![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সাবধান"
মোঃ জোবায়ের বাপ্পী
………
আমরা মুভিতে দেখি জঙ্গিরা জিহাদের নাম দিয়ে নানান স্থানে আক্রমণ করা হয়। এটা যে শুধু মুভি তা নয়, বাস্তবও। গল্প, মুভি তো আর উড়ে উড়ে আসে না। বাস্তবতা থেকেই আসে। "ঢাকা অ্যাটাক" ছবিটা গুলশান অ্যাটাকের পরেই নির্মিত হয়েছে। তো মূল কথায় আসি। মুভিতে দেখা যায় জিহাদের নামে জঙ্গিরা হামলা চালায়। এই হামলায় নিরাপরাধ মানুষ ও শিশুরা মারা যায়। এখন কথা হচ্ছে এদের কি দোষ ছিল? এদেরকে কেন মারা হল? এ কেমন জিহাদ? কোরআনের কোথায় উল্লেখ আছে? কোন হাদীসের আছে এমন জিহাদের কথা? কোথাও নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে এসব নেই। তারা জিহাদের সংজ্ঞাই জানে। সবচেয়ে বড় জিহাদ হল অন্তরের কুফরি অর্থাৎ শয়তানের সাথে লড়াই করা। আর যারা জিহাদের নামে মানুষ মারে তারা তো বড় জিহাদ অর্থাৎ শয়তানের সাথেই হেরে যায়। কারণ তারা শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে গেছে।
বর্তমানে নানাভাবে ইসলামের অপব্যবহার করা হচ্ছে। শুরুটা হয় কিন্তু প্রধান হাতিয়ার নামাজ দিয়ে। কিভাবে? তা বিস্তারিত ভাবে নিচে দিলাম। এটা কোনো গল্প নয়। আমার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। বড় ভাইটার নাম আসাদ। দু চারদিন হল আসাদ নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেছে। এর পিছনে জাহেদ (ছদ্মনাম) ভাইয়ের বড় ভূমিকা আছে। বেশ কিছুদিন ধরে জাহেদ ভাই আসাদকে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। "শুনো আসাদ, নামাজের কোনো বিকল্প নাই। এতে শরীর মন দুটাই ভাল থাকে। সবচেয়ে বড় কথা এটাই আখিরাতে লাগবে।" আসাদ বলত হ্যাঁ ভাই কাল পড়ব। এই কাল কালই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এক সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় জাহেদ ভাই আসাদের হাত ধরে টেনে মসজিদে নিয়ে যায়। মসজিদ থেকে তো আর নামাজ না পড়ে বের হওয়া যায় না। আসাদ তো মুসলিমই। সেই থেকে আস্তেধীরে নামাজ পড়া শুরু। আস্তে আস্তে নিয়মিত পড়া শুরু করে। ফজর বাদে বাকিগুলো নিয়মিত পড়ে। জাহেদ সেখানেও বলে যে, "ফজরের নামাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওটাই তো আসল পরীক্ষা। কোনটা তোমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহর ভয় নাকি আরামের ঘুম?" আসাদ এলার্ম দিয়ে রাখে। তবুও মিস হয়।
আসাদকে তার এক বন্ধু বলেছিল যে জাহেদ ভাই কিন্তু সুবিধার না। কিন্তু আসাদ কানে নেয়নি। যে মানুষটা অন্যদেরকে নামাজের তাগিদ দেয় সে কি খারাপ হতে পারে? আসাদের চোখে জাহেদ এক প্রকারের আদর্শ স্বরূপ। তার কাছে জাহেদের চালচলন, কথাবার্তা মনোমুগ্ধকর। কারও সাথে বাজে আচরণ করে না। এমন মানুষকে আদর্শ মানাই যায়। আসাদ তার ফ্রি সময়টা জাহেদের সাথে ঘুরে কাটায়। অনেক হাদীস কোরআন শিখে। ধীরে ধীরে জাহেদের সাথে আসাদও নানারকম ইসলাম কাজকর্ম করতে লাগল। যেমনঃ ইসলামের তাগিদ দেয়া, সবাইকে নামাজ গুরুত্ব বুঝানো, আখিরাত বুঝানো ইত্যাদি। একদিন আসাদকে ইসলামিক আলোচনা সভার কথা বলে জাহেদ একটা জায়গায় নিয়ে এলো। সেখানে আরও অনেকেই ছিল। সবাই এক সাথে বসে ছিল। যারা বসে ছিল তারা সবাই আসাদের মত যুবক। আর সামনে ছিল হুজুর টাইপের কিছু লোক। জাহেদ বলল, উনিই আমাদের বড় হুজুর, আমার সব শিক্ষা উনার থেকেই পাওয়া। আসাদের চোখে জাহেদ আদর্শ। আর জাহেদের আদর্শ এই হুজুর। তারমানে এই হুজুর তো আরও মহান ও জ্ঞানী। আসাদ মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনতে লাগল। হুজুরের ভাষণের মূল বিষয় হল ইসলাম ও আখিরাত। আসাদ মন দিয়ে শুনলো। আখিরাত সম্পর্কে আসাদের জ্ঞান আরও বাড়লো। মনের মধ্যে আল্লাহর ভয়ভীতি আরও বাড়লো। এখন সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা শুরু করলো। বিশেষ কারণ ছাড়া সে জামাত মিস দেয় না। ছেলের এমন পরিবর্তন দেখে তার বাবা মাও খুশি। নিয়মিত মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ায় এলাকার মুরব্বীরা আসাদকে খুব দেখতে পান। বেশ ভালোই কাটছে আসাদের দিনকাল।
দুচার বার পূর্বের মত মিটিংয়ে বড় হুজুরের বক্তব্য শুনেছে। বড় হুজুর একেকবার একেকটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আসাদও নতুন নতুন হাদীস কোরআন জানতে লাগল। ইসলাম নিয়ে আসাদের মনে আগ্রহ দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। নানারকম ইসলামিক বই পড়তে লাগল। অধিকাংশ জাহেদই সংগ্রহ করে দেয়। বড় হুজুরের কথা শুনার জন্য মুখিয়ে থাকে আসাদ। জাহেদকে বারবার বলে বড় হুজুরের আলোচনা সভা থাকলে যেন তাকে জানায়। একদিন জাহেদ বলল, "বড় হুজুর সৌদিআরব যাবেন। তাই কালকে একটা আলোচনা সভা রেখেছেন।" পরেরদিন আসাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তবুও আসাদ সেটা বাদ দিয়ে আলোচনা সভায় হাজির হল। সেখানে বড় হুজুর ইসলাম ও বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলো। উক্ত আলোচনায় বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিবরণ তুলে ধরলো এবং ইসলাম রক্ষার নানান হাদীস (বিভ্রান্তিমূলক) উল্লেখ দিল। কেঁদে কেঁদে হুজুর এসব বলল। আসাদ সহ উপস্থিত অনেকেই কেঁদে দিল। হুজুরের সাথে তারাও প্রতিজ্ঞা করলো যে ইসলাম রক্ষায় প্রয়োজনে তারা জীবন দিবে।
আসাদ পরিবর্তন হতে লাগল। কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে তার প্রতিবাদ করতে লাগল। একা না পারলে গ্রুপ ডাকে। শেষ সভায় হুজুর তাদেরকে একটা গ্রুপ তৈরি করে দিয়েছিল। ইসলাম রক্ষায় কাজ করবে শুধু। সেখানে কিছু বড় ভাইয়েরাও আছে। একদিন জাহেদ বলল, "বড় হুজুর সৌদিআরব থেকে কিছু নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। তাই ছোট হুজুর সবাইকে ডেকেছেন।" আসাদ ও তার সমবয়সী কিছু ছেলে এসে উপস্থিত হল। ছোট হুজুর জানাল, অমুক এলাকায় ইসলামবিরোধী কাজ হচ্ছে। তাদেরকে এটা প্রতিহত করতে হবে।
