![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
বাড়ির বাহিরে প্রাইভেট কারটা দাড়ানো । আমজাদ সাহেব গাড়ির দিকে ফিরেও তাকালেন না । আজকে তার গায়ে প্রতিদিনের ভারী স্যুট অথবা গলায় আটোঁসাটো টাইটা নেই । পরনে একটা হালকাশার্ট আর ট্রাওজার । তার বিশাল বাড়ির মেইন গেইটে আজ কোন দাড়োয়ান নেই । গেইটের তালা খুলে রাস্তায় বেড়িয়ে এলেন । একটা রিক্সা ডাক দিয়ে তাতে চড়েবসলেন । তাকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে । বাংলাদেশের প্রখ্যাত এক শিল্পপতি তিনি । বাড়ি , গাড়ি , টাকা , পয়সা কিছুর অভাব নেই তার । অফিসের সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় পায় । আপাদমস্তক সত্ একজন মানুষ । কিন্তু লোকটা কেমন জানি গুরুগম্ভীর থাকেন । তার মুখে হাসি দেখা আর ডুমুরের ফুল দেখতে পাওয়া সমানকথা । কঠোর নিয়ম নীতি অনুশাসনে তার জীবন বাধা ।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায আদায়ের পর একটু দৌড়ানো । তারপর ব্যাস্তভাবে বাসায় এসে গোসলের পর নাস্তা খেয়ে অফিসে যাওয়া । রাতে বাসায়ফেরা । এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন । ঠিক ৯ টায় তিনি অফিসে পৌছান । কখনো ঐ সময়ের হেরফের হয় না । তার চুলে পাক ধরেছে । মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে । বয়স ষাট হলেও শরীরে তার ছাপ পড়েনি ।
ভদ্রলোকের স্ত্রী অনেক আগেই গত হয়েছেন । কোন ছেলে মেয়ে আছে বলে জানা নেই কারো । কেননা ভদ্রলোক ব্যাক্তিগত জীবন দিয়ে কোন কথা বলতে চান না ।
সেই আমজাদ সাহেব আজ সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়েরিকসায় করে কোথায় যেনো যাচ্ছেন । ব্যাপারটা অদ্ভুতই বটে । বাসার সব বার্বুচি , দাড়োয়ান , মালি , ড্রাইভারকে তিনি আজ ছুটি দিয়েছেন । তিনি এখন খুশি মনে যাচ্ছেন বাজার করতে। বহুদিন বাজার করা হয় না । কোন এক অজানা কারনে তার মুখের কোনে আজ একচিলতে হাসি খেলা করছে ।
(২)
হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকলো রোদেলা । হাত ঘড়িতে দেখলো সকাল ৯.৩০ বাজে । আজ তাকে বস মেরেই ফেলবে । ভয়ে ভয়ে অফিসে ঢুকে বস এর কামড়ায় গিয়ে অবাক হয়ে দেখলো
তার বস নেই । বেশ অবাক হলো রোদেলা । এমন অদ্ভুত ব্যাপার তো কখনো হয় নি ! ঘড়িতে সময় দেখলো আবার । ডিজিটাল ঘড়িটার কোনায় লেখা ২৯ শে ফ্রেব্রুয়ারী । তার মানে আজকে কোন ছুটির দিন নয় । তাহলে ? চিন্তায় পরে গেলো রোদেলা । সে আমজাদ সাহেবের PA....... আমজাদ সাহেবের সব কিছুর খবর রাখা তার দায়িত্ব ।
তবে কি আমজাদ সাহেব অসুস্থ ? চিন্তা করতে করতে ম্যানেজার সাহেবের রুমে ঢুকলো সে । ম্যানেজার জানালো যে আমজাদসাহেব আজকে অফিসে আসবেন না । তার বিশেষ কি কাজ আছে যেন । আরো অবাক হলো রোদেলা । আমজাদ সাহেবের যে কোন কাজের কথা তিনি রোদেলাকে জানান । তাহলে আজকেকি এমন কাজ ???? ব্যাপারটা খোচাঁচ্ছে রোদেলাকে ।
ভাবলো অফিসের পর স্যারের সাথে দেখা করে আসবে সে । বিকালের দিকে অফিস শেষেই আমজাদ সাহেবের বাড়িতে রওনা হলো রোদেলা । যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো । গেইটের কাছে গিয়ে অবাক হলো সে । গেইটের সামনে সাধারনত দাড়োয়ান থাকে । আজ নেই । গেইট ঠেলা দিলো সে । তাকে অবাক করে দিয়ে হা হয়ে খুলে গেলো গেইট । আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো সে ।পুরো বাড়িতে কেমন জানি সুনসান নিরবতা । গা ছমছমে ভাব ।
রোদেলা চিত্কার করলো "ড্রাইভার চাচা! , বুয়া ! রফিক চাচা !"
