নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ রোড এক্সিডেন্ট

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩৩

"রোড এক্সিডেন্ট"
মোঃ জোবায়ের বাপ্পী।
………
নেশা করে ট্রাক চালাচ্ছে ড্রাইভার আসাদ। নেশা না করলে তার চলেই না। তার কাছে নেশা করে গাড়ি চালানোর মজাই নাকি অন্যরকম। এটা তার নিত্যদিনের স্বভাব। খালি রাস্তা পেয়ে হাইস্পিডে চালিয়ে যাচ্ছে সে। সূর্য ডুবু ডুবু ভাব। আকাশের গায়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়ছে। হেল্পার মাঝেমাঝে ওই সাইডে সাইডে বলে চিল্লাচ্ছে। রাস্তা ফাঁকা হলেও এটা হেল্পারের স্বভাব। হঠাৎ এক দূর্ঘটনা ঘটে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুটা শরীর গাড়ির চাকার নিচে পিষে গেল। তবে আসাদ গাড়ি থামায়নি। এমন ঘটনার সাথে সে পরিচিত। আগেও এমন ঘটনা তার সাথে ঘটেছে। আসাদ চালিয়েই চলে গেল। তবে হেল্পার ঘাবড়ে গেছে। তা দেখে আসাদ বলল, "এসব কিছু না। রাস্তায় গাড়ি চালালে মাঝেমাঝে এমন হয়। খবরদার! এই ব্যাপারে কাউকে যদি কিছু বলো তবে কিন্তু দুজনই ফেঁসে যাব।"

শোকের কান্না চলছে রূপনগর বস্তিতে। সবাই বলাবলি করছে, "আহারে কি অল্পবয়সে মারা গেল পোলা দুটা! ইস! সেদিনও মাঠে খেলছিল আর আজ নেই।" মাহতাব ও জয়নালের ছেলে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। সেই শোকে পুরো বস্তিবাসী শোকাহত। দুই বন্ধু রাস্তা পারাপার করার সময় ট্রাক এসে মেরে দিয়েছে। ঘুরতে গিয়েছিল তারা। কিন্তু ফিরেছে লাশ হয়ে। দুই মায়ের কোল খালি করে দিয়েছে এক ট্রাকওয়ালা। জয়নালের ছেলের দাফন হয়ে গেছে। কিন্তু মাহতাবের ছেলের দাফন হয়নি। স্ত্রী জরিনা আটকে রেখেছে। "ওর মামা আসুক। কতইনা ভালোবাসতো ভাগনেটাকে। শেষ দেখাটা তো দেখুক।" এই বলে বলে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে।
পাগলের মত দৌঁড়ে আসছে জরিনার ভাই। একমাত্র ভাগনের মৃত্যুর খবর শুনেই সব ফেলে পাগলের মত রূপনগর বস্তির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে। মুখ দিয়ে শুধু হায় আমার মামাটা আর নেই! হায় আমার মামাটা আর নেই! এই বলে বলে ছুটছে রাস্তায়। একমাত্র বোনের একমাত্র ছেলে তাই ভালোবাসাটা একটু বেশিই। ভাগনের সব আবদার পূরণের চেষ্টা করে সে। রূপনগরে এসে ভাগনের লাশের ওপর পড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো সে। "আমারে ছেড়ে কোথায় গেলিরে? এখন আমি কাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরাবো? কার জন্য ঘুড়ি নাটাই আনবো? কে আমার কাছে বায়না করবে? আমি কার সাথে খেলবো?" এসব বলে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে মামা। ভাইয়ের কান্না দেখে একমাত্র ছেলে হারানোর শোক যেন আরও বেড়ে গেল জরিনার। সেও ভাইয়ের সাথে কান্নায় জুড়ে গেল। ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে, "থাক ভাই কাঁদিসনে। তুইও যদি কাঁদিস তবে আমারে কে সামলাবে?" কান্নাকাটির মাঝে হুজুর এসে বলল, "এক্সিডেন্টের লাশ বেশিক্ষণ রাখতে নেই। তাড়াতাড়ি দাফন দেয়া উচিত।"

লাশ কাঁধে নিয়ে কালেমা পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে এগোচ্ছে সবাই। তাদের মধ্যে জরিনার ভাইও আছে। কিন্তু সে যেন নুইয়ে পড়ছে বারবার। তাকে সাপোর্ট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার বোন জামাই। সবাই ভাবছে ভাগনে হারানোর শোকে হাঁটার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সত্য অন্যকিছু। সে যখন জানতে পারলো তার ভাগনে ও বন্ধু ট্রাক এক্সিডেন্ট মারা গেছে, তখন সব ডিটেইলস নিলো। কোথায় এবং কখন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জানার পর শিউর হলো যে এই এক্সিডেন্ট তো তার ট্রাকেই হয়েছে। জরিনার ভাই হলো সেই ট্রাক ড্রাইভার আসাদ। সে নিজেই তার ভাগনেকে মেরে ফেলেছে। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করেছে নিজের ভাগনেকে। নিজের বোনের কোল খালি সে নিজেই করেছে। ভাগনের কবরে মাটি পর্যন্ত আসাদ দিতে পারেনি। আসাদের বোন জামাই আসাদের হাতে মাটি তুলে কবরে দিয়েছে।
ভাগনের অকালমৃত্যুর পিছনে আসাদ নিজেই দায়ী। এই পীড়া আসাদ মেনে নিতে পারেনি। এমন দুর্ঘটনা তার জীবনে আরও কয়েকটা হয়েছে। তাদের পরিবারের কি দশা হয়েছিল? দিনরাত ভাগনে ও বোনের সংসারে নিয়ে চিন্তা করতে করতে একটা সময় স্ট্রোক করে মারা যায় আসাদ।
সবাই ভাবে ভাগনের শোকে আসাদ মারা গেছে। আসল সত্যটা আসাদের সাথে দাফন হয়ে গেছে।

ড্রাইভারদের উদ্দেশ্যে বলছি, পৃথিবী গোল। রাস্তায় যারা হাঁটছে তাদের মধ্যে আপনাদের আপনজনও থাকতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে গাড়ি চালান। আপনিও একটা আসাদ হয়ে যেতে পারেন। তখন কয়েকটা জীবন নষ্ট হবে। তারচেয়ে আগেই সাবধান হউন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.