![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"গল্পঃ ভালোবাসার জন্য"
"মোঃ জোবায়ের বাপ্পী"
………
স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি জীবনে প্রেম করেনি আসাদ। করেনি বললে অবশ্য ভুল হবে। করতে পারেনি। যার একমাত্র কারণ ছিল তার চেহারার রং। এই চেহারাকে শ্যামলা নয় সবাই কালো বলে। শ্যামলাদের মাঝেও একটা আকর্ষণ থাকে। কিন্তু কালোর মাঝে থাকে শুধু হাসি-তামাশা। আসাদ মেধায় ভালো ছিল। সেই সুবাদে বেশ কিছু বন্ধবান্ধব ছিল। তাদের মধ্যে একটা মেয়েও ছিল। প্রায় বছরখানেক ধরে পরিচয়। আসাদ তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে আসাদ তার মনের কথা জানালে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে মেয়েটা না বলে দেয়। সেই সাথে এটাও মনে করিয়ে দেয় আসাদ তুমি কালো। মেয়েটার স্বপ্ন তার মনের মানুষ প্রিন্সের মতো হবে। সেই থেকে আসাদ এই পথে আর পা বাড়ায়নি। বাবা মা, বন্ধুবান্ধব ও পড়ালেখা এতেই নিমজ্জিত করে দেয় নিজেকে। আসাদ ভেবেই নিয়েছে তার জীবনে কখনোই প্রেম ভালোবাসা আসবে না। কিন্তু আজ তার জীবনে ভালোবাসা এসেছে। একদম হালাল ও পবিত্র ভালোবাসা। আজ আসাদের বিয়ে হয়েছে। মায়ের অনেক জ্বালাতনের পর আসাদ বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আসাদ বাসরঘরে ঢুকলো। মেয়ের নাম নূরী। একদম হুর পরী। নূরীর লম্বা ঘন কালো কেশ, কাজল কালো চোখ, গোলাপী ঠোঁট সবকিছুই আসাদকে মুগ্ধ করেছে। আসাদ কল্পনাও করেনি এমন একটা হুর পরী তার কপালে জুটবে। এক পা দুই পা করে আসাদ এগিয়ে এলো নূরীর দিকে। একি নূরী কাঁদছে কেন? ওহ হ্যাঁ, এটা স্বাভাবিক। বাবা মায়ের ভালোবাসা ছেড়ে আসাটা খুবই কষ্টকর। যদি নিয়মটা এমন হতো ছেলেদেরকে সব ছেড়ে মেয়েদের বাসায় থাকতে হবে তাহলে আজ এই কষ্টটা আসাদ অনুভব করত। এটা ভাবতেই আসাদের শরীরে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো। কেঁপে উঠলো সে।
নূরীর পাশে বসে আসাদ বলল,
- কেঁদো না। আগামীকালই তোমাকে তোমার বাবা মায়ের কাছে নিয়ে যাব।
নূরীর কান্না থামছে না। আরও বাড়ছে। আসাদের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। আসাদ আরেকটু এগিয়ে এলো। নূরীর হাতে হাত রাখতেই নূরী হাত সরিয়ে নিয়ে চাপা কানার স্বরে বলল,
- একদম ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। জোর করতে পারবেন কিন্তু এতে ঘৃণা ব্যতীত কিছুই পাবেন না।
আসাদের সমস্ত দুনিয়াটা ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেল। এমনটা আসাদ আশা করেনি। কেইবা তার স্ত্রী থেকে এমন কথা আশা করবে? তবে কি নূরী কাউকে ভালোবাসে? আসাদ নিজেকে শান্ত করে বলল,
- কাউকে ভালোবাসো?
