নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ আশা পূর্ণ।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:০৫

"আশা পূর্ণ"
মোঃ জোবায়ের বাপ্পী
………
আসাদ তৈরি হচ্ছে। একটু বাইরে যাবে। নতুন বউ ঘরে। অথচ ফ্রিজে একটা ফলফ্রুট পর্যন্ত নেই। কিছু বাজার করা প্রয়োজন। আসাদকে তৈরি হতে দেখে তার স্ত্রী নূরী বলল, "কোথাও বের হবেন?" নূরীর দিকে তাকিয়ে একচিলতে হাসি দিয়ে মাথাটা উপর নিচ দুলালো। এবার নূরী বলল, "কোথায় যাচ্ছেন জানতে পারি কী?" আসাদ কিছুক্ষণ নূরীর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর তার কাছে এসে তাকে টেবিলের উপর বসিয়ে বলল, "তুমি আমার সহধর্মিণী। তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে জানার। আমি কখন কী করি, কোথায় যাই, কাদের সাথে চলি এসবই তোমার জানার অধিকার কাছে। আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা একসাথে পথ চলতে নেমেছি। একে অপরকে ভয় পেলে চলবে না। একে অপরকে সাহস দিতে হবে।" আসাদের কথা টেনে নিয়ে নূরী বলতে শুরু করল, "একে অপরকে বুঝতে হবে, জানতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। সারারাত আপনার এই কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার এখন মুখস্থ হয়ে গেছে।" আসাদ একটু হেসে উঠলো। আসলে গতরাতে নূরীর মধ্যে অনেক জড়তা লক্ষ্য করেছিল আসাদ। নূরীর জড়তা কাটানোর জন্য কথাগুলো বলেছিল আসাদ। কতবার বলেছিল তা আসাদের মনে নেই। অনেকবারই বলেছিল নয়তো নূরীর মুখস্থ হয়ে যেত না। আসাদ বলল, "সব ঠিক আছে। তবে একটা লাইন বাদ পড়েছে।" ভ্রু কুচকে আসাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবোধক চেহারায় নূরী জিজ্ঞেস করলো, "কী সেটা?" একটু ভাব নিয়ে আসাদ বলল, "আমাকে আপনি নয়, তুমি করে বলবে।" নূরী হেসে উঠে। মানুষটা পারেও বটে। নূরীর ভুবন ভোলা সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে আসাদ। তা দেখে কিছুটা লজ্জা পায় নূরী। কাশি দিয়ে বলল, "কোথায় যাচ্ছো সেটা কিন্তু এখনো বললে না। কথা এড়ানোর পদ্ধতি দেখি খুব ভালোই পারো।"
- ঘরে কিছু নেই। তাই কিছু বাজার করে আনবো।
- রান্নাবান্না কে করবে শুনি?
আসাদ একটু বিস্মিত হল। মনে মনে ভাবলো এই মেয়ে রান্নাবান্না পারে তো নাকি তাকে নিজেই রান্না করতে হবে? একটা ঢোক গিলে আসাদ বলল, "তুমি পারবে রাঁধতে?" কিছু রাগ নিয়ে নূরী বলল, "কেন, তুমি আমার বায়োডাটা দেখনি?"
- ধুর ওসব দেখে কি বিয়ে হয়? ওসব দেখে জব হয়।
- শুনেছি এর আগে নাকি ১০/১২টা মেয়ের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলে। তাহলে কি দেখে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে?
- ছবি।
- তারমানে এই ফর্সা চামড়া দেখে বিয়ে করেছে?
- হ্যাঁ। সেটাই বলতে পার।
আসাদের কথা শুনে নূরী রাগ করে গাল ফুলিয়ে রইলো। তা দেখে আসাদ মনে মনে হাসি দিল। তারপর নূরীর গাল দুটো ধরে টান দিয়ে বলল, "একটা গল্প শুনবে?"
- আমার গল্প শুনার মুড নেই।
- আহা শুনোই না। বেশি সময় লাগবে না।

আসাদ বলতে শুরু করলো। গাল ফুলিয়ে বসে থাকলেও নূরী বেশ মনোযোগ সহকারেই শুনে যাচ্ছে।
"রাস্তায় একটা পাগলী মেয়ে ছেঁড়া কাপড়ে শুয়ে আছে। আশেপাশে অনেক পথচারীই হেঁটে যাচ্ছে। এসব দৃশ্য আমাদের সমাজের চোখ থেকে এড়ায় না। কিছু পথচারী আহা, ইস করে চলে যাচ্ছে। আর কিছু মানুষরূপী বন্য শুকর সেই পাগলী মেয়েটার দিকেও কু-নজরে তাকাচ্ছে। ভার্সিটি শেষ করে বান্ধবীদের সাথে সেই পথেই হেঁটে যাচ্ছে এই গল্পের নায়িকা। পাগলী মেয়েটার দৃশ্য তার চোখে পড়লো। সাথেসাথে সে বান্ধবীদের থেকে টাকা তুললো। পথচারী লোকদের থেকেও টাকা তুললো। কেউ দিলো আর কেউ দিলো না। টাকা তুলে একটা ড্রেস ও কিছু খাবার কিনে সেই পাগলী মেয়েটাকে দিয়ে চলে গেল নায়িকা।"
নূরী অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে আসাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। কেননা এটা তারই ঘটনা। আসাদের সাথে নূরীর বিয়েটার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। আর ঘটনাটা বিয়ে হওয়ার মাসখানেক আগের ঘটনা। তাহলে এটা আসাদ জানলো কিভাবে? তবে কি আসাদ তাকে পূর্বে থেকেই চিনে? নূরী তার প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আসাদকে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি জানলে কিভাবে?"
- আমি সেই পথচারীদের একজন ছিলাম। সেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম। তবে তোমার চেহারা নয়, অন্তরটা দেখেছিলাম। তোমার চেহারায় ছিল আমার ক্রাশ।
ক্রাশ শব্দটা শুনে নূরী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, "ক্রাশ মানে? কে তোমার ক্রাশ? মিনা, তিশা নাকি তুরনি? বল, কে?" নূরীর জেলাসী ভাব দেখে আসাদ হো হো করে হাসি দিয়ে বলল, "বাহ দারুণ জেলাসী বউ তো আমার।"
- একদম কথা এড়ানোর চেষ্টা করবা না। সরাসরি উত্তর দাও। কে তোমার ক্রাশ?
- আমার ক্রাশ ছিল তোমার বোরকার আবরণ। আধুনিক মেয়েরা বোরকার নাম শুনলেও নাক ছিটকায়। আর বোরকা পরলেও শালীনতা থাকে না। কিন্তু তুমি একদম পারফেক্ট ছিলে। যেমনটা আমি একটা মেয়েকে স্ত্রী স্বরূপ চাইতাম। সেদিন তোমাকে ফলো করে বাসা চিনে নেই। তারপর বাবা মাকে বলি। ফলে আজ আল্লাহর হুকুম ও বাবা মায়ের দোয়ায় তুমি আমার সামনে আমার সহধর্মিণী রূপে।

