![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট ডল পুতুলের মত মেয়েটি অবাক চেয়ে রয়। তার তিন বছর বয়সে সে এত অপার সৌন্দর্য্যের মুখোমুখি হয়ত আর হয়নি। অথবা এই প্রথম বারের মত হয়ত তার বিশাল চোখদুটি সুন্দর বুঝতে শিখলো। তাদের ছোট ছই নৌকাটি লাল শাপলার বিস্তির্ণ বন পেরিয়ে যাচ্ছে। একটু হাত বারালেই ওর ছোট্ট মুঠিতে ধরা দেবে সুন্দর। হঠাৎ করে কালো জলে ত্বরিতবেগে হলদে ডোরাকাটা একটা সাপ ছুটে গেল। মেয়েটি আতংকে ছোটকাকুর গলা জরিয়ে ধরল। এই প্রথমবারের মত সে হয়ত ভয়কেও চিনতে শিখল।
ছইয়ের ভেতর বসে আছে মেয়েটির দাদী, দুধ-সফেদ শাড়িতে পবিত্রতার প্রতিমা। তিনি ছোট ছেলেটার উপর বেশ বিরক্ত বোধ করছেন, তার অতি আদরের নাতনীটি রোদে কষ্ট পাবে তা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। যদিও আষাড়ি মেঘ বেশ ছায়া দিয়ে রেখেছে, তবুও ভ্যাপসা গরম অসহনীয় লাগছে। মেয়েটির অবশ্য সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছে। দাদী কয়েকবার ছেলেকে ডাকলেন, কিন্তু মেয়েটির ছোটকাকু গলা ছেড়ে গান গেয়ে চলেছেন একটার পর একটা, মাঝে মাঝে একটু থেমে মেয়েটিকে শাপলা তুলে দিচ্ছেন। ছোটকাকু গেয়ে চলেছেন ও নদীরে একটি কথাই শুধাই শুধু তোমারে...
বেশ কয়েকঘন্টা পর দুরে দেখা গেল ছোট ছোট দ্বীপ জেগে উঠেছে, আর তার তীর লোকেলোকারণ্য হয়ে আছে। কাছে যেতেই মেয়েটির ছোটকাকু তাকে দাদীর কোলে দিয়ে হাটুপানিতে নেমে মাঝিকে নৌকা টেনে নিতে সাহায্য করতে লাগলো। আরেকটু এগিয়ে যেতেই কেউ ছোঁ মেরে মেয়েটিকে দাদীর কোল থেকে তুলে নিল। সেই থেকে মেয়েটি বেশ কিছুক্ষন তীরের সব মেয়েদের কোলে কোলে ঘুরলো। দাদী অনেক বছর পর তাঁর শশুরবাড়ি এসেছেন। শশুরবাড়ির লোকেরা তাদের শহুরে বউ আর তাঁর ফুটফুটে বিলেতী পুতুলের মত নাতনীকে রাজকীয় সংবর্ধনায় বরণ করে নিলো।
সবাই একটু ধাতস্ত হয়ে এলে পরে দাদী মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন। তাদের ঘিরে রইল আসেপাশের গ্রাম থেকে আসা লাতায়-পাতায় আত্মীয়তায় জরানো একরাশ কৌতুহলী মুখ। ছোটাকাকু সেই যে কোথায় গেলেন তার কোনো হদিস নেই। ভিরের মধ্য থেকে কালো কালো হাত বারিয়ে কেউ কেউ মেয়েটির সিল্কি চুল ছুঁয়ে দিচ্ছে, কেউ ফোলা গাল টিপে দিচ্ছে। মেয়েটি কিন্তু একটুও কাদঁছে না। সে এক বিহবল আনন্দ নিয়ে চারদিক উপভোগ করে যাচ্ছে।
এদিকে দুপুর গরিয়ে যাচ্ছে, গৃহকর্তা তাড়া দিচ্ছেন মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেয়ার জন্য। বিষেশ অতিথিদের জন্য আজ কত্ত কত্ত পদের রান্না যে হয়েছে। কেউ একজন ছুটে গেল ছোটকাকু আর তার বন্ধুদের ডেকে আনতে। সব গুছিয়ে নিয়ে খেতে বসতে বসতে বেশ সময় লাগলো। বিশাল বড় চৌকিটার মাঝখানে সব খাবার সাজানো হয়েছে আর চারিদিকে গোল হয়ে বসেছে মেহমানেরা, দাদীর কোল ঘেসে বসে আছে মেয়েটি। গৃহীর মহার্ঘ সব কাসাঁর ঝকঝকে থালাবাটিতে পরিবেশন হয়েছে নানা পদের ভর্তা, মাছ, মাংস, ঝোল-তরকারী, আরও কত কি। মেহমানেরা আয়েশ করে খাবার তুলে নিচ্ছেন, দাদী এক থালাতে কিছু খাবার তুলে নিলেন মেয়েটিকে খাইয়ে দেবার জন্য। কিন্তু একি! মেয়েটি মুখ খুলছে না যে। শুরু হল সাধ্য-সাধনা, অনুনয়-অনুরোধ, কপট রাগুনি। নাহ, মেয়েটি ঠোঁট টিপে বসে আছে। এদিকে অন্যান্যদের খাওয়া মাথায় উঠলো, ছোটকাকু বেশ চড়া গলায় বকুনী দিতে গেলে, দাদী থামিয়ে দিলেন।
অবশেষে, অনেক সাধ্য-সাধনার পর মেয়েটি আংগুল তুলে দেখিয়ে দিল খাবার-দাবারের একপাশে রাখা "বদনা" সাদৃশ একটি জগের দিকে, যেটি দিয়ে কিছুক্ষন আগে গৃহকর্তী পানি ঢেলেছেন গেলাসে। কোনভাবে মেয়েটির ধারনা হয়ে গেছে যে এইরকম বস্তুটি যেহেতু সে তাদের বাথরুমে দেখছে সেহেতু এটি নোংরা আর এর আসেপাশের সবকিছুই নোংরা। ব্যাস! শুরু হল তুলকালাম কান্ড। দাদী রেগে সব ফেলে উঠে গেলেন আর বাড়ির লোকেদের ভর্তসনা করতে লাগলেন যে তাঁর নাতনীকে "বদনা" দিয়ে পানি কেন দেয়া হোলো, দাওয়াত করে কেন অপমান করা হলো। যতই গৃহকর্তা-কর্তী ক্ষমা চান না কেন তাতে কিছুই হলো না। দাদী সোজা বেরিয়ে নৌকায় চড়ে বসলেন। ছোটকাকুরা আর কি করেন, পিছু পিছু নৌকায় উঠলেন। সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে নৌকা ফিরে চললো সেই শাপলা বনের মাঝ দিয়ে।