- ওসব জেনে আপনার কি? আমার জীবন তো শেষ হয়ে গেছে।
- যদি কেউ থেকে থাকে তবে আমি নিজ হাতে তোমাদেরকে মিলিয়ে দিব।
আসাদ যেন নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারল না। নূরীকে অন্যকারো হাতে সে তুলে দিতে পারবে না। বেঁচে থাকতে এটা তার পক্ষে সম্ভব না। তবে এই কথা কেন বলল তা সে নিজেই জানে না। অশ্রুসিক্ত জল নিয়ে নূরী বলল,
- আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
আসাদ উঠে গিয়ে তার টেবিলে বসল। রুমের একটি কোণায় জানালার পাশে তা টেবিল। একটা সময় এখানে বসে আসাদ পড়ালেখা করত। এখন ল্যাপটপ নিয়ে অফিশিয়াল কাজ করে। আর আজ তার বাসররাত এখানেই কাটবে।
ভার্সিটির টপার ছিল নূরী। প্রেম ভালোবাসা বলতে শুধু বই। ছেলেদেরকে পাত্তাই দিত না। কতশত প্রেম পত্র পেয়েছে তার হিসাব নেই। প্রতিটাই প্রত্যাখ্যান করেছে। একটাই লক্ষ্য ছিল উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। তারপর প্রিন্সের মতো কাউকে বিয়ে করা। পড়ালেখার ব্যাপারে বাবাও কখনো বাধা দেয়নি। মা হাজারবার বিয়ের কথা বললেও বাবা বলেনি। কিন্তু মাস্টার্স শেষ করার পরেই আসাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। আসাদকে দেখে নূরীর একটুও পছন্দ হয়নি। কালো চেহারা, হাসিটাও কেমন যেন বিদঘুটে। দেখলেই গা জ্বলে উঠে। ভার্সিটিতে থাকতে কত স্মার্ট ছেলে তার পিছু ঘুরেছে হিসাব নেই। অথচ কপালে জুটল এমন কালো ছেলে! কিছু বলারও সুযোগ পায়নি নূরী। দেখার পর্বে আসাদের সাথে একটু কথা বলেই তার মা গলার চেইনটা খুলে পরিয়ে দিল। তখন নূরীর ইচ্ছে করছিল উঠে পালাবে। কিন্তু বাবার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে কিছুই করেনি। সবকিছু এত দ্রুত হয়ে গেল যে নূরী ভাবার সময়ও পায়নি।
হানিমুনে সেন্টমার্টিন এলো আসাদ-নূরী। আসাদের বাবাই পাঠিয়েছে তাদেরকে। ভ্রমণ নূরীর খুব পছন্দ। কিন্তু এই ভ্রমণ নূরীর কাছে একটুও ভালো লাগছে না। হোটেলের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নূরী। দু কাপ কফি এনে এক কাপ নূরীকে দিয়ে পাশে দাঁড়ালো আসাদ।
- দেখুন আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আমার গা ঘেষার চেষ্টা করবেন না।
- তা আপনার প্রেমিক কে?
- এটাই শেষবারের মতো বলছি আমার কোনো প্রেমিক নেই। এই নিয়ে পরবর্তীতে কোনো প্রশ্ন করবেন না।
- তাহলে আমাকে মেনে নিতে পারছেন না কেন?
- আয়নার সামনে নিজের এই চেহারা কখনো দেখেছেন? ভার্সিটিতে আমার পিছনে হাজারো স্মার্ট ছেলে ঘুরঘুর করত। কিন্তু আমার কপাল দেখুন ………
নূরী তাকিয়ে দেখল আসাদ নেই। নূরীর প্রথম বাক্য শুনেই আসাদ নীরবে চলে এসেছে। নূরীর কথায় অত্যন্ত ঘৃণা মিশ্রিত ছিল। তাড়াতাড়ি রুমে এসে কান্না শুরু করল। সবাই বলে পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু মনের তো কোনো লিঙ্গ হয় না। সে কষ্ট পেলে কাঁদবেই। আসাদও এখন কষ্ট পেয়েছে, তীব্র কষ্ট। নূরী তাকে মেনে নেয়নি কারণ সে কালো। কালো সাদা সবই তো আল্লাহর সৃষ্টি। এতে সে কি করবে? কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে সে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিল। এদিকে নূরীও এসে গেল।
- অন্য কোথাও যাবেন?
