![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"নেই তবুও আছে"
মোঃ জোবায়ের বাপ্পী
………
আসাদ বসে আছে দোকানে। কাস্টমারের আনাগোনা নেই। ইদানিং ব্যবসা থমথমে চলছে। তারওপর আজ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে পরিবেশে যেমন শীতলতা বিরাজ করছে, তেমনই করছে ব্যবসায়ে। হঠাৎ করে কিছু পরিচিত মানুষ এলো। এরা ব্যবসায়িক কারণে আসেনি, এসেছে আত্মীক কারণে। দীর্ঘ বছর আগের পরিচিত। তবে আসাদের নয়, তার মায়ের। তার মাকে এরা মামি বলে ডাকতো। সেই অনুযায়ী এরা তার ভাই-ভাবি। দেখা করতে এসেছে আসাদের তথাকথিত ভাই, ভাবি ও তাদের ছোট ছেলে। বর্তমানে এদের সাথে আসাদের যোগাযোগ হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্কের এক কোণায় তাদের চেহারা ও স্মৃতির দাফন হয়ে আছে। নাম প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু এরা তাকে ঠিকই মনে রেখেছে। তাইতো দেখা করতে চলে এসেছে। এখন এরা অনেক দূর শহরে থাকে। ঘন্টা পাঁচেকের পথ। হঠাৎ তাদেরকে দেখে আসাদের নিউরনে অনেক স্মৃতি চলাচল করতে লাগলো। পুরানো অনেক কিছুই ফ্ল্যাশব্যাকের মত মনে পড়ে গেল। আসাদের মায়ের সাথে তাদের বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তথাকথিত ভাবি প্রায়শই তার বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প গুজব করে সময় কাটাতো। রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও এক আত্মিক সম্পর্ক ছিল তার মায়ের সাথে।
আসাদ তার ভাই ভাবিকে দেখে চমকে উঠে বলল, "আরে ভাইয়া ভাবি আপনারা?" বেশ আক্ষেপ নিয়ে তার ভাই বলল, "তুমি তো ভুলে গেছ। কিন্তু আমরা ভুলি নাই। তাই সুযোগ পেয়ে এক নজর দেখা করতে এলাম।" আসাদ বেশ লজ্জা পেল। কথা তো সত্যই। আসাদ তাদেরকে ভুলেই গেছে। আসাদ বলল, "কি যে বলেন ভাইয়া! আসলে সময় সুযোগ পাই না। তাই যাওয়া আসা হয় না। তা কেমন আছেন? ভাবি বলে উঠলো, "দুটা মিনিট ফোন দিয়েও কথা বলা যায়, নাকি?" আসাদ আবারও লজ্জায় পড়লো। এর জবাব তার কাছে নেই। তাই কথা এড়িয়ে বলল, "তা আজ কিন্তু আমার বাসায় থাকবেন।"
- নারে ভাই। আজই চলে যাব। এনআইডি কার্ড নিতে এসেছি। বাড়িতে অনেক কাজ ফেলে এসেছি।
- আচ্ছা বসেন। নাস্তা পানি তো করর যান।
আসাদ তার কর্মচারীকে ডেকে নাস্তা পানি আনালো। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলতে লাগল। এক পর্যায়ে আসাদ লক্ষ্য করলো তার ভাবির চোখে পানি ছলছল করছে। কারণটা আসাদের জানা আছে। মুহূর্তেই আসাদের গলাটা ভারি হয়ে উঠলো। নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল, "থাক ভাবি কাঁদিয়েন না। যে দুনিয়ায় আসবে তার মৃত্যও হবে। মৃত্যুই সত্য।" ভাবির চোখে জল কারণ আজ আসাদের মা জীবিত নেই। যার কারণেই এই সম্পর্ক সেই মানুষটাই আজ জীবিত নেই। আসাদের মা বাবা দুজনই গ্রামের। আসাদের জন্ম গ্রামে হলেও তার জীবন অতিবাহিত হয়েছে শহরে। শহরে এলেও আসাদের মায়ের মনটা গ্রাম্য মেয়েদেরর মতোই ছিল। শহরে তো পাশের বাসার লোকটার খবরও রাখা হয় না কিন্তু আসাদের মা যেখানেই থাকতো সবার খবর নিতো। প্রতিদিন সকালে আসাদের বাবা কাজে যাওয়ার পর অবসর সময়ে আসাদের মা এই ঘরে ওই ঘরে যেয়ে গল্প গুজব করতো। এভাবে সবার সাথে আসাদের মায়ের একটা সুসম্পর্ক হত। যারই একদল হল এই ভাইয়া-ভাবি।
প্রায় নয় বছর আগে আসদের ছোট ভাইয়ের জন্মের পনেরো দিনের মাথায় আসাদের মা মারা যায়। তারপর সবকিছু হারিয়ে যায়। পুরানো লোকজনের সাথে আগেরমত আর যোগাযোগ হয় না। জীবনের গতিও পরিবর্তন হয়ে যায় তাদের। আসাদের বাবা নতুন বিয়ে করে। যেটা প্রয়োজন ছিল। সংসার ও ছোট ছেলের জন্য তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। আসাদ তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আসাদের বাবা বেশ কঠোর মানুষ। বিয়ের পরেরদিনই স্ত্রীকে বলে দিয়েছে, "কাবিনের টাকা কিন্তু সবসময় আমার পকেটে থাকে। অতএব সংসারে যেন সবসময় শান্তি থাকে।" ঠিকই, আসাদের পরিবার অন্যান্য সত মায়ের মত অত্যাচারিত পরিবারে পরিণত হয়নি। সংসারে সুখ শান্তিই আছে। আর আসাদের কাছে মা তো মা-ই। আসাদের আপন মা আজ দুনিয়ায় না থাকলেও মানুষের অন্তরে জীবিত আছে। যার একটা উদাহরণ হিসেবে তার তথাকথিত ভাই-ভাবি আজ তার সামনে বসে আছে। মাঝেমধ্যে রাস্তাঘাটে আসাদের সাথে নানান পূর্ব পরিচিত লোকের দেখা সাক্ষাৎ হয়। তাদের মুখে আসাদ একটাই কথা শুনে, "তোমার মা অনেক ভালো মানুষ ছিল। নামাজ পড়ে মায়ের জন্য দোয়া করিও।" দুনিয়ায় এসে সবাই নিজের জন্মকে স্বার্থক করতে পারে না। তবে আসাদের মতে তার মায়ের জন্ম স্বার্থক হয়েছে। যে মানুষটা মরেও মানুষের মনে বেঁচে থাকে তার জন্ম স্বার্থক নয়তো কি?
কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আসাদের ভাই-ভাবি প্রস্থান করলো। আসাদ তাদের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর তারা অন্যদিকে চলে গেল। এখন আর তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। শুধু দেখা যাচ্ছে বাইরের বৃষ্টি। আকাশটা কাঁদছে। হয়তো আজ তার মন খারাপ। তবে আসাদের মনটা বেশ ভালো। কারণ আজ তার ভাই-ভাবি দেখা করে গেছে। যার অর্থ তার মা আজও এদের মধ্যে জীবিত আছে। তার মা নেই তবুও আছে। মানুষের মনে। এটাই আকাশের জন্য অনেক বড় একটা শান্তির বিষয়। আসাদ মনে মনে বলল, "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা।"
মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মে ও ব্যবহারে।
©somewhere in net ltd.