মাঝখানে জ্বলছে মৃৎপ্রদীপ।
উদয়গিরি দীর্ঘকায় মানুষ, স্থুল, মাথাভর্তি সোনালি-সাদা চুল পিঠে ছড়ানো, মুখে লম্বা দাড়ি-গোঁফ, শরীরের মতোই তার কণ্ঠস্বরও রাশভারি। তিনি প্রচণ্ড রাগী আর আচারনিষ্ঠ, শাস্ত্রের কোনোরূপ অনিয়ম সহ্য করতে পারেন না, শাস্ত্রের কঠোর রজ্জু দিয়ে সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখার পক্ষে তিনি, নৃপতি বেণকেও সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেন।
দেবগণের প্রতি উদয়গিরি ভীষণ অনুগত, ফলে দেবগণও তাকে খুব পছন্দ করেন। তিনজন স্ত্রীর স্বামী এবং বাইশ সন্তানের পিতা তিনি। পুরোহিতগিরি, শাস্ত্র শিক্ষা এবং গোত্রের মানুষের দানে তিনি নিজের ও বৃহৎ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। কেবল তিনি নন, তার মতো আরো যারা ব্রাহ্মণ আছেন তারা সকলেই একই বৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্য আর্যদের মতো ব্রাহ্মণরা যব চাষ, পশুপালন কিংবা অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে না। যদিও তাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি পশু আছে, উদয়গিরির পশুর সংখ্যা প্রায় নৃপতি বেণের সমান! কিন্তু তাদের পশু তারা নিজেরা চরান না, পালা করে তাদের পশুর দেখভাল করে যজমানরা।
সকলের আশঙ্কার কথা শোনার পর উদয়গিরি বলেন, ‘দাবানল এবং অনাবৃষ্টি নিয়ে আপনাদের মতো আমিও চিন্তিত। গত কয়েকদিন যাবৎ আমি এই সংকট নিয়ে ভেবেছি, অনাবৃষ্টি হলে বৃষ্টি কামনায় কারীরী ইষ্টি যজ্ঞ করার বিধান দিয়ে গেছেন মুনিগণ। কালক্ষেপণ না করে আমাদেরকে কারীরী ইষ্টি যজ্ঞের আয়োজন করতে হবে।’
‘কারীরী ইষ্টি যজ্ঞ!’ বেশ কয়েকজন একই সঙ্গে উচ্চারণ করেন।
উদয়গিরি বলেন, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ, কারীরী ইষ্টি যজ্ঞ। বৃষ্টি কামনায় দেবপতি ইন্দ্র এবং দেবতা বরুণের উদ্দেশ্যে তেমন যজ্ঞের বিধানের কথাই বলা হয়েছে শাস্ত্রে।’
বেণ বলেন, ‘বিপ্র, তাহলে কবে যজ্ঞ করলে আমাদের মঙ্গল হবে বলে আপনি মনে করেন?’
উদয়গিরি কয়েক নিমেষ ভাবার পর বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে পূর্ণিমায় যজ্ঞ করা যাবে।’
‘তবে আগামী সপ্তাহের রবিবারই আমরা যজ্ঞের আয়োজন করি, আপনারা কী বলেন?’ প্রশ্ন ছুড়ে বেণ অন্যদের দিকে তাকালে তারা সমস্বরে বলেন, ‘যত তাড়াতারি করা যায় ততই উত্তম।’
উদয়গিরি বলেন, ‘বেশ, আগামী সপ্তাহের পূর্ণিমাতেই তবে যজ্ঞের ক্ষণ চূড়ান্ত।’
পুরোহিত উদয়গিরি এবং কয়েকজন ঋত্ত্বিকের তত্ত্বাবধানে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয় কারীরী ইষ্টি যজ্ঞ, দেবপতি ইন্দ্র এবং দেবতা বরুণের নামে হোম উৎসর্গ করা হয়, অনেককাল পর বহির্ষ্মতীবাসী কারীরী ইষ্টি যজ্ঞ করায় সকলেরই চেষ্টা ছিল যাতে যজ্ঞে কোনো প্রকার ত্রুটি না হয়। যজ্ঞ ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাই দারুণ খুশি। যজ্ঞের পর শুরু হয় আহার পর্ব। দেবগণ, উদয়গিরি, মনু, ঋত্ত্বিক এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ সর্বপ্রথম আহারের বৈঠকে উপবেশন করেন; বেণ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পরিবেশনকারীদের পরিচালনা করেন যাতে কোনো ত্রুটি না হয়, কেউ যাতে রুষ্ট না হন। এদের আহার শেষ হলে গোত্রের সাধারণ মানুষেরা আহার করবেন। বেণ প্রভাষের উদ্দেশে বলেন, ‘মাংস আরো নিয়ে এসো প্রভাষ।’
প্রভাষ মাঝারি একটি পাত্রে আরো মাংস নিয়ে এলে বেণ বলেন, ‘দেবতা বায়ুকে আরো মাংস দাও, তিনি মাংস খুব ভালোবাসেন।’
বায়ু হাসেন, তার পাতে আরো মাংস দেয় প্রভাষ। কল্পক রসিকতা করে বলেন, ‘ভ্রাতা বায়ু, আপনি ব্রহ্মাবর্তে এসে যে নধর শরীর বানাচ্ছেন, আমি তো আপনাকে নিয়ে চিন্তায় আছি যে আপনি চড়াই-উৎরাই পথ পেরিয়ে স্বর্গে উঠতে পারবেন কি না!’