- শহরে ফিরে যাব।
- দেখুন, আমি চাই না আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার আমাদের পরিবারের লোকজন জানুক।
এক সপ্তাহ পর তারা শহরে ফিরল। আসাদ তার অফিসে জয়েন করল। সকালে অফিস, রাতে ঘুম আর কান্না। এভাবে চলতে লাগল তার জীবন। প্রতিরাতে নূরীর দিকে তাকিয়ে আসাদ খুব কাঁদে। পরীটাকে এত কাছে পেয়েও স্পর্শ করতে পারছে না। সে স্পর্শের মূল্য কি যেখানে ভালোবাসা নয় ঘৃণা থাকবে? তাই আসাদ জোর খাটায় না। নিখুঁত অভিনয় চলছে তাদের সংসার। সবার সামনে নূরী এমন ব্যবহার করে যা দেখে যেকেউই বলবে তাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা আছে। অথচ সত্যটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের মধ্যে ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই। আসাদ সবকিছু মেনে নিয়েছে। সে নূরীর মন জয় করার চেষ্টা করে না। নূরী যেমন দায়িত্ব পালন করে যায়, আসাদও তেমন দায়িত্ব পালন করে যায়। দুপ্রান্তে দুজনই কেঁদে কেঁদে রাত পার করছে। আসাদ কাঁদে ভালোবাসার অভাবে। নূরী কাঁদে তার স্বপ্ন ভাঙার দুঃখে।
নূরীর এক কাজিনের বিয়ের অনুষ্ঠানে আসাদকে সঙ্গে নিয়ে নূরী এলো। নূরী যে খালাতো বোনের দিকে কোনো ছেলে ফিরেও দেখতো না। আজ তারও একটা সুদর্শন স্বামী আছে। অথচ নূরীর কপালে এই কালো ভুত। তার সেই বোন সবার সাথে তার স্বামীর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। অথচ সে কাউকে এগিয়ে এসে বলতে পারছে না এই হলো আমার স্বামী। এতে তার কাজিনেরা হাসবে। কেননা নূরী সবসময়ই সবাইকে বলত তার স্বামী প্রিন্সের মতো হবে। মাথা ব্যথার নাম দিয়ে নূরী এক কোণায় বসে রইল। কিছুক্ষণ পর নূরীর কিছু বন্ধুবান্ধব এসে ঘিরে ধরল। দুলাভাই কই? না পারতে নূরী পরিচয় করিয়ে দিল। আড়চোখে নূরী দেখতে পারল তার কিছু বান্ধবী হাসছে। নূরী ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু পারিবারিক জালে বাধা সে।
এক দুপুরে নূরী বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। এতে মাথার একাংশ ফেটে যায়। সাথেসাথে মেডিকেল নেয়া হলো। আসাদকেও ডাকা হলো। সবাই খুশির সংবাদ শুনার অপেক্ষায় আছে। টেনশনে আছে শুধু আসাদ। কেননা শুধুমাত্র আসাদই জানে সুখবর আসার মতো সম্পর্ক তাদের মধ্যে হয়নি। চেকআপ করে ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলো। টেস্ট করানো হলো। রিপোর্ট নিয়ে পরেরদিন আসাদ ও নূরী ডাক্তারের কাছে এলো। ডাক্তার যা বলল তাতে আসাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। নূরীর ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে। লাস্ট স্টেজ। ডাক্তারের হাত ধরে আসাদ কেঁদে দিল।
- কোনো উপায় নেই কি?
- না।
- বিদেশে নিলে?
- আপনার মনের সন্তুষ্টির জন্য নিতে পারেন। তবে লাভ হবে না।
চাপা আর্তনাদ নিয়ে নূরী বলল,
- আমার হাতে আর কতদিন আছে?