**কাহীনিটি গতবছর আমি আমার ছোটকাকুর কাছ থেকে শুনেছি। বলাই বাহুল্য সেই ছোট মেয়েটি আমি এই ঘটনার কোনোকিছুই আমার মনে না থাকলেও, মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত মনে পরে যায় নৌভ্রমনের দৃশ্যটি।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৫
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:১৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
প্রাঞ্জল বর্ণনায় বেশ ভালো লাগল লেখাটি। +++++ রইল।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৫
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
বেশ সুন্দর ভাবে নিজের ছোট বেলার কাহিনী তুলে ধরলেন।
ভাললাগা জানবেন।
++++++
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০২
অদৃশ্য বলেছেন:
লিখাটির শেষ কথাগুলো আমাকে দারুনভাবে আকর্ষন করলো... যে নৌভ্রমণের গল্পটা করলেন... কাকতালীয় হলেও এমন একটি স্মৃতি আমারও আছে... তবে তা পদ্ম বা শাপলার নয়... পরিষ্কার নদীর জলের শ্যাওলা বা জলের ভেতর দেখতে পাওয়া জলজ তৃণের... স্মৃতিটা আমার কাছে স্বপ্নের মতোই লাগে... বা স্বপ্নের মতো আসে...
আপনার লিখাটি ভালো লেগেছে খুব... স্মৃতি খুবই অদ্ভুত আর আনন্দদায়ক (বেদনার সহ)...
ছুট্ট মেয়েটি যে ঘটনাটির জন্য এখনো লজ্জা পায় সেটাই তার পরিচ্ছন্ন মননের প্রকাশ...
শুভকামনা...
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: এত সুন্দর কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার এমন অনেক বার হয়েছে যে ফ্ল্যাশব্যাকের মত করে কিছু মনে পরে যায়, কিন্তু তখন হয়ত কিছু মনে রাখার বয়স হয়নি । বা কাকাদের কাছে শোনা গল্প থেকে আমার "উর্বর" মস্তিস্ক কিছু কল্পনা করে নিল। কি জানি...
৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪
ভিটামিন সি বলেছেন: আপনি তো ভারী পা** ছিলেন ছোটবেলায়। মানুষকে না খাইয়ে রেখে কষ্ট দিয়েছেন। বদনার পানি খাইলে কি হইত আপনার?? খেক খেক খেক খেক।
আপনার জন্য একটা ইসস্ রেখে গেলাম।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। আমার ছোটকাকাও তাই বলছিল, সেই যে এত এত মজার মজার খাবার ফেলে রাজ্যের ক্ষুধা নিয়ে খাবার ফেলে উঠে যেতে হয়েছিল তার আফসোস আজ এত্ত বছর পরেও রয়ে গেছে। কি আর করার, আমার জেনারেশনে আমি সবার আগে এসেছিলাম বলে খুব স্পয়েল্ড হয়েছি :!>
৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩
ভিটামিন সি বলেছেন: লেখক দুইবার কেন বলেছেন?? আমি তো একবার বলেছি।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: লেখিকা ছোট্ট একটি ভুল করেছে
৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০৭
শায়মা বলেছেন: মজার!!!
আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো সেই পিচকিটা তুমিই আপুনি।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪০
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: :!>
৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১২
নেক্সাস বলেছেন: আপনার লিখার হাত ভাল।বর্ণনা সাবলীল
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২১
বেলা শেষে বলেছেন: আপনার কিছু কিছু লেখা আমি পড়েছি, এখনো সবগুলো পড়ে শেষ করতে পারিনি। you are good writing.
অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
অশেষ ধন্যবাদ।
Up to next time.
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬
মিথিলা মাহমুদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমার কাঁচা হাতের লেখা পড়েছেন এতেই আমি মহা খুশী
১০| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১১
বেলা শেষে বলেছেন: ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬ ০
লেখক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমার কাঁচা হাতের লেখা পড়েছেন এতেই আমি মহা খুশী
ok , brother, some of them are very good.
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনার লিখার হাত ভাল । চালিয়ে গেলে ভাল করবেন ।
শুভ কামনা রইল ।