‘স্বর্গে উঠতে না পারলেও ক্ষতি নেই ভ্রাতা, বাকি জীবন এখানকার মানুষের আতিথ্যে আহার-বিহার করে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারব।’
বেণ বলেন, ‘থাকুন না দেবতা, আপনাকে সর্বক্ষণ পেলে আমরা ধন্য হব।’
কল্পক বলেন, ‘তাহলে স্বর্গে আরেকজন জীর্ণ হয়ে যাবে, কে জানে স্বামীবিরহে কেঁদে কেঁদে তিনি এতদিনে স্বর্গে নতুন কোনো সরোবর বানিয়ে ফেলেছেন কি না!’
সকলে হেসে ওঠেন।
দেবগণ, উদয়গিরি, মনু, ঋত্ত্বিক এবং ব্রাহ্মণগণের আহার শেষ হলে গোত্রের সাধারণ মানুষের আহার শুরু হয়। আহার পরিবেশনকারীরা বেণকেও এই বৈঠকে বসে যেতে অনুরোধ করে। বেণ জলের পাত্র থেকে জল নিয়ে হাত ধোয়ার সময় দূরে একজন অশ্বারোহীকে দেখতে পান, দূর থেকে প্রথমে চিনতে না পারলেও আরেকটু কাছে আসতেই চিনতে পারেন, অশ্বারোহী অশ্ব থেকে নামতেই তিনি জলের পাত্র রেখে দু-হাত প্রসারিত করে ছুটে যান তার দিকে, ‘কুথান! প্রিয় সখা আমার, কোথায় ছিলে এতদিন?’
কুথানও ঘোড়ার রজ্জু ছেড়ে একইভাবে এগিয়ে আসেন বেণের দিকে, ‘সখা, আমার অন্তর থেকে তোমাকে অভিনন্দন! আমি পথেই শুনেছি যে তুমি নৃপতি হয়েছ।’
দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন; মানুষ আহারের বৈঠকে বসে, কেউবা বৈঠকে বসার কথা ভুলে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে, কেউবা এগিয়ে যায় কুথানের কুশলাদি জানবার জন্য, এতদিন পর তাদের প্রিয় গল্পকথক ফিরে আসায় সকলের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর দুজন দুজনকে বক্ষমুক্ত করে একে অন্যের হাত ধরেন, বেণ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমি তোমার আসার অপেক্ষায় আছি, তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।’
কুথান বলেন, ‘আমারও অনেক কথা জমে আছে সখা।’
‘আজ রাত্রে আমার গৃহে জমিয়ে আড্ডা হবে।’
‘তথাস্তু।’ হাসেন কুথান।
উপস্থিত সকলে কুথানের মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। কুথানের অঙ্গে আশ্চর্য ধরনের সুক্ষ্ম ঘি রঙা বস্ত্রের নিবি, এই ধরনের সুক্ষ্ম বস্ত্র আর্যরা তৈরি করতে পারে না, এগুলো অনার্যদের তৈরি, অনার্যরা সুক্ষ্ম বস্ত্র তৈরির কৌশল রপ্ত করেছে। কুথান নিশ্চয় কোনো অনার্য নগর থেকে এই বস্ত্র সংগ্রহ করে নিবি তৈরি করিয়েছে। তার পরনে বাদামী রঙের একই ধরনের সুক্ষ্ম বস্ত্রের বাস। মাথায় অদ্ভুত ধরনের উষ্ণীব আর পায়ের কালো চামড়ার পাদুকা জোড়াও অনার্য সংস্কৃতির, দেখেই বোঝা যায়।
বেণ বলেন, ‘চলো, এবার আহার করা যাক।’
‘দাঁড়াও, সবার সঙ্গে একটু কুশলাদি বিনিময় করতে দাও। কতদিন পর দেখতে পাচ্ছি আপনজনদের! আরে শীতল খুড়ো, কেমন আছো? কতদিন তোমার হাতের মাধ্বী পান করি না!’
এগিয়ে গিয়ে শীতল খুড়োর হাত ধরেন কুথান, শীতল খুড়ো বলেন, ‘ভালো আছি বাছা। তোমাকে দেখে বড় আনন্দ হচ্ছে হে, সন্ধ্যায় এসো আমার গৃহে, প্রাণভরে মাধ্বী পান করে যেও।’
‘যাব খুড়ো, আজ না হোক, কাল-পরশু।’
শীতল খুড়োর হাত ছেড়ে মধ্যবয়সী একজন নারীর দিকে তাকিয়ে কুথান বলেন, ‘কলাপী মাসী, তোমার বয়স দেখি ক্রমশ কমছে! আমার যদি পুত্র থাকত তাহলে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতাম! হা হা হা….!’
‘বিবাহ-ই করলে না, আবার পুত্র! এবার একটু গৃহমুখী হও দেখি বাছা, তোমায় বিবাহ দিয়ে আমরা নাতি-নাতনীর মুখ দর্শন করি।’
‘সেটি হচ্ছে না মাসী, বিবাহ নামক ওই রজ্জুর বন্ধনে আমি আবদ্ধ হতে পারব না!’
একজন বৃদ্ধা এগিয়ে আসেন, কুথানের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে কেঁদেই ফেলেন, ‘তোকে যে জীবদ্দশায় আবার দেখতে পাব, সেই আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম! বয়স হয়েছে আমার, কবে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায়! হ্যারে কবে গল্প শোনাবি?’
‘শোনাবো ঠাকুমা, এবার তোমাদের জন্য অনেক গল্প জমিয়েছি।’
বেণ কুথানের অপেক্ষায় বৈঠকে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘কুথান এসো, আগে আহার করে নাও, তারপর যত খুশি গল্প কোরো।’
‘আসছি।’
বৃদ্ধাকে ছেড়ে কুথান হাত ধুয়ে বৈঠকের দিকে এগিয়ে যান।
(চলবে.....)
©somewhere in net ltd.