- এক মাস কিংবা তারও কম।
খবরটা জানার পর নূরীর পরিবারের সবাই এসে কান্নাকাটি করতে লাগল। নূরীর মা বলল মেয়েটাকে কিছুদিন আমার কাছে রাখতে চাই। নূরী যেতে চাইল না। “আমি আমার স্বামীর ঘরে থাকতে চাই।” আবেগ ভরা স্বামী শব্দট আসাদ সেদিনই প্রথম শুনলো। রাতে ঘুমানোর সময় আসাদ এসে নূরীকে বলল,
- তুমি চিন্তা কর না। আমি তোমাকে নিয়ে বিদেশ যাব।
নূরী কিছু বলল না। নীরবে চোখের পানি ফেলল। রাতে কারও হু হু কান্নার শব্দে নূরীর ঘুম ভেঙে গেল। জায়নামাজে বসে হাত তুলে আসাদ কান্না করে বলছে, “হে আল্লাহ তুমি আমার নূরীকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।” নূরীর মনটা কেঁদে উঠলো। এতগুলো মাস চলে গেল অথচ এই মানুষটাকে নূরী চুল পরিমাণ ভালোবাসাও দেয়নি। প্রতিটি মুহূর্ত মানুষটা তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করেছে। কিন্তু নূরীর পাষাণ মন ফিরেও তাকায়নি। প্রিন্সের চেহারা খুঁজতে গিয়ে সূর্যের মতো আলোকিত মনটাকে দেখতেও পারেনি সে। কত অবহেলা, অপমান করেছে তবুও আজ সেই মানুষটা নূরীর জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছে। নূরী আজ আফসোস করছে।
সকালে নূরী খুব সুন্দর করে সেজেছে। হলুদ রঙের শাড়ি, কাঁচের চুড়ি পরেছে। চোখে গাঢ় করে কাজলও দিয়েছে। চুলগুলো খুলে দিয়েছে। আসাদকে ডেকে তুলল। নূরীকে দেখে আসাদ হা করে তাকিয়ে আছে। লাজুকতার সাথে নূরী বলল,
- ফ্রেশ হয়ে নাও। আমরা সেন্টমার্টিন যাব।
সবার সামনে তুমি করে বললেও নির্জনতায় নূরীর মুখে তুমি শুনেনি আসাদ। তাই কিছুটা অবাক হলো।
সেন্টমার্টিনের হোটেলের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আসাদ-নূরী।
- কফি খাওয়াবে না?
আসাদ কফি নিয়ে এলো। দুজনে মিলে কফি খেতে লাগল। পরিবেশ একদম নীরব। সেই নীরবতা ভাঙলো নূরীর কান্নার শব্দে।
- একি তুমি কাঁদছ কেন?
- এই সেই জায়গা যেখানে আমি তোমাকে কালো বলে অপমান করেছিলাম। আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তাই হীরা পেয়েও মূল্যায়ন করিনি। স্বামীর মনে আঘাত দেয়ার ফল আমি পেয়েছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
- ওসব ভুলে যাও।
- আমাকে একটা কথা দিবে?