ছোট হুজুর তাদের হাতে কিছু আগ্নেয়াস্ত্রের তুলে দিল। তারপর নবীজিদের যুদ্ধের কিছু জীবনী শুনিয়ে বলল, "সৃষ্টির থেকে ইসলাম রক্ত দিয়ে জিহাদ করে এসেছে। এটাই ইসলাম রক্ষার উপায়।" আসাদ ও বাকিদের রক্তও গরম হয়ে উঠলো। পরেরদিন তারা উক্ত এলাকায় হাজির হল। কিন্তু আক্রমণ করার আগেই পুলিশ ধরে ফেলল। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ জাহেদ ও বাকিদের উপর নজরদারি করছিল। গ্রেফতার হওয়ার পর আসাদ যখন আদালতে উপস্থিত হয়ে জানলো যে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে জাহেদ ও বাকিদের উপর নজরদারি করছিল। কারণ জাহেদের কাজই এটা। ইয়াং জেনারেশানকে ভালোর পথ দেখিয়ে শেখ আবদুর রহমানের (জঙ্গি) সাথে দেখা করায়। তারপর নানারকম উত্তেজক কথা বলে ব্রেইন ওয়াশ করিয়ে ইসলাম রক্ষার নাম দিয়ে দেশে জঙ্গি হামলা করায়। সবকিছু শুনে আসাদ অনুতপ্ত হল।
"সমাপ্ত"
এমন ঘটনা শুধু দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে অহরহ ঘটছে। যে আপনাকে ভালো ভালো কথা বলে সে যে দুধে ধোয়া তুলসিপাতা, তা কিন্তু নয়। তার ভাল চেহারার আড়ালে বড় কিছু থাকতে পারে। যা আপাতত আপনার দৃষ্টির বাইরে। কিন্তু যখন সামনে আসবে তখন হয়তো আপনি তার বানানো জালে জড়িয়ে পড়েছেন। তাই আগেই সাবধান হোন। দেখতে শুনতে যতই ভাল হোকনা কেন তার প্রতিটি কথা ফিল্টারের মত যাচাইবাছাই করে নিন। ফিল্টার যেমন পানিকে কয়েক স্তরে ছেকে বিশুদ্ধ করে, তেমনি আপনিও প্রতিটি ব্যাপার বিবেক, মন, বাবা মা, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলোচনা করে ছেকে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
বর্তমানে কিছু লোক ইসলামকে অপব্যবহার করে তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে। এদের মূল টার্গেট তরুণ সমাজ। কারণ তরুণ সমাজের বুদ্ধির প্রয়োগ করে না। এরা অল্পতেই যেকোনো ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়। ভালোমন্দ বুঝার চেষ্টা করে না। বাছবিচার না করেই কাজ করে। এদের ব্রেইন ওয়াশ করা খুব সহজ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল তরুণ সমাজের সাথে ফ্যামিলি কন্টাক্ট কম থাকে। এই কন্টাক্ট হল আত্মিক কন্টাক্ট। প্রায় প্রতি ঘরেই দেখা যায় যে সন্তান একটু বড় হলেই বাবা মায়ের সাথে তাদের মনের দূরত্ব বাড়ে। ছোট বেলায় যেমন মনের প্রতিটি কথা বাবা মাকে জানায়, বড় হয়ে প্রতিটি কথা বাবা মায়ের কাছ থেকে লুকায়। ফলে সঠিক পথ দেখানোর আদর্শ মানুষ দুটো থেকে তারা সঠিজ পরামর্শ পায় না। তাই ব্রেইন ওয়াশারদের টার্গেটে তরুণ সমাজই থাকে।
আমার লেখাটা পড়ে যদি কেউ ভাবেন যে সব হুজুর বা যারা ইসলামিক কথা বলে তারা খারাপ। তাহলে আপনি ভুল বুঝলেন। ভালোমন্দ মিলিয়েই পৃথিবী। আমি শুধু সর্তক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্তক থাকাই উত্তম। যেকোনো কিছু আপনার বাবা, মা, ভাইবোন অথবা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন। তারপর পদক্ষেপ নিন। মনে রাখবেন, মা বাবাই আমাদের সঠিক পথপ্রদর্শক।
©somewhere in net ltd.