নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সজীবতা - ছোট ভ্রমণ কাহিনী।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০

"সজীবতা"
মোঃ জোবায়ের বাপ্পী
………
ঘটনাটি দুই মাস আগের, ২১শে ফেব্রুয়ারির। আকাশ তখন সন্ধ্যার সংকেত দেয়া শুরু করেছে। আমি আমার তিন বন্ধুর সাথে বেরিয়েছি ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এরা হলো আশিক, ইমন ও শরীফ। আমাদের মধ্যে তখনও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া চলছে কোথায় যাওয়া যায়। আমরা এমনই। প্ল্যান হুট করেই হয়। আমাদের একজন বলছে কাছে তো আরেকজন বলছে দূরে। অনেক তর্কবিতর্কের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো দূরেই যাব। অতঃপর আমি, ইমন ও আশিক মিলে বাসে করে নেভালের (চট্টগ্রাম) উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। শরীফের বাইক ছিল তাই সে আলাদা চলে গিয়েছে। নতুন রাইডার হওয়ায় আমাদের মধ্যে কেউই ওর সাথে যেতে সাহস করেনি।
বাস সোজা সী বিচে যায়। আর নেভাল হলো সী বিচের কিছুটা পরে। বাকি রাস্তা অটো করে যেতে হয়। আমরা বাসে করে সী বিচ নামলাম। সন্ধ্যা তখন তার আসল রূপে চলে এসেছে। চারদিকে গাড়ির টিমটিম আবছা আলো ও শব্দের শোরগোল ব্যতীত আর কিছুই নেই। সরকারি বন্ধ হওয়ায় মানুষের ঢলও নেমেছে। কেউ ফিরে যাচ্ছে তো কেউ আমাদের মতো মাত্র আসছে। আসলে এই স্থানটা অন্ধকারেই যেন আরও বেশি সুন্দর ও উপভোগ্য হয়ে উঠে। একে আঁধারের রূপসী বলা চলে। অনেকদিন পর আসার কারণে অন্ধকারে কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। তাছাড়া সী বিচ আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এক সিএনজিওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে পথ বুঝে নিলাম। এখান থেকে বাকি পথ অটোতে যেতে হবে। অটোর দুই সিটে তিনজন করে মোট ছয়জন বসা যায়। আর সামনের সিটে ড্রাইভার সহ তিনজন। আমরা তিন বন্ধু এক পাশে বসলাম। আমাদের সামনের সিটে এক সিনিয়র সিটিজেনশিপ দম্পতি ও এক আন্টি বসে আছেন। ঘটনাটির কেন্দ্রবিন্দু এই সিনিয়র সিটিজেনশিপ দম্পতি। যথারীতি আমরা তিনজন কথা বলে যাচ্ছি। নানান বিষয়ে তর্কবিতর্ক করছি। হঠাৎ আংকেলটা আমাদের মাঝে কথা বলে উঠলেন। শুরু হল পরিচয় পর্বের কথাবার্তা। কিসে পড়ি, কিভাবে বন্ধুত্ব, কোথায় থাকি ব্লা ব্লা এসব। তো কথাবার্তায় জানতে পারলাম উনারা আমার পাশের এলাকাতেই থাকেন। আমরা তিন বন্ধুও কাছাকাছি এলাকায় থাকি। উনাদের থাকার স্থানটার নাম শুনে আশিক বলে উঠলো, "ওখানে তো আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি।" তারপর একজনের নাম উল্লেখ করে আরও বলল যে অমুক ভাইকে চিনেন? জবাবে আংকেল বললেন, "হ্যাঁ, সে তো আমার ভাতিজা।" কি অদ্ভুত, পাশাপাশি এলাকায় থাকি অথচ আমরা অপরিচিত! যদিও শহরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক। এখানে তো পাশের বাসার লোকটার খবরও রাখা হয় না। সেখানে পাশের এলাকার লোককে চেনা তো আরও দূরের কথা।

আমাদের এলাকা থেকে সী বিচ প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। আমরা তো ঘুরতে এসেছি কিন্তু উনারা কেন এসেছেন? নিশ্চয়ই কোনো আত্মীয়ের বাসায় ঘুরতে এসেছেন। আমি বললাম, “এখানে কোনো আত্মীয়ের বাসায় ঘুরতে এসেছেন?” লোকটার জবাব শুনে আমি বেশ, বেশ নয় ভীষণ অবাক হয়েছি।
“আমরা ঘুরতে এসেছি। সুযোগ পেলে মাঝেমাঝে আমরা ঘুরতে বের হই।”
আমি অবাক হয়ে গেলাম। ষাটোর্দ্ধ দুজন মানুষের মন আমাদের মনের চেয়েও অধিক সজীব। সপ্তাহের ক্লান্তিট দূর করতে আমরা অনেকেই বন্ধের দিনটা ঘুমিয়ে কাটাই। অথচ উনারা সুযোগ পেলেই ঘুরাঘুরি করেন। তাঁরা বয়সের কাছে নয়, বয়স তাঁদের কাছে হার মেনেছে। তাঁদের মনের সজীবতা বয়সের চাপে ধামাচাপা পড়েনি। বয়সের ভারে তাঁদের সজীবতা নুইয়ে পড়েনি। বিয়ের এতগুলো বছর পরেও তাদের মনের ভালোবাসা ও একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা একটুও কমেনি। অথচ বর্তমানে সদ্য বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যেও এমন ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দেখা যায় না। বিয়ের প্রথম কিছুদিন ভালো কাটলেও কিছুদিন পর তাদের মধ্যে একঘেয়েমি ভাব ফুটে উঠে। অথচ এই সিনিয়র দম্পতির মধ্যে একঘেয়েমির কোনো ভাবই দেখিনি। দুজনই আমাদের সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলেছিল। তরুণ আমরা অথচ তারুণ্য তাঁদের মাঝে দেখেছি।
আসলে মনের মধ্যে সজীবতা থাকলে সবই সম্ভব। আমাদের মতো অলস যুবসমাজের জন্য উনারা একটা উত্‍কৃষ্ট উদাহরণ। পরিস্থিতি যাইহোক না কেন মনের মধ্যে সাহস ও ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।
— — — — — × × × × × — — — — —

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.