কেউ সাড়া দিলো না । অজানা আশংকায় বুকটা ধক্ করে উঠলো তার । চিত্কার করলো সে আবার "স্যার । স্যার আপনি কোথায় ?" তার চিত্কার বড় হলরুমটাতে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এলো তার কাছেই । আস্তে আস্তে সে আমজাদ সাহেবেররুমের দিকে এগিয়ে গেলো । হটাত্ আমজাদসাহেবের স্টাডি রুম থেকে মানুষের কথা বলার মৃদু আয়োয়াজ ভেসে এলো । রোদেলা এগিয়ে গিয়ে স্টাডির দরজাটা ঠেলে সামান্য ফাঁক করলো ।
(৩)
মুগ্ধ হয়ে গেলো রোদেলা । সারা রুমে লাল , গোলাপি কাগজ সাটানো । দেয়াল থেকেঝুলছে রংবেরঙ্গের বেলুন । আর অসংখ্য মোমবাতি । বিশাল ঘরটাতে যেখানে আগে বুকশেলফ ছিলো এখন সেখানে কিছু নেই । ঘরটার মাঝখানে এখন শুধু একটা টেবিল । টেবিলের দু প্রান্তে দুটো চেয়ার । একটা চেয়ারে আমজাদ বসে আছেন । অপর চেয়ারটা ফাঁকা । আমজাদ সাহেবের সামনে বিশাল একটা কেক । আর কেকের সামনে একটাছবি । আমজাদ সাহেব কার সাথে যেন কথা বলছেন ।
রোদেলা ঘরে ঢুকে আস্তে করে ডাক দিলো"স্যার ।" আমজাদ সাহেব ঘাড় ফিরালেন । রোদেলা দেখতে পেলো তার চোখ দিয়ে পানি পরছে । ধক্ করে উঠলো রোদেলার বুকটা । মানুষটার চোখে এর আগে কখনো পানি দেখেনি সে । কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে "কি হয়েছে স্যার । কার সাথে কথা বলছেন ?" আমজাদ সাহেব হাত তুলে ছবিটা দেখালেন ।একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চার ছবি । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন "আমার মেয়ে , আরিশা । আজ ওর জন্মদিন ।" রোদেলা অবাক হয় । আমজাদ সাহেবের যে মেয়ে আছে এটা জানতো না সে । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো "তো স্যার আরিশা কোথায় ?" "চলে গেছে । রাগ করেছে আমার সাথে । রাগ করে লুকিয়ে গেছে ।" জড়ানো কন্ঠে বললেন আমজাদ সাহেব । "কোথায় ? কেনো ?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রোদেলা ।
রোদেলার হাতে একটা ডাইরি ধরিয়ে দেয় আমজাদ সাহেব । সেটার প্রথম পৃষ্ঠায় কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট বাচ্চার লেখা--
"-- আব্বু । তুমি পঁচা । আমাকে টেডি বিয়ার কিনে দাওনি কেনো ? তোমার সাথে আঁড়ি । আমি কিন্তু লুকিয়ে যাব ।"
রোদেলা স্বপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় আমজাদ সাহেবের দিকে । আরিশাকে এর পরেরজন্মদিনে একটা টেডি বিয়ার দেওয়ার কথা ছিলো । কিন্তু আমার ছোট্ট পাখিটা তার আগেই অভিমান করে কোথায় যেনো চলে গেলো । প্রতি চার বছর পর এই দিনে ওর জন্য অপেক্ষায় থাকি আমি । ও আসবে । আমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলবে "আব্বু তুমি অনেক ভালো । তোমাকে একটা পাপ্পি.....তারপর টুক করে আমার গালে একটা চুমো দিবে" - বললেন আমজাদ সাহেব। রোদেলা স্তব্ধ হয়ে গেছে । বজ্রহতের মতো দাড়িয়ে আছে সে ।
হটাত্ আমজাদ সাহেব তার হাত দুটো ধরে করুন গলায় বললেন "মা। তুমি আমার মেয়েটাকে একটু বলে দাও না । আমার সাথেযেনো আর রাগ করে না থাকে । আমি ওকে অনেক অনেক টেডিবিয়ার কিনে দিব ।" কথাগুলো বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে দিলেন আমজাদ সাহেব । বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন তিনি । কষ্টের একটা শীতল শিহরন বয়ে গেলো রোদেলার শরীরে । চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে তারও । তখন রাতের আকাশ তারায় ভরা । কে জানে হয়তো ঐ তারাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরিশা...
আকাশ থেকে পাওয়া
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:০৮
যুদিষ্টিক বলেছেন: কানতেই আছি কানতেই আছি
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:০৪
যুদিষ্টিক বলেছেন:
:-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-&