সবকিছু শুনে নূরী মুগ্ধ হয়ে গেলো। মনের মধ্যে কেমন যেন শান্তির বাতাস বইছে। আসাদ যে খুব ভালো মনের মানুষ তা নূরী গতরাতেই বুঝেছে। বাসরঘরে ঢুকে আসাদের প্রথম বাক্য ছিল, "দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে নতুন জীবনের সূচনা করতে চাচ্ছি।" তখনই নূরী মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলেছিল। কেননা নূরীর মনের মধ্যেও এই জিনিসটা ছিল। বাবার পছন্দেই বিয়েটা করেছে সে। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা লোককে স্বামী মেনে নিলেও লোকটা কেমন তা নিয়ে নূরীর মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কিন্তু আসাদের প্রথম বাক্য সব প্রশ্নের অবসান করিয়ে নূরীর মনে অনাবিল সুখ এনে দিল।
- আহা দেরি হয়ে গেল। তোমার সাথে কথা বলতে বসে কখন যে টাইম চলে গেল বুঝলামই না। আমি যাই। পরে আবার তাজা তরকারি পাবো না। তখন আবার তুমি চিল্লাচিল্লি করে বলবে বাজার পারে না তো বিয়ে করেছে কেন?
নূরী হেসে উঠলো। মানুষটা খুব রসিকও। নূরী বলল, "দাঁড়াও। আমি বাজার লিস্ট দিচ্ছি। নয়তো উল্টাপাল্টা কী নিয়ে আসবে কে জানে? তা সাপ্তাহিক বাজার করবে নাকি মাসিক?
- সাপ্তাহিক।
- আগে বল, তোমার বেতন কত?
- কেন?
- বারে, আমাদেরকে বাজেটের মধ্যে চলতে হবে না?
আসাদের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। নূরীর মত একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আজকালকার মেয়েরা বাজেট, সংসার, ফিউচার নিয়ে খুব কমই চিন্তা করে। নিজের জিনিসপত্র ভালো হলেই হলো। নূরীর মত মেয়ে আজকাল বিরল।

আসাদের কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে নূরী ঘাবড়ে গিয়ে বলল, "কাঁদছ কেন? আমি কি তোমার মনোভাবে আঘাত করেছি? যদি করে থাকি তবে ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারিনি।" ফিক করে হেসে আসাদ বলল, "আরে ধুর কি যে বল। আচ্ছা এভাবে সবসময় আমার সংসারটাকে আগলে রাখবে তো?" মুখ বাকা করে একটা ভেংচি মেরে নূরী বলল, "এটা আমার সংসার নয় বুঝি? আর শুনো, ফিউচার নিয়ে তুমিও চিন্তাভাবনা শুরু করে দাও। যত পারবে জমাও।" দুষ্টু হাসি দিয়ে আসাদ বলল, "কেন গো? এত জমাবো কার জন্য? কে আসবে?" নূরী লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আসাদের সামনে থেকে উঠে চলে গেল। আসাদ হাসি দিল। কিছুক্ষণ পর নূরী একটা লিস্ট এনে আসাদের হাতে দিয়ে বলল, "এই নাও। এখন যাও।" আসাদ হাসিমুখে বেরিয়ে গেল।
স্ত্রীকে নিয়ে আসাদের মনে যে ইচ্ছে এবং আশা ছিল তা পূর্ণ হয়েছে। ওদিকে স্বামীকে নিয়ে নূরীরও যে আশা এবং ইচ্ছে ছিল তা পূর্ণ হয়েছে। দুজনেরই মনের আশা পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা একে অপরের হাত ধরে জীবন পাড়ি দেয়ার চিন্তায় মগ্ন।
একটা সংসার সাজাতে ও গুছিয়ে রাখতে দুজনের মধ্যেই আন্তরিকতা দরকার। দুজনকেই আয় অনুযায়ী চলতে হবে। এতে সংসার সুখে শান্তিতে ভরে উঠে।
— — — — — × × × × × — — — — —

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.