আসাদ মাথা দুলালো।
- আমার মৃত্যুর পর ____
নূরীর মুখটা চেপে ধরলো আসাদ।
- প্লিজ ওসব বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
নূরী অঝোরধারায় কাঁদতে লাগল।
- আমাকে একটিবার জড়িয়ে ধরবে? আমি তোমার বুকে ঠাঁই পেতে চাই।
এবার আসাদও কেঁদে উঠল। ভালোবাসার চাদরে নূরীকে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুদিন পর তারা শহরে ফিরল। নূরী তার প্রতিটি মুহূর্ত আসাদের সাথে উপভোগ করতে লাগল। ভালোবাসা দিয়ে আসাদের পৃথিবী ভরিয়ে দিতে লাগল। এই ভালোবাসা অল্প সময়ের। এটা ভাবতেই নূরীর চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে। কেন সে এই ভালোবাসা আগে বুঝেনি? আসাদ যে অন্তর থেকে হীরার খনি তা কেন আগে উপলব্ধি করতে পারেনি? তবুও নূরী খুশি যে তার শেষ নিঃশ্বাসে আসাদের নাম থাকবে। দিন যত যেতে লাগল নূরীর বুকের কষ্ট তত বাড়তে লাগল। এই বুঝি শেষ দিন। এভাবেই কাঁটছে তাদের দিন। হঠাৎ একদিন ডাক্তার জানালো বিদেশে এর চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। অপারেশন করালে বাঁচানো সম্ভব। আসাদ দেরি করলো না। নূরীর অপারেশনের ব্যবস্থা করল। অপারেশন সাকসেস হলো। নূরী আবার সুস্থ হয়ে উঠলো। নূরী এটাকে আল্লাহর দেয়া পুরষ্কার ভাবল।
আজ নূরী খুব খুশি। তার প্রেগনেনসির রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। এই খুশির খবর জানাতে নূরী তার মা সহ অনেক বন্ধুবান্ধবদের ফোন করল। তখন নূরী তার এক ডাক্তার বন্ধু থেকে জানতে পারল ব্রেইন ক্যানসারের লাস্ট স্টেজের কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। নূরী অবাক হয়ে গেল। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা জানতে নূরী সেই ডাক্তারের চেম্বারে গেল যে তার চিকিৎসা করেছিল। অনুনয় করতেই ডাক্তার সব খুলে বলল। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আসাদের সাজানো ছিল। সেদিন নূরীর চায়ে বেহুঁশের ট্যাবলেট মিশিয়েছিল তাই নূরী বেহুঁশ হয়েছিল।
- একট রিকুয়েস্ট, আমি যে এখানে এসেছি। এটা ওকে বলবেন না। কিছু সত্য গোপণ থাকাই শ্রেয়।
নূরী চলে এলো। তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। আসাদের প্রতি ভালোবাসা আগের তুলনায় আরও বেড়ে গেছে। আসাদ যা কিছু করেছে। শুধুমাত্র তাকে পাওয়ার জন্যই করেছে। এমন স্বামী কয়জনে পায়? বর্তমান যুগে পুরুষেরা স্ত্রীর ভালোবাসা না পেলে অবৈধ ভালোবাসার জন্য বাইরে ছুটে। আসাদ এমন না। সে তার ভালোবাসাকে খুব ভালোবাসে এবং এই ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে রাজি। তাই তো বুদ্ধি দিয়ে নূরীকে জয় করে নিলো।
অফিস থেকে আসাদ বাসায় ফিরল। চেহারায় হাসিখুশি তবে মনের মধ্যে ভয় লুকিয়ে আছে। ডাক্তার তাকে সবকিছুই বলেছে। আসাদের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে। নূরী কি তাকে আগের মতো ভালোবাসবে? নাকি প্রতারক ভেবে আবার দূরে সরে যাবে? ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে একটা প্লেট দেখে আসাদ কিছুটা ভয় পেল। ভালোবাসা শুরু হওয়ার পর থেকে নূরী তার আগে খায়নি। তবে আজ কি হলো?
- তুমি খেয়েছ?
- না তো।
- তাহলে একটা প্লেট কেন?
- এক প্লেটে আমাকে নিয়ে এডজাস্ট করতে পারবে না বুঝি?
নূরীর লাজুক ভরা হাসি দেখে আসাদের মন থেকে পাথর নেমে গেল। নূরীর ভালোবাসা যেন আগের চেয়ে বেড়েছে। ওই ব্যাপারে নূরী কোনো প্রশ্নই করল না। যেখানে ভালোবাসা সেখানে প্রশ্নের প্রয়োজন নেই। আসাদও কিছু বলল না। সত্য দুজনেই জানে। কিন্তু একে অপরকে জানায়নি। এ এক অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা। তবে এতে আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
— — — — — × × × × × — — — — —
©somewhere in net ltd.